ঢাকা ০৫:৪০ পূর্বাহ্ন, শনিবার, ২৭ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ
সংবাদ শিরোনাম :
Logo মানসম্পন্ন শিক্ষা নিশ্চিত করা আমাদের অঙ্গীকারঃ ড. তৌফিক রহমান চৌধুরী  Logo মেট্রোপলিটন ইউনিভার্সিটির নতুন বাসের উদ্বোধন Logo মানসম্পন্ন শিক্ষা নিশ্চিত করতে শিক্ষকদের ভূমিকা অগ্রগণ্য: ভিসি প্রফেসর ড. মোহাম্মদ জহিরুল হক Logo মঙ্গল শোভাযাত্রা – তাসফিয়া ফারহানা ঐশী Logo সাস্টিয়ান ব্রাহ্মণবাড়িয়া এর ইফতার মাহফিল সম্পন্ন Logo কুবির চট্টগ্রাম স্টুডেন্টস ওয়েলফেয়ার এসোসিয়েশনের ইফতার ও পূর্নমিলনী Logo অধ্যাপক জহীর উদ্দিন আহমেদের মায়ের মৃত্যুতে শাবির মহান মুক্তিযুদ্ধের চেতনা ও মুক্ত চিন্তা চর্চায় ঐক্যবদ্ধ শিক্ষকবৃন্দ পরিষদের শোক প্রকাশ Logo শাবির অধ্যাপক জহীর উদ্দিনের মায়ের মৃত্যুতে উপাচার্যের শোক প্রকাশ Logo বিশ কোটিতে গণপূর্তের প্রধান হওয়ার মিশনে ‘ছাত্রদল ক্যাডার প্রকৌশলী’! Logo দূর্নীতির রাক্ষস ফায়ার সার্ভিসের এডি আনোয়ার!




সাংবাদিকরাও মানুষ, তারও জীবনের মায়া আছে ~সাইদুল ইসলাম

প্রতিনিধির নাম
  • আপডেট সময় : ০৬:০৯:১৫ অপরাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ১৬ এপ্রিল ২০২০ ৯২ বার পড়া হয়েছে

সাইদুল ইসলাম;

আমি একজন সংবাদকর্মী। আমার দুটি ছোট ছোট বাচ্চা আছে। ওদের জগৎ জুড়ে বাবা একটা বিরাট ব্যাপার। বাবা মানে ওদের কাছে দিন শেষে অফিস থেকে বাসায় ফিরলে দৌড়ে গিয়ে বাবাকে জড়িয়ে ধরা। দিনভর সুযোগ না হলেও সন্ধ্যায় বাবার হাতে খাওয়া। যতটা সম্ভব বাবার সাথে খেলাধুলা করা। আর রাতে বাবার কাছে গল্প শুনতে শুনতে বাবার গলা জড়িয়ে ঘুমাতে যাওয়া। এই বাবা শুধু আমি একানা। এটা সব বাবারাই করেন। তাহলে আমি কেন এসব লিখছি এখন?

আমি এখন এসব লিখছি, কারণ এখন আমার ভাবনায়, দুর্ভাবনায়, চিন্তায় বা দুশ্চিন্তায় আমার সন্তান, আমার পরিবার আরো বেশি জায়গা নিয়েছে। কারণ, আমি আর এখন বাসায় গেলে আমার সন্তান দৌড়ে আমার কাছে আসলেও তাকে আমি দুরে সরিয়ে দিই। আমার সন্তান আমার হাতে খেতে চাইলে ওকে খাওয়াতে গেলে এখন আমার হাত কাপে। কতদিন আমার সন্তানদের আমি বুকে জড়িয়ে আদর করতে পারিনা। ওদের নরম গালে একটা চুমু খেতে গেলেও আমার বুকটা ভয়ে কাঁপে। রাতে ঘুমাতে গেলেও আমার গল্প শুনতে পারে কিন্তু আমার গলা জড়িয়ে ঘুমাতে পারেনা আমার সন্তনরা। কারণ আমিতো জানিনা আমার শরীরের কোথাও লেগে আছে কিনা সর্বনাশা করোনার বিষ। আমি জানিনা আমার হাতের আদরই ওদের জন্য বড় বিপদ কিনা।এভাবে এখন সময় কাটে একেকজন সংবাদকর্মীর।

এখন পর্যন্ত আমাদের ১২ জনের বেশি সাংবাদিক বন্ধু করোনায় আক্রান্ত। তাদের অনেকের পরিবারের সদস্যরাও আছেন। এককভাবে কোন পেশার এতো মানুষ এখনো আক্রান্ত হয়নি করোনার জীবানুতে। তারপরও সংবাদকর্মীরা চেষ্টা করছে যতটুকু সম্ভব নির্ভরযোগ্য তথ্য আপনাদেও কাছে পৌছে দিতে। আপনার যখন সবাই ঘরে আছেন নিজেকে ও পরিবারকে নিরাপদে রাখতে তখন সাংবাদিকরা এক জায়গা থেকে আরেক জায়গায়, ফার্মেসী থেকে হাসপাতালে ছুটতে পরিস্থিতি তুলে ধরতে। নিজের ও পরিবারের সদস্যদের সব ঝুকি মাথায় নিয়েই তারা ছুটছেন।

অনেকেই হয়তো বলবেন এটা আর এমন কি। আসলে স্বাভাবিক যখন থাকে তখণ এমনই মনে হয়। আপনি সাধারণ সময়ে এভাবে দিনের পর দিন ঘরে বসে থাকতেন? এভাবে সারাদিন নিজের জীবন আর মৃত্যু নিয়ে এতো ভাবতেন? ঠিক গণমাধ্যম আর সাংবাদিকরাও তেমনই। এখন সব টিভি, পত্রিকা চালু আছে বলে আপনার কাছে মনে হতে পারে সাংবাদিকরা কি আর করছে এমন। কিন্তু চোখটা বন্ধ কওে একবার ভাবুন যে বাংলাদেশের কোন টিভি চ্যানেল খবর দিচ্ছেনা। কোন পত্রিকা প্রকাশ হচ্ছে। অনলাইন প্রকাশনাও বন্ধ। তাহলে কেমন হবে?আপনার কি মনে হয় সব ঠিকমত চলবে? ভাবুন একবার।
অনেকই হয়তো বলবেন, স্যোস্যাল মিডিয়াতো আছে। তাদের কাছে খবর পাবো। আপনাকে বলছি। গুজব বাদ দিলে এখ পর্যন্ত স্যোসালমিডিয়ার শতকরা আশি থেকে ৯০ ভাগ তথ্যই মুলধারা মিডিয়া থেকে নেওয়া আর এই তথ্যগুলো তুলে আনেন ছোট ছোট সাংবাদিকরাই। তাই ভাইবেন না যে মুলধারার গণমাধ্যম না থাকলে সব স্বাভাবিক পাবেন।

করোনার এই ক্রান্তিকাল কতজনকে দেখছি সাংবাদিকদের নিয়ে ঠাট্টা মশকরা করেন। কেন তারা বাইরে ঘোওে, কেন তারা হাসপাতালে যায়, কেন তারা এতো লাইভ করেন? আরো কতকি প্রশ্ন? ভাই, সবারই জীবনের মায়া আছে।পরিবারের, সন্তানদের প্রতি ভালবাসা আছে। শখ করে কোনো সাংবাদিক ঝুঁকি নিযে কাজ করেনা। ব্যক্তিগত লাভের জন্যও করেনা।

রানা প্লাজা ধ্বসের কথা মনে আছে? যখন ভবনের নিচে চাপা পড়ে শত শত মানুষের আর্তনাদ তখন সবার আগে ছুটে গেছে একেকজন সংবাদকর্মী। কোন দিকে কোন মানুষটা বেঁচে আছে তা দেখাতে চেষ্টা করেছেন। সারা দিন-রাত নিজের খাওয়া ঘুম আরাম আয়েশকে বাদ দিয়ে লেগে থেকেছেন। মানুষের গলিত লাশের গন্ধে ব্রিফিং বাবুরা যখন কয়েক কিলোমিটার দুরে থেকে ব্রিফিং করে নিজের চেহারা দেখানোর কাজটা ঠিক রাখেন তখন সাংবাদিকরা নিজের বুককে পাথর বানিয়ে সামনে থেকে তুলে এনেছেন সেই সব দৃশ্য। বলবেন, এগুলোর ইমপ্যাক্ট কি? এগুলো না হলে আন্তর্জাতিক মহলে হাজার কোটি ডলারের সহায়তা পেতেননা। এতো তাড়াতাড়ি গার্মেন্টস শিল্প আবার ঘুরে দাঁড়াতোনা। আর সর্বহারা মানুষগুলোও যতটুকু পেয়েছে তা পেতোনা। এখনো তাই, অনেকে অনেক কথা বলছেন। করোনায় যারা দায়িত্ব পালন করছেন সেইসব ডাক্তার, নার্স, স্বাস্থ্যকর্মী, প্রশাসনের কর্মকর্তা কর্মচারি সবার জন্য বিশেষ সুবিধার ঘোষণা দিয়েছে সরকার। ব্যবসায়ী, কৃষকদেও জন্য আছে প্রনোদনা। ব্যাংকাররাও দশদিন অফিস করলেই পাবেন একমাসের অতিরিক্ত বেতন। আমরা এসব চাইনি। আমরা সরকার প্রধানের একটা ধন্যবাদকেও অনেক ভালবাসা হিসেবে দেখেছি। আসলে একজন সত্যিকারের সংবাদকর্মী বোধহয় আর্থিক লাভের চিন্তা থেকে সাংবাদিকতায় আসেননা। আসেন ভাল লাগা থেকে। ভালবাসা থেকে। একটা ভালো রিপোর্ট করে যদি মানুষের উপকার হয় সেটার চেয়ে ভাললাগা একজন সংবাদকর্মীর অন্যকিছুতে নেই। তাইতো নিজের আর পরিবারের সব ঝুঁকি মাথায় নিয়েও একজন সংবাদকর্মী কাজ করছেন করোনার এই মহামারিতে। আমিওতো একজন মানুষ। আমারও ভালবাসা লাগে। বেচে থাকতে গেলে অর্থ লাগে। জীবনের নিরাপত্তা লাগে। আমরা কেউই এসব প্রয়োজরে উর্দ্ধে নই।

আমাদেরকে বলা হয়, রাষ্ট্রের চার নম্বও খুটি। তো, একটা খুঁটি বাদ দিয়ে কি ঘরটা ঠিকমত দাড়িয়ে থাকতে পারবে?
শেষ করব করবো সুকান্তের সেই কবিতাটি দিয়ে;-

আমি যেন সেই বাতিওয়ালা,
যে সন্ধ্যায় রাজপথে-পথে বাতি জ্বালিয়ে ফেরে
অথচ নিজের ঘরে নেই যার বাতি জ্বালার সামর্থ্য,
নিজের ঘরেই জমে থাকে দুঃসহ অন্ধকার।

বাংলাদেশে সাংবাদিকদের জীবন সত্যিই বাতির নিচে অন্ধকার।

সাইদুল ইসলাম
সিনিয়র রিপোর্টার, জিটিভি

নিউজটি শেয়ার করুন

আপনার মন্তব্য

Your email address will not be published. Required fields are marked *

আপনার ইমেইল এবং অন্যান্য তথ্য সংরক্ষন করুন

ট্যাগস :




সাংবাদিকরাও মানুষ, তারও জীবনের মায়া আছে ~সাইদুল ইসলাম

আপডেট সময় : ০৬:০৯:১৫ অপরাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ১৬ এপ্রিল ২০২০

সাইদুল ইসলাম;

আমি একজন সংবাদকর্মী। আমার দুটি ছোট ছোট বাচ্চা আছে। ওদের জগৎ জুড়ে বাবা একটা বিরাট ব্যাপার। বাবা মানে ওদের কাছে দিন শেষে অফিস থেকে বাসায় ফিরলে দৌড়ে গিয়ে বাবাকে জড়িয়ে ধরা। দিনভর সুযোগ না হলেও সন্ধ্যায় বাবার হাতে খাওয়া। যতটা সম্ভব বাবার সাথে খেলাধুলা করা। আর রাতে বাবার কাছে গল্প শুনতে শুনতে বাবার গলা জড়িয়ে ঘুমাতে যাওয়া। এই বাবা শুধু আমি একানা। এটা সব বাবারাই করেন। তাহলে আমি কেন এসব লিখছি এখন?

আমি এখন এসব লিখছি, কারণ এখন আমার ভাবনায়, দুর্ভাবনায়, চিন্তায় বা দুশ্চিন্তায় আমার সন্তান, আমার পরিবার আরো বেশি জায়গা নিয়েছে। কারণ, আমি আর এখন বাসায় গেলে আমার সন্তান দৌড়ে আমার কাছে আসলেও তাকে আমি দুরে সরিয়ে দিই। আমার সন্তান আমার হাতে খেতে চাইলে ওকে খাওয়াতে গেলে এখন আমার হাত কাপে। কতদিন আমার সন্তানদের আমি বুকে জড়িয়ে আদর করতে পারিনা। ওদের নরম গালে একটা চুমু খেতে গেলেও আমার বুকটা ভয়ে কাঁপে। রাতে ঘুমাতে গেলেও আমার গল্প শুনতে পারে কিন্তু আমার গলা জড়িয়ে ঘুমাতে পারেনা আমার সন্তনরা। কারণ আমিতো জানিনা আমার শরীরের কোথাও লেগে আছে কিনা সর্বনাশা করোনার বিষ। আমি জানিনা আমার হাতের আদরই ওদের জন্য বড় বিপদ কিনা।এভাবে এখন সময় কাটে একেকজন সংবাদকর্মীর।

এখন পর্যন্ত আমাদের ১২ জনের বেশি সাংবাদিক বন্ধু করোনায় আক্রান্ত। তাদের অনেকের পরিবারের সদস্যরাও আছেন। এককভাবে কোন পেশার এতো মানুষ এখনো আক্রান্ত হয়নি করোনার জীবানুতে। তারপরও সংবাদকর্মীরা চেষ্টা করছে যতটুকু সম্ভব নির্ভরযোগ্য তথ্য আপনাদেও কাছে পৌছে দিতে। আপনার যখন সবাই ঘরে আছেন নিজেকে ও পরিবারকে নিরাপদে রাখতে তখন সাংবাদিকরা এক জায়গা থেকে আরেক জায়গায়, ফার্মেসী থেকে হাসপাতালে ছুটতে পরিস্থিতি তুলে ধরতে। নিজের ও পরিবারের সদস্যদের সব ঝুকি মাথায় নিয়েই তারা ছুটছেন।

অনেকেই হয়তো বলবেন এটা আর এমন কি। আসলে স্বাভাবিক যখন থাকে তখণ এমনই মনে হয়। আপনি সাধারণ সময়ে এভাবে দিনের পর দিন ঘরে বসে থাকতেন? এভাবে সারাদিন নিজের জীবন আর মৃত্যু নিয়ে এতো ভাবতেন? ঠিক গণমাধ্যম আর সাংবাদিকরাও তেমনই। এখন সব টিভি, পত্রিকা চালু আছে বলে আপনার কাছে মনে হতে পারে সাংবাদিকরা কি আর করছে এমন। কিন্তু চোখটা বন্ধ কওে একবার ভাবুন যে বাংলাদেশের কোন টিভি চ্যানেল খবর দিচ্ছেনা। কোন পত্রিকা প্রকাশ হচ্ছে। অনলাইন প্রকাশনাও বন্ধ। তাহলে কেমন হবে?আপনার কি মনে হয় সব ঠিকমত চলবে? ভাবুন একবার।
অনেকই হয়তো বলবেন, স্যোস্যাল মিডিয়াতো আছে। তাদের কাছে খবর পাবো। আপনাকে বলছি। গুজব বাদ দিলে এখ পর্যন্ত স্যোসালমিডিয়ার শতকরা আশি থেকে ৯০ ভাগ তথ্যই মুলধারা মিডিয়া থেকে নেওয়া আর এই তথ্যগুলো তুলে আনেন ছোট ছোট সাংবাদিকরাই। তাই ভাইবেন না যে মুলধারার গণমাধ্যম না থাকলে সব স্বাভাবিক পাবেন।

করোনার এই ক্রান্তিকাল কতজনকে দেখছি সাংবাদিকদের নিয়ে ঠাট্টা মশকরা করেন। কেন তারা বাইরে ঘোওে, কেন তারা হাসপাতালে যায়, কেন তারা এতো লাইভ করেন? আরো কতকি প্রশ্ন? ভাই, সবারই জীবনের মায়া আছে।পরিবারের, সন্তানদের প্রতি ভালবাসা আছে। শখ করে কোনো সাংবাদিক ঝুঁকি নিযে কাজ করেনা। ব্যক্তিগত লাভের জন্যও করেনা।

রানা প্লাজা ধ্বসের কথা মনে আছে? যখন ভবনের নিচে চাপা পড়ে শত শত মানুষের আর্তনাদ তখন সবার আগে ছুটে গেছে একেকজন সংবাদকর্মী। কোন দিকে কোন মানুষটা বেঁচে আছে তা দেখাতে চেষ্টা করেছেন। সারা দিন-রাত নিজের খাওয়া ঘুম আরাম আয়েশকে বাদ দিয়ে লেগে থেকেছেন। মানুষের গলিত লাশের গন্ধে ব্রিফিং বাবুরা যখন কয়েক কিলোমিটার দুরে থেকে ব্রিফিং করে নিজের চেহারা দেখানোর কাজটা ঠিক রাখেন তখন সাংবাদিকরা নিজের বুককে পাথর বানিয়ে সামনে থেকে তুলে এনেছেন সেই সব দৃশ্য। বলবেন, এগুলোর ইমপ্যাক্ট কি? এগুলো না হলে আন্তর্জাতিক মহলে হাজার কোটি ডলারের সহায়তা পেতেননা। এতো তাড়াতাড়ি গার্মেন্টস শিল্প আবার ঘুরে দাঁড়াতোনা। আর সর্বহারা মানুষগুলোও যতটুকু পেয়েছে তা পেতোনা। এখনো তাই, অনেকে অনেক কথা বলছেন। করোনায় যারা দায়িত্ব পালন করছেন সেইসব ডাক্তার, নার্স, স্বাস্থ্যকর্মী, প্রশাসনের কর্মকর্তা কর্মচারি সবার জন্য বিশেষ সুবিধার ঘোষণা দিয়েছে সরকার। ব্যবসায়ী, কৃষকদেও জন্য আছে প্রনোদনা। ব্যাংকাররাও দশদিন অফিস করলেই পাবেন একমাসের অতিরিক্ত বেতন। আমরা এসব চাইনি। আমরা সরকার প্রধানের একটা ধন্যবাদকেও অনেক ভালবাসা হিসেবে দেখেছি। আসলে একজন সত্যিকারের সংবাদকর্মী বোধহয় আর্থিক লাভের চিন্তা থেকে সাংবাদিকতায় আসেননা। আসেন ভাল লাগা থেকে। ভালবাসা থেকে। একটা ভালো রিপোর্ট করে যদি মানুষের উপকার হয় সেটার চেয়ে ভাললাগা একজন সংবাদকর্মীর অন্যকিছুতে নেই। তাইতো নিজের আর পরিবারের সব ঝুঁকি মাথায় নিয়েও একজন সংবাদকর্মী কাজ করছেন করোনার এই মহামারিতে। আমিওতো একজন মানুষ। আমারও ভালবাসা লাগে। বেচে থাকতে গেলে অর্থ লাগে। জীবনের নিরাপত্তা লাগে। আমরা কেউই এসব প্রয়োজরে উর্দ্ধে নই।

আমাদেরকে বলা হয়, রাষ্ট্রের চার নম্বও খুটি। তো, একটা খুঁটি বাদ দিয়ে কি ঘরটা ঠিকমত দাড়িয়ে থাকতে পারবে?
শেষ করব করবো সুকান্তের সেই কবিতাটি দিয়ে;-

আমি যেন সেই বাতিওয়ালা,
যে সন্ধ্যায় রাজপথে-পথে বাতি জ্বালিয়ে ফেরে
অথচ নিজের ঘরে নেই যার বাতি জ্বালার সামর্থ্য,
নিজের ঘরেই জমে থাকে দুঃসহ অন্ধকার।

বাংলাদেশে সাংবাদিকদের জীবন সত্যিই বাতির নিচে অন্ধকার।

সাইদুল ইসলাম
সিনিয়র রিপোর্টার, জিটিভি