ঢাকা ০২:৫৭ পূর্বাহ্ন, শুক্রবার, ১৮ এপ্রিল ২০২৫, ৪ বৈশাখ ১৪৩২ বঙ্গাব্দ
সংবাদ শিরোনাম :
Logo জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র হলেন মুহাম্মদ আবু আবিদ Logo প্রধান উপদেষ্টার দেয়া নির্বাচনী সময়ে সন্তুষ্ট নয় বিএনপি Logo ডেসটিনি প্রতারক রফিকুল আমিনের নতুন রাজনৈতিক দল গঠন Logo একচেটিয়া লিফট সরবরাহ চুক্তি: ওয়ালটনের টাকায় শেখর সহ গণপূর্ত’ চার প্রকৌশলীর বিদেশ ভ্রমণ! Logo বঙ্গবন্ধু পরিষদের নেতা ডিপিডিসির প্রকৌশলী রাজ্জাক ধরাছোঁয়ার বাইরে পর্ব -১ Logo আগস্ট বিপ্লবের অদৃশ্য শক্তি তারেক রহমান – মাহমুদ হাসান Logo ছাত্র জনতাকে ১০ মিনিটে ক্লিয়ার করার ঘোষণা দেয়া হামিদ চাকুরীতে বহাল Logo ছাত্রলীগ নেত্রী যুবলীগ নেতার প্রতারণার শিকার চিকিৎসক সালেহউদ্দিন: বিচার ও প্রতিকার দাবি Logo দেশসেরা সহকারী জজ পরীক্ষায় প্রথম স্থান অর্জনে সংবর্ধনা Logo মাদরাসাসহ সকল শিক্ষা ব্যবস্থা জাতীয়করণের দাবি বিএমজিটিএ’র




হাসপাতালের ‘আইসোলেশন’ থাকার অভিজ্ঞতা জানালেন পুলিশ সদস্য

প্রতিনিধির নাম
  • আপডেট সময় : ১০:৫৫:৪০ পূর্বাহ্ন, বুধবার, ৬ মে ২০২০ ১৭৩ বার পড়া হয়েছে

অনলাইন ডেস্ক:

স্বাধীন হোসাইন বিপ্লব। পুলিশ সদর দপ্তরের একটি শাখায় কর্মরত এই পুলিশ কনস্টেবলের কোনো উপসর্গ ছিল না। তবুও পরীক্ষায় করোনাভাইরাস পজিটিভ এসেছে। তাই এখন আইসোলেশনে রয়েছেন তিনি।

গতকাল মঙ্গলবার দৈনিক আমাদের সময় অনলাইনের সঙ্গে আলাপকালে নিজের আইসোলেশেনের অভিজ্ঞতা তুলে ধরেন এই পুলিশ সদস্য।

স্বাধীন হোসাইন বিপ্লব বলেন, ‘আইসোলেশন রুমে করোনা পজিটিভ পুলিশ সদস্য রয়েছে তিনজন, এসআই মোস্তাফিজুর, এএসআই সোহাগ ও আমি। গত কয়েকটা দিন খুবই ভালো কাটতেছিল আমাদের। এসআই মোস্তাফিজুর স্যার, উনার সার্ভিস জীবনের মজার মজার ঘটনাগুলো ও বাস্তব অভিজ্ঞতাগুলো আমাদের দুজনের কাছে যখন বলতো, তখন আমরা দুজন অবাক হয়ে শুনতে থাকি। গত সন্ধায় খবর আসল, স্যারের পরিবারের বাকি তিন সদস্যের (স্ত্রী, ছেলে ও মেয়ে) করোনা পজিটিভ হয়েছে। সংবাদটি পাওয়ার সঙ্গে সঙ্গে হাস্যোজ্জ্বল মানুষটির মুখ ফ্যাকাসে হয়ে গেল। আমরা দুজন অনেক চেষ্টা করলাম স্যারকে সাহস দিতে কিন্তু ব্যর্থ হলাম।’

এই পুলিশ সদস্য আরও বলেন, ‘এরপর এশার নামাজ শেষে রাতের খাবার খেয়ে ১১টার দিকে ঘুমাতে গেলাম তিনজন। ঠিক ফজরের আজানের কিছুক্ষণ আগে রুমের ভেতর হঠাৎ শ্বাস-প্রশ্বাসের বিকট শব্দ পেলাম। ঘুম ভেঙে গেল আমাদের। দেখি, মুস্তাফিজুর স্যারের ভীষণ শ্বাসকষ্ট হচ্ছিল। তাড়াহুড়া করে আমরা দুজন মাস্ক লাগিয়ে হাতে গ্লাভস পরে স্যারকে ধরে বসালাম। নার্সকে ফোন করলাম। নার্স দ্রুত একটি পোর্টেবল অক্সিজেন স্যারের মুখে লাগিয়ে দিলেন। আজ (মঙ্গলবার) সকালে স্যারকে আইসিইউ ইউনিটে রেফার্ড করা হয়েছে। যাওয়ার সময় স্যারের মুখের দিকে তাকানো যাচ্ছিল না। হয়তোবা অতিরিক্ত টেনশনে তার এমন অবস্থা। তাই টেনশন ফ্রি থাকার চেষ্টা করছি।’

কীভাবে করোনায় আক্রান্ত হলেন, এ প্রশ্নের উত্তরে স্বাধীন বলেন, ‘আমি হেডকোয়ার্টারে যে শাখায় কাজ করি, সেই শাখার একজন পুলিশের প্রথমে করোনা পজিটিভ ধরা পড়ে। এরপর ওই সেকশনে থাকা আরও পাঁচজনের করোনা টেস্ট করা হয়েছে। এর মধ্যে আমারসহ আরও দুজনের করোনা পজিটিভ এসেছে। তবে কীভাবে কার মাধ্যমে আমি বা আমরা আক্রান্ত হয়েছি, এটা বলা মুশকিল। যেহেতু পুলিশের চাকরি করি, তাই অনেকের সাথেই মিশতে হয়।’

পুলিশ সদস্য স্বাধীন বলেন, ‘আমি ছুটি পেয়ে বাড়িতে যাওয়ার প্রস্তুতি নিচ্ছিলাম। ব্যাগও গুছিয়ে ছিলাম। কিন্তু ভাবলাম বাড়িতে যাওয়ার আগে একবার করোনা টেস্ট করে যাই। আমি শতভাগ নিশ্চিত ছিলাম যে, আমার রেজাল্ট নেগেটিভ আসবে। তাই বাড়িতে বলেছিলাম যে, ছুটি পেয়ে গ্রামে আসছি৷ কিন্তু যেদিন ফলাফল পজেটিভ এসেছে সেদিন প্রথমে একটু খারাপ লাগলেও পরে মানসিক অবস্থা শক্ত করেছি।’

স্বাধীন বলেন, ‘আমি বাবার একমাত্র ছেলে। আমার দুটা ছোট বোন আছে গ্রামের বাড়িতে। এরপরও আবার ঘরে নতুন বউ। তারা সবাই গ্রামের বাড়িতে। পরিবারের কেউ আমাকে ফোন করে, আমিই তাদের সাহস যোগাই। তারা যেন ভেঙে না পড়ে।’

সাধারণ মানুষের উদ্দেশে:

পুলিশ সদস্য স্বাধীন বলেন, ‘আইসোলেশনে থেকেও এত কিছু বলছি শুধুই আপনাদের জন্য। আপনারা যারা বাইরে ঘোরাঘুরি করছেন, প্রয়োজনে কিংবা অপ্রয়োজনে। তারা কি একবারো বোঝার চেষ্টা করছেন, আপনার অসতর্কতার জন্য আপনাদের প্রাণপ্রিয় পরিবারের সদস্যরা কতটা হুমকির মুখে?’

পুলিশের এই কনস্টেবল আরও বলেন, ‘জ্বর, সর্দি, কাশি নেই তাই ভাইরাস আক্রান্ত নয় ভেবে যাদের সঙ্গে মিশতেছেন, আপনি কিভাবে নিশ্চিত হলেন সেই মানুষটি করোনাভাইরাস পজিটিভ নয়?’

নিজের অভিজ্ঞতা তুলে ধরে স্বাধীন বলেন, ‘আমি নিজে কোনো লক্ষণ ছাড়াই করোনা পজেটিভ হয়ে আছি। এখন পর্যন্ত কোনো রকম লক্ষণ দেখা দেয়নি। তাই সাবধান হোন, বাইরে ঘোরাফেরা থেকে বিরত থাকুন। আর যদি বাইরে আসতেই হয়, আমাদের আইসোলেশন সেন্টারগুলোতে আসুন, তাহলেই বুঝবেন করোনার ভয় কাকে বলে। দয়া করে পরিবারের অন্য সদস্যদের নিরাপত্তার কথা চিন্তা করে হলেও আপনি বাড়িতেই অবস্থান করুন।’

নিউজটি শেয়ার করুন

আপনার মন্তব্য

Your email address will not be published. Required fields are marked *

আপনার ইমেইল এবং অন্যান্য তথ্য সংরক্ষন করুন

ট্যাগস :




হাসপাতালের ‘আইসোলেশন’ থাকার অভিজ্ঞতা জানালেন পুলিশ সদস্য

আপডেট সময় : ১০:৫৫:৪০ পূর্বাহ্ন, বুধবার, ৬ মে ২০২০

অনলাইন ডেস্ক:

স্বাধীন হোসাইন বিপ্লব। পুলিশ সদর দপ্তরের একটি শাখায় কর্মরত এই পুলিশ কনস্টেবলের কোনো উপসর্গ ছিল না। তবুও পরীক্ষায় করোনাভাইরাস পজিটিভ এসেছে। তাই এখন আইসোলেশনে রয়েছেন তিনি।

গতকাল মঙ্গলবার দৈনিক আমাদের সময় অনলাইনের সঙ্গে আলাপকালে নিজের আইসোলেশেনের অভিজ্ঞতা তুলে ধরেন এই পুলিশ সদস্য।

স্বাধীন হোসাইন বিপ্লব বলেন, ‘আইসোলেশন রুমে করোনা পজিটিভ পুলিশ সদস্য রয়েছে তিনজন, এসআই মোস্তাফিজুর, এএসআই সোহাগ ও আমি। গত কয়েকটা দিন খুবই ভালো কাটতেছিল আমাদের। এসআই মোস্তাফিজুর স্যার, উনার সার্ভিস জীবনের মজার মজার ঘটনাগুলো ও বাস্তব অভিজ্ঞতাগুলো আমাদের দুজনের কাছে যখন বলতো, তখন আমরা দুজন অবাক হয়ে শুনতে থাকি। গত সন্ধায় খবর আসল, স্যারের পরিবারের বাকি তিন সদস্যের (স্ত্রী, ছেলে ও মেয়ে) করোনা পজিটিভ হয়েছে। সংবাদটি পাওয়ার সঙ্গে সঙ্গে হাস্যোজ্জ্বল মানুষটির মুখ ফ্যাকাসে হয়ে গেল। আমরা দুজন অনেক চেষ্টা করলাম স্যারকে সাহস দিতে কিন্তু ব্যর্থ হলাম।’

এই পুলিশ সদস্য আরও বলেন, ‘এরপর এশার নামাজ শেষে রাতের খাবার খেয়ে ১১টার দিকে ঘুমাতে গেলাম তিনজন। ঠিক ফজরের আজানের কিছুক্ষণ আগে রুমের ভেতর হঠাৎ শ্বাস-প্রশ্বাসের বিকট শব্দ পেলাম। ঘুম ভেঙে গেল আমাদের। দেখি, মুস্তাফিজুর স্যারের ভীষণ শ্বাসকষ্ট হচ্ছিল। তাড়াহুড়া করে আমরা দুজন মাস্ক লাগিয়ে হাতে গ্লাভস পরে স্যারকে ধরে বসালাম। নার্সকে ফোন করলাম। নার্স দ্রুত একটি পোর্টেবল অক্সিজেন স্যারের মুখে লাগিয়ে দিলেন। আজ (মঙ্গলবার) সকালে স্যারকে আইসিইউ ইউনিটে রেফার্ড করা হয়েছে। যাওয়ার সময় স্যারের মুখের দিকে তাকানো যাচ্ছিল না। হয়তোবা অতিরিক্ত টেনশনে তার এমন অবস্থা। তাই টেনশন ফ্রি থাকার চেষ্টা করছি।’

কীভাবে করোনায় আক্রান্ত হলেন, এ প্রশ্নের উত্তরে স্বাধীন বলেন, ‘আমি হেডকোয়ার্টারে যে শাখায় কাজ করি, সেই শাখার একজন পুলিশের প্রথমে করোনা পজিটিভ ধরা পড়ে। এরপর ওই সেকশনে থাকা আরও পাঁচজনের করোনা টেস্ট করা হয়েছে। এর মধ্যে আমারসহ আরও দুজনের করোনা পজিটিভ এসেছে। তবে কীভাবে কার মাধ্যমে আমি বা আমরা আক্রান্ত হয়েছি, এটা বলা মুশকিল। যেহেতু পুলিশের চাকরি করি, তাই অনেকের সাথেই মিশতে হয়।’

পুলিশ সদস্য স্বাধীন বলেন, ‘আমি ছুটি পেয়ে বাড়িতে যাওয়ার প্রস্তুতি নিচ্ছিলাম। ব্যাগও গুছিয়ে ছিলাম। কিন্তু ভাবলাম বাড়িতে যাওয়ার আগে একবার করোনা টেস্ট করে যাই। আমি শতভাগ নিশ্চিত ছিলাম যে, আমার রেজাল্ট নেগেটিভ আসবে। তাই বাড়িতে বলেছিলাম যে, ছুটি পেয়ে গ্রামে আসছি৷ কিন্তু যেদিন ফলাফল পজেটিভ এসেছে সেদিন প্রথমে একটু খারাপ লাগলেও পরে মানসিক অবস্থা শক্ত করেছি।’

স্বাধীন বলেন, ‘আমি বাবার একমাত্র ছেলে। আমার দুটা ছোট বোন আছে গ্রামের বাড়িতে। এরপরও আবার ঘরে নতুন বউ। তারা সবাই গ্রামের বাড়িতে। পরিবারের কেউ আমাকে ফোন করে, আমিই তাদের সাহস যোগাই। তারা যেন ভেঙে না পড়ে।’

সাধারণ মানুষের উদ্দেশে:

পুলিশ সদস্য স্বাধীন বলেন, ‘আইসোলেশনে থেকেও এত কিছু বলছি শুধুই আপনাদের জন্য। আপনারা যারা বাইরে ঘোরাঘুরি করছেন, প্রয়োজনে কিংবা অপ্রয়োজনে। তারা কি একবারো বোঝার চেষ্টা করছেন, আপনার অসতর্কতার জন্য আপনাদের প্রাণপ্রিয় পরিবারের সদস্যরা কতটা হুমকির মুখে?’

পুলিশের এই কনস্টেবল আরও বলেন, ‘জ্বর, সর্দি, কাশি নেই তাই ভাইরাস আক্রান্ত নয় ভেবে যাদের সঙ্গে মিশতেছেন, আপনি কিভাবে নিশ্চিত হলেন সেই মানুষটি করোনাভাইরাস পজিটিভ নয়?’

নিজের অভিজ্ঞতা তুলে ধরে স্বাধীন বলেন, ‘আমি নিজে কোনো লক্ষণ ছাড়াই করোনা পজেটিভ হয়ে আছি। এখন পর্যন্ত কোনো রকম লক্ষণ দেখা দেয়নি। তাই সাবধান হোন, বাইরে ঘোরাফেরা থেকে বিরত থাকুন। আর যদি বাইরে আসতেই হয়, আমাদের আইসোলেশন সেন্টারগুলোতে আসুন, তাহলেই বুঝবেন করোনার ভয় কাকে বলে। দয়া করে পরিবারের অন্য সদস্যদের নিরাপত্তার কথা চিন্তা করে হলেও আপনি বাড়িতেই অবস্থান করুন।’