ঢাকা ১২:১০ অপরাহ্ন, মঙ্গলবার, ২৩ এপ্রিল ২০২৪, ১০ বৈশাখ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ
সংবাদ শিরোনাম :
Logo মানসম্পন্ন শিক্ষা নিশ্চিত করা আমাদের অঙ্গীকারঃ ড. তৌফিক রহমান চৌধুরী  Logo মেট্রোপলিটন ইউনিভার্সিটির নতুন বাসের উদ্বোধন Logo মানসম্পন্ন শিক্ষা নিশ্চিত করতে শিক্ষকদের ভূমিকা অগ্রগণ্য: ভিসি প্রফেসর ড. মোহাম্মদ জহিরুল হক Logo মঙ্গল শোভাযাত্রা – তাসফিয়া ফারহানা ঐশী Logo সাস্টিয়ান ব্রাহ্মণবাড়িয়া এর ইফতার মাহফিল সম্পন্ন Logo কুবির চট্টগ্রাম স্টুডেন্টস ওয়েলফেয়ার এসোসিয়েশনের ইফতার ও পূর্নমিলনী Logo অধ্যাপক জহীর উদ্দিন আহমেদের মায়ের মৃত্যুতে শাবির মহান মুক্তিযুদ্ধের চেতনা ও মুক্ত চিন্তা চর্চায় ঐক্যবদ্ধ শিক্ষকবৃন্দ পরিষদের শোক প্রকাশ Logo শাবির অধ্যাপক জহীর উদ্দিনের মায়ের মৃত্যুতে উপাচার্যের শোক প্রকাশ Logo বিশ কোটিতে গণপূর্তের প্রধান হওয়ার মিশনে ‘ছাত্রদল ক্যাডার প্রকৌশলী’! Logo দূর্নীতির রাক্ষস ফায়ার সার্ভিসের এডি আনোয়ার!




স্বাস্থ্য খাতে সীমাহীন দুর্নীতি ও আশার আলো

প্রতিনিধির নাম
  • আপডেট সময় : ০৩:০৭:১৩ অপরাহ্ন, রবিবার, ৩ ফেব্রুয়ারী ২০১৯ ১৫৬ বার পড়া হয়েছে

হাফিজুর রাহমান শফিক; স্বাস্থ্য খাতে দুর্নীতি বন্ধে মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার কঠোর অবস্থানের কারনে ইতিমধ্যেই দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক) নরে চড়ে বসেছে। সরকার বিষয়টি নিয়ে বেশ কড়া অবস্থান নিয়েছে বলে স্পষ্ট ।

বিগতদিনে দেশের স্বাস্থ্য খাতে বিশেষ করে সরকারী হাসপাতালের ডাক্তার নার্সদের অবহেলা, অনুপস্থিতি, বিনা মূল্যে ওষুধ রোগীদের সরবরাহ না করে কালবাজারে বিক্রি, এবং নিয়োগ প্রক্রিয়ায় অসচ্ছলতা সহ দেশের গোটা সাস্থ্যখাতই অস্বাস্থ্যকর হয়ে চরম পর্যায় পতিত হয়েছিলো।
সরকারের স্বদিচ্ছার কমতি না থাকলেও এই খাতে দুর্নীতি বন্ধ না হওয়া ও মান উন্নয়ন বিচারে জনগনের বিবেচনার কাঠগড়ায় ব্যার্থ বলা চলে।

দুই বছর আগে দুদক স্বাস্থ্য অধিদফতরের দুর্নীতি অনুসন্ধানে একটি টিম গঠন করেছিল। অনুসন্ধান শেষে টিম দুদক কর্তৃপক্ষের কাছে একটি প্রতিবেদন দাখিল করে। প্রতিবেদনটি স্বাস্থ্যমন্ত্রীর কাছে হস্তান্তর করা হয়। ওই প্রতিবেদনে স্বাস্থ্য খাতের অনিয়ম ও দুর্নীতির ১১টি উৎস উল্লেখ ছিলো । এসব উৎস চিহ্নিত করে দুদক দুর্নীতি বন্ধে ২৫ দফা সুপারিশও পেশ করেছিল সরকারের বরাবর। কিন্তু পরবর্তীতে এই বিষয়ের আর কোন অগ্রগতি দেখা যায়নি।

দুদকের ওই প্রতিবেদন থেকে জানা গেছে, সরকারি হাসপাতালে নিয়োগ, বদলি ও পদোন্নতিতে কোনো নীতিমালা মানা হয় না। অন্যদিকে, অর্থ আত্মসাতের জন্য এমন সব যন্ত্রপাতি ও সরঞ্জাম ক্রয় করা হয়, যা প্রকৃতপক্ষে অপ্রয়োজনীয়। কখনও কখনও যন্ত্রপাতি সরবরাহ ও মেরামত দেখানো হলেও তা না করেই অর্থ হাতিয়ে নেয়া হয়। দুর্নীতির আরেকটি ধরন হল, সরকারি হাসপাতালগুলোতে সরকার কর্তৃক নির্ধারিত ওষুধ থাকলেও রোগীদের তা দেয়া হয় না। স্বাস্থ্য খাতের দুর্নীতি বন্ধে দুদক যেসব সুপারিশ করেছে তার মধ্যে রয়েছে- প্রতিটি সরকারি হাসপাতালে জনসাধারণের দৃষ্টিগোচর হয় এমন উন্মুক্ত স্থানে সিটিজেনস চার্টার প্রদর্শন করতে হবে, প্রতিদিন কী কী ওষুধ স্টকে আছে তা-ও প্রদর্শন করতে হবে, দুর্নীতি রোধে ওষুধ ও যন্ত্রপাতি ক্রয়ে ক্রয়-কমিটিতে বিশেষজ্ঞদের অন্তর্ভুক্ত করতে হবে ইত্যাদি।

দেশের প্রতিটি খাতেই কম-বেশি দুর্নীতি হয় এমন একটি পাবলিক পারসেপশন থাকলেও স্বাস্থ্য খাতের দুর্নীতি যে এতটা বিস্তার লাভ করেছে, দুদকের ওই প্রতিবেদনটি প্রকাশের আগে তা অনেকেরই জানা ছিল না। স্বাস্থ্যের মতো একটি জনগুরুত্বপূর্ণ খাতে দুর্নীতি এতটা বড় আকার ধারণ করেছে, ভাবা যায় না। দুর্নীতির সঙ্গে সম্পৃক্ততার অভিযোগে স্বাস্থ্য অধিদফতরে কর্মরত ২৩ কর্মকর্তা-কর্মচারীর বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ে চিঠি দিয়েছিল দুদক। অথচ কোন শাস্তির বা আইনি ব্যবস্থা গ্রহণ না করে সেই চিঠির পরিপ্রেক্ষিতে মন্ত্রণালয়ের স্বাস্থ্যসেবা বিভাগ তাদের শুধুমাত্র বদলি করেছে যা সংশ্লিষ্ট বিশেষজ্ঞদের মতে হস্যকর মনে হয়েছে।
জানা গেছে, এসব কর্মকর্তা-কর্মচারী ক্ষমতার অপব্যবহার করে অঢেল সম্পদের মালিক বনেছেন।মোটকথা কথা হল, কৃত অপরাধের জন্য বদলি তেমন কোনো শাস্তি নয়। যথাযথ তদন্তসাপেক্ষে অপরাধ বিবেচনায় তাদের আইনের আওতায় এনে দৃষ্টান্ত স্থাপন জরুরি।

সারাদেশে স্বাস্থ্য খাতে অনিয়মের শেষ নেই। দালালদের দৌরাত্ম্য, প্রাইভেট প্র্যাকটিসের কারণে সময়ের অভাবে সরকারি ডাক্তারদের নির্ধারিত দায়িত্ব পালন না করা এবং রোগীদের কাছ থেকে অতিরিক্ত ফি আদায়সহ নানা অনিয়ম-দুর্নীতিতে জড়িয়ে আছে স্বাস্থ্য খাত। কয়েকদিন আগে প্রধানমন্ত্রী ডাক্তারদের কর্মস্থলে না থাকার বিষয়টি উল্লেখ করে নির্ধারিত দায়িত্ব পালনে ব্যর্থ হলে তাদের পেশা ছেড়ে দেয়ার কথা পর্যন্ত বলেছেন। সাধারণ মানুষ মনে করে, স্বাস্থ্য খাতটিকে অনিয়ম ও দুর্নীতিমুক্ত করতে হলে শুধু মুখের মনভোলানো কথায় কাজ হবে না। সরকার তথা স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়কে কঠোর থেকে কঠোরতর অবস্থান নিতে হবে। অন্যথায় দেশের গরিব জনগণ টাকার অভাবে উন্নত চিকিৎসা নিতে ব্যর্থ হবে, অন্যদিকে স্বাস্থ্য খাতের কিছু লোক দুর্নীতির মাধ্যমে ফুলে-ফেঁপে উঠবে- এটা হতে পারে না। দুদক প্রস্তাবিত সুপারিশমালা স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় গুরুত্বের সঙ্গে বিবেচনা করে বাস্তবায়ন করলে এ খাতের কিছুটা সচ্ছতা ও জবাবদিহিতা ফিরে আসবে বলে সংশ্লিষ্ট মহলের বিশ্বাস।

নিউজটি শেয়ার করুন

আপনার মন্তব্য

Your email address will not be published. Required fields are marked *

আপনার ইমেইল এবং অন্যান্য তথ্য সংরক্ষন করুন

ট্যাগস :




স্বাস্থ্য খাতে সীমাহীন দুর্নীতি ও আশার আলো

আপডেট সময় : ০৩:০৭:১৩ অপরাহ্ন, রবিবার, ৩ ফেব্রুয়ারী ২০১৯

হাফিজুর রাহমান শফিক; স্বাস্থ্য খাতে দুর্নীতি বন্ধে মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার কঠোর অবস্থানের কারনে ইতিমধ্যেই দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক) নরে চড়ে বসেছে। সরকার বিষয়টি নিয়ে বেশ কড়া অবস্থান নিয়েছে বলে স্পষ্ট ।

বিগতদিনে দেশের স্বাস্থ্য খাতে বিশেষ করে সরকারী হাসপাতালের ডাক্তার নার্সদের অবহেলা, অনুপস্থিতি, বিনা মূল্যে ওষুধ রোগীদের সরবরাহ না করে কালবাজারে বিক্রি, এবং নিয়োগ প্রক্রিয়ায় অসচ্ছলতা সহ দেশের গোটা সাস্থ্যখাতই অস্বাস্থ্যকর হয়ে চরম পর্যায় পতিত হয়েছিলো।
সরকারের স্বদিচ্ছার কমতি না থাকলেও এই খাতে দুর্নীতি বন্ধ না হওয়া ও মান উন্নয়ন বিচারে জনগনের বিবেচনার কাঠগড়ায় ব্যার্থ বলা চলে।

দুই বছর আগে দুদক স্বাস্থ্য অধিদফতরের দুর্নীতি অনুসন্ধানে একটি টিম গঠন করেছিল। অনুসন্ধান শেষে টিম দুদক কর্তৃপক্ষের কাছে একটি প্রতিবেদন দাখিল করে। প্রতিবেদনটি স্বাস্থ্যমন্ত্রীর কাছে হস্তান্তর করা হয়। ওই প্রতিবেদনে স্বাস্থ্য খাতের অনিয়ম ও দুর্নীতির ১১টি উৎস উল্লেখ ছিলো । এসব উৎস চিহ্নিত করে দুদক দুর্নীতি বন্ধে ২৫ দফা সুপারিশও পেশ করেছিল সরকারের বরাবর। কিন্তু পরবর্তীতে এই বিষয়ের আর কোন অগ্রগতি দেখা যায়নি।

দুদকের ওই প্রতিবেদন থেকে জানা গেছে, সরকারি হাসপাতালে নিয়োগ, বদলি ও পদোন্নতিতে কোনো নীতিমালা মানা হয় না। অন্যদিকে, অর্থ আত্মসাতের জন্য এমন সব যন্ত্রপাতি ও সরঞ্জাম ক্রয় করা হয়, যা প্রকৃতপক্ষে অপ্রয়োজনীয়। কখনও কখনও যন্ত্রপাতি সরবরাহ ও মেরামত দেখানো হলেও তা না করেই অর্থ হাতিয়ে নেয়া হয়। দুর্নীতির আরেকটি ধরন হল, সরকারি হাসপাতালগুলোতে সরকার কর্তৃক নির্ধারিত ওষুধ থাকলেও রোগীদের তা দেয়া হয় না। স্বাস্থ্য খাতের দুর্নীতি বন্ধে দুদক যেসব সুপারিশ করেছে তার মধ্যে রয়েছে- প্রতিটি সরকারি হাসপাতালে জনসাধারণের দৃষ্টিগোচর হয় এমন উন্মুক্ত স্থানে সিটিজেনস চার্টার প্রদর্শন করতে হবে, প্রতিদিন কী কী ওষুধ স্টকে আছে তা-ও প্রদর্শন করতে হবে, দুর্নীতি রোধে ওষুধ ও যন্ত্রপাতি ক্রয়ে ক্রয়-কমিটিতে বিশেষজ্ঞদের অন্তর্ভুক্ত করতে হবে ইত্যাদি।

দেশের প্রতিটি খাতেই কম-বেশি দুর্নীতি হয় এমন একটি পাবলিক পারসেপশন থাকলেও স্বাস্থ্য খাতের দুর্নীতি যে এতটা বিস্তার লাভ করেছে, দুদকের ওই প্রতিবেদনটি প্রকাশের আগে তা অনেকেরই জানা ছিল না। স্বাস্থ্যের মতো একটি জনগুরুত্বপূর্ণ খাতে দুর্নীতি এতটা বড় আকার ধারণ করেছে, ভাবা যায় না। দুর্নীতির সঙ্গে সম্পৃক্ততার অভিযোগে স্বাস্থ্য অধিদফতরে কর্মরত ২৩ কর্মকর্তা-কর্মচারীর বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ে চিঠি দিয়েছিল দুদক। অথচ কোন শাস্তির বা আইনি ব্যবস্থা গ্রহণ না করে সেই চিঠির পরিপ্রেক্ষিতে মন্ত্রণালয়ের স্বাস্থ্যসেবা বিভাগ তাদের শুধুমাত্র বদলি করেছে যা সংশ্লিষ্ট বিশেষজ্ঞদের মতে হস্যকর মনে হয়েছে।
জানা গেছে, এসব কর্মকর্তা-কর্মচারী ক্ষমতার অপব্যবহার করে অঢেল সম্পদের মালিক বনেছেন।মোটকথা কথা হল, কৃত অপরাধের জন্য বদলি তেমন কোনো শাস্তি নয়। যথাযথ তদন্তসাপেক্ষে অপরাধ বিবেচনায় তাদের আইনের আওতায় এনে দৃষ্টান্ত স্থাপন জরুরি।

সারাদেশে স্বাস্থ্য খাতে অনিয়মের শেষ নেই। দালালদের দৌরাত্ম্য, প্রাইভেট প্র্যাকটিসের কারণে সময়ের অভাবে সরকারি ডাক্তারদের নির্ধারিত দায়িত্ব পালন না করা এবং রোগীদের কাছ থেকে অতিরিক্ত ফি আদায়সহ নানা অনিয়ম-দুর্নীতিতে জড়িয়ে আছে স্বাস্থ্য খাত। কয়েকদিন আগে প্রধানমন্ত্রী ডাক্তারদের কর্মস্থলে না থাকার বিষয়টি উল্লেখ করে নির্ধারিত দায়িত্ব পালনে ব্যর্থ হলে তাদের পেশা ছেড়ে দেয়ার কথা পর্যন্ত বলেছেন। সাধারণ মানুষ মনে করে, স্বাস্থ্য খাতটিকে অনিয়ম ও দুর্নীতিমুক্ত করতে হলে শুধু মুখের মনভোলানো কথায় কাজ হবে না। সরকার তথা স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়কে কঠোর থেকে কঠোরতর অবস্থান নিতে হবে। অন্যথায় দেশের গরিব জনগণ টাকার অভাবে উন্নত চিকিৎসা নিতে ব্যর্থ হবে, অন্যদিকে স্বাস্থ্য খাতের কিছু লোক দুর্নীতির মাধ্যমে ফুলে-ফেঁপে উঠবে- এটা হতে পারে না। দুদক প্রস্তাবিত সুপারিশমালা স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় গুরুত্বের সঙ্গে বিবেচনা করে বাস্তবায়ন করলে এ খাতের কিছুটা সচ্ছতা ও জবাবদিহিতা ফিরে আসবে বলে সংশ্লিষ্ট মহলের বিশ্বাস।