সিটি নির্বাচনে দশগুণ ভোট বেড়েছে কমিউনিস্ট পার্টির

- আপডেট সময় : ১১:১২:২৬ পূর্বাহ্ন, রবিবার, ২ ফেব্রুয়ারী ২০২০ ১৮৫ বার পড়া হয়েছে

সিয়াম সারোয়ার জামিল;
ঢাকা সিটি করপোরেশন নির্বাচনে ভোট বেড়েছে বাংলাদেশের কমিউনিস্ট পার্টির (সিপিবি)। দেশের প্রাচীনতম দলটি সদ্য শেষ হওয়া নির্বাচনে শুধু উত্তর সিটিতে অংশ নেয়। এর আগে ২০১৫ সালের নির্বাচনে উত্তর সিটিতেই অংশ নিয়েছিল দলটি। তবে প্রদত্ত ভোটে শতাংশ বিবেচনায় ওই নির্বাচনের চেয়ে এবার দশগুণ বেশি ভোট পেয়েছে সিপিবি।
এবারের নির্বাচনে সিপিবির মনোনয়ন পেয়েছিলেন দলটির কেন্দ্রীয় নেতা ডা: আহাম্মদ সাজেদুল হক রুবেল। তিনি এবার দলীয় কাস্তে প্রতীক নিয়ে ভোট পেয়েছেন ১৫১২২ ভোট। গত উত্তর সিটি নির্বাচনে সিপিবির মনোনয়ন পেয়েছিলেন দলটির আরেক কেন্দ্রীয় নেতা আব্দুল্লাহ আল ক্বাফি রতন। তিনি হাতি মার্কা নিয়ে পেয়েছিলেন ২৪৭৫ ভোট।
ভোটের ফল বিশ্লেষণ করে দেখা গেছে, ২০১৫ সালের উত্তর সিটি নির্বাচনে বৈধ ভোট পড়েছিল ৮৪১০০০টি। এর মধ্যে সিপিবি পেয়েছিল শুন্য দশমিক ২৯ শতাংশ। অন্যদিকে, ইভিএমে এবার বৈধ ভোট পড়েছে ৭ লাখ ৬০ হাজার ৬৫৮। প্রদত্ত ভোটের মধ্যে ১ দশমিক ৯৯ শতাংশ ভোট পেয়েছে সিপিবি। যা আগের চেয়ে প্রায় দশ গুণ বেশি।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, দলীয় প্রতীকে এবারই প্রথম সিটি নির্বাচনে অংশ নিলো সিপিবি। এর আগে ২০১৫ সালের নির্বাচনে অংশ নিয়েছিলো তারা। তবে সেবার দলীয় প্রতীকে নির্বাচন হয়নি। ওইবার বাম রাজনৈতিক দলগুলোর একক প্রার্থী ছিল না। উত্তর সিটিতে সিপিবির আব্দুল্লাহ আল ক্বাফি রতন ছাড়াও অংশ নিয়েছিলেন গণসংহতির জোনায়েদ সাকি। তিনি টেলিস্কোপ মার্কা নিয়ে পেয়েছিলেন ৭৩৭০ ভোট।
এবারের নির্বাচনে ঢাকা উত্তরে নৌকা প্রতীক নিয়ে আওয়ামী লীগের মো. আতিকুল ইসলাম নৌকা প্রতীকে ৪ লাখ ৪৭ হাজার ২১১ ভোট, বিএনপির তাবিথ আউয়াল ২ লাখ ৬৪ হাজার ১৬১ ভোট, হাতপাখা প্রতীকে ইসলামী আন্দোলনের শেখ ফজলে বারী মাসউদ ২৮ হাজার ২০০ ভোট, কাস্তে প্রতীকে বাংলাদেশের কমিউনিস্ট পার্টির (সিপিবি) প্রার্থী ডা: আহাম্মদ সাজেদুল হক রুবেল পেয়েছেন ১৫ হাজার ১২২ ভোট। ছয় প্রার্থীর মধ্যে প্রাপ্ত ভোট বিবেচনায় সিপিবি প্রার্থী চতুর্থ সর্বোচ্চ ভোট পেয়েছেন।
জানা গেছে, ১৯৪৮ সালে প্রতিষ্ঠিত বাংলাদেশের কমিউনিস্ট পার্টি (সিপিবি) স্বাধীনতার পর বেশ কয়েকবার সিটি নির্বাচনে অংশ নিয়েছে। তবে দলটি কখনই জয় পায়নি। ২০০৮ সালে আওয়ামী লীগ সরকার ক্ষমতায় আসার পর ঢাকা সিটি করপোরেশন ভেঙে উত্তর ও দক্ষিণ অংশ বিভক্ত করা হয়। এরপর প্রথমবারের মতো ২০১৫ সালে ঢাকা উত্তর সিটি নির্বাচনে অংশ নেয় দলটি। দক্ষিণে নিজেরা অংশ না নিলেও বামজোটের প্রার্থীকে সমর্থন দেয় দলটি। এরপর ঢাকা উত্তরের মেয়র আনিসুল হক মারা গেলে উপ-নির্বাচন হয়। এতে অংশ নেয়নি সিপিবি।
এবারের নির্বাচনে দলের ভোটবৃদ্ধিকে কীভাবে দেখেছেন-এমন প্রশ্নে সিপিবির সভাপতি মুজাহিদুল ইসলাম সেলিম আরটিভি অনলাইনকে বলেন, ভোটের ফলাফলে যে সংখ্যাটা দেখানো হয়েছে, সেটা প্রকৃত সংখ্যা নয়। বাস্তবে এই ভোট আরও বেশি। এই ভোটে সিপিবির শক্তি, জনসমর্থন দুটোই বেড়েছে। এর কারণ হচ্ছে, আওয়ামী লীগ ও বিএনপির আচরণে জনগণ বিরক্ত, ক্ষুব্ধ। তাদের কর্মকাণ্ডে মানুষ আর আস্থা রাখতে পারছে না। জনগণ এর মধ্য দিয়ে বিকল্প শক্তির প্রতি সমর্থন ব্যক্ত করেছে বলেও দাবি করেন তিনি।
ভোট বাড়লেও নির্বাচনে সিপিবি কেন জয় পাচ্ছে না এমন প্রশ্নে সেলিম বলেন, টাকার খেলা, পেশিশক্তি এবং অসম প্রতিযোগিতার মধ্যে পুরো নির্বাচনটি হয়েছে। তার মধ্যে সিপিবির ১৫ হাজার ১২২ ভোট অনেক কষ্টের অর্জন। আমাদের একটা একটা করে ভোট অর্জন করতে হয়েছে। ভোটারদের দ্বারে দ্বারে ছুটতে হয়েছে। নিজেদের ভোটের অধিকার আদায় করে নিতে হয়েছে। তার মধ্যেও এই ১৫ হাজার ভোটারকে রুখে দিতে পারেনি ক্ষমতাসীনরা।
ডাকসুর সাবেক এই ভিপি বলেন, সিপিবির পোলিং এজেন্টদের বের করে দিয়ে, সাংবাদিকদের মারধর করে, ভোটারদের সম্পূর্ণ গোপনীয়তা লঙ্ঘন করে বুথের মধ্যে ঢুকে ঢুকে ক্যাডারদের দিয়ে নৌকা প্রতীক ভোট দেয়া হয়েছে। আমাদের অনেক ভোটারকে ভোট দিতে দেয়া হয়নি। হুমকি ধামকি দিয়ে ভোটকেন্দ্র থেকে বের করে দেয়া হয়েছে। নইলে প্রাপ্ত ফলাফলে এই সংখ্যা আরও বাড়তো বলেও দাবি করেন প্রবীণ এই রাজনীতিক।