ঢাকা ১২:১০ অপরাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ০৫ ডিসেম্বর ২০২৪, ২১ অগ্রহায়ণ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ




বাবা, মা, সন্তানের মায়া ত্যাগ করতে হবে, ‘স্যার আমি প্রস্তুত’

প্রতিনিধির নাম
  • আপডেট সময় : ০৩:২০:২০ অপরাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ২৬ মার্চ ২০২০ ১২৮ বার পড়া হয়েছে

নিজস্ব প্রতিবেদক; 
করোনাভাইরাসের (কোভিড-১৯) প্রাদুর্ভাবের কারণে ইতোমধ্যে দেশে অনানুষ্ঠানিক লকডাউন ঘোষণা করা হয়েছে। দেশে এ পর্যন্ত ৩৯ জন করোনা আক্রান্ত হলেও অনেক প্রবাসীর হদিস না পাওয়ায় এই সংখ্যা আরও বাড়তে পারে বলে ধারণা করা হচ্ছে। এমনকি দেশে মহামারি আকার ধারণও করতে পারে করোনাভাইরাস।

বিভিন্ন নেতিবাচক কর্মকাণ্ডের কারণে পুলিশকে অনেকে অন্যভাবে দেখে। আবার এই পুলিশ সদস্যই যখন জীবনের মায়া ত্যাগ করে জনগণের সেবায় নেমে পড়েন, উদ্ধার অভিযানে অংশ নেন, তখন জনগণেরই বাহবা পান তারা।

দেশের যেকোনো দুর্যোগে সবার মতো এগিয়ে আসে পুলিশও। দেশের চলমান এই দুর্যোগেও অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করতে হবে সরকারের এই বাহিনীকে।

বুধবার (২৫ মার্চ) ঢাকায় করোনার আগাম প্রস্তুতি হিসেবে ৫০ জনের একটি স্পেশাল টিম গঠন করার সিদ্ধান্ত নেয় পুলিশ। যদি কোভিড-১৯ মহামারি আকার ধারণ করে এই টিম আক্রান্তদের হাসপাতালে আনা/নেয়া, মরদেহ সৎকারের কাজ করবে।

ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের (ডিএমপি) ৪৫০ জন পুলিশ কর্মকর্তাকে স্বেচ্ছায় এই টিমে যোগদানের জন্য আহ্বান করা হয়েছিল। যোগদানকারীদের পরিবারের মায়া ত্যাগ করে সিদ্ধান্ত নিতে বলা হয়েছিল। জানা গেছে, সেই আহ্বানে সাড়া দিয়ে ৪৫০ জনের সবাই একসঙ্গে বলে ওঠে ‘স্যার আমি প্রস্তুত’।

পুলিশের দেশপ্রেম নিয়ে বুধবার রাতে এ বিষয়ে একটি পোস্ট দেন ডিএমপির ট্রাফিক বিভাগে কর্মরত একজন সার্জেন্ট। পোস্টটি হুবুহু তুলে ধরা হলো-

‘করোনা প্রতিরোধে ৫০ জন ফোর্সের একটি স্পেশাল টিম গঠন করা হবে। যাদের কাজ হবে করোনা মহামারী আকার ধারণ করলে আক্রান্ত মানুষের হাসপাতালে আনা নেওয়া করা, আক্রান্তে মৃত্যু বরণ করলে তাদের সৎকার করা। সর্বোপরি আক্রান্ত ব্যক্তির সকল দায়িত্ব নেওয়া। তোমরা যারা অংশ গ্রহণ করবা, তাদের সকল পিছুটান ভুলে যেতে হবে। বাবা, মা, স্বামী, সন্তানের মায়া ত্যাগ করতে হবে।

এখন বলো তোমরা কে কে এই স্পেশাল টিমে থাকতে চাও?

প্রায় সাড়ে চারশত উপস্থিত ফোর্স পুলিশ সুপার স্যারের কথা শেষ হওয়ার আগে বলে উঠলো,‘ স্যার আমি প্রস্তুত’

আহ্!

কত গালি, কত উপহাস!

নাহ্ পুলিশের মনোবল কেউ ভাঙতে পারেনি।

আমি গর্বিত আমি পুলিশ,

আমি গর্বিত আমি পুলিশ,

আমি গর্বিত আমি পুলিশ।”

মুহূর্তেই ভাইরাল হয় পোস্টটি। দেশের প্রতি বাংলাদেশ পুলিশের এই অকৃত্রিম ভালোবাসার প্রশংসা করছেন সবাই। ওই কর্মকর্তা জাগো নিউজকে বলেন, ‘বাংলাদেশ পুলিশের সদস্য হিসেবে আমি গর্বিত।’

করোনাভাইরাসের প্রাদুর্ভাব বাংলাদেশেও ছড়িয়ে পড়ছে। রাজধানীর মহাখালীর রোগতত্ত্ব, রোগ নিয়ন্ত্রণ ও গবেষণা ইনস্টিটিউট (আইইডিসিআর) জানায়, ইতোমধ্যে দেশের ৩৯ জন এই ভাইরাসে আক্রান্ত হয়েছেন। তাদের মধ্যে পাঁচজন মারা গেছেন, সুস্থ হয়ে বাড়ি ফিরেছেন সাতজন। এছাড়া আক্রান্তদের বাইরে (আক্রান্ত হতে পারেন এমন) ৪৭ জন আইসোলেশন ও ৪৭ জন প্রাতিষ্ঠানিক কোয়ারেন্টাইনে রয়েছেন।

গত ৩১ ডিসেম্বর চীনের হুবেই প্রদেশের উহানে প্রথমবারের মতো শনাক্ত হয় প্রাণঘাতী করোনাভাইরাস। এরই মধ্যে বিশ্বের অন্তত ১৯৮টি দেশ ও অঞ্চলে ছড়িয়ে পড়েছে এই ভাইরাস। এই প্রতিবেদন লেখা পর্যন্ত এতে আক্রান্তের সংখ্যা দাঁড়িয়েছে চার লাখ ৬৬ হাজার ৭৫৯ জন। মারা গেছেন ২১ হাজার ১৪৮ জন।

নিউজটি শেয়ার করুন

আপনার মন্তব্য

Your email address will not be published. Required fields are marked *

আপনার ইমেইল এবং অন্যান্য তথ্য সংরক্ষন করুন

ট্যাগস :




বাবা, মা, সন্তানের মায়া ত্যাগ করতে হবে, ‘স্যার আমি প্রস্তুত’

আপডেট সময় : ০৩:২০:২০ অপরাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ২৬ মার্চ ২০২০

নিজস্ব প্রতিবেদক; 
করোনাভাইরাসের (কোভিড-১৯) প্রাদুর্ভাবের কারণে ইতোমধ্যে দেশে অনানুষ্ঠানিক লকডাউন ঘোষণা করা হয়েছে। দেশে এ পর্যন্ত ৩৯ জন করোনা আক্রান্ত হলেও অনেক প্রবাসীর হদিস না পাওয়ায় এই সংখ্যা আরও বাড়তে পারে বলে ধারণা করা হচ্ছে। এমনকি দেশে মহামারি আকার ধারণও করতে পারে করোনাভাইরাস।

বিভিন্ন নেতিবাচক কর্মকাণ্ডের কারণে পুলিশকে অনেকে অন্যভাবে দেখে। আবার এই পুলিশ সদস্যই যখন জীবনের মায়া ত্যাগ করে জনগণের সেবায় নেমে পড়েন, উদ্ধার অভিযানে অংশ নেন, তখন জনগণেরই বাহবা পান তারা।

দেশের যেকোনো দুর্যোগে সবার মতো এগিয়ে আসে পুলিশও। দেশের চলমান এই দুর্যোগেও অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করতে হবে সরকারের এই বাহিনীকে।

বুধবার (২৫ মার্চ) ঢাকায় করোনার আগাম প্রস্তুতি হিসেবে ৫০ জনের একটি স্পেশাল টিম গঠন করার সিদ্ধান্ত নেয় পুলিশ। যদি কোভিড-১৯ মহামারি আকার ধারণ করে এই টিম আক্রান্তদের হাসপাতালে আনা/নেয়া, মরদেহ সৎকারের কাজ করবে।

ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের (ডিএমপি) ৪৫০ জন পুলিশ কর্মকর্তাকে স্বেচ্ছায় এই টিমে যোগদানের জন্য আহ্বান করা হয়েছিল। যোগদানকারীদের পরিবারের মায়া ত্যাগ করে সিদ্ধান্ত নিতে বলা হয়েছিল। জানা গেছে, সেই আহ্বানে সাড়া দিয়ে ৪৫০ জনের সবাই একসঙ্গে বলে ওঠে ‘স্যার আমি প্রস্তুত’।

পুলিশের দেশপ্রেম নিয়ে বুধবার রাতে এ বিষয়ে একটি পোস্ট দেন ডিএমপির ট্রাফিক বিভাগে কর্মরত একজন সার্জেন্ট। পোস্টটি হুবুহু তুলে ধরা হলো-

‘করোনা প্রতিরোধে ৫০ জন ফোর্সের একটি স্পেশাল টিম গঠন করা হবে। যাদের কাজ হবে করোনা মহামারী আকার ধারণ করলে আক্রান্ত মানুষের হাসপাতালে আনা নেওয়া করা, আক্রান্তে মৃত্যু বরণ করলে তাদের সৎকার করা। সর্বোপরি আক্রান্ত ব্যক্তির সকল দায়িত্ব নেওয়া। তোমরা যারা অংশ গ্রহণ করবা, তাদের সকল পিছুটান ভুলে যেতে হবে। বাবা, মা, স্বামী, সন্তানের মায়া ত্যাগ করতে হবে।

এখন বলো তোমরা কে কে এই স্পেশাল টিমে থাকতে চাও?

প্রায় সাড়ে চারশত উপস্থিত ফোর্স পুলিশ সুপার স্যারের কথা শেষ হওয়ার আগে বলে উঠলো,‘ স্যার আমি প্রস্তুত’

আহ্!

কত গালি, কত উপহাস!

নাহ্ পুলিশের মনোবল কেউ ভাঙতে পারেনি।

আমি গর্বিত আমি পুলিশ,

আমি গর্বিত আমি পুলিশ,

আমি গর্বিত আমি পুলিশ।”

মুহূর্তেই ভাইরাল হয় পোস্টটি। দেশের প্রতি বাংলাদেশ পুলিশের এই অকৃত্রিম ভালোবাসার প্রশংসা করছেন সবাই। ওই কর্মকর্তা জাগো নিউজকে বলেন, ‘বাংলাদেশ পুলিশের সদস্য হিসেবে আমি গর্বিত।’

করোনাভাইরাসের প্রাদুর্ভাব বাংলাদেশেও ছড়িয়ে পড়ছে। রাজধানীর মহাখালীর রোগতত্ত্ব, রোগ নিয়ন্ত্রণ ও গবেষণা ইনস্টিটিউট (আইইডিসিআর) জানায়, ইতোমধ্যে দেশের ৩৯ জন এই ভাইরাসে আক্রান্ত হয়েছেন। তাদের মধ্যে পাঁচজন মারা গেছেন, সুস্থ হয়ে বাড়ি ফিরেছেন সাতজন। এছাড়া আক্রান্তদের বাইরে (আক্রান্ত হতে পারেন এমন) ৪৭ জন আইসোলেশন ও ৪৭ জন প্রাতিষ্ঠানিক কোয়ারেন্টাইনে রয়েছেন।

গত ৩১ ডিসেম্বর চীনের হুবেই প্রদেশের উহানে প্রথমবারের মতো শনাক্ত হয় প্রাণঘাতী করোনাভাইরাস। এরই মধ্যে বিশ্বের অন্তত ১৯৮টি দেশ ও অঞ্চলে ছড়িয়ে পড়েছে এই ভাইরাস। এই প্রতিবেদন লেখা পর্যন্ত এতে আক্রান্তের সংখ্যা দাঁড়িয়েছে চার লাখ ৬৬ হাজার ৭৫৯ জন। মারা গেছেন ২১ হাজার ১৪৮ জন।