পরিবার পরিকল্পনায় দুর্নীতি’র রাজা আক্তার!
- আপডেট সময় : ০৫:৩২:৫৭ অপরাহ্ন, শনিবার, ২৫ জানুয়ারী ২০২০ ৯৫ বার পড়া হয়েছে
হাফিজুর রহমান সফিকঃ তিনি সিবিএ’র নেতা এবং পরিবার পরিকল্পনা অধিদপ্তরের অফিসের কর্মচারীও। সিবিএর নেতা হয়েই নিয়মিত অফিস করতেন না তিনি। ১৯৯০ সালে এসএসসি পাশ করে তার বাবার রাস্তার পাশের টং দোকানে চা বিক্রি করতেন। এরপর ১৯৯৩ সালে এলাকায় একটি চুরির ঘটনায় এলাকা থেকে বিতারিত করা হয়। ঢাকা এসে এক আত্মীয়ের বাসায় থেকে গার্মেন্টসে চাকরি শুরু করেন। তিনি সে সময় যে বাসায় ভাড়া থাকতেন সেই বাসার মালিকের মেয়ে রোকসানা বেগমকে চাকরি দেয়ার প্রলোভন দিয়ে ৪০ হাজার টাকা দেন মোহরে বিয়ে করেন। ১৯৯৪ সালে পরিবার পরিকল্পনার অধিদপ্তরের শশুরবাড়ীর এক নিকটাত্মীয়কে ম্যানেজ করে আইইএম ইউনিটে প্রজেক্টশনিষ্ট পদে ১৭ তম গ্রেডে ১১২৫ টাকা বেতনে চাকরি নেন। এ পদে চাকরি পেয়ে যথারীতি ঢাকা ও তার আশেপাশে জনবহুল এলাকায় সিনেমা ভ্যানে পরিবার পরিকল্পনা কর্মসূচী প্রদর্শন করতেন। ২০০০ সাল পর্যন্ত তিনি মিরপুর পল্লবী ১১/সি শশুর বাড়ী ঘরজামাই থাকতেন। এই কথাগুলো যাকে ঘিরে তিনি আর কেউ নন’ তিনি পরিবার পরিকল্পনা অধিদপ্তরের কর্মচারী ইউনিয়নের নেতা আক্তারুজ্জামান খান। তার গ্রামের বাড়ী ময়মনসিংহ জেলার নান্দাইল থানাধীন আমেনাবাদ এলাকায়।
তার বিরুদ্ধে অভিযোগের শেষ নাই। দুর্নীতি দমন কমিশন থেকে শুরু করে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ে একাধিক অভিযোগ মাসের পর মাস জমা পরে থাকলে তার খুটি নাড়াতে পারে নি কেউ। অবশেষ অধিদপ্তর থেকে নোয়াখালী বদলী করা হলেও সেই বদলী ঠেকাতে লক্ষ টাকা বাজেট ঘোষণা করে প্রকাশ্য চ্যালেঞ্জ ছুড়ে দিলেন অধিদপ্তরের উর্ধ্বতন কর্মকর্তাদেরকে। এ নিয়ে হাইকোর্টে একটি রীট করেন দুর্নীতিবাজ আক্তারুজ্জামান খান। রীটে তার পক্ষে রায় আসলে পরে আপীল বিভাগ তা খারিজ করে বদলীর আদেশ পূণবহাল করেন। এ আদেশের বিরুদ্ধে হাইকোর্টের সুপ্রীম কোর্টে আপীল করেন এ সিবিএ’র নেতা। অভিযোগ উঠেছে, পরিবার পরিকল্পনা অধিদপ্তরে উর্ধ্বতন কর্মকাদেরকে চ্যালেঞ্জ দিয়েছেন ৮ লক্ষ টাকা ঘুষ দিয়ে রায় তার পক্ষে আনবেন। তিনি এই এমন দম্ভোক্তি শুধু তার কর্মস্থানেই করেন না এমন মন্তব্য তার পরিচিত লোকজনের সাথে সব সময়ই বলে থাকেন।
অভিযোগ রয়েছে, অফিসের টেন্ডার, বিজ্ঞাপন, বিল, কেনাকাটা, সরকারি বাজেট, বিদেশি দাতা সংস্থার টেন্ডার সবই নিয়ন্ত্রণ করেন তিনি। এগুলো করতে এ অধিদপ্তরে একটি সিন্ডিকেটও গড়ে তুলেছেন তিনি। তার এই সিন্ডিকেটের আরেক হোতা ছিলেন জাকিয়া আখতার। তিনি এ অধিদপ্তরে উপ-পরিচালক (বৈদেশিক সংগ্রহ) হিসেবে বর্তমানে কর্মরত। এই দুই ব্যক্তি মিলে ভূইফোড় প্রতিষ্ঠানকে হাজার হাজার টাকার বিজ্ঞাপন দিয়ে শত কোটি টাকা হাতিয়ে নেন। তার বিরুদ্ধে ওঠা অভিযোগের বিষয়ে তদন্ত শুরু করেছে দুদক।
অনুসন্ধানে জানা গেছে, ২০০১ সালে প্রদর্শনী দেখানোর পাশাপাশি অফিসের নথিপত্রের কাজ শুরু করেন আক্তার। এরপর থেকেই তর তর করে ওপরে উঠেন। বিগত ১৮ বছর ধরে পুরো অধিদপ্তর নিজের নিয়ন্ত্রণে রেখেছিলেন তিনি। নামসর্বস্ব বিভিন্ন পত্রিকায় বিজ্ঞাপন দেয়া, লাইসেন্স ছাড়া প্রতিষ্ঠানকে কাজ পাইয়ে দেয়া, কমিশনের বিনিময়ে টেন্ডারে সহায়তা করাসহ আইইএম শাখার সকল কাজই তিনি করেন বলে অভিযোগ রয়েছে। তার সহকর্মীদের ভাষায়- তিনি শত কোটি টাকার সম্পদের মালিক হয়েছেন। তার এসব অনিয়ম, দুর্নীতির অভিযোগ জমা পড়েছে দুর্নীতি দমন কমিশনে। অভিযোগ আমলে নিয়ে আক্তারুজ্জমানের বিরুদ্ধে অনুসন্ধানও শুরু করে সংস্থাটি। দুদক থেকে তার সময়ের সকল নথি তলব করে পরিবার পরিকল্পনা অধিদপ্তরে চিঠি দিয়েছে দুদক।
তবে এসব বিষয়ে অধিদপ্তরের মহাপরিচালকের বক্তব্য নেয়ার চেষ্টা করেও পাওয়া যায়নি। অন্য কোন কর্মকর্তাও কথা বলতে রাজি হননি।
এ সব বিষয়ে আক্তারুজ্জামান খানের বক্তব্য জানতে চাইলে তিনি বলেন, আপনার ব্যবস্থাপনা সম্পাদক আমার ব্যাপারে সব জানে। তার কাছ থেকে জেনে নিবেন।