আতঙ্ক গুজব বা মুনফালুভি নয় আসুন মানবিক হই – এইচ আর শফিক
- আপডেট সময় : ০৯:৪৪:৫৬ পূর্বাহ্ন, শনিবার, ২৮ মার্চ ২০২০ ১৬৬ বার পড়া হয়েছে
পৃথিবীর ২০০ দেশে করোনা ভাইরাস মহামারী রূপ নিয়েছে। ছড়িয়ে পড়েছে আতঙ্ক। দেশে দেশে মৃত্যুর মিছিল। অথচ দেশের বাজারে করোনা ভাইরাস থেকে রক্ষা পাওয়ার সুরক্ষা সামগ্রী স্যানিটাইজার মার্কস হ্যান্ডওয়াশ এখন দুর্লভ। হাসপাতালের চিকিৎসক দের নেই সুরক্ষার সামগ্রী সমূহ। শহর ছেড়ে সব মানুষগুলো গ্রামের যাওয়ার প্যানিকে। এই মহামারী মোকাবেলায় কামান বন্ধুক নয় প্রয়জন সুরক্ষা সামগ্রী। বাজারে যখন ভাইরাস মোকাবেলার সুরক্ষা সামগ্রী নেই তবে কতটুকু প্রস্তুত আমরা এই বৈশ্বিক মহামারী ঠেকাতে!
মিশকাত শরীফে বর্ণিত রয়েছে, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, যখন কোন এলাকায় মহামারী ছড়িয়ে পড়ে তখন তোমরা নিজ এলাকায় অবস্থান করবে। মহামারীর এলাকা ছেড়ে যাওয়া আর জিহাদের ময়দান থেকে পালিয়ে যাওয়া সমান অপরাধ। মহামারী ঠেকাতে বর্তমান চিকিৎসা বিজ্ঞানের কৌশল একই ধরনের। সম্প্রতি সময়ে পরিলক্ষিত হচ্ছে যেসব এলাকায় করোনা মহামারী দেখা দিয়েছে সে সমস্ত এলাকা লকডাউন করে দেয়া হচ্ছে। এর মানে এই যে মহামারী এলাকা ছেড়ে মানুষ অন্যত্র এলাকায় ছড়িয়ে পড়ে। তাহলে সেই মহামারী সমস্ত এলাকা তথা পুরো দেশে ছড়িয়ে পড়বে। অথচ খুবই পরিতাপের বিষয় আমরা বাঙালিরা সচেতনতার ধারে কাছেও যেতে ইচ্ছুক না। সম্প্রতি সময়ে আমরা দেখেছি উত্তরার দিয়াবাড়িতে কোয়ারেন্টাইন স্থাপনের দায়িত্ব যখন সেনাবাহিনী পেয়েছে ঠিক তখন স্থানীয় জনসাধারণ রাস্তায় নেমে বাধা দিয়েছে । উত্তরার রিজেন্ট হাসপাতাল যখন স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের সাথে একত্রে এই মহাবারি মোকাবেলায় কাজ করতে ইচ্ছুক ঠিক তখনই স্থানীয় এলাকাবাসী হাসপাতালের দিকে তেড়ে আসে করোনার চিকিৎসা ঘোষণা বন্ধের দাবিতে বিক্ষোভ নিয়ে।করোনা আক্রান্তদের মৃত্যু হলে তাদের দাপন কাপন এর ব্যবস্থা করার জন্য খিলগাঁও কবরস্থান কে প্রস্তুত করার উদ্যোগ নেয়া হলে সেখানে ও এলাকাবাসী বাধা দেয়। আচ্ছা যারা বাধা দিয়েছেন তারা যদি এই মহামারীতে আক্রান্ত হয়ে মারা যান কোথায় কবর হবে আপনার? ভেবেছেন কখনো?
কি দারুন আর্চায্য! সবাই মরতে ভয় পায় কিন্তু অন্যদের মারতে চাই। সারাদেশের সচেতনতার জন্য প্রত্যেকটি মানুষের যখন মাস্ক ব্যবহার অপরিহার্য ঠিক তখনই অসাধু ব্যবসায়ীরা মাস্কের দাম কয়েকশ গুণ বাড়িয়ে দিয়েছে। বাজারে হ্যান্ডওয়াশ স্যানিটাইজার পাওয়া যাচ্ছে না বড় বড় ব্যবসায়ীরা সেগুলো কে মজুদ করে দ্বিগুণ-তিনগুণ দামে বিক্রি করার পায়তারা করছে। করনা আক্রান্তদের মেরে ফেলার উদ্দেশ্যেই এই বাধাপ্রদান এমনকি রাস্তায় অবস্থান। আমরা বাঙালি এতটাই পেনিক জাতি ৫ টাকার মারকস ১০০/১৫০ টাকা বিক্রি করে সুবিধাবাদী ব্যবসায়ীরা। ৪০ টাকার হ্যান্ডওয়াশ ১০০ টাকায় মূল্য বৃদ্ধি করি। নিজেদের জায়গা থেকে আমরা এতটাই স্বার্থপর লোভী জাতি অথচ আমরা পেনিক তুলি করোনা মহামারী এসেছে সাবধান সাবধান। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে বুদ্ধির প্রশ্ন মেলে বসি। উপদেশ দিতে আমরা মহা পারদর্শী এক প্যানিক জাতি। বড্ড আশ্চর্য হই যখন সারা পৃথিবীর উন্নত জনবহুল শহর গুলো লাশের নগরীতে পরিণত হয়েছে। এবং বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা যখন সারা পৃথিবীতে এই মহামারী ছড়িয়ে পড়ার উদ্বেগ জানিয়েছে ঠিক তখন বাংলাদেশ নির্বাচন কমিশন নির্বাচন নামক গণজমায়েত আয়োজনে ছিল নির্লজ্জ প্রত্যয়। অন্যদিকে করোনার ছেয়ে শক্তিশালী আওয়ামীলীগ সহ এমন অসংখ্য জোকারি ভাষণে দেশের এমপি মন্ত্রীগণ মানুষকে সার্কাসের হাসির খোরাক যোগায়। কেউ গুজব কে বিরোধী দলের অপপ্রচার বলেও মিডিয়ায় আসার প্রয়াস দেখায়। হাস্যকর এসব কর্মকাণ্ড দেখে আমরা জাতি হিসেবে হতবাক হই। রাষ্ট্রের সর্বোচ্চ আইডলের মাক্স বিহীন ভোটাধিকার প্রয়োগ করে সামাজিক ও গণমাধ্যমে প্রকাশ করে। জানিনা এতে করে আমরা কি শিখছি? আমরা কতটুকু সচেতন হই? এসব আইডলদের অসংগতিপূর্ণ কীর্তিকলাপ জাতিকে কি শিখাবে?
যে ভয়ানক মহামারীতে আক্রান্ত হলে নিশ্চিত মৃত্যু পরোয়ানা বলা যায় অথচ আমরা বাঙালি সেই মৃত্যু থেকে বাঁচার জন্য কোয়ারান্টাইন অর্থাৎ শোধনাগারে থাকা ব্যক্তিরা কোয়ারান্টাইনের সিলিং ফ্যান চুরি করতে ব্যস্ত থাকি। কি ভয়ঙ্কর কি দস্যু চিন্তা। আরে ভাই বেঁচে থাকার আশায় যেখানে ক্ষীণ সেখানে লোভ কিভাবে মাথাচাড়া দেয় তোমাদের! আমরা জাতি হিসেবে কতটা ভয়নক টা ভাবতে আতকে না উঠে উপায় নেই।
সারা পৃথিবীতে ছড়িয়ে পড়া এই মহামারী করোনাভাইরাস যদি আমাদের দেশেও আঘাত হেনেছে। যদি এই হানা ব্যাপক হারে হয় তাহলে শুধু মৃত্যুর মিছিলেই নয় ভেঙে চুরমার হবে আমাদের অর্থনীতির চাকা। মহা সংকটে পড়বে দেশ। দেশের উন্নয়নের অগ্রযাত্রা। তাই আমরা সুযোক সন্ধানী না হয় পৃথিবীব্যাপী এই ভয়ানক মহামারীর বিরুদ্ধে লড়তে প্রস্তুত হবো সচেতন হবো। মানবিক হব বিবেকবান হব এমনটাই সকলে চেষ্টা করব বলে আশা করি।
আমাদের পার্শ্ববর্তী দেশ ভারতে প্রধানমন্ত্রী ডাকে কয়েকদিন আগেই জনতার কারফিউ পালিত হলো। কি শৃংখল কেউ ঘর থেকে বের হয়নি অথচ আমাদের এই জাতির শৃঙ্খলা রক্ষার জন্য সেনাবাহিনী রাস্তায় নামতে হয়। আমাদের গর্বের সেনাবাহিনী জাতির সকল ক্রান্তিলগ্নে মানুষের পাশে দাঁড়ায়। তাদের দায়িত্ব কর্তব্যের প্রতি প্রতিটি বাঙালির রক্তিম সালাম। কিন্তু পরিতাপের বিষয় একটাই নিজেদের বাঁচার জন্য আমাদেরকে সেনাবাহিনী দিয়ে সচেতনতায় বাধ্য করতে হবে! আর এই তদারকি করতে কোটি কোটি টাকা খরচ করে সেনাবাহিনীকে সারাদেশে মোতায়েন করতে হয়েছে সরকারের।
করোনা মহামারী থেকে নিজেদের রক্ষা করতে এই মুহূর্তে সারা দেশের বাজারে পর্যাপ্ত পরিমাণে স্যানিটাইজার হ্যান্ডওয়াশ, মাস্ক সরবরাহ থাকা অত্যন্ত জরুরী। কিন্তু বাস্তবতা হলো এই যে সারা দেশের পাড়া মহল্লা বাজার ঘুরেও এক পিস স্যানিটাইজার মিলছে না। কিছু ব্র্যান্ডের হ্যান্ড ওয়াস পাওয়া গেলেও দ্বিগুণ দাম বাড়িয়ে দিয়েছে উৎপাদনকারী কোম্পানিগুলো। সামান্য একটি লাইফবয় সাবান সেটিও বাজারে সংকট।
কেন আমাদের দ্বৈত দশা। আচ্ছা কখনো কি ভেবেছেন বিশ্বের এই মহামারী বিশ্ব যুদ্ধের চেয়েও কোন অংশে কম নয় যুদ্ধে তো প্রতিরোধ করে মরা যায় আরে মহামারী অজান্তেই কেড়ে নিচ্ছে হাজারো প্রাণ লাখ লাখ মানুষ আক্রান্ত হচ্ছে এই মহামারী ভাইরাসে। মানুষকে প্রতারণা বা ধোকা দিয়ে আপনি যেই অর্থ অর্জন করছেন সেটি আপনি ভোগ করবেন বেঁচে থাকলে তো? আরে ভাই বাঁচার জন্যই তো একে অন্যের সহায়তায় এগিয়ে আসা খুব প্রয়োজন।
তাই আসুন নিজে বাঁচি অন্যকে বাঁচাই। বিশ্বব্যাপী ভয়াবহ এই মহামারী ভাইরাসকে প্রতিরোধ করতে প্রয়োজনীয় সুরক্ষা পণ্য সহজেই সকল মানুষের হাতে পৌঁছে দেওয়ার ব্যবস্থা করি। সরকারের উচিত এসব সুরক্ষা পণ্য দেশের স্বনামধন্য উৎপাদন প্রতিষ্ঠান কর্তৃক ব্যাপক হারে উৎপাদন করে দেশের বাজারে সহজে পৌঁছে দেওয়ার ব্যবস্থা করা। কারণ এই মহামারী ভাইরাসের বিরুদ্ধে যুদ্ধে কোন কামান বা বন্দুক নয়। প্রয়োজনীয় এসব সুরক্ষা পণ্যই আমাদের এগিয়ে রাখবে।
আজ থেকে এই মন্ত্রে উদ্বুদ্ধ হই- নিচে বাঁচব অপরকে বাঁচাবো। মানবিক হয়ে সকলের পাশে দাঁড়াবো।