হাফিজুর রহমান শফিক: রাজধানীর মানুষের জীবন যাত্রায় গ্যাস সংকট, যানজট, জলাবদ্ধতা মশার উপদ্রবের মত ভোগান্তি নিত্যদিনের। বছরজুড়ে নাগরিক সেবার নামে হাজার কোটি টাকা বরাদ্দ হলেও রাজধানীবাসীর এসব ভোগান্তির নিরসন হয়নি কখনোই। নগর পিতাদের ক্ষমতার পালাবদল হয় নিয়ম মেনে। কিন্তু রাজধানীর জীবনযাত্রার এসব ভোগান্তির বদল হয় না কখনই। তাদের ভোগান্তির উপায় শুধু আলোচনা আর পত্র-পত্রিকার পাতায় সীমাবদ্ধ থাকে।
গত কয়েক বছর ধরে রাজধানীসহ সারাদেশে ডেঙ্গু মহামারী আকার রূপ নিলেও যেন টনক নড়ছে না নগরপিতাদের। সর্বশেষ সিটি করপোরেশন নির্বাচনের পরবর্তী সময়ে নির্বাচিত মেয়রদের শপথগ্রহণ অনুষ্ঠানে প্রধানমন্ত্রী বলেছিলেন মশা যেন ভোট না খেয়ে ফেলে। তবুও বুদ্ধির উদয় হয়নি নগরপিতা দের। নির্বাচনের আগ মুহূর্তে প্রার্থীগণ তাদের নির্বাচনী প্রচারণায় ভোটারদের সমর্থন পেতে ইশতেহারের ফুলঝুরি দিয়ে বিজয় লাভ করেন। কিন্তু বাস্তবতার চিত্র কতটুকু পাল্টেছে? কতটুকু সেবা পাচ্ছেন নগরবাসী? এসব প্রশ্নের উত্তর খুজতে রাজধানীর বিভিন্ন এলাকায় ঘুরে দেখা যায় নগর জীবনের অসহায় চিত্র। উত্তর-দক্ষিণ দুই সিটি কর্পোরেশনের নতুন যুক্ত হওয়া ওয়ার্ডগুলোতে নাগরিক ভোগান্তি চরমে। জলাবদ্ধতা, মশার উপদ্রবের সাথে চলাচলের অযোগ্য অলিগলি রাস্তা যেন মরার উপর খাঁড়ার ঘা। সবকিছু পর্যালোচনা করলেই বোঝা যায় কতটুকু নাগরিক সেবা পাচ্ছেন রাজধানীবাসী।
রাজধানীর উত্তর সিটি কর্পোরেশনের ৩৯ নং ওয়ার্ডের ১০০ ফিট প্রধান সড়কের আশপাশ এলাকায় ভাঙ্গাচুরা অলিগলি রাস্তা, ডোবা নালায় জলাবদ্ধতা যেখানে এডিস মশার লার্ভা ভয়ঙ্কর রূপ নিয়েছে। এলাকায় সাধারণ মানুষের সাথে কথা বলে জানা যায় দিনরাত তাদের মশারির ভিতর থাকতে হয়। নিজেদের নিরাপদে রাখতে। দিনে তিন /চারটি কোয়েল পুড়িয়ে কোনভাবে নিজেদের সুরক্ষায় রাখেন তারা। নিয়মিত মশা নিধনের কোন ব্যবস্থায নিতে দেখা যায় না রাজধানী উত্তর সিটি কর্পোরেশনের ভাটারা এলাকায়।
এসব নিয়ে যেন জনপ্রতিনিধিদের কোন মাথাব্যাথাই নেই। অথচ করোনা ভাইরাসের মহামারির মধ্যেও নগরপিতা দের লোক দেখানোর জন্য মশা নিধন কর্মসূচির নামে তামাশা হাস্যকর বলে মনে করেন অনেক নগরবাসী। বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের অভ্যন্তরে জমে থাকা পানিতে এডিস মশার লার্ভা পাওয়ার অপরাধে জরিমানা করতে দেখা গেছে। জনমনে প্রশ্ন এমন কর্মসূচি কি মশা নিধনে সত্যি কোন কাজে আসে? যেখানে রাজধানীর বিভিন্ন এলাকায় সরকারি রাস্তায় জমে থাকা পানিতে অসংখ্য এডিসের লার্ভা, ময়লার স্তুপ, বদ্ধ ড্রেনেজ ও ডোবা-নালার মত মশার জন্ম হওয়ার অসংখ্য উৎপত্তিস্থল রয়েছে। সেগুলোর বিষয়ে তারা কোনো পদক্ষেপ গ্রহণ করছে না তারা। মাঝেমধ্যে লোকদেখানো এমন কর্মসূচি গ্রহণ করে পত্র-পত্রিকায় ছবি ছাপানোর মধ্যেই যেন নগরবাসীর ভোগান্তি নিরসনের চেষ্টা।
মশার লার্ভা খুঁজে বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানকে আর্থিক জরিমানা করেছে সিটি কর্পোরেশন। এমন বিষয় নিয়ে ব্যক্তিগত ফেসবুক ওয়ালে একটি পোস্ট দেওয়ার পর অনেকেই ব্যক্তিগত ভাবে প্রশ্ন করেছেন, তাহলে সারা রাজধানীজুড়ে মশার যেসকল উৎপত্তিস্থলের বিষয়ে নগরপিতা কোনো ব্যবস্থা গ্রহণ করেনি সেসব নগরপিতা দের জরিমানা করবে কে? এসব প্রশ্নের কারণেই বিস্তারিত আলোচনা করার দায়িত্ব থেকে কয়েক লাইন লেখার প্রয়াস।
রাজধানীজুড়ে রাস্তায় বিভিন্ন বিলবোর্ড, স্থাপিত প্রতিকৃতি, নতুন যুক্ত হওয়া ওয়ার্ডগুলোতে অলিগলির ভাঙাচোরা রাস্তায় হাঁটু সমান জমে থাকা পানি, ও এর আশেপাশে ডোবা নালা, খানাখন্দ, পানি নিষ্কাশনের অব্যবস্থাপনার কারণে জমে থাকা অসংখ্য ময়লা ও পানির মধ্যে মশা জন্মানোর উৎপত্তিস্থল। ৯০% মশা সব জায়গাতেই জন্ম নেয় বলে বিভিন্ন সময় বিশেষজ্ঞরা মত দিয়েছেন। এসব ব্যবস্থাপনা যাদের দায়িত্ব তাদেরকে জরিমানা করবে কে?
নগর বিশ্লেষকদের পর্যবেক্ষণ: রাজধানীর সকল ভবন মালিকদের তাদের ভবন ও তার চারপাশ স্থল পরিচ্ছন্ন রাখতে বাধ্য করা সিটি কর্পোরেশনের দায়িত্ব। এছাড়াও দুই সিটি কর্পোরেশনে নতুন যুক্ত হওয়া এলাকাগুলোর নিচু এলাকা সমূহে বিভিন্ন ডোবা নালা পচা পানিতে মশার উৎপত্তি স্থল রয়েছে এগুলো নিষ্কাশন ও এসব এলাকার পরিবেশ উন্নত করা দুই সিটি করপোরেশনের সাংবিধানিক দায়িত্ব।