বরিশাল ব্যুরো || দলীয় শৃঙ্খলা বিরোধী কর্মকান্ডের অপরাধে ছাত্রলীগের বরিশাল সদর উপজেলা কমিটি থেকে বহিস্কৃত বিতর্কিত সাধারণ সম্পাদক আশিকুর রহমান সুজনের বিরুদ্ধে এবার কোতয়ালী মডেল থানায় মামলা দায়ের করা হয়েছে। ট্রাক ছিনতাই এবং চিংড়ি রেনুপোনা পাচারের অভিযোগ এনে থাকা পুলিশ মামলাটি দায়ের করেন।
এরপর থেকে তাকে গ্রেফথার করতে পুলিশ অভিযান চালিয়ে যাচ্ছে। তবে মামলা দায়ের পর থেকেই আত্মগোপনে থাকায় চতুর এই বহিস্কৃত নেতাকে খুঁজে পাচ্ছে না পুলিশ। তবে ওই মামলায় চিংড়ি রেনুপোনা পাচারকারী চক্রের দুই সদস্যকে আটক করা হয়েছে। তারা আদালতে রেনু পাচার সম্পর্কিত স্বীকারক্তিমুলক জবানবন্দি দিয়েছেন।
তাদের দেয়া জবানবন্দিতে ছাত্রলীগের নেতার পরিচয়ে আশিকুর রহমান সুজনের অবৈধ চিংড়ি রেনুপোনা পাচার চক্রের গোম ফাঁস হয়ে গেছে। মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা কোতয়ালী মডেল থানার উপ-পরিদর্শক (এসআই) ফিরোজ আল মামুন এই তথ্য নিশ্চিত করেছেন।
জানাগেছে, ‘ গত ২২ এপ্রিল রাতে ঝালকাঠির নলছিটি উপজেলার তুলাতলা নামকস্থানে জগলুল কাদের নয়ন নামক এক রেনুপোনা চোরাকারবারি তার দুই সঙ্গিসহ একটি প্রাইভেটকার যোগে বাঘেরহাট যাচ্ছিলেন। তাদের দু’জনের বাড়ি গোপালগঞ্জের টুঙ্গিবাড়ি। তারা টুঙ্গিবাড়িয়ার পোনা চোরাকারবারি টুলু শরীফের সহযোগী। তাদের গাড়ির পিছনে চিংড়ি মাছের পোনাভর্তি একটি ট্রাক ছিল।
চিংড়ি পাচারের খবর পেয়ে সদর উপজেলা ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক আশিকুর রহমান সুজন তার সহযোগী মামুনসহ বেশ কয়েকজনকে নিয়ে রাতের আধারে গাড়ি দুটির গতিরোধ করেন। এক পর্যায় প্রাইভেটকার থেকে জগলুল কাদের নয়ন ও তার সহযোগিদের নামিয়ে বেধম মারধর করা হয়। পরে তাদেরকে দপদপিয়া ব্রিজের ঢালে নিয়ে কিছু পরিমান অর্থ ছিনতাই করে।
খবর পেয়ে টহল পুলিশ ঘটনাস্থলে পৌঁছায়। কিন্তু তার আগেই পুলিশের উপস্থিতি টের পেয়ে চতুর সুজন ট্রাকসহ চালক হাসান শেখ ও হেলপার সাহেবকে নিয়ে অজ্ঞাত স্থানে সটকে পরে। পরে চিংড়ি পাচারের অপরাধে পুলিশ জগলুল কাদের নয়ন, তার সহযোগি কাকন সিকদার ও একরামকে হেফাজতে নেয়। সাথে তাদের বহনকৃত প্রাইভেটকারটিও জব্দ করে।
এদিকে আটককৃত দু’জন পুলিশের কাছে স্বীকার করে তারা অবৈধভাবে আমদানিকৃত চিংড়ির রেণু বাঘেরহাট নিচ্ছিলেন। তবে তাদের চিংড়ি রেনু বোঝাই ট্রাকটি চালক ও হেলপার সহ খুঁজে পাওয়া যাচ্ছে না। তবে ঘটনার পর দিন ভোরে নগরীর আমতলা মোড়ে ট্রাক চালক হাসান শেখ ও হেলপার সাহেবকে মোটরসাইকেল যোগে নামিয়ে দিয়ে যায় সুজন। কিন্তু ছিনতাই হওয়া ট্রাক লুকিয়ে রেখেছে সে।
অপরদিকে সুজন বা ট্রাকটিকে উদ্ধার করতে না পারলেও আটককৃতদের বিরুদ্ধে মৎস্য আইনে কোতয়ালী মডেল থানায় মামলা দায়ের করেন সংশ্লিষ্ট থানার উপ-পরিদর্শক (এসআই) মিজানুর রহমনা। ওই মামলায় চোরাকারবারি জগলুল কাদের নয়নসহ অপর চারজনকে আদালতের মাধ্যমে জেল হাজতে প্রেরণ করা হয়।
তার আগে আগে আদালতের কাছে চিংড়ি রেনুপোনা চাপার চক্র ও অবৈধ মৎস্য ব্যবসার গোমড় ফাস করে দেয় আটককৃতরা।এদের মধ্যে জগলুল কাদের নয়ন আদালতকে জানায়, তারা নিয়মিত রেনু পোনা পাচারের অবৈধ ব্যবসা করে আসছিলেন। ইতিপূর্বে সদর উপজেলার লাহার হাট হয়ে এসব পোনা চাপার হতো। এজন্য মাসিক মোটা অংকের উৎকোচ দিতে হতো উপজেলা ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক আশিকুর রহমান সুজনকে।
তাকে বেশ কিছুদিন টাকা দেয়ার পরে রেনু সংকটের কারণে পাচার কার্য্য বন্ধ থাকে। কিন্তু শর্ত স্বরুপ অর্থ দিতে বিলম্ব হওয়ায় ছাত্রলীগ নেতা আশিকুর রহমান সুজন আক্রোশমূলক ওই মামলা ও ট্রাক ছিনতাইয়ের ঘটনা ঘটায়। ট্রাক আটকের পরে ছেড়ে দেয়ার শর্তে মোটা অংকের উৎকোচ দাবি করে সুজন। কিন্তু তাৎক্ষনিকভাবে তা পরিশোধে অপরাগতা প্রকাশ করায় তাদের বেধম প্রহার ও রেনু বোঝাই ট্রাকটি ছিনতাই করে।
এ প্রসঙ্গে মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা কোতয়ালী মডেল থানার উপ-পরিদর্শক ফিরোজ আল মামুন গণমাধ্যমকে বলেন, তদন্তে আসামীদের স্বীকারোক্তিমূরক জবানবন্দির মিল পাওয়া গেছে। কিন্তু ছিনতাই হওয়া মাছভর্তি ট্রাকটির হদিস এখনও পাওয়া যায়নি। তবে ট্রাকটির সন্ধান ও উদ্ধারে সন্ধান চলছে।
পুলিশের এই কর্মকর্তা বলেন, ‘একই ঘটনায় পৃথক দুই মামলায় আসামী হতে পারে ছাত্রলীগ নেতা সুজন ও তার সহচর মামুন। ইতোমধ্যে দায়েরকৃত মৎস্য আইনের মামলায় দুই আসামী স্বীকারোক্তি দেওয়ায় আইনগতভাবে সুজন ও মামুন এ মামলায় আসামীর তালিকায় অন্তর্ভূক্ত হয়েছে। তাছাড়া ট্রাক ছিনতাইয়ের ঘটনায় পৃথক একটি মামলা দায়েরের প্রস্তুতি চলছে।
এদিকে ট্রাক ছিনতাই এবং রেনুপোনা পাচারে মৎস্য আইনে মামলা দায়েরের পূর্বে ছাত্রলীগের বিতর্কিত নেতা আশিকুর রহমান সুজনের বিরুদ্ধে মহানগরীর বন্দর থানায় আরও একটি মামলা দায়ের করা হয়েছে। গত ২৬ এপ্রিল দায়েরকৃত ওই মামলায় সুজন একক আসামী। এ নিয়ে সুজন পর পর দুটি মামলার আসামি হয়েছে।
তাছাড়া সম্প্রতি ফেসবুক লাইভে এসে বরিশালের জেলা প্রশাসক এসএম অজিয়র রহমানকে নিয়ে কটুক্তি করেন বিতর্কিত আশিকুর রহমান সুজন। এ নিয়ে বিএসএল নিউজে সংবাদ প্রকাশিত হয়। এর এক দিন পরেই তাকে বহিস্কারের সুপাশি পাঠানো হয় ছাত্রলীগের কেন্দ্রীয় সংসদে। এরপর বহিস্কার হন সুজন।