ঢাকা ০৬:১৪ অপরাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ১৮ এপ্রিল ২০২৪, ৫ বৈশাখ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ
সংবাদ শিরোনাম :
Logo মঙ্গল শোভাযাত্রা – তাসফিয়া ফারহানা ঐশী Logo সাস্টিয়ান ব্রাহ্মণবাড়িয়া এর ইফতার মাহফিল সম্পন্ন Logo কুবির চট্টগ্রাম স্টুডেন্টস ওয়েলফেয়ার এসোসিয়েশনের ইফতার ও পূর্নমিলনী Logo অধ্যাপক জহীর উদ্দিন আহমেদের মায়ের মৃত্যুতে শাবির মহান মুক্তিযুদ্ধের চেতনা ও মুক্ত চিন্তা চর্চায় ঐক্যবদ্ধ শিক্ষকবৃন্দ পরিষদের শোক প্রকাশ Logo শাবির অধ্যাপক জহীর উদ্দিনের মায়ের মৃত্যুতে উপাচার্যের শোক প্রকাশ Logo বিশ কোটিতে গণপূর্তের প্রধান হওয়ার মিশনে ‘ছাত্রদল ক্যাডার প্রকৌশলী’! Logo দূর্নীতির রাক্ষস ফায়ার সার্ভিসের এডি আনোয়ার! Logo ঝড় ও শিলাবৃষ্টিতে ক্ষতি হওয়া শাহজালাল বিশ্ববিদ্যালয়ে অবকাঠামোর সংস্কার শুরু Logo বুয়েটে নিয়মতান্ত্রিক ছাত্র রাজনীতির দাবিতে শাবিপ্রবি ছাত্রলীগের মানববন্ধন Logo কুবি উপাচার্যের বক্তব্যের প্রমাণ দিতে শিক্ষক সমিতির সাত দিনের আল্টিমেটাম




ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয় অনির্দিষ্টকালের জন্য বন্ধ ঘোষণা

প্রতিনিধির নাম
  • আপডেট সময় : ০৯:৩৯:০৯ পূর্বাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ৩০ জানুয়ারী ২০২০ ১৩৪ বার পড়া হয়েছে

Islamic University declares closure indefinitely, orders to leave the hall

সীতাকুণ্ড প্রতিনিধি | দিনভর শিক্ষক ও শিক্ষার্থীদের আন্দোলনের মুখে সীতাকুণ্ডে অবস্থিত আন্তর্জাতিক ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয় চট্টগ্রাম (আইআইইউসি) অনির্দিষ্টকালের জন্য বন্ধ ঘোষণা করেছে কর্তৃপক্ষ। এছাড়াও বুধবার রাত নয়টার মধ্যে ছাত্রদের আবাসিক হল ছাড়ার নির্দেশ দেওয়া হয়।

বুধবার (২৯ জানুয়ারি) বিকেলে বিশ্ববিদ্যালয়ের জরুরি সিন্ডিকেট সভা এ সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে বলে জানিয়েছেন ভারপ্রাপ্ত প্রক্টর নিজাম উদ্দিন।

এদিকে, হঠাৎ আবাসিক হল বন্ধ ঘোষণায় বিপাকে পড়েছে হলে থাকা চার শতাধিক ছাত্র। বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে, ওই শিক্ষার্থীদের বিশ্ববিদ্যালয়ের যানবাহনে করে চট্টগ্রাম নগরে পৌঁছানোর ব্যবস্থা করা হয়েছে। বিশ্ববিদ্যালয় সূত্র জানায়, গত সোমবার রাতে বিশ্ববিদ্যালয়টির উসমান (রা.) হলের মো. আদনান নামে শরিয়াহ অনুষদের দ্বিতীয় সেমিস্টারের এক ছাত্রকে শিবির সন্দেহে মারধর করেন ছাত্রলীগ পরিচয়ধারী কয়েক জন ছাত্র। পরে শিক্ষকেরা এসে তাঁকে উদ্ধার করে হাসপাতালে ভর্তি করান। এর কিছুদিন আগে ইলেকট্রিক্যাল অ্যান্ড ইলেকট্রনিক ইঞ্জিনিয়ারিং (ইইই) বিভাগের এক শিক্ষককে লাঞ্ছিত করা হয়। ভাঙচুর করা হয় বিভাগের কার্যালয়।

বিশ্ববিদ্যালয় সূত্রে জানা গেছে, ১০ থেকে ১৫ শিক্ষার্থী এ ঘটনার সঙ্গে জড়িত। তাদের মধ্যে কয়েকজন বিগত দিনে কিছু বিষয়ের পরীক্ষায় অনুত্তীর্ণ হলেও তাদের উত্তীর্ণ করানোর জন্য বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনকে চাপ দিয়ে আসছিল। এ ঘটনার সূত্র ধরেই ওই শিক্ষককে লাঞ্ছিত করেন তারা।

প্রত্যক্ষদর্শীরা জানিয়েছেন, এসব ঘটনার জেরে বুধবার সকাল ১০টার দিকে শিক্ষকেরা ব্যানার–ফেস্টুন নিয়ে বিশ্ববিদ্যালয়টির কেন্দ্রীয় লাইব্রেরির সামনে মানববন্ধন করেন। পরে বেলা পৌনে একটার কেন্দ্রীয় লাইব্রেরির সামনে শিক্ষকদের স্মারকলিপি দেওয়ার জন্য জড়ো হন বেশ কিছু শিক্ষার্থী। এ সময় তাঁদের ওপর কয়েকজন হামলা চালান। এরপর শিক্ষকেরা এসে দুই পক্ষকে শান্ত করেন।

এ পরিস্থিতি বেলা তিনটার দিকে জরুরি সিন্ডিকেট সভা বসে। আন্দোলনকারী শিক্ষকদের মধ্যে একজন বিবিএ বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক নাজমুল হক। তিনি বলেন, কিছু ছাত্র-অছাত্র মিলে বিশ্ববিদ্যালয়টিকে অস্থিতিশীল করে তুলেছে। বারবার শিক্ষক-শিক্ষার্থীদের ওপর হামলায় শিক্ষকেরা নিজেদের নিরাপত্তা নিয়ে শঙ্কিত।

বিকেল চারটার দিকে বিশ্ববিদ্যালয়টির নোটিশ বোর্ডে রেজিস্ট্রার কর্নেল (অব.) মো. কাশেম স্বাক্ষরিত দুটি নোটিশ টাঙানো হয়। নোটিশের একটি লেখা রয়েছে, অনিবার্য কারণবশত পরবর্তী নির্দেশ না দেওয়া পর্যন্ত বিশ্ববিদ্যালয়ের আবাসিক হল বন্ধ ঘোষণা করা হয়েছে। বিদেশি শিক্ষার্থীরা ছাড়া সব ছাত্রকে বুধবার রাত নয়টার মধ্যে হল ছেড়ে দিতে বলা হয়। আর দ্বিতীয় নোটিশে পরবর্তী নির্দেশ না দেওয়া পর্যন্ত স্নাতক ও স্নাতকোত্তর শ্রেণির কার্যক্রম বন্ধ ঘোষণা করা হয়।

রেজিস্ট্রার কর্নেল (অব.) মো. কাশেম বলেন, বেলা তিনটায় সিন্ডিকেট সভা শুরু হয়। সভায় কয়েকটি ঘটনা উপস্থাপন করা হয়েছে। এর মধ্যে ইইই বিভাগের কার্যালয় ভাঙচুর, শিক্ষক লাঞ্ছিত ও গত সোমবার শিক্ষার্থীকে মারধরের ঘটনা আলোচনা হয়েছে। সভা চলাকালীন শতাধিক শিক্ষক ও শিক্ষার্থীরা আলাদাভাবে স্মারকলিপি দিয়েছে। সবকিছু বিবেচনায় বিশ্ববিদ্যালয় হল ও শ্রেণি কার্যক্রম বন্ধ রাখার সিদ্ধান্ত হয়।

বুধবার সন্ধ্যা সাড়ে সাতটার দিকে আবাসিক হল ছাড়ার প্রস্তুতি নিচ্ছিলেন ইউছুপ জামিল নামে আবু বক্কর (রা.) হলের কোরানিক সায়েন্স বিভাগের ছাত্র। তিনি বলেন, তাঁর বাড়ি কিশোরগঞ্জে। তিনি হল ছাড়ার নোটিশ দেখতে পেয়েছেন সন্ধ্যা ছয়টায়। শীতের রাত কীভাবে বাড়ি পৌঁছাবেন, তা বুঝতে পারছেন না। কর্তৃপক্ষ এক দিন সময় দিলে তাঁরা নিরাপদে যেতে পারতেন। এ ছাড়া পিতা-মাতা শুনলে দুশ্চিন্তা করবেন।

এ বিষয়ে রেজিস্ট্রার বলেন, ছাত্রদের কিছুটা দুর্ভোগ হবে সত্যি। তবুও বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ তাঁদের চট্টগ্রাম নগরে পৌঁছে দেবে।

সীতাকুণ্ড থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) ফিরোজ হোসেন মোল্লা বলেন, কোনও ধরনের বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি যেন না হয়, সে জন্য বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে পুলিশ মোতায়েন করা হয়েছে। সব ছাত্র হল ছাড়ার পর পুলিশ তুলে নেওয়া হবে।

নিউজটি শেয়ার করুন

আপনার মন্তব্য

Your email address will not be published. Required fields are marked *

আপনার ইমেইল এবং অন্যান্য তথ্য সংরক্ষন করুন

ট্যাগস :




ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয় অনির্দিষ্টকালের জন্য বন্ধ ঘোষণা

আপডেট সময় : ০৯:৩৯:০৯ পূর্বাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ৩০ জানুয়ারী ২০২০

সীতাকুণ্ড প্রতিনিধি | দিনভর শিক্ষক ও শিক্ষার্থীদের আন্দোলনের মুখে সীতাকুণ্ডে অবস্থিত আন্তর্জাতিক ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয় চট্টগ্রাম (আইআইইউসি) অনির্দিষ্টকালের জন্য বন্ধ ঘোষণা করেছে কর্তৃপক্ষ। এছাড়াও বুধবার রাত নয়টার মধ্যে ছাত্রদের আবাসিক হল ছাড়ার নির্দেশ দেওয়া হয়।

বুধবার (২৯ জানুয়ারি) বিকেলে বিশ্ববিদ্যালয়ের জরুরি সিন্ডিকেট সভা এ সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে বলে জানিয়েছেন ভারপ্রাপ্ত প্রক্টর নিজাম উদ্দিন।

এদিকে, হঠাৎ আবাসিক হল বন্ধ ঘোষণায় বিপাকে পড়েছে হলে থাকা চার শতাধিক ছাত্র। বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে, ওই শিক্ষার্থীদের বিশ্ববিদ্যালয়ের যানবাহনে করে চট্টগ্রাম নগরে পৌঁছানোর ব্যবস্থা করা হয়েছে। বিশ্ববিদ্যালয় সূত্র জানায়, গত সোমবার রাতে বিশ্ববিদ্যালয়টির উসমান (রা.) হলের মো. আদনান নামে শরিয়াহ অনুষদের দ্বিতীয় সেমিস্টারের এক ছাত্রকে শিবির সন্দেহে মারধর করেন ছাত্রলীগ পরিচয়ধারী কয়েক জন ছাত্র। পরে শিক্ষকেরা এসে তাঁকে উদ্ধার করে হাসপাতালে ভর্তি করান। এর কিছুদিন আগে ইলেকট্রিক্যাল অ্যান্ড ইলেকট্রনিক ইঞ্জিনিয়ারিং (ইইই) বিভাগের এক শিক্ষককে লাঞ্ছিত করা হয়। ভাঙচুর করা হয় বিভাগের কার্যালয়।

বিশ্ববিদ্যালয় সূত্রে জানা গেছে, ১০ থেকে ১৫ শিক্ষার্থী এ ঘটনার সঙ্গে জড়িত। তাদের মধ্যে কয়েকজন বিগত দিনে কিছু বিষয়ের পরীক্ষায় অনুত্তীর্ণ হলেও তাদের উত্তীর্ণ করানোর জন্য বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনকে চাপ দিয়ে আসছিল। এ ঘটনার সূত্র ধরেই ওই শিক্ষককে লাঞ্ছিত করেন তারা।

প্রত্যক্ষদর্শীরা জানিয়েছেন, এসব ঘটনার জেরে বুধবার সকাল ১০টার দিকে শিক্ষকেরা ব্যানার–ফেস্টুন নিয়ে বিশ্ববিদ্যালয়টির কেন্দ্রীয় লাইব্রেরির সামনে মানববন্ধন করেন। পরে বেলা পৌনে একটার কেন্দ্রীয় লাইব্রেরির সামনে শিক্ষকদের স্মারকলিপি দেওয়ার জন্য জড়ো হন বেশ কিছু শিক্ষার্থী। এ সময় তাঁদের ওপর কয়েকজন হামলা চালান। এরপর শিক্ষকেরা এসে দুই পক্ষকে শান্ত করেন।

এ পরিস্থিতি বেলা তিনটার দিকে জরুরি সিন্ডিকেট সভা বসে। আন্দোলনকারী শিক্ষকদের মধ্যে একজন বিবিএ বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক নাজমুল হক। তিনি বলেন, কিছু ছাত্র-অছাত্র মিলে বিশ্ববিদ্যালয়টিকে অস্থিতিশীল করে তুলেছে। বারবার শিক্ষক-শিক্ষার্থীদের ওপর হামলায় শিক্ষকেরা নিজেদের নিরাপত্তা নিয়ে শঙ্কিত।

বিকেল চারটার দিকে বিশ্ববিদ্যালয়টির নোটিশ বোর্ডে রেজিস্ট্রার কর্নেল (অব.) মো. কাশেম স্বাক্ষরিত দুটি নোটিশ টাঙানো হয়। নোটিশের একটি লেখা রয়েছে, অনিবার্য কারণবশত পরবর্তী নির্দেশ না দেওয়া পর্যন্ত বিশ্ববিদ্যালয়ের আবাসিক হল বন্ধ ঘোষণা করা হয়েছে। বিদেশি শিক্ষার্থীরা ছাড়া সব ছাত্রকে বুধবার রাত নয়টার মধ্যে হল ছেড়ে দিতে বলা হয়। আর দ্বিতীয় নোটিশে পরবর্তী নির্দেশ না দেওয়া পর্যন্ত স্নাতক ও স্নাতকোত্তর শ্রেণির কার্যক্রম বন্ধ ঘোষণা করা হয়।

রেজিস্ট্রার কর্নেল (অব.) মো. কাশেম বলেন, বেলা তিনটায় সিন্ডিকেট সভা শুরু হয়। সভায় কয়েকটি ঘটনা উপস্থাপন করা হয়েছে। এর মধ্যে ইইই বিভাগের কার্যালয় ভাঙচুর, শিক্ষক লাঞ্ছিত ও গত সোমবার শিক্ষার্থীকে মারধরের ঘটনা আলোচনা হয়েছে। সভা চলাকালীন শতাধিক শিক্ষক ও শিক্ষার্থীরা আলাদাভাবে স্মারকলিপি দিয়েছে। সবকিছু বিবেচনায় বিশ্ববিদ্যালয় হল ও শ্রেণি কার্যক্রম বন্ধ রাখার সিদ্ধান্ত হয়।

বুধবার সন্ধ্যা সাড়ে সাতটার দিকে আবাসিক হল ছাড়ার প্রস্তুতি নিচ্ছিলেন ইউছুপ জামিল নামে আবু বক্কর (রা.) হলের কোরানিক সায়েন্স বিভাগের ছাত্র। তিনি বলেন, তাঁর বাড়ি কিশোরগঞ্জে। তিনি হল ছাড়ার নোটিশ দেখতে পেয়েছেন সন্ধ্যা ছয়টায়। শীতের রাত কীভাবে বাড়ি পৌঁছাবেন, তা বুঝতে পারছেন না। কর্তৃপক্ষ এক দিন সময় দিলে তাঁরা নিরাপদে যেতে পারতেন। এ ছাড়া পিতা-মাতা শুনলে দুশ্চিন্তা করবেন।

এ বিষয়ে রেজিস্ট্রার বলেন, ছাত্রদের কিছুটা দুর্ভোগ হবে সত্যি। তবুও বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ তাঁদের চট্টগ্রাম নগরে পৌঁছে দেবে।

সীতাকুণ্ড থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) ফিরোজ হোসেন মোল্লা বলেন, কোনও ধরনের বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি যেন না হয়, সে জন্য বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে পুলিশ মোতায়েন করা হয়েছে। সব ছাত্র হল ছাড়ার পর পুলিশ তুলে নেওয়া হবে।