ঢাকা ০৮:৪৩ পূর্বাহ্ন, রবিবার, ১৫ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ৩১ ভাদ্র ১৪৩১ বঙ্গাব্দ
সংবাদ শিরোনাম :
Logo ঘুমের ঘোরে চট্টগ্রামের পরিবেশ অধিদপ্তর: পাহাড় কাটছে প্রভাবশালীরা Logo রাজারবাগ পুলিশ লাইনস স্কুল এন্ড কলেজের চেয়ারম্যান সাবেক ডিআইজি হাবিব? Logo বিপুর লুটেরা সহযোগী ও বঙ্গবন্ধু প্রকৌশলী পরিষদের সভাপতি গাউছ মহিউদ্দিন বহাল পিজিসিবিতে! Logo আর্থিক খাতে লুটপাটের মাস্টারমাইন্ড: কে এই প্রতারক ক্যাপ্টেন মোয়াজ্জেম? Logo নিবন্ধন অধিদপ্তরের দুর্নীতির সম্রাট সালাম আজাদ! Logo ইন্সপেক্টর রেজায়ে রাব্বীর বিষয়ে বিভ্রান্তি নিরসনে ফায়ার সার্ভিসের বক্তব্য Logo স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে লাটিম ঘুরাচ্ছেন ৬ ‘কুতুব’ Logo ওয়াসা প্রকৌশলী ফকরুলের আমলনামা: অবৈধ সম্পদের সাম্রাজ্য Logo আশা ইউনিভার্সিটির আইন বিভাগে নবীন বরণ অনুষ্ঠিত Logo চাঁদার টাকা না পেয়ে সাংবাদিকের বিরুদ্ধে মিথ্যা মামলা




স্কুলের বেতন দিতে রক্ত বিক্রি!

প্রতিনিধির নাম
  • আপডেট সময় : ১১:০৮:৪৮ পূর্বাহ্ন, বুধবার, ৬ মে ২০২০ ১০৮ বার পড়া হয়েছে

অনলাইন ডেস্ক:

হাওয়ার্ড সুলজ, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের শীর্ষ ধনী ব্যক্তিদের অন্যতম। অথচ এই ব্যক্তির শৈশবের অনেক দিন কেটেছে অভুক্ত অবস্থায়। দিনের পর দিন একই পোশাক পরে স্কুল গিয়েছেন। স্কুলের বেতন দিতে বিক্রি করেছেন নিজের শরীরের রক্ত! দারিদ্র্যের কশাঘাতে জর্জরিত হয়েছেন রোজ, তবু হাল ছাড়েননি।

যুক্তরাষ্ট্রের নিউইয়র্কের ব্রুকলিনে ১৯৫৩ সালের ১৯ জুলাই এক দরিদ্র পরিবারে জন্মগ্রহণ করেন হাওয়ার্ড সুলজ। ট্রাকচালক বাবার একমাত্র রোজগারে সংসার চলে মোটামুটি। কিন্তু ১৯৬০ সালে হঠাৎ নেমে আসে বিপর্যয়। এক দুর্ঘটনার কবলে পড়ে পা হারান সুলজের ট্রাকচালক বাবা। কিন্তু ১৯৬০ সালে নিয়ম আইনের এতটা কড়াকড়ি ছিল না যুক্তরাষ্ট্রে। তাই পঙ্গু ট্রাক শ্রমিক হিসেবে কোনো বিশেষ ভাতা বা সহযোগিতা পাননি সুলজের বাবা।

আবার নিজে এতটা সচেতন না হওয়ায় কোনো স্বাস্থ্যবীমা ছিল না তার। ফলে চরম দারিদ্র্যের এক অকূল পাথারে পড়েন তারা। এই দরিদ্রতার মধ্যেই চলে জীবনযুদ্ধ। এমন দরিদ্রতার সঙ্গে যুদ্ধ করতে করতে এগিয়ে চলে সুলজের লেখাপড়া। প্রাথমিক স্কুল পার হয়ে মাধ্যমিক, তার পর মাধ্যমিক পার হয়ে কলেজ। স্কুলের বেতন পরিশোধ করতে নিজের শরীরের রক্ত পর্যন্ত বিক্রি করেছেন তিনি, কিন্তু স্কুল ছাড়েননি!

এই সময়ের মধ্যে সুলজ ক্রমাগত চেষ্টা করে যান নিজের ভাগ্য বদলের। ততদিনে তার পরিবার ভিখারির পর্যায়ের গিয়ে ঠেকেছে! ভালো কোনো সুযোগের কথা শুনলেই সেখানে চেষ্টা করেন, কোথায় কোন স্কলারশিপ দেওয়া হয় তার খোঁজ রাখতে শুরু করেন সুলজ। নর্দান মিশিগান ইউনিভার্সিটির অ্যাথলেটিক স্কলারশিপ পেয়ে যান। এই বৃত্তি সুলজ এবং তার পরিবারে অনেকটা স্বস্তি এনে দেয়।

১৯৭৫ সালে নর্দান মিশিগান বিশ্ববিদ্যালয় থেকে স্নাতক সম্পন্ন করে সুলজ নেমে পড়েন জীবনের নতুন অধ্যায় রচনায়। বিভিন্ন জায়গায় চাকরির পর ২৯ বছর বয়সী সুলজ স্টারবাকসে যোগ দেন, কেননা তিনি জানতেন এই প্রতিষ্ঠানের রয়েছে বিপুল সম্ভাবনা। তখন বাড়িতে বাড়িতে পার্সেল কফি সরবরাহ করতে স্বল্পসংখ্যক কর্মী নিয়ে হিমশিম খাচ্ছিল কর্তৃপক্ষ।

এমনই একটি সময়ে স্টারবাকসের মাত্র তিনটি আউটলেট থাকা অবস্থায় যোগ দেন সুলজ। তিনি নতুন কিছু বিপণন আইডিয়া নিয়ে স্টারবাকস মালিকদের সঙ্গে কথা বলেন। তার সব আইডিয়া বাস্তবায়ন করতে রাজি হননি। সুলজ মনোক্ষুণ্ন হন, চাকরি ছেড়ে দেন। একই সময়ে ক্রমাগত লোকসানের ধাক্কা সইতে না পেরে এক ইতালীয় তার কফিশপ বন্ধ করে দিচ্ছিলেন।

‘জিওরনেল’ নামের লোকসানে থাকা এই কফিশপটি কিনে নেন সুলজ। এর পর স্টারবাকসে যেসব আইডিয়া বাস্তবায়ন করতে পারেননি, তা একে একে প্রয়োগ করতে শুরু করেন। মাত্র ২ বছরের নিরলস প্রচেষ্টায় শূন্য থেকে প্রায় ১ দশমিক ৬ মিলিয়ন আয় করেন সুলজ। এই কফিশপ প্রায় পাঁচ বছর চালানোর পর ১৯৮৭ সালে ছেড়ে আসা প্রিয় কফিশপ স্টারবাকস কিনে নেন ৩ দশমিক ৮ মিলিয়ন ডলারে।

সুলজ যখন স্টারবাকসে যোগ দেন তখন স্টারবাকসের শাখা ছিল ৩টি। ৫ বছর পর যখন কিনে নেন তখন শাখা ছিল ৬টি। আর তার ঠিক ৫ বছর পর ১৯৯২ সালে আমেরিকাজুড়ে শাখা হয় ১৬৫টি। আর বার্ষিক রোজগার দাঁড়ায় ৯৩ মিলিয়ন ডলারে। এখন পৃথিবীব্যাপী ৬৫টি দেশে স্টারবাকসের শাখা আছে ২২ হাজারের অধিক এবং বার্ষিক আয় প্রায় ৩ বিলিয়ন ডলার।

নিউজটি শেয়ার করুন

আপনার মন্তব্য

Your email address will not be published. Required fields are marked *

আপনার ইমেইল এবং অন্যান্য তথ্য সংরক্ষন করুন

ট্যাগস :




স্কুলের বেতন দিতে রক্ত বিক্রি!

আপডেট সময় : ১১:০৮:৪৮ পূর্বাহ্ন, বুধবার, ৬ মে ২০২০

অনলাইন ডেস্ক:

হাওয়ার্ড সুলজ, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের শীর্ষ ধনী ব্যক্তিদের অন্যতম। অথচ এই ব্যক্তির শৈশবের অনেক দিন কেটেছে অভুক্ত অবস্থায়। দিনের পর দিন একই পোশাক পরে স্কুল গিয়েছেন। স্কুলের বেতন দিতে বিক্রি করেছেন নিজের শরীরের রক্ত! দারিদ্র্যের কশাঘাতে জর্জরিত হয়েছেন রোজ, তবু হাল ছাড়েননি।

যুক্তরাষ্ট্রের নিউইয়র্কের ব্রুকলিনে ১৯৫৩ সালের ১৯ জুলাই এক দরিদ্র পরিবারে জন্মগ্রহণ করেন হাওয়ার্ড সুলজ। ট্রাকচালক বাবার একমাত্র রোজগারে সংসার চলে মোটামুটি। কিন্তু ১৯৬০ সালে হঠাৎ নেমে আসে বিপর্যয়। এক দুর্ঘটনার কবলে পড়ে পা হারান সুলজের ট্রাকচালক বাবা। কিন্তু ১৯৬০ সালে নিয়ম আইনের এতটা কড়াকড়ি ছিল না যুক্তরাষ্ট্রে। তাই পঙ্গু ট্রাক শ্রমিক হিসেবে কোনো বিশেষ ভাতা বা সহযোগিতা পাননি সুলজের বাবা।

আবার নিজে এতটা সচেতন না হওয়ায় কোনো স্বাস্থ্যবীমা ছিল না তার। ফলে চরম দারিদ্র্যের এক অকূল পাথারে পড়েন তারা। এই দরিদ্রতার মধ্যেই চলে জীবনযুদ্ধ। এমন দরিদ্রতার সঙ্গে যুদ্ধ করতে করতে এগিয়ে চলে সুলজের লেখাপড়া। প্রাথমিক স্কুল পার হয়ে মাধ্যমিক, তার পর মাধ্যমিক পার হয়ে কলেজ। স্কুলের বেতন পরিশোধ করতে নিজের শরীরের রক্ত পর্যন্ত বিক্রি করেছেন তিনি, কিন্তু স্কুল ছাড়েননি!

এই সময়ের মধ্যে সুলজ ক্রমাগত চেষ্টা করে যান নিজের ভাগ্য বদলের। ততদিনে তার পরিবার ভিখারির পর্যায়ের গিয়ে ঠেকেছে! ভালো কোনো সুযোগের কথা শুনলেই সেখানে চেষ্টা করেন, কোথায় কোন স্কলারশিপ দেওয়া হয় তার খোঁজ রাখতে শুরু করেন সুলজ। নর্দান মিশিগান ইউনিভার্সিটির অ্যাথলেটিক স্কলারশিপ পেয়ে যান। এই বৃত্তি সুলজ এবং তার পরিবারে অনেকটা স্বস্তি এনে দেয়।

১৯৭৫ সালে নর্দান মিশিগান বিশ্ববিদ্যালয় থেকে স্নাতক সম্পন্ন করে সুলজ নেমে পড়েন জীবনের নতুন অধ্যায় রচনায়। বিভিন্ন জায়গায় চাকরির পর ২৯ বছর বয়সী সুলজ স্টারবাকসে যোগ দেন, কেননা তিনি জানতেন এই প্রতিষ্ঠানের রয়েছে বিপুল সম্ভাবনা। তখন বাড়িতে বাড়িতে পার্সেল কফি সরবরাহ করতে স্বল্পসংখ্যক কর্মী নিয়ে হিমশিম খাচ্ছিল কর্তৃপক্ষ।

এমনই একটি সময়ে স্টারবাকসের মাত্র তিনটি আউটলেট থাকা অবস্থায় যোগ দেন সুলজ। তিনি নতুন কিছু বিপণন আইডিয়া নিয়ে স্টারবাকস মালিকদের সঙ্গে কথা বলেন। তার সব আইডিয়া বাস্তবায়ন করতে রাজি হননি। সুলজ মনোক্ষুণ্ন হন, চাকরি ছেড়ে দেন। একই সময়ে ক্রমাগত লোকসানের ধাক্কা সইতে না পেরে এক ইতালীয় তার কফিশপ বন্ধ করে দিচ্ছিলেন।

‘জিওরনেল’ নামের লোকসানে থাকা এই কফিশপটি কিনে নেন সুলজ। এর পর স্টারবাকসে যেসব আইডিয়া বাস্তবায়ন করতে পারেননি, তা একে একে প্রয়োগ করতে শুরু করেন। মাত্র ২ বছরের নিরলস প্রচেষ্টায় শূন্য থেকে প্রায় ১ দশমিক ৬ মিলিয়ন আয় করেন সুলজ। এই কফিশপ প্রায় পাঁচ বছর চালানোর পর ১৯৮৭ সালে ছেড়ে আসা প্রিয় কফিশপ স্টারবাকস কিনে নেন ৩ দশমিক ৮ মিলিয়ন ডলারে।

সুলজ যখন স্টারবাকসে যোগ দেন তখন স্টারবাকসের শাখা ছিল ৩টি। ৫ বছর পর যখন কিনে নেন তখন শাখা ছিল ৬টি। আর তার ঠিক ৫ বছর পর ১৯৯২ সালে আমেরিকাজুড়ে শাখা হয় ১৬৫টি। আর বার্ষিক রোজগার দাঁড়ায় ৯৩ মিলিয়ন ডলারে। এখন পৃথিবীব্যাপী ৬৫টি দেশে স্টারবাকসের শাখা আছে ২২ হাজারের অধিক এবং বার্ষিক আয় প্রায় ৩ বিলিয়ন ডলার।