ঢাকা ০৭:১১ অপরাহ্ন, বুধবার, ১১ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ২৭ ভাদ্র ১৪৩১ বঙ্গাব্দ
সংবাদ শিরোনাম :
Logo ইন্সপেক্টর রেজায়ে রাব্বীর বিষয়ে বিভ্রান্তি নিরসনে ফায়ার সার্ভিসের বক্তব্য Logo স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে লাটিম ঘুরাচ্ছেন ৬ ‘কুতুব’ Logo ওয়াসা প্রকৌশলী ফকরুলের আমলনামা: অবৈধ সম্পদের সাম্রাজ্য Logo আশা ইউনিভার্সিটির আইন বিভাগে নবীন বরণ অনুষ্ঠিত Logo চাঁদার টাকা না পেয়ে সাংবাদিকের বিরুদ্ধে মিথ্যা মামলা Logo সাংবাদিকদের হত্যা চেষ্টার ঘটনায় চ্যানেল এস এর কর্তৃপক্ষের বিরুদ্ধে মামলা Logo জামিনে মুক্ত রিজেন্টের চেয়ারম্যান সাহেদ Logo স্বাস্থ্য খাতে দুর্নীতির রাঘব বোয়াল বায়ো ট্রেড ধরাছোঁয়ার বাইরে Logo ছাত্র আন্দোলনে গণহত্যায় জড়িত ফায়ার সার্ভিস কর্মকর্তা রাব্বি লাপাত্তা Logo বন্যার্তদের পাশে দাঁড়িয়েছে আশা ইউনিভার্সিটি বাংলাদেশ




নিজের অপারেশন নিজেই করলেন ডাক্তার!

প্রতিনিধির নাম
  • আপডেট সময় : ০৮:১৩:১০ অপরাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ১৬ জানুয়ারী ২০২০ ১০৪ বার পড়া হয়েছে

অনলাইন ডেস্ক;

নিজে একজন ডাক্তার। কিন্তু সেই ডাক্তারের যখন অ্যাপেনডিক্সের ব্যথা শুরু হয়, তখন তিনি যে স্থানে অবস্থান করছিলেন তার ১ হাজার মাইলের মধ্যেও ছিল না দ্বিতীয় কোনও ডাক্তার। এত দূরে থাকা আরেক ডাক্তারকে ডেকে আনতে গেলেও যে সময় লাগতো, তাতে তিনি হয়তো মারাই যেতেন। তাই সঙ্গে থাকা লোকদের নিয়ে নিজেই নিজের অপারেশন করে ফেলেন লিওনিড রোগোজোভ নামের ওই ডক্তার। যা চিকিৎসা বিজ্ঞানের ইতিহাসে এক বিস্ময়কর রেকর্ড।

ডা. লিওনিড রোগোজভ নামের ওই সোভিয়েত হিরো নিজেই নিজের পেট কেটে অ্যাপেনডিক্স অপাসারণ করেছিলেন। ১৯৬১ সালে ঘটে এই অভূতপূর্ব ঘটনা। জায়গাটা আন্টার্টিকায় সোভিয়েত ইউনিয়নের অধীন নোভোলাজারেভস্কায়া মেরু গবেষণা কেন্দ্র।

২৭ বছরের তরতাজা যুবক লিওনিড রোগোজভ গত দুদিন ধরে সাংঘাতিক পেটের ব্যথায় কাতর। গায়ে জ্বর, পেটের ডানপাশের নিচের দিকটা ফুলে টনটন করছে। সাথে বমিবমি ভাব।

১৩ জনের এই সোভিয়েত গবেষণা দলের একমাত্র ডাক্তার সদস্য হয়ে তিনি এসেছেন এই জনহীন, প্রায় প্রাণহীন বরফের উপত্যকায়, তা প্রায় আট মাস হল। এমন গেরোয় যে পড়তে হবে তা তিনি স্বপ্নেও ভাবেননি।

তার ব্যক্তিগত ডায়েরিতে তিনি ওই ঘটনার বিবরণ লিখে গেছেন। যেখানে তিনি লেখেন…

“মনে হচ্ছিল আমার অ্যাপেনডিসাইটিস হয়েছে। কিন্তু আমি কাউকে তা জানাইনি। এমনকি সারক্ষণ হাসিখুশি ছিলাম। বন্ধুদের আমি আতঙ্কিত করতে চাইনি। কেননা, তাদের কেউ তো আর আমাকে সহযোগিতা করতে পারবে না। সেসময় যারা আমার সঙ্গে ছিলো তারা ছিলো সব মেরু অভিযাত্রী। একজন মেরু অভিযাত্রী বড়জোর হয়তো ডেন্টিস্টের চেয়ারে বসে অপারেশন থিয়েটারের যন্ত্রপাতি দেখেছেন…

গত রাতে আমি একফোঁটাও ঘুমাতে পারিনি। মনে হচ্ছিলো যেন শয়তান আমার ওপর হামলে পড়েছে। আমার আত্মায় যেন তুষার ঝড় আছড়ে পড়ছিল, একসঙ্গে ১০০ শেয়ালের মতো আর্তনাদ করছিলো… ভয়ানক বিপদের আঁচ করছিলাম আমি। আর এ থেকে বাঁচার একমাত্র উপায় নিজেই নিজের অপারেশন করা। যা প্রায় অসম্ভব। কিন্তু হাত গুটিয়ে বসে থাকলে তো আর চলবে না…

জীবনে আর কখনও এতটা ভয় পাইনি আমি। যন্ত্রণা এতটাই বেড়ে গিয়েছিল যে, আমার মনে হচ্ছিল পুরো ভবনটা যেন ঘূর্ণিঝড়ের মধ্যে একটা খেলনার মতো ঝাঁকুনি খাচ্ছে। অবশেষে বন্ধুরা বিষয়টি টের পায় এবং আমাকে শান্ত করতে আসে। আর আমি নিজেকে ধিক্কার জানাচ্ছিলাম সবার ছুটি কাটানোর আমেজ আমি মাটি করে দিয়েছি। এরপর বিছানাটি জীবাণুমুক্ত করে আমরা অপারেশন করার প্রস্তুতি নিলাম…

আমার অবস্থা আরও খারাপ হচ্ছিল। বিষয়টি আমি তাদেরকে বলি। তারা ঘর থেকে অপ্রয়োজনীয় জিনিসগুলো বাইরে বের করছিল…

আমার নবিশ সহকারীরা! শেষবার আমি তাদের দিকে তাকালাম। তাদের পরনে অপারেশন থিয়েটারে ডাক্তারের সহকারীদের মতোই সাদা পোশাক। যা সাদাদের থেকেও সাদা। আমি একটু ভয়ও পাই। তবে যখনই আমি সিরিঞ্জে নভোকেইন ভরে নিজেকে প্রথম ইনজেকশনটি দেই সঙ্গে সঙ্গেই আমি স্বয়ংক্রিয়ভাবেই অপারেশন মুডে চলে যাই। এরপর আমি আর কোনও দিকে তাকাইনি।

অনেক রক্তক্ষরণ হচ্ছিল, কিন্তু আমি আমার কাজ করতেই থাকি… পেরিটোনিয়াম সরাতে গিয়ে আমি বৃহদন্ত্রের নালিতে আঘাত করে বসি। যেটি আমাকে সেলাই করতে হয়। আমি দুর্বল হয়ে পড়ছিলাম। প্রতি ৪/৫ মিনিট পরপর আমাকে ২০-২৫ সেকেন্ড করে বিশ্রাম নিতে হচ্ছিল।

অবশেষে আমি অভিশপ্ত অ্যাপেনডিক্স অপসারণ করি। সেটার তলায় কালো দাগ পড়ে গিয়েছিলো। তার মানে আর একদিন দেরি হলেই সেটি বিস্ফোরিত হত এবং আমি হয়তো বাঁচতাম না। ভয়ে আমার দম বন্ধ হয়ে আসছিল। আমার হাতগুলোকে রাবারের মতো মনে হচ্ছিল। আমি ভেবেছিলাম খারাপ কিছু হয়তো ঘটে যেতে পারে। কিন্তু সফলভাবেই আমি অ্যাপেনডিক্সটিকে কেটে অপসারণ করি।”

এইভাবে পৃথিবীর প্রথম সেল্ফ সার্জারির উদাহরণ তৈরী হয়ে গেল সেই দিন। দুই সপ্তাহের মধ্যেই লিওনিড একেবারে সুস্থ হয়ে গেলেন। মারাত্মক ঠাণ্ডার একটা সুবিধেও আছে। সংক্রমণ হয় না অত সহজে। তবে খবরটা চাউর হয়ে গেল আর অবধারিতভাবে আলোড়ন তুলল, বিশেষত নিজের দেশে। সোভিয়েত সরকার ওই বছরই ‘অর্ডার অফ দ্য রেড ব্যানার অফ লেবার’ সম্মানে ভূষিত করলেন তাকে।

১৯৬২ সালের অক্টোবরে অভিযান শেষ করে দেশে ফিরলেন লিওনিড। এম ডি করলেন সার্জারিতে। পরবর্তীতে সেন্ট পিটার্সবার্গ রিসার্চ ইনস্টিটিউটে সার্জারি বিভাগের হেড অফ দ্য ডিপার্টমেন্ট হন তিনি। দুহাজার সালে ফুসফুসের ক্যান্সারে আক্রান্ত হয়ে তার মৃত্যু হয় সেন্ট পিটার্সবার্গেই। সূত্র- বিবিসি।

নিউজটি শেয়ার করুন

আপনার মন্তব্য

Your email address will not be published. Required fields are marked *

আপনার ইমেইল এবং অন্যান্য তথ্য সংরক্ষন করুন

ট্যাগস :




নিজের অপারেশন নিজেই করলেন ডাক্তার!

আপডেট সময় : ০৮:১৩:১০ অপরাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ১৬ জানুয়ারী ২০২০

অনলাইন ডেস্ক;

নিজে একজন ডাক্তার। কিন্তু সেই ডাক্তারের যখন অ্যাপেনডিক্সের ব্যথা শুরু হয়, তখন তিনি যে স্থানে অবস্থান করছিলেন তার ১ হাজার মাইলের মধ্যেও ছিল না দ্বিতীয় কোনও ডাক্তার। এত দূরে থাকা আরেক ডাক্তারকে ডেকে আনতে গেলেও যে সময় লাগতো, তাতে তিনি হয়তো মারাই যেতেন। তাই সঙ্গে থাকা লোকদের নিয়ে নিজেই নিজের অপারেশন করে ফেলেন লিওনিড রোগোজোভ নামের ওই ডক্তার। যা চিকিৎসা বিজ্ঞানের ইতিহাসে এক বিস্ময়কর রেকর্ড।

ডা. লিওনিড রোগোজভ নামের ওই সোভিয়েত হিরো নিজেই নিজের পেট কেটে অ্যাপেনডিক্স অপাসারণ করেছিলেন। ১৯৬১ সালে ঘটে এই অভূতপূর্ব ঘটনা। জায়গাটা আন্টার্টিকায় সোভিয়েত ইউনিয়নের অধীন নোভোলাজারেভস্কায়া মেরু গবেষণা কেন্দ্র।

২৭ বছরের তরতাজা যুবক লিওনিড রোগোজভ গত দুদিন ধরে সাংঘাতিক পেটের ব্যথায় কাতর। গায়ে জ্বর, পেটের ডানপাশের নিচের দিকটা ফুলে টনটন করছে। সাথে বমিবমি ভাব।

১৩ জনের এই সোভিয়েত গবেষণা দলের একমাত্র ডাক্তার সদস্য হয়ে তিনি এসেছেন এই জনহীন, প্রায় প্রাণহীন বরফের উপত্যকায়, তা প্রায় আট মাস হল। এমন গেরোয় যে পড়তে হবে তা তিনি স্বপ্নেও ভাবেননি।

তার ব্যক্তিগত ডায়েরিতে তিনি ওই ঘটনার বিবরণ লিখে গেছেন। যেখানে তিনি লেখেন…

“মনে হচ্ছিল আমার অ্যাপেনডিসাইটিস হয়েছে। কিন্তু আমি কাউকে তা জানাইনি। এমনকি সারক্ষণ হাসিখুশি ছিলাম। বন্ধুদের আমি আতঙ্কিত করতে চাইনি। কেননা, তাদের কেউ তো আর আমাকে সহযোগিতা করতে পারবে না। সেসময় যারা আমার সঙ্গে ছিলো তারা ছিলো সব মেরু অভিযাত্রী। একজন মেরু অভিযাত্রী বড়জোর হয়তো ডেন্টিস্টের চেয়ারে বসে অপারেশন থিয়েটারের যন্ত্রপাতি দেখেছেন…

গত রাতে আমি একফোঁটাও ঘুমাতে পারিনি। মনে হচ্ছিলো যেন শয়তান আমার ওপর হামলে পড়েছে। আমার আত্মায় যেন তুষার ঝড় আছড়ে পড়ছিল, একসঙ্গে ১০০ শেয়ালের মতো আর্তনাদ করছিলো… ভয়ানক বিপদের আঁচ করছিলাম আমি। আর এ থেকে বাঁচার একমাত্র উপায় নিজেই নিজের অপারেশন করা। যা প্রায় অসম্ভব। কিন্তু হাত গুটিয়ে বসে থাকলে তো আর চলবে না…

জীবনে আর কখনও এতটা ভয় পাইনি আমি। যন্ত্রণা এতটাই বেড়ে গিয়েছিল যে, আমার মনে হচ্ছিল পুরো ভবনটা যেন ঘূর্ণিঝড়ের মধ্যে একটা খেলনার মতো ঝাঁকুনি খাচ্ছে। অবশেষে বন্ধুরা বিষয়টি টের পায় এবং আমাকে শান্ত করতে আসে। আর আমি নিজেকে ধিক্কার জানাচ্ছিলাম সবার ছুটি কাটানোর আমেজ আমি মাটি করে দিয়েছি। এরপর বিছানাটি জীবাণুমুক্ত করে আমরা অপারেশন করার প্রস্তুতি নিলাম…

আমার অবস্থা আরও খারাপ হচ্ছিল। বিষয়টি আমি তাদেরকে বলি। তারা ঘর থেকে অপ্রয়োজনীয় জিনিসগুলো বাইরে বের করছিল…

আমার নবিশ সহকারীরা! শেষবার আমি তাদের দিকে তাকালাম। তাদের পরনে অপারেশন থিয়েটারে ডাক্তারের সহকারীদের মতোই সাদা পোশাক। যা সাদাদের থেকেও সাদা। আমি একটু ভয়ও পাই। তবে যখনই আমি সিরিঞ্জে নভোকেইন ভরে নিজেকে প্রথম ইনজেকশনটি দেই সঙ্গে সঙ্গেই আমি স্বয়ংক্রিয়ভাবেই অপারেশন মুডে চলে যাই। এরপর আমি আর কোনও দিকে তাকাইনি।

অনেক রক্তক্ষরণ হচ্ছিল, কিন্তু আমি আমার কাজ করতেই থাকি… পেরিটোনিয়াম সরাতে গিয়ে আমি বৃহদন্ত্রের নালিতে আঘাত করে বসি। যেটি আমাকে সেলাই করতে হয়। আমি দুর্বল হয়ে পড়ছিলাম। প্রতি ৪/৫ মিনিট পরপর আমাকে ২০-২৫ সেকেন্ড করে বিশ্রাম নিতে হচ্ছিল।

অবশেষে আমি অভিশপ্ত অ্যাপেনডিক্স অপসারণ করি। সেটার তলায় কালো দাগ পড়ে গিয়েছিলো। তার মানে আর একদিন দেরি হলেই সেটি বিস্ফোরিত হত এবং আমি হয়তো বাঁচতাম না। ভয়ে আমার দম বন্ধ হয়ে আসছিল। আমার হাতগুলোকে রাবারের মতো মনে হচ্ছিল। আমি ভেবেছিলাম খারাপ কিছু হয়তো ঘটে যেতে পারে। কিন্তু সফলভাবেই আমি অ্যাপেনডিক্সটিকে কেটে অপসারণ করি।”

এইভাবে পৃথিবীর প্রথম সেল্ফ সার্জারির উদাহরণ তৈরী হয়ে গেল সেই দিন। দুই সপ্তাহের মধ্যেই লিওনিড একেবারে সুস্থ হয়ে গেলেন। মারাত্মক ঠাণ্ডার একটা সুবিধেও আছে। সংক্রমণ হয় না অত সহজে। তবে খবরটা চাউর হয়ে গেল আর অবধারিতভাবে আলোড়ন তুলল, বিশেষত নিজের দেশে। সোভিয়েত সরকার ওই বছরই ‘অর্ডার অফ দ্য রেড ব্যানার অফ লেবার’ সম্মানে ভূষিত করলেন তাকে।

১৯৬২ সালের অক্টোবরে অভিযান শেষ করে দেশে ফিরলেন লিওনিড। এম ডি করলেন সার্জারিতে। পরবর্তীতে সেন্ট পিটার্সবার্গ রিসার্চ ইনস্টিটিউটে সার্জারি বিভাগের হেড অফ দ্য ডিপার্টমেন্ট হন তিনি। দুহাজার সালে ফুসফুসের ক্যান্সারে আক্রান্ত হয়ে তার মৃত্যু হয় সেন্ট পিটার্সবার্গেই। সূত্র- বিবিসি।