ঢাকা ০৭:২৫ অপরাহ্ন, শুক্রবার, ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০ বঙ্গাব্দ
সংবাদ শিরোনাম :
Logo বুড়িচংয়ে আইনশৃঙ্খলা কমিটির সভায় সাংবাদিকদের প্রবেশে নিষেধাজ্ঞা ইউএনও’র! Logo ইবি উপাচার্যকে ১০লাখ ঘুষ প্রস্তাব এক তরুনীর! Logo মামলায় জর্জরিত কুলাউড়ার ছাত্রদল নেতা মিতুল পালিয়ে আছেন প্রবাসে Logo ২৫ মার্চ গণহত্যা দিবসে মোমবাতি প্রজ্জ্বলনের মধ্য দিয়ে শাবি ছাত্রলীগের কার্যক্রম শুরু Logo থিয়েটার কুবির ইফতার মাহফিল Logo রাজধানীর শান্তিনগর বাজার নিয়ে শত কোটি টাকার লুটপাট Logo ঢাবির সামাজিক বিজ্ঞান অনুষদের ডিন অধ্যাপক ড. জিয়া রহমানের মৃত্যুতে শাবি শিক্ষক সমিতির শোক Logo ঢাবি শিক্ষক ড. জিয়া রহমানের মৃত্যুতে শাবি উপাচার্যের শোক প্রকাশ Logo ময়মনসিংহ স্টুডেন্টস এসোসিয়েশনের নতুন সভাপতি সজীব, সম্পাদক আশিক Logo পুরান ঢাকায় জুতার কারখানার আগুন




উত্তর-দক্ষিণ সিটি করপোরেশন নির্বাচন ঘিরে মনোনয়ন দৌড়

প্রতিনিধির নাম
  • আপডেট সময় : ০৯:০৪:২৫ পূর্বাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ২৬ ডিসেম্বর ২০১৯ ৬২ বার পড়া হয়েছে

আতিকুল ইসলাম ফজলে নুর তাপস

আ’লীগ-বিএনপি-জাপার মনোনয়ন ফরম বিক্রি নির্বাচনী লেভেল পেস্নয়িং ফিল্ড নিয়ে শঙ্কা ‘ইসির স্বাধীনতা নির্বাচন প্রক্রিয়ায় বন্দি’

সকালের সংবাদ অনলাইনঃ

ঢাকা উত্তর-দক্ষিণ সিটি করপোরেশন নির্বাচন ঘিরে দেশের প্রধান দুই বড় দল আওয়ামী লীগ ও বিএনপিসহ অন্য দলগুলোতে ভোটের দামামা বেজে উঠেছে। এর অংশ হিসেবে বুধবার অধিকাংশ রাজনৈতিক দল তাদের সম্ভাব্য প্রার্থীদের মধ্যে মনোনয়নপত্র বিতরণ শুরু করে। তবে এ প্রক্রিয়ার প্রথম দিন ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ শুধু মেয়র পদে এবং বিএনপি কাউন্সিলর পদে ফরম বিক্রি করেছে। আজ বৃহস্পতিবার বিএনপি তাদের মেয়র পদের সম্ভাব্য প্রার্থীদের মধ্যে ফরম বিতরণ করবে। কাউন্সিলর পদে আওয়ামী লীগের মনোনয়নপ্রত্যাশীদের বৃহস্পতিবার ও শুক্রবার সকাল ১০টা থেকে বিকেল পাঁচটা পর্যন্ত আওয়ামী লীগ সভাপতির ধানমন্ডির রাজনৈতিক কার্যালয় থেকে আবেদনপত্র সংগ্রহের আহবান জানানো হয়েছে।

এদিকে জাতীয় পার্টির (জাপা) বুধবার সকাল থেকে একই সঙ্গে মেয়র ও কাউন্সিলর পদে মনোনয়নপত্র বিক্রি শুরু করলেও বিকেল পর্যন্ত মেয়র পদের জন্য কেউ মনোনয়নপত্র সংগ্রহ করেননি। তবে সকালেই জাপা চেয়ারম্যানের বনানী কার্যালয় থেকে কাউন্সিলর পদে একাধিক প্রার্থী মনোনয়নপত্র সংগ্রহ করেন বলে জানা গেছে।

আওয়ামী লীগের দলীয় সূত্রে জানা গেছে, ঢাকা উত্তর ও দক্ষিণ সিটি করপোরেশনে মেয়র পদে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করতে বুধবার বিকেল পর্যন্ত দলের ৮ জন নেতা মনোনয়নপত্র সংগ্রহ করেছেন। এর মধ্যে উত্তরের মনোনয়নপত্র সংগ্রহকারীরা হলেন- বর্তমান মেয়র আতিকুল ইসলাম, বঙ্গবন্ধু ফাউন্ডেশনের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক শহীদুলস্নাহ ওসমানী, ভাষানটেক থানা আওয়ামী লীগের সহসভাপতি মেজর জেনারেল (অব.) ইয়াদ আলী ফকির ও আওয়ামী লীগ নেতা জামান ভুইয়া।

আর দক্ষিণের মেয়র পদে মনোনয়নপত্র সংগ্রহকারীরা হলেন- ঢাকা-১০ আসনের সাংসদ শেখ ফজলে নূর তাপস, ঢাকা-৭ আসনের সাংসদ হাজী সেলিম, বঙ্গবন্ধু একাডেমির সভাপতি মো. নাজমুল হক এবং মুক্তিযোদ্ধা কেন্দ্রীয় কমান্ড কাউন্সিলের সাবেক মহাসচিব এম এ রশিদ।

আওয়ামী লীগ সভাপতির রাজনৈতিক কার্যালয় সূত্র জানায়, বুধবার বেলা তিনটায় বর্তমান মেয়র আতিকুল ইসলামের পক্ষে তার ব্যক্তিগত সহকারী সাইফুদ্দিন ইমন এবং ছোটভাই আবু মাহমুদ খান মনোনয়নপত্রের ফরম সংগ্রহ করেন। এর আগে ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশন নির্বাচনে মেয়র পদে হাজী মোহাম্মদ সেলিম ও স্থানীয় আওয়ামী লীগ নেতা নাজমুল হক মনোনয়নপত্র সংগ্রহ করেন।

বুধবার দুপুর তিনটার কিছু পরে আওয়ামী লীগ সভাপতির ধানমন্ডির রাজনৈতিক কার্যালয় থেকে শেখ ফজলে নূর তাপসের পক্ষে মনোনয়ন ফরম সংগ্রহ করেন তার মামা মাসুদ সেরনিয়াবাত।

উলেস্নখ্য, বুধবার ঢাকা উত্তর ও দক্ষিণ সিটি করপোরেশন নির্বাচনে মেয়র পদে আওয়ামী লীগের আগ্রহী প্রার্থীদের জন্য দলীয় মনোনয়ন ফরম বিক্রি শুরু হয়। যা শুক্রবার বিকেল পাঁচটা পর্যন্ত চলবে। মনোনয়ন ফরম সংগ্রহের পর আওয়ামী লীগের স্থানীয় সরকার মনোনয়ন বোর্ডের সভায় প্রার্থী নির্বাচন করা হবে।

আওয়ামী লীগ সূত্রে জানা গেছে, মেয়র পদে মনোনয়ন নিয়ে তেমন জটিলতা হবে না। তবে ঢাকা উত্তর ও দক্ষিণ সিটির ১২৯টি ওয়ার্ডের কাউন্সিলর পদে সৎ, ত্যাগী ও ফ্রেস ইমেজের প্রার্থী মনোনয়ন আওয়ামী লীগের জন্য চ্যালেঞ্জ হিসেবে দেখা দিচ্ছে। জানা গেছে, যেসব নেতার ভাবমূর্তির সংকট রয়েছে, তাদের ঢাকার দুই সিটি নির্বাচনে কাউন্সিলর পদে দলীয় সমর্থন বা মনোনয়ন দেবে না আওয়ামী লীগ। বিশেষ করে ক্যাসিনোসহ টেন্ডার ও চাঁদাবাজির সঙ্গে প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষভাবে জড়িত বর্তমান কাউন্সিলররা এবার দল থেকে কোনোভাবেই সমর্থন পাচ্ছেন না বলে জানা যায়। ইতিমধ্যে ঢাকা উত্তর ও দক্ষিণ সিটির সবগুলো ওয়ার্ডের পরিচ্ছন্ন ইমেজের কাউন্সিলরদের একটি প্রার্থী তালিকা প্রস্তুত করেছে ক্ষমতাসীন দলটি। আওয়ামী লীগের মূল টার্গেট জনপ্রিয়, স্বচ্ছ ও দীর্ঘদিনের পরীক্ষিত নেতাদের প্রার্থী করা। যদিও ক্যাসিনোসহ নানা অপকর্মে জড়িত থাকার অপরাধে গ্রেপ্তার হওয়া এবং আত্মগোপনে থাকা অনেকে প্রার্থী হতে চান।

এদিকে বুধবার সকাল ১০টা থেকে নয়াপল্টনস্থ মহানগর কার্যালয় (ভাসানী ভবন) থেকে ঢাকা উত্তর ও দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের কাউন্সিলর পদে মনোনয়ন ফরম বিক্রি শুরু করে বিএনপি। ঢাকা মহানগর (উত্তর) বিএনপির দপ্তর সম্পাদক এ বি এম রাজ্জাক জানান, প্রথম দিনে ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের কাউন্সিলর পদে ৬৪ জন পুরুষ এবং ১০ জন মহিলা মনোনয়নপত্রের ফরম সংগ্রহ করেন। দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের কাউন্সিলর পদে মহিলাসহ মোট ৫০ জন মনোনয়ন ফরম সংগ্রহ করেছেন।

ঢাকা মহানগর উত্তর ৯ নং ওয়ার্ডের কাউন্সিলর পদে ফরম সংগ্রহকারী মো. সাইদুল ইসলাম বলেন, ‘দল যেহেতু এ নির্বাচনে অংশ নেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে, তাই মনোনয়নপত্র কিনেছি।’ জনগণের ভোটে নির্বাচিত হলে বেগম খালেদা জিয়ার মুক্তির আন্দোলনকে বেগবান এবং রাজধানীর গাবতলী এলাকাকে আধুনিক ঢাকায় রূপান্তরে কাজ করার আশাবাদ ব্যক্ত করেন তিনি। ঢাকা মহানগর উত্তর ৯৬নং ওয়ার্ডের মনোনয়ন ফরম সংগ্রহকারী মো. আমজাদ হোসেন মোলস্না ভোটে নির্বাচিত হলে এলাকার সন্ত্রাসী, চাঁদাবাজি দূর করার প্রতিশ্রম্নতি দেন।

দলীয় সূত্র জানায়, ঢাকার দুই সিটি করপোরেশনে মেয়র পদে নির্বাচনে মনোনয়নপ্রত্যাশীদের জন্য বৃহস্পতিবার থেকে মনোনয়ন ফরম বিতরণ করবে বিএনপি। সকাল ১০টা থেকে বিকেল চারটা পর্যন্ত নয়াপল্টনে দলটির কেন্দ্রীয় কার্যালয় থেকে মনোনয়ন ফরম সংগ্রহ করতে হবে। শুক্রবার বিকেল চারটার মধ্যে মনোনয়ন ফরম জমা দিতে হবে। মনোনয়নপত্র বিক্রি ও জমা নেওয়া শেষে দলের নীতি নির্ধারকরা যাচাই-বাছাই করে দলীয় প্রার্থী চূড়ান্ত করবেন।

সংশ্লিষ্টরা জানান, বিএনপিতে মেয়র পদে গতবারের উত্তর সিটির প্রার্থী তাবিথ আওয়ালের এবারও মনোনয়ন পাওয়ার জোরালো সম্ভাবনা রয়েছে। ঢাকা উত্তরে ২০১৫ সালের নির্বাচনে বিএনপির প্রার্থী হয়েছিলেন দলের নির্বাহী কমিটির সদস্য তাবিথ আউয়াল। সেবার তিনি অনিয়মের অভিযোগ তুলে নির্বাচনের দিনই ভোট বর্জন করেন। আনিসুল হকের মৃতু্যর পরে উপনির্বাচনে বিএনপি অংশ নেয়নি। তবে আসন্ন নির্বাচনের জন্য তখনো তাবিথের নামই এসেছে।

তবে দক্ষিণে বিএনপির প্রার্থী পরিবর্তনের সম্ভাবনা বেশি। অবিভক্ত ঢাকা সিটি করপোরেশনের সাবেক মেয়র মরহুম সাদেক হোসেন খোকার ছেলে ইশরাক হোসেনের নাম দলে বেশি উচ্চারিত হচ্ছে। একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে অংশ নিতে ঢাকা-৬ আসনের জন্য মনোনয়নপত্রও কিনেছিলেন। তবে জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের সঙ্গে দরকষাকষিতে তিনি সরে যান। সেখানে মনোনয়ন পান গণফোরামের নির্বাহী সভাপতি সুব্রত চৌধুরী। গতবার সিটি নির্বাচনে দক্ষিণে বিএনপির প্রার্থী ছিলেন বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য মির্জা আব্বাস। তার অনুপস্থিতিতে তখন মাঠে মির্জা আব্বাসের পক্ষে প্রচারণা করেছিলেন তার স্ত্রী ও মহিলা দলের সভাপতি আফরোজা আব্বাস। এবার অবশ্য প্রার্থী হিসেবে আফরোজা আব্বাসের নামও শোনা যাচ্ছে।

এদিকে ঢাকার দুই সিটির নির্বাচন নিয়ে বিএনপির নেতাকর্মীরা সাজসাজ প্রস্তুতি নিলেও তাদের মধ্যে নানা শঙ্কা ভর করেছে। গতবারের মতো এবারও তারা ভোটের মাঠে পুলিশি হয়রানির শিকার হবেন কি না, নির্বাচনী প্রচারণা চালানোর সময় ক্ষমতাসীন দলের ক্যাডাররা তাদের ওপর সশস্ত্র হামলা চালাবে কি না এবং সে ক্ষেত্রে ইসির ভূমিকা কী হবে- তা নিয়ে তারা সন্দেহের দোলাচলে রয়েছে।

বিএনপির স্থায়ী কমিটির একজন নেতা বলেন, ‘বিএনপি নির্বাচনে যাচ্ছে আন্দোলনের অংশ হিসেবে। বিগত নির্বাচনগুলোর মতোই সরকার এই নির্বাচন করতে পারে বলে আমরা আশঙ্কা করছি। গত নির্বাচনে নামমাত্র ভোট হয়েছে। আমাদের প্রার্থী ও নেতাকর্মীদের ওপর নিপীড়ন ও মামলা করা হয়েছে। ঘরবাড়িতে অভিযান চালানো হয়েছিল। তবে নির্বাচনে আওয়ামী লীগকে ফাঁকা মাঠ ছেড়ে দেওয়া হবে না।’

অন্যদিকে ঢাকা দুই সিটির নির্বাচনী পেস্নয়িংফিল্ড নিয়ে বিএনপি শঙ্কায় থাকলেও এ ভোট অবাধ, সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ হবে বলে আশা করছে জাতীয় পার্টি। দলের চেয়ারম্যান ও বিরোধীদলীয় উপনেতা গোলাম মোহাম্মদ (জিএম) কাদের বলেন, ‘সন্ত্রাস, চাঁদাবাজি এবং মাদকাসক্তির বিষয়ে জাতীয় পার্টি অনেক ক্ষেত্রেই পরিচ্ছন্ন। তাই জাতীয় পার্টির দিকে সাধারণ মানুষের একটি আগ্রহ আছে। আশা করছি এবারের ঢাকা উত্তর ও দক্ষিণ সিটি করপোরেশন নির্বাচনে জাতীয় পার্টির প্রার্থীরা আগের চেয়ে অনেক ভালো ফলাফল করবেন।’

সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের জবাবে জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান বলেন, ‘ঢাকা সিটি করপোরেশন নির্বাচনে জাতীয় পার্টি এককভাবেই প্রার্থী দিচ্ছে। ইতোপূর্বে বেশ কয়েকটি নির্বাচন আমরা সরকারের সাথে জোটবদ্ধ হয়ে করেছি। সরকারের পক্ষ থেকে জোটবদ্ধ নির্বাচনের প্রস্তাব এলে আমরা আলাপ-আলোচনা করে সিদ্ধান্ত নেব।’

এদিকে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের পাশাপাশি জাতীয় পার্টিও ঢাকার দুই সিটির নির্বাচন অবাধ ও সুষ্ঠু হওয়ার বিষয়ে পূর্ণ আস্থা জানালেও নির্বাচনী লেভেল পেস্নয়িং ফিল্ড প্রস্তুতের ক্ষমতা যাদের হাতে, সেই নির্বাচন কমিশনেরও কেউ কেউ তা নিয়ে আশা-নিরাশার দোলাচলে রয়েছেন।

বুধবার আগারগাঁওয়ের নির্বাচন প্রশিক্ষণ ইনস্টিটিউটে (ইটিআই) আয়োজিত এক কর্মশালায় অংশ নিয়ে জ্যেষ্ঠ নির্বাচন কমিশনার মাহবুব তালুকদার বলেন, নির্বাচন কমিশন (ইসি) আইনত স্বাধীন, কিন্তু বাস্তবক্ষেত্রে সেই স্বাধীনতা নির্বাচন প্রক্রিয়ার কাছে বন্দি। এজন্য নির্বাচন প্রক্রিয়ার সংস্কার প্রয়োজন।

ঢাকা উত্তর ও দক্ষিণ সিটি করপোরেশন নির্বাচন উপলক্ষে আয়োজিত ওই কর্মশালায় অংশ নেওয়া কর্মকর্তাদের উদ্দেশে তিনি বলেন, বর্তমান নির্বাচন কমিশনের দায়িত্ব পালনের তিন বছর অতিবাহিত হতে যাচ্ছে। বাকি দুবছর সময়ের মধ্যে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ নির্বাচন হচ্ছে ঢাকা উত্তর ও দক্ষিণ সিটি করপোরেশন নির্বাচন। এই নির্বাচন নিয়ে রাজধানীবাসী উৎসুক। স্থানীয় সরকার নির্বাচন হলেও জাতীয় নির্বাচনের মতোই এতে সমগ্র দেশবাসীর দৃষ্টি নিবন্ধ।

মাহবুব তালুকদার বলেন, ‘অতীতে যেসব সিটি করপোরেশনের নির্বাচন হয়েছে, তাতে প্রথম দুটি নির্বাচন কুমিলস্না ও রংপুর সিটি করপোরেশন নির্বাচনে আমাদের সফলতা ছিল। কিন্তু বেশিদিন “আপনার রূপে আপনি বিভোর” থাকা হলো না। পরবর্তী পাঁচটি সিটি করপোরেশন নির্বাচনের তিনটির বিষয়ে আমি প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষভাবে জড়িত ছিলাম। বরিশাল সিটি করপোরেশন নির্বাচনে আমি এককভাবে দায়িত্ব পালন করি এবং গাজীপুর সিটি করপোরেশন নির্বাচন ও খুলনা সিটি করপোরেশন নির্বাচন সম্পর্কে আমি প্রতিবেদন তৈরি করতে গিয়ে এই তিনটি নির্বাচনের স্বরূপ সন্ধান করি। কিন্তু এই তিন সিটি করপোরেশন নির্বাচনের অভিজ্ঞতা আমার কাছে মোটেই সুখকর নয়। আসন্ন ঢাকা সিটি করপোরেশনের নির্বাচনে বিগত ওই তিনটি সিটি করপোরেশন নির্বাচনের পুনরাবৃত্তি দেখতে চাই না।’

‘কেন নির্বাচন নিরপেক্ষ, শুদ্ধ ও গ্রহণযোগ্য হয় না? এ প্রশ্নের উত্তর আত্মজিজ্ঞাসার কারণেই আমাকে খুঁজতে হয়েছে। আমার অভিজ্ঞতা হচ্ছে, নির্বাচন কমিশন আইনত স্বাধীন, কিন্তু বাস্তবক্ষেত্রে সেই স্বাধীনতা নির্বাচন প্রক্রিয়ার কাছে বন্দি। এজন্য নির্বাচন প্রক্রিয়ার সংস্কার প্রয়োজন। নির্বাচন যদি গণতন্ত্রের পূর্বশর্ত হয়, তাহলে গণতন্ত্রের পদযাত্রা অবারিত করতে নির্বাচন অবাধ, সুষ্ঠু ও স্বচ্ছ হতে হবে। অবৈধভাবে নির্বাচিত জনপ্রতিনিধিদের জনগণের প্রতি বা গণতন্ত্রের প্রতি কোনো কমিটমেন্ট থাকে না।’

তিনি বলেন, ‘ঢাকা উত্তর ও দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের নির্বাচনকে সামনে রেখে আমি কোনো নিরাশার কথা শোনাতে চাই না। এই নির্বাচনের রিটার্নিং অফিসার, সহকারী রিটার্নিং অফিসার ও অন্যান্য সহায়ক কর্মকর্তারা প্রশিক্ষণের মাধ্যমে নির্বাচনী দায়িত্ব পালনে যে দক্ষতা ও পারদর্শিতা অর্জন করবেন, তা সুষ্ঠু নির্বাচনের জন্য অপরিহার্য। আমি দৃঢ়ভাবে বিশ্বাস করি, যেহেতু আপনারা সবাই নির্বাচন কমিশনের কর্মকর্তা, সেহেতু আপনারা নিজেদের যোগ্যতা ও দক্ষতাবলে সুষ্ঠু নির্বাচনের অন্তরায় সব অপশক্তিকে পরাজিত করে সাফল্য লাভ করবেন। সবার জন্য সমান সুযোগ সৃষ্টি বা “লেভেল পেস্নয়িং ফিল্ড” তৈরিতে আপনারা নিশ্চয়ই “জিরো টলারেন্স'” দেখাবেন। এক্ষেত্রে আপনাদের শিথিলতাও সহ্য করা হবে না এবং অভিযোগ প্রমাণিত হলে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

‘ঢাকার উভয় সিটি করপোরেশন নির্বাচনে এবারই সার্বিকভাবে ইভিএম ব্যবহার করা হচ্ছে। ইভিএম নিয়ে অনেকের মধ্যে দ্বিধাদ্বন্দ্ব রয়েছে। নির্বাচন কমিশনের জন্য এটি একটি অগ্নিপরীক্ষা। এই চ্যালেঞ্জ মোকাবিলায় আমরা যদি সফল হতে পারি, তাহলে পরবর্তীতে সর্বক্ষেত্রে ইভিএম ব্যবহার করা সম্ভব হবে। ইভিএমে ভোটগ্রহণ প্রশ্নবিদ্ধ হলে নির্বাচনও প্রশ্নবিদ্ধ হয়ে পড়বে। এজন্য ইভিএমে সতর্কতার সঙ্গে ভোটগ্রহণ করে ভোটারদের আস্থা অর্জনের কোনো বিকল্প নেই।’

প্রসঙ্গত, দুই সিটি করপোরেশনের ভোট গ্রহণের জন্য ৩০ জানুয়ারি নির্ধারণ করেছে নির্বাচন কমিশন। কমিশনের প্রজ্ঞাপনে জানানো হয়েছে, রিটার্নিং কর্মকর্তা বা সহকারী রিটার্নিং কর্মকর্তার কাছে মনোনয়নপত্র জমা দেওয়ার শেষ তারিখ ৩১ ডিসেম্বর। মনোনয়নপত্র যাচাই-বাছাই করা হবে ২ জানুয়ারি। প্রার্থিতা প্রত্যাহারের শেষ তারিখ ৯ জানুয়ারি।

নিউজটি শেয়ার করুন

আপনার মন্তব্য

Your email address will not be published. Required fields are marked *

আপনার ইমেইল এবং অন্যান্য তথ্য সংরক্ষন করুন

ট্যাগস :




উত্তর-দক্ষিণ সিটি করপোরেশন নির্বাচন ঘিরে মনোনয়ন দৌড়

আপডেট সময় : ০৯:০৪:২৫ পূর্বাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ২৬ ডিসেম্বর ২০১৯
আ’লীগ-বিএনপি-জাপার মনোনয়ন ফরম বিক্রি নির্বাচনী লেভেল পেস্নয়িং ফিল্ড নিয়ে শঙ্কা ‘ইসির স্বাধীনতা নির্বাচন প্রক্রিয়ায় বন্দি’

সকালের সংবাদ অনলাইনঃ

ঢাকা উত্তর-দক্ষিণ সিটি করপোরেশন নির্বাচন ঘিরে দেশের প্রধান দুই বড় দল আওয়ামী লীগ ও বিএনপিসহ অন্য দলগুলোতে ভোটের দামামা বেজে উঠেছে। এর অংশ হিসেবে বুধবার অধিকাংশ রাজনৈতিক দল তাদের সম্ভাব্য প্রার্থীদের মধ্যে মনোনয়নপত্র বিতরণ শুরু করে। তবে এ প্রক্রিয়ার প্রথম দিন ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ শুধু মেয়র পদে এবং বিএনপি কাউন্সিলর পদে ফরম বিক্রি করেছে। আজ বৃহস্পতিবার বিএনপি তাদের মেয়র পদের সম্ভাব্য প্রার্থীদের মধ্যে ফরম বিতরণ করবে। কাউন্সিলর পদে আওয়ামী লীগের মনোনয়নপ্রত্যাশীদের বৃহস্পতিবার ও শুক্রবার সকাল ১০টা থেকে বিকেল পাঁচটা পর্যন্ত আওয়ামী লীগ সভাপতির ধানমন্ডির রাজনৈতিক কার্যালয় থেকে আবেদনপত্র সংগ্রহের আহবান জানানো হয়েছে।

এদিকে জাতীয় পার্টির (জাপা) বুধবার সকাল থেকে একই সঙ্গে মেয়র ও কাউন্সিলর পদে মনোনয়নপত্র বিক্রি শুরু করলেও বিকেল পর্যন্ত মেয়র পদের জন্য কেউ মনোনয়নপত্র সংগ্রহ করেননি। তবে সকালেই জাপা চেয়ারম্যানের বনানী কার্যালয় থেকে কাউন্সিলর পদে একাধিক প্রার্থী মনোনয়নপত্র সংগ্রহ করেন বলে জানা গেছে।

আওয়ামী লীগের দলীয় সূত্রে জানা গেছে, ঢাকা উত্তর ও দক্ষিণ সিটি করপোরেশনে মেয়র পদে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করতে বুধবার বিকেল পর্যন্ত দলের ৮ জন নেতা মনোনয়নপত্র সংগ্রহ করেছেন। এর মধ্যে উত্তরের মনোনয়নপত্র সংগ্রহকারীরা হলেন- বর্তমান মেয়র আতিকুল ইসলাম, বঙ্গবন্ধু ফাউন্ডেশনের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক শহীদুলস্নাহ ওসমানী, ভাষানটেক থানা আওয়ামী লীগের সহসভাপতি মেজর জেনারেল (অব.) ইয়াদ আলী ফকির ও আওয়ামী লীগ নেতা জামান ভুইয়া।

আর দক্ষিণের মেয়র পদে মনোনয়নপত্র সংগ্রহকারীরা হলেন- ঢাকা-১০ আসনের সাংসদ শেখ ফজলে নূর তাপস, ঢাকা-৭ আসনের সাংসদ হাজী সেলিম, বঙ্গবন্ধু একাডেমির সভাপতি মো. নাজমুল হক এবং মুক্তিযোদ্ধা কেন্দ্রীয় কমান্ড কাউন্সিলের সাবেক মহাসচিব এম এ রশিদ।

আওয়ামী লীগ সভাপতির রাজনৈতিক কার্যালয় সূত্র জানায়, বুধবার বেলা তিনটায় বর্তমান মেয়র আতিকুল ইসলামের পক্ষে তার ব্যক্তিগত সহকারী সাইফুদ্দিন ইমন এবং ছোটভাই আবু মাহমুদ খান মনোনয়নপত্রের ফরম সংগ্রহ করেন। এর আগে ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশন নির্বাচনে মেয়র পদে হাজী মোহাম্মদ সেলিম ও স্থানীয় আওয়ামী লীগ নেতা নাজমুল হক মনোনয়নপত্র সংগ্রহ করেন।

বুধবার দুপুর তিনটার কিছু পরে আওয়ামী লীগ সভাপতির ধানমন্ডির রাজনৈতিক কার্যালয় থেকে শেখ ফজলে নূর তাপসের পক্ষে মনোনয়ন ফরম সংগ্রহ করেন তার মামা মাসুদ সেরনিয়াবাত।

উলেস্নখ্য, বুধবার ঢাকা উত্তর ও দক্ষিণ সিটি করপোরেশন নির্বাচনে মেয়র পদে আওয়ামী লীগের আগ্রহী প্রার্থীদের জন্য দলীয় মনোনয়ন ফরম বিক্রি শুরু হয়। যা শুক্রবার বিকেল পাঁচটা পর্যন্ত চলবে। মনোনয়ন ফরম সংগ্রহের পর আওয়ামী লীগের স্থানীয় সরকার মনোনয়ন বোর্ডের সভায় প্রার্থী নির্বাচন করা হবে।

আওয়ামী লীগ সূত্রে জানা গেছে, মেয়র পদে মনোনয়ন নিয়ে তেমন জটিলতা হবে না। তবে ঢাকা উত্তর ও দক্ষিণ সিটির ১২৯টি ওয়ার্ডের কাউন্সিলর পদে সৎ, ত্যাগী ও ফ্রেস ইমেজের প্রার্থী মনোনয়ন আওয়ামী লীগের জন্য চ্যালেঞ্জ হিসেবে দেখা দিচ্ছে। জানা গেছে, যেসব নেতার ভাবমূর্তির সংকট রয়েছে, তাদের ঢাকার দুই সিটি নির্বাচনে কাউন্সিলর পদে দলীয় সমর্থন বা মনোনয়ন দেবে না আওয়ামী লীগ। বিশেষ করে ক্যাসিনোসহ টেন্ডার ও চাঁদাবাজির সঙ্গে প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষভাবে জড়িত বর্তমান কাউন্সিলররা এবার দল থেকে কোনোভাবেই সমর্থন পাচ্ছেন না বলে জানা যায়। ইতিমধ্যে ঢাকা উত্তর ও দক্ষিণ সিটির সবগুলো ওয়ার্ডের পরিচ্ছন্ন ইমেজের কাউন্সিলরদের একটি প্রার্থী তালিকা প্রস্তুত করেছে ক্ষমতাসীন দলটি। আওয়ামী লীগের মূল টার্গেট জনপ্রিয়, স্বচ্ছ ও দীর্ঘদিনের পরীক্ষিত নেতাদের প্রার্থী করা। যদিও ক্যাসিনোসহ নানা অপকর্মে জড়িত থাকার অপরাধে গ্রেপ্তার হওয়া এবং আত্মগোপনে থাকা অনেকে প্রার্থী হতে চান।

এদিকে বুধবার সকাল ১০টা থেকে নয়াপল্টনস্থ মহানগর কার্যালয় (ভাসানী ভবন) থেকে ঢাকা উত্তর ও দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের কাউন্সিলর পদে মনোনয়ন ফরম বিক্রি শুরু করে বিএনপি। ঢাকা মহানগর (উত্তর) বিএনপির দপ্তর সম্পাদক এ বি এম রাজ্জাক জানান, প্রথম দিনে ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের কাউন্সিলর পদে ৬৪ জন পুরুষ এবং ১০ জন মহিলা মনোনয়নপত্রের ফরম সংগ্রহ করেন। দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের কাউন্সিলর পদে মহিলাসহ মোট ৫০ জন মনোনয়ন ফরম সংগ্রহ করেছেন।

ঢাকা মহানগর উত্তর ৯ নং ওয়ার্ডের কাউন্সিলর পদে ফরম সংগ্রহকারী মো. সাইদুল ইসলাম বলেন, ‘দল যেহেতু এ নির্বাচনে অংশ নেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে, তাই মনোনয়নপত্র কিনেছি।’ জনগণের ভোটে নির্বাচিত হলে বেগম খালেদা জিয়ার মুক্তির আন্দোলনকে বেগবান এবং রাজধানীর গাবতলী এলাকাকে আধুনিক ঢাকায় রূপান্তরে কাজ করার আশাবাদ ব্যক্ত করেন তিনি। ঢাকা মহানগর উত্তর ৯৬নং ওয়ার্ডের মনোনয়ন ফরম সংগ্রহকারী মো. আমজাদ হোসেন মোলস্না ভোটে নির্বাচিত হলে এলাকার সন্ত্রাসী, চাঁদাবাজি দূর করার প্রতিশ্রম্নতি দেন।

দলীয় সূত্র জানায়, ঢাকার দুই সিটি করপোরেশনে মেয়র পদে নির্বাচনে মনোনয়নপ্রত্যাশীদের জন্য বৃহস্পতিবার থেকে মনোনয়ন ফরম বিতরণ করবে বিএনপি। সকাল ১০টা থেকে বিকেল চারটা পর্যন্ত নয়াপল্টনে দলটির কেন্দ্রীয় কার্যালয় থেকে মনোনয়ন ফরম সংগ্রহ করতে হবে। শুক্রবার বিকেল চারটার মধ্যে মনোনয়ন ফরম জমা দিতে হবে। মনোনয়নপত্র বিক্রি ও জমা নেওয়া শেষে দলের নীতি নির্ধারকরা যাচাই-বাছাই করে দলীয় প্রার্থী চূড়ান্ত করবেন।

সংশ্লিষ্টরা জানান, বিএনপিতে মেয়র পদে গতবারের উত্তর সিটির প্রার্থী তাবিথ আওয়ালের এবারও মনোনয়ন পাওয়ার জোরালো সম্ভাবনা রয়েছে। ঢাকা উত্তরে ২০১৫ সালের নির্বাচনে বিএনপির প্রার্থী হয়েছিলেন দলের নির্বাহী কমিটির সদস্য তাবিথ আউয়াল। সেবার তিনি অনিয়মের অভিযোগ তুলে নির্বাচনের দিনই ভোট বর্জন করেন। আনিসুল হকের মৃতু্যর পরে উপনির্বাচনে বিএনপি অংশ নেয়নি। তবে আসন্ন নির্বাচনের জন্য তখনো তাবিথের নামই এসেছে।

তবে দক্ষিণে বিএনপির প্রার্থী পরিবর্তনের সম্ভাবনা বেশি। অবিভক্ত ঢাকা সিটি করপোরেশনের সাবেক মেয়র মরহুম সাদেক হোসেন খোকার ছেলে ইশরাক হোসেনের নাম দলে বেশি উচ্চারিত হচ্ছে। একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে অংশ নিতে ঢাকা-৬ আসনের জন্য মনোনয়নপত্রও কিনেছিলেন। তবে জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের সঙ্গে দরকষাকষিতে তিনি সরে যান। সেখানে মনোনয়ন পান গণফোরামের নির্বাহী সভাপতি সুব্রত চৌধুরী। গতবার সিটি নির্বাচনে দক্ষিণে বিএনপির প্রার্থী ছিলেন বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য মির্জা আব্বাস। তার অনুপস্থিতিতে তখন মাঠে মির্জা আব্বাসের পক্ষে প্রচারণা করেছিলেন তার স্ত্রী ও মহিলা দলের সভাপতি আফরোজা আব্বাস। এবার অবশ্য প্রার্থী হিসেবে আফরোজা আব্বাসের নামও শোনা যাচ্ছে।

এদিকে ঢাকার দুই সিটির নির্বাচন নিয়ে বিএনপির নেতাকর্মীরা সাজসাজ প্রস্তুতি নিলেও তাদের মধ্যে নানা শঙ্কা ভর করেছে। গতবারের মতো এবারও তারা ভোটের মাঠে পুলিশি হয়রানির শিকার হবেন কি না, নির্বাচনী প্রচারণা চালানোর সময় ক্ষমতাসীন দলের ক্যাডাররা তাদের ওপর সশস্ত্র হামলা চালাবে কি না এবং সে ক্ষেত্রে ইসির ভূমিকা কী হবে- তা নিয়ে তারা সন্দেহের দোলাচলে রয়েছে।

বিএনপির স্থায়ী কমিটির একজন নেতা বলেন, ‘বিএনপি নির্বাচনে যাচ্ছে আন্দোলনের অংশ হিসেবে। বিগত নির্বাচনগুলোর মতোই সরকার এই নির্বাচন করতে পারে বলে আমরা আশঙ্কা করছি। গত নির্বাচনে নামমাত্র ভোট হয়েছে। আমাদের প্রার্থী ও নেতাকর্মীদের ওপর নিপীড়ন ও মামলা করা হয়েছে। ঘরবাড়িতে অভিযান চালানো হয়েছিল। তবে নির্বাচনে আওয়ামী লীগকে ফাঁকা মাঠ ছেড়ে দেওয়া হবে না।’

অন্যদিকে ঢাকা দুই সিটির নির্বাচনী পেস্নয়িংফিল্ড নিয়ে বিএনপি শঙ্কায় থাকলেও এ ভোট অবাধ, সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ হবে বলে আশা করছে জাতীয় পার্টি। দলের চেয়ারম্যান ও বিরোধীদলীয় উপনেতা গোলাম মোহাম্মদ (জিএম) কাদের বলেন, ‘সন্ত্রাস, চাঁদাবাজি এবং মাদকাসক্তির বিষয়ে জাতীয় পার্টি অনেক ক্ষেত্রেই পরিচ্ছন্ন। তাই জাতীয় পার্টির দিকে সাধারণ মানুষের একটি আগ্রহ আছে। আশা করছি এবারের ঢাকা উত্তর ও দক্ষিণ সিটি করপোরেশন নির্বাচনে জাতীয় পার্টির প্রার্থীরা আগের চেয়ে অনেক ভালো ফলাফল করবেন।’

সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের জবাবে জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান বলেন, ‘ঢাকা সিটি করপোরেশন নির্বাচনে জাতীয় পার্টি এককভাবেই প্রার্থী দিচ্ছে। ইতোপূর্বে বেশ কয়েকটি নির্বাচন আমরা সরকারের সাথে জোটবদ্ধ হয়ে করেছি। সরকারের পক্ষ থেকে জোটবদ্ধ নির্বাচনের প্রস্তাব এলে আমরা আলাপ-আলোচনা করে সিদ্ধান্ত নেব।’

এদিকে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের পাশাপাশি জাতীয় পার্টিও ঢাকার দুই সিটির নির্বাচন অবাধ ও সুষ্ঠু হওয়ার বিষয়ে পূর্ণ আস্থা জানালেও নির্বাচনী লেভেল পেস্নয়িং ফিল্ড প্রস্তুতের ক্ষমতা যাদের হাতে, সেই নির্বাচন কমিশনেরও কেউ কেউ তা নিয়ে আশা-নিরাশার দোলাচলে রয়েছেন।

বুধবার আগারগাঁওয়ের নির্বাচন প্রশিক্ষণ ইনস্টিটিউটে (ইটিআই) আয়োজিত এক কর্মশালায় অংশ নিয়ে জ্যেষ্ঠ নির্বাচন কমিশনার মাহবুব তালুকদার বলেন, নির্বাচন কমিশন (ইসি) আইনত স্বাধীন, কিন্তু বাস্তবক্ষেত্রে সেই স্বাধীনতা নির্বাচন প্রক্রিয়ার কাছে বন্দি। এজন্য নির্বাচন প্রক্রিয়ার সংস্কার প্রয়োজন।

ঢাকা উত্তর ও দক্ষিণ সিটি করপোরেশন নির্বাচন উপলক্ষে আয়োজিত ওই কর্মশালায় অংশ নেওয়া কর্মকর্তাদের উদ্দেশে তিনি বলেন, বর্তমান নির্বাচন কমিশনের দায়িত্ব পালনের তিন বছর অতিবাহিত হতে যাচ্ছে। বাকি দুবছর সময়ের মধ্যে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ নির্বাচন হচ্ছে ঢাকা উত্তর ও দক্ষিণ সিটি করপোরেশন নির্বাচন। এই নির্বাচন নিয়ে রাজধানীবাসী উৎসুক। স্থানীয় সরকার নির্বাচন হলেও জাতীয় নির্বাচনের মতোই এতে সমগ্র দেশবাসীর দৃষ্টি নিবন্ধ।

মাহবুব তালুকদার বলেন, ‘অতীতে যেসব সিটি করপোরেশনের নির্বাচন হয়েছে, তাতে প্রথম দুটি নির্বাচন কুমিলস্না ও রংপুর সিটি করপোরেশন নির্বাচনে আমাদের সফলতা ছিল। কিন্তু বেশিদিন “আপনার রূপে আপনি বিভোর” থাকা হলো না। পরবর্তী পাঁচটি সিটি করপোরেশন নির্বাচনের তিনটির বিষয়ে আমি প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষভাবে জড়িত ছিলাম। বরিশাল সিটি করপোরেশন নির্বাচনে আমি এককভাবে দায়িত্ব পালন করি এবং গাজীপুর সিটি করপোরেশন নির্বাচন ও খুলনা সিটি করপোরেশন নির্বাচন সম্পর্কে আমি প্রতিবেদন তৈরি করতে গিয়ে এই তিনটি নির্বাচনের স্বরূপ সন্ধান করি। কিন্তু এই তিন সিটি করপোরেশন নির্বাচনের অভিজ্ঞতা আমার কাছে মোটেই সুখকর নয়। আসন্ন ঢাকা সিটি করপোরেশনের নির্বাচনে বিগত ওই তিনটি সিটি করপোরেশন নির্বাচনের পুনরাবৃত্তি দেখতে চাই না।’

‘কেন নির্বাচন নিরপেক্ষ, শুদ্ধ ও গ্রহণযোগ্য হয় না? এ প্রশ্নের উত্তর আত্মজিজ্ঞাসার কারণেই আমাকে খুঁজতে হয়েছে। আমার অভিজ্ঞতা হচ্ছে, নির্বাচন কমিশন আইনত স্বাধীন, কিন্তু বাস্তবক্ষেত্রে সেই স্বাধীনতা নির্বাচন প্রক্রিয়ার কাছে বন্দি। এজন্য নির্বাচন প্রক্রিয়ার সংস্কার প্রয়োজন। নির্বাচন যদি গণতন্ত্রের পূর্বশর্ত হয়, তাহলে গণতন্ত্রের পদযাত্রা অবারিত করতে নির্বাচন অবাধ, সুষ্ঠু ও স্বচ্ছ হতে হবে। অবৈধভাবে নির্বাচিত জনপ্রতিনিধিদের জনগণের প্রতি বা গণতন্ত্রের প্রতি কোনো কমিটমেন্ট থাকে না।’

তিনি বলেন, ‘ঢাকা উত্তর ও দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের নির্বাচনকে সামনে রেখে আমি কোনো নিরাশার কথা শোনাতে চাই না। এই নির্বাচনের রিটার্নিং অফিসার, সহকারী রিটার্নিং অফিসার ও অন্যান্য সহায়ক কর্মকর্তারা প্রশিক্ষণের মাধ্যমে নির্বাচনী দায়িত্ব পালনে যে দক্ষতা ও পারদর্শিতা অর্জন করবেন, তা সুষ্ঠু নির্বাচনের জন্য অপরিহার্য। আমি দৃঢ়ভাবে বিশ্বাস করি, যেহেতু আপনারা সবাই নির্বাচন কমিশনের কর্মকর্তা, সেহেতু আপনারা নিজেদের যোগ্যতা ও দক্ষতাবলে সুষ্ঠু নির্বাচনের অন্তরায় সব অপশক্তিকে পরাজিত করে সাফল্য লাভ করবেন। সবার জন্য সমান সুযোগ সৃষ্টি বা “লেভেল পেস্নয়িং ফিল্ড” তৈরিতে আপনারা নিশ্চয়ই “জিরো টলারেন্স'” দেখাবেন। এক্ষেত্রে আপনাদের শিথিলতাও সহ্য করা হবে না এবং অভিযোগ প্রমাণিত হলে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

‘ঢাকার উভয় সিটি করপোরেশন নির্বাচনে এবারই সার্বিকভাবে ইভিএম ব্যবহার করা হচ্ছে। ইভিএম নিয়ে অনেকের মধ্যে দ্বিধাদ্বন্দ্ব রয়েছে। নির্বাচন কমিশনের জন্য এটি একটি অগ্নিপরীক্ষা। এই চ্যালেঞ্জ মোকাবিলায় আমরা যদি সফল হতে পারি, তাহলে পরবর্তীতে সর্বক্ষেত্রে ইভিএম ব্যবহার করা সম্ভব হবে। ইভিএমে ভোটগ্রহণ প্রশ্নবিদ্ধ হলে নির্বাচনও প্রশ্নবিদ্ধ হয়ে পড়বে। এজন্য ইভিএমে সতর্কতার সঙ্গে ভোটগ্রহণ করে ভোটারদের আস্থা অর্জনের কোনো বিকল্প নেই।’

প্রসঙ্গত, দুই সিটি করপোরেশনের ভোট গ্রহণের জন্য ৩০ জানুয়ারি নির্ধারণ করেছে নির্বাচন কমিশন। কমিশনের প্রজ্ঞাপনে জানানো হয়েছে, রিটার্নিং কর্মকর্তা বা সহকারী রিটার্নিং কর্মকর্তার কাছে মনোনয়নপত্র জমা দেওয়ার শেষ তারিখ ৩১ ডিসেম্বর। মনোনয়নপত্র যাচাই-বাছাই করা হবে ২ জানুয়ারি। প্রার্থিতা প্রত্যাহারের শেষ তারিখ ৯ জানুয়ারি।