সাবেক এমপি সাবিনার প্রশ্ন, পুলিশ কেন আমাকে জিজ্ঞাসাবাদ করবে?
- আপডেট সময় : ০৮:২৪:১৮ পূর্বাহ্ন, সোমবার, ২ মার্চ ২০২০ ৭৮ বার পড়া হয়েছে
নিজস্ব প্রতিবেদক।
‘পুলিশ আমাকে জিজ্ঞাসাবাদ করবে কেন? আমি কি অন্যায় করেছি? আমি রাজনীতি করি। সেই সূত্রে পাপিয়া কেন, সারা দেশে দলের আরো অনেক নেতাকর্মীর সঙ্গে যোগাযোগ থাকবে। এটাই সত্য। এর বাইরে পাপিয়াকে জিজ্ঞাসাবাদের সূত্রে আমাকে নিয়ে যা যা বলা হচ্ছে, লেখা হচ্ছে তার কোনো সত্যতা নাই।’ গতকাল রবিবার বিকেলে সংবাদ মাধ্যমকে এ কথা বলেন ঢাকায় সংরক্ষিত নারী আসনের সাবেক সংসদ সদস্য (এমপি) সাবিনা আক্তার তুহিন।
যুব মহিলা লীগ নেত্রী (বহিষ্কৃত) শামীমা নূর পাপিয়ার রাজনীতিতে উত্থান ও তাঁকে আশ্রয়-প্রশ্রয় দেওয়ার পেছনে সাবিনা আক্তারসহ নরসিংদী এবং ঢাকার বর্তমান ও সাবেক দুই সংসদ সদস্যের নাম এসেছে। ‘পাপিয়ার মামলার তদন্তের স্বার্থে পুলিশ আপনাকে জিজ্ঞাসাবাদ করেছে কি না’ জানতে চাইলে সাবিনা আক্তার এসব কথা বলেন।
রিমান্ডে তাঁকে জড়িয়ে পাপিয়ার দেওয়া তথ্যের বিষয়ে সাবিনা আক্তার আরো বলেন, ‘আমার সৎসাহস আছে। আমি অন্যায় করলে, কোনো প্রমাণ থাকলে তার দায় আমি নিতে রাজি আছি। তাই বলে মিথ্যা তথ্য ছড়িয়ে আমাকে সমাজে কালার করার কোনো মানে হয় না। আমার কোনো অপরাধ থাকলে, তদন্তের স্বার্থে পুলিশ যদি আমার সহযোগিতা চায় আমি তাদের সহযোগিতা করব।’
রিমান্ডে পাপিয়াকে জিজ্ঞাসাবাদের বিষয়ে জানতে চাইলে ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশের যুগ্ম কমিশনার মাহবুব আলম বলেন, ‘পাপিয়াসহ অন্যদের জিজ্ঞাসাবাদ অব্যাহত আছে। এরই মধ্যে তারা অনেক গুরুত্বপূর্ণ তথ্য দিয়েছে। তদন্তের স্বার্থে সেসব তথ্য জানানো যাচ্ছে না। তবে পাপিয়ার তথ্যের সত্যতা জানতে ও তদন্তের প্রয়োজনে আরো অনেককে জিজ্ঞাসাবাদ করা হবে।’
ঢাকা মহানগর পুলিশের গোয়েন্দা বিভাগের (ডিবি) একটি সূত্র জানিয়েছে, বহিষ্কৃত যুব মহিলা লীগ নেত্রী পাপিয়ার মতো আরো অনেক ‘পাপিয়ার’ সন্ধান করছেন আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যরা। রিমান্ডে পাপিয়া যুব মহিলা লীগের অনেক নেত্রীর নাম বলেছেন। তাঁরাও সংগঠনের নাম ভাঙিয়ে অনেক অপকর্ম করেছেন বলে তাঁর কাছ থেকে তথ্য পেয়ে যাচাই-বাছাই চলছে। তবে জিজ্ঞাসাবাদে পাপিয়া বরাবরই বলে আসছেন, যুব মহিলা লীগের তিন শীর্ষ নেত্রীর হাত ধরেই অপরাধজগতে তাঁর বিস্তার ঘটে।
এদিকে জাল টাকা সরবরাহ, মাদক কারবার ও অনৈতিক কাজের অভিযোগে গ্রেপ্তার পাপিয়ার দুই সহযোগীর ফের পাঁচ দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেছেন আদালত। তাঁরা হলেন সাব্বির খন্দকার (২৯) ও শেখ তায়্যিবা নূর (২২)। গতকাল পাঁচ দিনের রিমান্ড শেষে মামলার তদন্ত কর্মকর্তা গোয়েন্দা পুলিশের পরিদর্শক মো. সাইফুল ইসলাম তাঁদের আবার ১০ দিনের রিমান্ডের আবেদন করেন। শুনানি শেষে ঢাকা মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট মোহাম্মদ দিদার হোসাইন পাঁচ দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেন।
এর আগে গত ২৪ ফেব্রুয়ারি বিমানবন্দর থানায় দায়ের করা একটি মামলায় পাপিয়াসহ চারজনের পাঁচ দিন করে রিমান্ড মঞ্জুর করেন আদালত। একই সঙ্গে ওই দিন শেরেবাংলানগর থানার মাদক ও অস্ত্র আইনে দায়ের করা পৃথক দুই মামলায় পাপিয়া ও তাঁর স্বামী মতি সুমনের পাঁচ দিন করে ১০ দিন রিমান্ড মঞ্জুর করেন আদালত।
গত ২২ ফেব্রুয়ারি হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর থেকে পাপিয়াসহ চারজনকে গ্রেপ্তার করে র্যাব-১-এর দল। তারা অবৈধ অস্ত্র ও মাদক কারবার, চাঁদাবাজি, নানা অনৈতিক কাজ, জাল নোট সরবরাহ, রাজস্ব ফাঁকি, অর্থপাচারসহ বিভিন্ন অপরাধে জড়িত বলে জানায় র্যাব। পরে পাপিয়া ও তাঁর স্বামীর তথ্য অনুযায়ী গত ২৩ ফেব্রুয়ারি ভোরে একটি অভিজাত হোটেলে পাপিয়ার নামে বুক করা বিলাসবহুল ‘প্রেসিডেনশিয়াল স্যুট’ এবং ফার্মগেট এলাকার দুটি ফ্ল্যাটে অভিযান চালিয়ে একটি বিদেশি পিস্তল, দুটি ম্যাগাজিন, ২০ রাউন্ড গুলি, পাঁচ বোতল বিদেশি মদ ও নগদ ৫৮ লাখ ৪১ হাজার টাকা, পাঁচটি পাসপোর্ট, তিনটি ব্যাংকের চেক বই, কিছু বিদেশি মুদ্রা, বিভিন্ন ব্যাংকের ১০টি এটিএম কার্ড উদ্ধার করে র্যাব।