ঢাকা ১১:২১ অপরাহ্ন, মঙ্গলবার, ১৩ মে ২০২৫, ৩০ বৈশাখ ১৪৩২ বঙ্গাব্দ
সংবাদ শিরোনাম :
Logo গণপূর্তে পীরের কেরামতি: পাহাড়সম দুর্নীতির অভিযোগ থাকলেও প্রধান প্রকৌশলী চেয়ারে বহাল! Logo ডিবির অভিযানে দোহার থানা আওয়ামী লীগের সম্পাদকসহ পাঁচজন গ্রেফতার Logo অবসরে গেলেও ফায়ার সার্ভিসের দুর্নীতির মাস্টারমাইন্ড লেফটেন্যান্ট কর্নেল জুলফিকার – পর্ব ১ Logo ১০০ কেজি গাঁজা ও কাভার্ড পিকআপসহ দুই মাদক কারবারি ডিবির হাতে গ্রেফতার Logo আলোচিত দুর্নীতিবাজ জনস্বাস্থ্য অধিদফতরের নির্বাহী প্রকৌশলী মঈনুল বহাল তবিয়তে!  Logo বসুন্ধরা গ্রুপের চেয়ারম্যান ও পরিবারের শেয়ার, ব্যাংক হিসাব বন্ধের নির্দেশ  Logo দশমিনায় যুবদল নেতাকে জড়িয়ে মিথ্যা সংবাদ প্রচার এর প্রতিবাদে মানববন্ধন ও সংবাদ সম্মেলন Logo কেরানীগঞ্জ মডেল ভূমি অফিস যেন ঘুষের আস্তানা: এসিল্যান্ড থেকে পিয়ন সবাই এক আত্মা!  Logo শেখ সোহেলের সহচর কাউট রাজু গ্রুপের তাণ্ডব: অস্ত্র ঠেকিয়ে প্রাণনাশের হুমকি Logo পদোন্নতি,বদলি. কেনাকাটায় পাহাড়সম দুর্নীতি ফায়ার সার্ভিস অধিদপ্তরে: দুদকের বিশেষ অভিযান

মেয়র ও কাউন্সিলর প্রার্থীরা পরিবেশের শত্রু পলিথিনের পোস্টারে ছেয়ে দিয়েছেন রাজধানী।

প্রতিনিধির নাম
  • আপডেট সময় : ১০:০৫:০২ অপরাহ্ন, সোমবার, ২০ জানুয়ারী ২০২০ ১২৮ বার পড়া হয়েছে

সকালের সংবাদঃ   ঢাকায় বাজছে দুই সিটি করপোরেশন (ডিএনসিসি-ডিএসসিসি) নির্বাচনের দামামা। নগরীর অলিতে-গলিতে মিছিল-স্লোগান ছাপিয়ে সোশ্যাল মিডিয়াও সরব নির্বাচনী প্রচারণায়। প্রায় সব প্রার্থীই একই রকম প্রতিশ্রুতি দিচ্ছেন, তারা নির্বাচিত হলে বাসযোগ্য নগর গড়বেন। তাদের মুখে শোনা যাচ্ছে পরিচ্ছন্ন ও পরিবেশবান্ধব ‘গ্রিন ঢাকা, ক্লিন ঢাকা’ গড়ার স্বপ্নের কথা। কিন্তু নির্বাচনে নামার পর তাদেরই প্রচারণায় দূষিত হচ্ছে নগরের পরিবেশ। কাউন্সিলর ও সংরক্ষিত নারী কাউন্সিলর প্রার্থী থেকে শুরু করে মেয়র প্রার্থীদের প্রচার-প্রচারণায় বানানো পোস্টার-প্ল্যাকার্ড ঝুলছে নগরজুড়ে। আর এসব প্রচারণা সামগ্রী ঝোলানো হয়েছে পরিবেশের জন্য ক্ষতিকর পলিথিনে মুড়িয়ে। এই অবস্থায় প্রশ্ন উঠেছে, নিজেরাই নিষিদ্ধ পলিথিনে মোড়ানো পোস্টারে শহর ভরে দিয়ে কীভাবে তারা ‘গ্রিন ঢাকা, ক্লিন ঢাকা’ গড়বেন?

পরিবেশবাদীরা বলছেন, যাদের হাতে পরিচ্ছন্ন ও বাসযোগ্য নগরী গড়ার দায়িত্ব যাবে, তারাই যদি নগরীর পরিবেশের ক্ষতিকর কার্যক্রমে জড়িয়ে যান, তাহলে এ নগরী রক্ষা করবে কে, পরিচ্ছন্ন রাখবে কে? এ ব্যাপারে নির্বাচন কমিশন ও সরকারের সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের কোনো কার্যকর পদক্ষেপ চোখে পড়ছে না বলেও অভিযোগ পরিবেশবাদী সংগঠনের নেতাদের।

সংশ্লিষ্টদের ভাষ্যে, পলিথিনই বর্ষায় তীব্র জলাবদ্ধতার প্রধান কারণ হয়ে দাঁড়ায়। এবারের নির্বাচনে ভয়াবহ আকারে পলিথিনের ব্যবহারের কারণে সামনের বর্ষায় ঢাকা প্লাবিত হওয়ার আশঙ্কা করছে সিটি করপোরেশনের বর্জ্য ব্যবস্থাপনা বিভাগ। যদিও সিটি নির্বাচনের প্রার্থীরা বলছেন, নির্বাচনের পর তারা এসব অপসারণ করবেন।

দুই সিটি করপোরেশনের প্রতিটি ওয়ার্ডে দেখা গেছে, অলি-গলি, চায়ের দোকান, বাসভবনের সামনে, প্রধান সড়কে সব জায়গায় দড়িতে ঝুলছে প্রার্থীদের পলিথিনে মোড়ানো পোস্টার। এক্ষেত্রে পিছিয়ে নন ‘হেভিওয়েট’ মেয়রপ্রার্থীরাও।

কল্যাণপুরের দক্ষিণপাইকপাড়া এলাকার বাসিন্দা মোহাইমিনুল ইসলাম জুয়েল জাগো নিউজকে বলেন, স্লোগানের সাথে প্রার্থীদের কাজের কোনো মিল নেই। তারা পরিবেশের কথা চিন্তা না করে যেভাবে পলিথিন ব্যবহার করেছেন তা এক কথায় জঘন্য। এটা হয়তো এখন টের পাওয়া যাচ্ছে না, তবে বর্ষা এলে ঠিকই টের পাবেন জলাবদ্ধতায়। যদিও জলাবদ্ধতায় ওপরতলার মানুষগুলোর চেয়ে ভোগান্তি বেশি হয় নিম্ন আয়ের মানুষদেরই।

পশ্চিম আগারগাঁও এলাকার বাসিন্দা মিজানুর রহমান বলেন, নগরপিতার দায়িত্ব পেতে নির্বাচনের প্রচারণায় যারা নেমেছেন, তারা নাকি ঢাকাকে গ্রিন করবেন ক্লিন করবেন। এই তবে ক্লিন করার নমুনা? কোনো একজন প্রার্থীকে আপনি খুঁজে পাবেন না যিনি পলিথিনে তার পোস্টার মোড়াননি। আমার তো মনে হয় যে, পলিথিনে মোড়ানো পোস্টারগুলো যে পরিবেশবান্ধব নয়, এই ধারণাই তাদের নেই। তাছাড়া সরকারের স্টেকহোল্ডারগুলোরও জবাবহিদিতা নেই, পলিথিনে ঢাকা ছেয়ে গেলেও তাদের কোনো কার্যক্রম চোখে পড়ে না।

এ ব্যাপারে ডিএসসিসিতে আওয়ামী লীগ মনোনীত মেয়র প্রার্থী শেখ ফজলে নূর তাপস বলেন, পরিবেশের জন্য ক্ষতিকর আমরা কিছুই রাখতে চাই না। এই লেমেনেটিং করা পোস্টার ইসির আচরণবিধির বাইরে নয়। তারপরও আমি প্রতিশ্রুতিবদ্ধ যে নির্বাচনের পর আমি নিজ দায়িত্বে এসব পোস্টার সরিয়ে ফেলবো।

জানতে চাইলে ডিএনসিসি নির্বাচনের রিটার্নিং কর্মকর্তা আবুল কাশেম বলেন, আচরণবিধিতে সাদাকালো পোস্টারের কথা বলা হয়েছে। পোস্টার লেমেনেটিংয়ের বিষয়টি আচরণবিধি লঙ্ঘনের আওতায় পড়ে না। তবে এটা পরিবেশের জন্য ক্ষতিকর। প্রার্থীদের আয়-ব্যয়ের সাথে বিষয়টি যুক্ত। গত ৩-৪ বছর ধরে এটি হচ্ছে। আগামীতে আচরণবিধিতে এই বিষয়টি যুক্ত করা হবে যে, কেউ যেন নির্বাচনী প্রচার-প্রচারণায় পলিথিনের মোড়কে পোস্টার কিংবা লেমেনেটিং করা পোস্টার ব্যবহার করতে না পারেন।

এ ব্যাপারে বাংলাদেশ পরিবেশ আন্দোলনের (বাপা) নির্বাহী সহ-সভাপতি ড. মো. আব্দুল মতিন বলেন, গত ৩-৪ বছর ধরে নির্বাচনী প্রচার-প্রচারণায় পলিথিনের মোড়কে কিংবা লেমেনেটিং করা পোস্টারের ব্যবহার শুরু হয়েছে। কিন্তু এই সময়ে সিটি করপোরেশন কিংবা পরিবেশ অধিদফতর কোনো ধরনের উদ্যোগ নেয়নি। যা খুবই দুঃখজনক। আবার সরকার পলিথিনের ব্যবহার নিষিদ্ধ ঘোষণা করলেও কার্যত বন্ধে বিশেষ উদ্যোগ নেয়নি। সরকারের কোনো প্রতিষ্ঠান নির্বাচনের আগেই যদি পলিথিনবিরোধী সুনির্দিষ্ট কোনো বিবৃতি বা পদক্ষেপ নিতো, তাহলে নির্বাচন চলাকালে এই হাল দেখা যেতো না।

এনভায়রনমেন্ট অ্যান্ড সোশ্যাল ডেভেলপমেন্ট অর্গানাইজেশনের (এসডো) মহাসচিব ড. শাহরিয়ার হোসেন বলেন, আমরা এটা আগেই লক্ষ্য করেছি। তাই এবারের নির্বাচনের প্রচারণায় যেন পলিথিনের ব্যবহারটা না হয় সেজন্য মেয়র ও কাউন্সিলর প্রার্থীদের কাছে আবেদন জানিয়েছি, খোলা চিঠি দিয়েছি। কিন্তু কেউ কর্ণপাত করেননি। ঠিকই নির্বাচনী প্রচার-প্রচারণায় নিষিদ্ধ পলিথিনকে ব্যবহার করা হয়েছে পরিবেশের ঝুঁকি বিবেচনায় না নিয়ে, শুধু পোস্টার বাঁচানোর জন্য। এটা জঘন্য একটি কাজ হয়েছে। স্লোগান দিয়ে আপনি ঢাকাকে বাসযোগ্য, গ্রিন ও ক্লিন নগরী হিসেবে গড়তে পারবেন না, যদি সত্যিকার অর্থে কাজে সেটার প্রমাণ না রাখেন। যারা এ ধরনের কাজ করেছেন তাদের থেকে নগরসেবা আশা প্রশ্নবিদ্ধ। আগামী বর্ষায় বিষফোঁড়া হয়ে দাঁড়াবে এই পলিথিন। এ ক্ষেত্রে সিটি করপোরেশন, নির্বাচন কমিশন ও পরিবেশ অধিদফতর ব্যর্থতার পরিচয় দিয়েছে।

ডিএসসিসির সচিব মো. মোস্তফা কামাল মজুমদার বলেন, প্রার্থীরা যেভাবে পোস্টারে পলিথিন ব্যবহার করছেন এটা আমাদের জন্য একটা বোঝা হয়ে দাঁড়াবে। আমি ব্যক্তিগতভাবে এটার বিরোধিতা করছি। এই পলিথিনগুলো ড্রেন ও নালায় গিয়ে পড়ে জলাবদ্ধতা সৃষ্টি করে পানির প্রবাহ বন্ধ করে দেবে।

ডিএনসিসির বর্জ্য ব্যবস্থাপনা বিভাগের তত্ত্বাবধায়ক প্রকৌশলী (অতিরিক্ত দায়িত্ব) আবুল হাসনাত মো. আশরাফুল আলম জাগো নিউজকে বলেন, এটা নির্বাচনের পর আমরা সংগ্রহ করে রিসাইক্লিং সেন্টারে পাঠাবো। প্রতিবার নির্বাচনের পর ইসির নির্দেশে আমরা এই পোস্টার সরিয়ে থাকি। তবে এবার যদি পরিবেশ অধিদফতর কিংবা ইসি নতুন করে কোনো নির্দেশনা দেয় যে পলিথিনের মোড়কের পোস্টার রাখা যাবে না তাহলে আমরা কার্যকর পদক্ষেপ নেবো।

প্রচারে পলিথিন মোড়কের পোস্টার ব্যবহার বন্ধে ইসিকে চিঠি দেবে পরিবেশ অধিদফতর

নগরীর অলিতে-গলিতে ঝুলছে পলিথিনে মোড়ানো পোস্টার, বৃষ্টি হলে এসব পোস্টারই হবে বিষফোঁড়া, তৈরি করবে জলাবদ্ধতা

২০০২ সাল থেকে সরকার পলিথিন ব্যাগের উৎপাদন, আমদানি, বাজারজাতকরণ, বিক্রি, মজুত, বাণিজ্যিক উদ্দেশ্যে পরিবহন ও ব্যবহার নিষিদ্ধ করলেও কোনো কিছুই বন্ধ হয়নি। যদিও নিয়মিত অভিযান পরিচালনা ও ভ্রাম্যমাণ আদালতের মাধ্যমে জেল-জরিমানা করা হচ্ছে বলে দাবি করছে পরিবেশ অধিদফতর।

এ ব্যাপারে জানতে চাইলে পরিবেশ অধিদফতরের অতিরিক্ত মহাপরিচালক ড. মল্লিক আনোয়ার হোসেন জাগো নিউজকে বলেন, গত বছর আমরা অভিযান পরিচালনা করেছি। নিষিদ্ধ পলিথিন টনকে টন জব্দ করেছি, জরিমানা করেছি। পোস্টারকে সাময়িক সুরক্ষায় পলিথিনে ঢাকাকে যেভাবে ছেয়ে দেয়া হয়েছে তা খুবই হতাশার। কিন্তু পরিবেশ অধিদফতর এই সিটি নির্বাচনে পলিথিন রুখতে ভ্রাম্যমাণ আদালত পরিচালনা করেনি। আমরা নির্বাচন কমিশনকে চিঠি দিচ্ছি। যেন দ্রুতই ইসি একটা নির্দেশনা দেয় যে প্রচারণায় পলিথিনযুক্ত, পলিথিনের মোড়কে কিংবা লেমেনেটিং করা পোস্টার ব্যবহার করা না হয় এবং সব সরিয়ে নেয়া হয়।

নিউজটি শেয়ার করুন

আপনার মন্তব্য

Your email address will not be published. Required fields are marked *

আপনার ইমেইল এবং অন্যান্য তথ্য সংরক্ষন করুন

ট্যাগস :

মেয়র ও কাউন্সিলর প্রার্থীরা পরিবেশের শত্রু পলিথিনের পোস্টারে ছেয়ে দিয়েছেন রাজধানী।

আপডেট সময় : ১০:০৫:০২ অপরাহ্ন, সোমবার, ২০ জানুয়ারী ২০২০

সকালের সংবাদঃ   ঢাকায় বাজছে দুই সিটি করপোরেশন (ডিএনসিসি-ডিএসসিসি) নির্বাচনের দামামা। নগরীর অলিতে-গলিতে মিছিল-স্লোগান ছাপিয়ে সোশ্যাল মিডিয়াও সরব নির্বাচনী প্রচারণায়। প্রায় সব প্রার্থীই একই রকম প্রতিশ্রুতি দিচ্ছেন, তারা নির্বাচিত হলে বাসযোগ্য নগর গড়বেন। তাদের মুখে শোনা যাচ্ছে পরিচ্ছন্ন ও পরিবেশবান্ধব ‘গ্রিন ঢাকা, ক্লিন ঢাকা’ গড়ার স্বপ্নের কথা। কিন্তু নির্বাচনে নামার পর তাদেরই প্রচারণায় দূষিত হচ্ছে নগরের পরিবেশ। কাউন্সিলর ও সংরক্ষিত নারী কাউন্সিলর প্রার্থী থেকে শুরু করে মেয়র প্রার্থীদের প্রচার-প্রচারণায় বানানো পোস্টার-প্ল্যাকার্ড ঝুলছে নগরজুড়ে। আর এসব প্রচারণা সামগ্রী ঝোলানো হয়েছে পরিবেশের জন্য ক্ষতিকর পলিথিনে মুড়িয়ে। এই অবস্থায় প্রশ্ন উঠেছে, নিজেরাই নিষিদ্ধ পলিথিনে মোড়ানো পোস্টারে শহর ভরে দিয়ে কীভাবে তারা ‘গ্রিন ঢাকা, ক্লিন ঢাকা’ গড়বেন?

পরিবেশবাদীরা বলছেন, যাদের হাতে পরিচ্ছন্ন ও বাসযোগ্য নগরী গড়ার দায়িত্ব যাবে, তারাই যদি নগরীর পরিবেশের ক্ষতিকর কার্যক্রমে জড়িয়ে যান, তাহলে এ নগরী রক্ষা করবে কে, পরিচ্ছন্ন রাখবে কে? এ ব্যাপারে নির্বাচন কমিশন ও সরকারের সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের কোনো কার্যকর পদক্ষেপ চোখে পড়ছে না বলেও অভিযোগ পরিবেশবাদী সংগঠনের নেতাদের।

সংশ্লিষ্টদের ভাষ্যে, পলিথিনই বর্ষায় তীব্র জলাবদ্ধতার প্রধান কারণ হয়ে দাঁড়ায়। এবারের নির্বাচনে ভয়াবহ আকারে পলিথিনের ব্যবহারের কারণে সামনের বর্ষায় ঢাকা প্লাবিত হওয়ার আশঙ্কা করছে সিটি করপোরেশনের বর্জ্য ব্যবস্থাপনা বিভাগ। যদিও সিটি নির্বাচনের প্রার্থীরা বলছেন, নির্বাচনের পর তারা এসব অপসারণ করবেন।

দুই সিটি করপোরেশনের প্রতিটি ওয়ার্ডে দেখা গেছে, অলি-গলি, চায়ের দোকান, বাসভবনের সামনে, প্রধান সড়কে সব জায়গায় দড়িতে ঝুলছে প্রার্থীদের পলিথিনে মোড়ানো পোস্টার। এক্ষেত্রে পিছিয়ে নন ‘হেভিওয়েট’ মেয়রপ্রার্থীরাও।

কল্যাণপুরের দক্ষিণপাইকপাড়া এলাকার বাসিন্দা মোহাইমিনুল ইসলাম জুয়েল জাগো নিউজকে বলেন, স্লোগানের সাথে প্রার্থীদের কাজের কোনো মিল নেই। তারা পরিবেশের কথা চিন্তা না করে যেভাবে পলিথিন ব্যবহার করেছেন তা এক কথায় জঘন্য। এটা হয়তো এখন টের পাওয়া যাচ্ছে না, তবে বর্ষা এলে ঠিকই টের পাবেন জলাবদ্ধতায়। যদিও জলাবদ্ধতায় ওপরতলার মানুষগুলোর চেয়ে ভোগান্তি বেশি হয় নিম্ন আয়ের মানুষদেরই।

পশ্চিম আগারগাঁও এলাকার বাসিন্দা মিজানুর রহমান বলেন, নগরপিতার দায়িত্ব পেতে নির্বাচনের প্রচারণায় যারা নেমেছেন, তারা নাকি ঢাকাকে গ্রিন করবেন ক্লিন করবেন। এই তবে ক্লিন করার নমুনা? কোনো একজন প্রার্থীকে আপনি খুঁজে পাবেন না যিনি পলিথিনে তার পোস্টার মোড়াননি। আমার তো মনে হয় যে, পলিথিনে মোড়ানো পোস্টারগুলো যে পরিবেশবান্ধব নয়, এই ধারণাই তাদের নেই। তাছাড়া সরকারের স্টেকহোল্ডারগুলোরও জবাবহিদিতা নেই, পলিথিনে ঢাকা ছেয়ে গেলেও তাদের কোনো কার্যক্রম চোখে পড়ে না।

এ ব্যাপারে ডিএসসিসিতে আওয়ামী লীগ মনোনীত মেয়র প্রার্থী শেখ ফজলে নূর তাপস বলেন, পরিবেশের জন্য ক্ষতিকর আমরা কিছুই রাখতে চাই না। এই লেমেনেটিং করা পোস্টার ইসির আচরণবিধির বাইরে নয়। তারপরও আমি প্রতিশ্রুতিবদ্ধ যে নির্বাচনের পর আমি নিজ দায়িত্বে এসব পোস্টার সরিয়ে ফেলবো।

জানতে চাইলে ডিএনসিসি নির্বাচনের রিটার্নিং কর্মকর্তা আবুল কাশেম বলেন, আচরণবিধিতে সাদাকালো পোস্টারের কথা বলা হয়েছে। পোস্টার লেমেনেটিংয়ের বিষয়টি আচরণবিধি লঙ্ঘনের আওতায় পড়ে না। তবে এটা পরিবেশের জন্য ক্ষতিকর। প্রার্থীদের আয়-ব্যয়ের সাথে বিষয়টি যুক্ত। গত ৩-৪ বছর ধরে এটি হচ্ছে। আগামীতে আচরণবিধিতে এই বিষয়টি যুক্ত করা হবে যে, কেউ যেন নির্বাচনী প্রচার-প্রচারণায় পলিথিনের মোড়কে পোস্টার কিংবা লেমেনেটিং করা পোস্টার ব্যবহার করতে না পারেন।

এ ব্যাপারে বাংলাদেশ পরিবেশ আন্দোলনের (বাপা) নির্বাহী সহ-সভাপতি ড. মো. আব্দুল মতিন বলেন, গত ৩-৪ বছর ধরে নির্বাচনী প্রচার-প্রচারণায় পলিথিনের মোড়কে কিংবা লেমেনেটিং করা পোস্টারের ব্যবহার শুরু হয়েছে। কিন্তু এই সময়ে সিটি করপোরেশন কিংবা পরিবেশ অধিদফতর কোনো ধরনের উদ্যোগ নেয়নি। যা খুবই দুঃখজনক। আবার সরকার পলিথিনের ব্যবহার নিষিদ্ধ ঘোষণা করলেও কার্যত বন্ধে বিশেষ উদ্যোগ নেয়নি। সরকারের কোনো প্রতিষ্ঠান নির্বাচনের আগেই যদি পলিথিনবিরোধী সুনির্দিষ্ট কোনো বিবৃতি বা পদক্ষেপ নিতো, তাহলে নির্বাচন চলাকালে এই হাল দেখা যেতো না।

এনভায়রনমেন্ট অ্যান্ড সোশ্যাল ডেভেলপমেন্ট অর্গানাইজেশনের (এসডো) মহাসচিব ড. শাহরিয়ার হোসেন বলেন, আমরা এটা আগেই লক্ষ্য করেছি। তাই এবারের নির্বাচনের প্রচারণায় যেন পলিথিনের ব্যবহারটা না হয় সেজন্য মেয়র ও কাউন্সিলর প্রার্থীদের কাছে আবেদন জানিয়েছি, খোলা চিঠি দিয়েছি। কিন্তু কেউ কর্ণপাত করেননি। ঠিকই নির্বাচনী প্রচার-প্রচারণায় নিষিদ্ধ পলিথিনকে ব্যবহার করা হয়েছে পরিবেশের ঝুঁকি বিবেচনায় না নিয়ে, শুধু পোস্টার বাঁচানোর জন্য। এটা জঘন্য একটি কাজ হয়েছে। স্লোগান দিয়ে আপনি ঢাকাকে বাসযোগ্য, গ্রিন ও ক্লিন নগরী হিসেবে গড়তে পারবেন না, যদি সত্যিকার অর্থে কাজে সেটার প্রমাণ না রাখেন। যারা এ ধরনের কাজ করেছেন তাদের থেকে নগরসেবা আশা প্রশ্নবিদ্ধ। আগামী বর্ষায় বিষফোঁড়া হয়ে দাঁড়াবে এই পলিথিন। এ ক্ষেত্রে সিটি করপোরেশন, নির্বাচন কমিশন ও পরিবেশ অধিদফতর ব্যর্থতার পরিচয় দিয়েছে।

ডিএসসিসির সচিব মো. মোস্তফা কামাল মজুমদার বলেন, প্রার্থীরা যেভাবে পোস্টারে পলিথিন ব্যবহার করছেন এটা আমাদের জন্য একটা বোঝা হয়ে দাঁড়াবে। আমি ব্যক্তিগতভাবে এটার বিরোধিতা করছি। এই পলিথিনগুলো ড্রেন ও নালায় গিয়ে পড়ে জলাবদ্ধতা সৃষ্টি করে পানির প্রবাহ বন্ধ করে দেবে।

ডিএনসিসির বর্জ্য ব্যবস্থাপনা বিভাগের তত্ত্বাবধায়ক প্রকৌশলী (অতিরিক্ত দায়িত্ব) আবুল হাসনাত মো. আশরাফুল আলম জাগো নিউজকে বলেন, এটা নির্বাচনের পর আমরা সংগ্রহ করে রিসাইক্লিং সেন্টারে পাঠাবো। প্রতিবার নির্বাচনের পর ইসির নির্দেশে আমরা এই পোস্টার সরিয়ে থাকি। তবে এবার যদি পরিবেশ অধিদফতর কিংবা ইসি নতুন করে কোনো নির্দেশনা দেয় যে পলিথিনের মোড়কের পোস্টার রাখা যাবে না তাহলে আমরা কার্যকর পদক্ষেপ নেবো।

প্রচারে পলিথিন মোড়কের পোস্টার ব্যবহার বন্ধে ইসিকে চিঠি দেবে পরিবেশ অধিদফতর

নগরীর অলিতে-গলিতে ঝুলছে পলিথিনে মোড়ানো পোস্টার, বৃষ্টি হলে এসব পোস্টারই হবে বিষফোঁড়া, তৈরি করবে জলাবদ্ধতা

২০০২ সাল থেকে সরকার পলিথিন ব্যাগের উৎপাদন, আমদানি, বাজারজাতকরণ, বিক্রি, মজুত, বাণিজ্যিক উদ্দেশ্যে পরিবহন ও ব্যবহার নিষিদ্ধ করলেও কোনো কিছুই বন্ধ হয়নি। যদিও নিয়মিত অভিযান পরিচালনা ও ভ্রাম্যমাণ আদালতের মাধ্যমে জেল-জরিমানা করা হচ্ছে বলে দাবি করছে পরিবেশ অধিদফতর।

এ ব্যাপারে জানতে চাইলে পরিবেশ অধিদফতরের অতিরিক্ত মহাপরিচালক ড. মল্লিক আনোয়ার হোসেন জাগো নিউজকে বলেন, গত বছর আমরা অভিযান পরিচালনা করেছি। নিষিদ্ধ পলিথিন টনকে টন জব্দ করেছি, জরিমানা করেছি। পোস্টারকে সাময়িক সুরক্ষায় পলিথিনে ঢাকাকে যেভাবে ছেয়ে দেয়া হয়েছে তা খুবই হতাশার। কিন্তু পরিবেশ অধিদফতর এই সিটি নির্বাচনে পলিথিন রুখতে ভ্রাম্যমাণ আদালত পরিচালনা করেনি। আমরা নির্বাচন কমিশনকে চিঠি দিচ্ছি। যেন দ্রুতই ইসি একটা নির্দেশনা দেয় যে প্রচারণায় পলিথিনযুক্ত, পলিথিনের মোড়কে কিংবা লেমেনেটিং করা পোস্টার ব্যবহার করা না হয় এবং সব সরিয়ে নেয়া হয়।