ঢাকা ০৫:১৩ অপরাহ্ন, শনিবার, ২০ এপ্রিল ২০২৪, ৭ বৈশাখ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ
সংবাদ শিরোনাম :
Logo মঙ্গল শোভাযাত্রা – তাসফিয়া ফারহানা ঐশী Logo সাস্টিয়ান ব্রাহ্মণবাড়িয়া এর ইফতার মাহফিল সম্পন্ন Logo কুবির চট্টগ্রাম স্টুডেন্টস ওয়েলফেয়ার এসোসিয়েশনের ইফতার ও পূর্নমিলনী Logo অধ্যাপক জহীর উদ্দিন আহমেদের মায়ের মৃত্যুতে শাবির মহান মুক্তিযুদ্ধের চেতনা ও মুক্ত চিন্তা চর্চায় ঐক্যবদ্ধ শিক্ষকবৃন্দ পরিষদের শোক প্রকাশ Logo শাবির অধ্যাপক জহীর উদ্দিনের মায়ের মৃত্যুতে উপাচার্যের শোক প্রকাশ Logo বিশ কোটিতে গণপূর্তের প্রধান হওয়ার মিশনে ‘ছাত্রদল ক্যাডার প্রকৌশলী’! Logo দূর্নীতির রাক্ষস ফায়ার সার্ভিসের এডি আনোয়ার! Logo ঝড় ও শিলাবৃষ্টিতে ক্ষতি হওয়া শাহজালাল বিশ্ববিদ্যালয়ে অবকাঠামোর সংস্কার শুরু Logo বুয়েটে নিয়মতান্ত্রিক ছাত্র রাজনীতির দাবিতে শাবিপ্রবি ছাত্রলীগের মানববন্ধন Logo কুবি উপাচার্যের বক্তব্যের প্রমাণ দিতে শিক্ষক সমিতির সাত দিনের আল্টিমেটাম




ঢাকায় দুই সিটি নির্বাচন সক্রিয় পলাতক শীর্ষ সন্ত্রাসীরা

প্রতিনিধির নাম
  • আপডেট সময় : ০৯:৪৪:৪৮ পূর্বাহ্ন, মঙ্গলবার, ২৪ ডিসেম্বর ২০১৯ ৫৮ বার পড়া হয়েছে
গোয়েন্দাদের হাতে কল রেকর্ড
নিজস্ব প্রতিবেদক; 

জামিনে বেরিয়ে আবারও দুবাই বসেই ঢাকার আন্ডারওয়ার্ল্ড নিয়ন্ত্রণে সক্রিয় রয়েছেন শীর্ষ সন্ত্রাসী জিসান আহমেদ ওরফে মন্টি। চলতি মাসের ৭ ডিসেম্বর ঢাকায় দুই ঘনিষ্ঠ সহযোগীর কাছে ফোন করেন তিনি। উজ্জ্বল ও বিপ্লব নামে ওই দুই সহযোগীকে ঢাকার আসন্ন সিটি করপোরেশন নির্বাচন ঘিরে নিজের কিছু পরিকল্পনার কথা জানান। একটি দলের সম্ভাব্য এক মেয়র প্রার্থীর সঙ্গে দুবাইয়ে কীভাবে বৈঠকের আয়োজন করা যায় সে ব্যাপারে নির্দেশনা দেন। জিসান দীর্ঘদিন ধরে ঢাকায় তার যেসব সহযোগীর সঙ্গে যোগাযোগ রাখেন তাদের অনেকের ওপর গোয়েন্দা নজর রাখা হয়। সেই সূত্র ধরে নির্বাচন ঘিরে উজ্জ্বল ও বিপ্লবের সঙ্গে জিসানের কথোপকথনের এমন তথ্য পেয়েছে একটি দায়িত্বশীল গোয়েন্দা সংস্থা। শুধু জিসান নন, আরও একাধিক পলাতক শীর্ষ সন্ত্রাসী নির্বাচন ঘিরে আন্ডারওয়ার্ল্ডে নতুন মেরুকরণের চেষ্টা চালাচ্ছে। তারা বিভিন্ন কাউন্সিলর পদে নিজ নিজ বলয়ের প্রার্থীর মনোনয়ন পাইয়ে দেওয়ার তৎপরতা চালিয়ে আসছে। আবার কোনো কোনো প্রার্থী মনোনয়ন নিশ্চিত করতে নিজেরাই নানাভাবে শীর্ষ সন্ত্রাসীদের সঙ্গে যোগাযোগ রাখছেন। গত রোববার ঢাকার দুই সিটি করপোরেশনের তফসিল ঘোষণা করা হয়। তবে তফসিল ঘোষণার আগে থেকেই নির্বাচন ঘিরে কয়েকজন শীর্ষ সন্ত্রাসীর তৎপরতার তথ্য গোয়েন্দাদের হাতে আসে।

ঢাকা মহানগর পুলিশের অতিরিক্ত কমিশনার (অপরাধ ও অপারেশন) কৃষ্ণপদ রায় সমকালকে বলেন, নির্বাচনকে প্রভাবমুক্ত রাখতে সম্ভাব্য সব ধরনের প্রস্তুতি নিচ্ছে পুলিশ। যাতে কেউ দেশে-বিদেশে বসে অপতৎপরতা চালাতে না পারে সে দিকে নজর রাখা হয়েছে।

র‌্যাবের আইন ও গণমাধ্যম শাখার পরিচালক লে. কর্নেল সারওয়ার বিন কাশেম বলেন, কোনো অপরাধীচক্র যাতে নির্বাচনে হস্তক্ষেপ করতে না পারে সে ব্যাপারে র‌্যাবের একাধিক টিম কাজ করবে।

আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর দায়িত্বশীল এক কর্মকর্তা জানান, বিদেশে পলাতক সন্ত্রাসীরা নানা কারণে ঢাকার আন্ডারওয়ার্ল্ডের নিয়ন্ত্রণ নিতে মরিয়া। প্রথমত, শিষ্যদের মাধ্যমে ঢাকায় চাঁদাবাজির একটি বড় ভাগ তারা নিয়মিত পেয়ে থাকেন। আবার অসাধু রাজনৈতিক নেতাদের মাধ্যমে বিভিন্ন দপ্তরের বড় বড় টেন্ডার ও ঈদের সময় কোরবানির গরুর হাটের নিয়ন্ত্রণ বজায় রাখার চেষ্টা করে পলাতক সন্ত্রাসীরা। অনেক সময় পলাতক শীর্ষ সন্ত্রাসীদের ব্যবহার করে কেউ কেউ নিজস্ব প্রভাব বিস্তারের চেষ্টাও করে। সম্প্রতি ক্যাসিনোকাে যুবলীগ নেতা খালেদ মাহমুদ ভূঁঁঁইয়া ও ঠিকাদার জি কে শামীম গ্রেপ্তার হওয়ার পর নতুন করে আলোচনায় আসেন জিসান। ওই দু’জনকে জিজ্ঞাসাবাদে জিসানের দুবাইয়ে অবস্থানের ব্যাপারে অনেকটাই নিশ্চিত হয় আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী। ঠিকাদারি নিয়ন্ত্রণ নিয়ে শামীম ও খালেদের সঙ্গে জিসানের বিরোধ তৈরি হয়। তাদের হত্যা করতে একে-২২-এর একটি চালানও পাঠান জিসান। এ ছাড়া গ্রেপ্তারে পর জি কে শামীম জানান, এক সময় তার এতসংখ্যক দেহরক্ষী ছিল না। শীর্ষ সন্ত্রাসী জিসানের ভয়ে তিনি সাতজন দেহরক্ষী নিয়ে চলতেন। জিসানের নাম ব্যবহার করে এক সময় সরকারি বিভিন্ন দপ্তরের ঠিকাদারি কাজ নিয়ন্ত্রণ করতেন তিনি। পরে শামীম তাকে এড়িয়ে যুবলীগের সিন্ডিকেটে যুক্ত হওয়ার পর জিসানের সঙ্গে তার বিরোধ তৈরি হয়।

একাধিক সূত্র জানায়, এক সময় টিটিপাড়ায় একচ্ছত্র আধিপত্য ছিল সন্ত্রাসী নাছিরের। বিএনপি-জামায়াত জোটের সময় শীর্ষ সন্ত্রাসীদের তালিকা তৈরি হলে দেশ থেকে পালিয়ে যান তিনি। বর্তমানে নাছির ইতালিতে। মাঝেমধ্যে ভারতে যাতায়াত করেন। আসন্ন সিটি করপোরেশন নির্বাচনে ‘র’ আদ্যাক্ষরের সাবেক এক দেহরক্ষীকে কাউন্সিলর প্রার্থী করতে মরিয়া নাছির। ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের ৩৯ নম্বর ওয়ার্ডে তাকে কাজ করে যাওয়ার পরামর্শ দিচ্ছেন নাছির। নাছিরের হয়ে এলাকায় বর্তমানে যারা মাস্তানি করে যাচ্ছেন তাদের মধ্যে রয়েছেন সবুর ওরফে মাস্টার সবুর ও শাহিন।

আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর দায়িত্বশীল এক কর্মকর্তা জানান, বর্তমানে ঢাকার আন্ডারওয়ার্ল্ডের একটি বড় অংশের নিয়ন্ত্রণ করছেন জিসান। মগবাজার, বাড্ডা, রামপুরা, মালিবাগ, শাহজাহানপুর ও গোড়ানে তার শিষ্যরা প্রভাব বিস্তার করছে। সর্বশেষ গত ঈদুল ফিতরের আগে ঢাকায় যুবলীগ নেতা রাজীবকে হত্যা করা হয়। ওই হত্যার তদন্ত করতে গিয়ে গোয়েন্দারা চমকপ্রদ তথ্য পান। জানা যায়, রাজীব এক সময় জিসানের ঘনিষ্ঠ ছিলেন। জিসানের অস্ত্র শাখার নিয়ন্ত্রণকারী শুভকে হত্যা করতে রাজীবকে নির্দেশ দেন জিসান। তবে শুভকে খুন না করে রাজীব জিসানের পরিকল্পনা ফাঁস করে দেন। পরে জিসান বুঝে ফেলেন রাজীবকে দিয়ে ওই অপারেশন সফল করা সম্ভব হবে না। তখন খিলগাঁওয়ের আরিফ-তারিফ নামে দুই ভাইকে হত্যা করার জন্য শুভকে নির্দেশ দেন তিনি। ওই সহোদর জিসানের বিশ্বস্ত ক্যাডার। এই নির্দেশনার বিষয়টিও জেনে ফেলেন রাজীব। পরে তিনি তা শুভকে জানিয়ে দেন। এরপর শুভ খিলগাঁওয়ে আরিফকে হত্যা করে। পরে জিসানের অস্ত্রভাণ্ডারের ৮-১০টি অস্ত্র নিয়ে পালিয়ে যায় শুভ। বারবার নিজের পরিকল্পনা ব্যর্থ করে দেওয়ায় একপর্যায়ে রাজীবকে পরিকল্পিতভাবে আশিক নামে এক ক্যাডারের মাধ্যমে হত্যা করে জিসান।

জানা যায়, সম্প্রতি দুবাইয়ের ন্যাশনাল সেন্ট্রাল ব্যুরো (এনসিবি) সেখানে জিসানের অবস্থান শনাক্ত করে বাংলাদেশকে জানায়। তখন থেকেই সেখানে তাকে নজরদারিতে রাখা হয়। দুবাইয়ে তিনি আলী আকবর চৌধুরী নামে পরিচিত। পাসপোর্টও ছিল সেই নামে। এনসিবি ঢাকা ও দুবাই তথ্য মিলে যাওয়ার পর জিসানকে সেখানে গ্রেপ্তার করা হয়। পরে জিসানের পরিবারের সদস্যরা সেখানকার একজন প্রখ্যাত আইনজীবীর মাধ্যমে তার জামিন করান। ওই আইনজীবী এর আগে নরসিংদীর মেয়র লোকমান হত্যা মামলার অভিযুক্ত মোবার জামিন করিয়ে তার গ্রেপ্তার ঠেকান।

রাজধানীর মতিঝিল, মালিবাগ, বাড্ডা, গুলশান, বনানীসহ বিভিন্ন এলাকায় একসময় ত্রাস হিসেবে পরিচিত ছিলেন জিসান। দুই ডিবি কর্মকর্তা হত্যার পর তিনি প্রথমে ভারতে পালিয়ে যান। পরে সেখান থেকে দুবাই যান। সেখানে বসেই তিনি ঢাকার অপরাধ জগৎ নিয়ন্ত্রণ করে আসছিলেন। তার নামে চাঁদাবাজি করে আসছিল সহযোগীরা। মাঝেমধ্যে বিদেশের ফোন নম্বর থেকে কল করে জিসান পরিচয়ে ব্যবসায়ীসহ বিভিন্ন পেশার মানুষের কাছে চাঁদা দাবি করা হতো। আর চাঁদা না পেলে গুলি করা বা ককটেল হামলার ঘটনাও অনেকবার ঘটেছে। ২০০১ সালে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের করা ২৩ শীর্ষ সন্ত্রাসীর তালিকায় ছিল তার নাম।

পুলিশের একটি সূত্র বলছে, কানাডায় বসে মিরপুরের আন্ডারওয়ার্ল্ড নিয়ন্ত্রণ করছেন শাহিন শিকদার। চাঁদা দাবি করে বিভিন্ন সময় তিনি ব্যবসায়ীদের নিজেই ফোন করেছেন। আবার কখনও কখনও শিষ্যদের মাধ্যমে চাঁদা দাবি করেন।

পলাতক শীর্ষ সন্ত্রাসীরা বিভিন্ন দেশে পালিয়ে আছেন। তাদের অনেককে ধরিয়ে দিতে পুরস্কার ঘোষণা করা হয়েছে। আবার কোনো শীর্ষ সন্ত্রাসী দেশে কারাগরে বন্দি রয়েছে। বিদেশে দীর্ঘদিন পলাতক আছেন সুব্রত বাইন, মোল্লা মাসুদ, খন্দকার তানভীরুল ইসলাম জয়, হারিস আহমেদ হারেস, নবী হোসেন, রফিকুল ইসলাম, ইমাম হোসেন, প্রকাশ কুমার বিশ্বাস, বিকাশ কুমার, শামীম আহমেদ ওরফে আগা শামীম, জাফর আহমেদ মানিক ওরফে মানিক, আমিন রসুল সাগর ওরফে টোকাই সাগর, লেদার লিটন, কামরুজ্জামান। আসলাম ওরফে সুইডেন আসলাম, বিপ্লব রহমান ওরফে লম্বু সেলিম, কিলার আব্বাস, এসএম আরমান রয়েছেন দেশের বিভিন্ন কারাগারে বন্দি।

নিউজটি শেয়ার করুন

আপনার মন্তব্য

Your email address will not be published. Required fields are marked *

আপনার ইমেইল এবং অন্যান্য তথ্য সংরক্ষন করুন

ট্যাগস :




ঢাকায় দুই সিটি নির্বাচন সক্রিয় পলাতক শীর্ষ সন্ত্রাসীরা

আপডেট সময় : ০৯:৪৪:৪৮ পূর্বাহ্ন, মঙ্গলবার, ২৪ ডিসেম্বর ২০১৯
গোয়েন্দাদের হাতে কল রেকর্ড
নিজস্ব প্রতিবেদক; 

জামিনে বেরিয়ে আবারও দুবাই বসেই ঢাকার আন্ডারওয়ার্ল্ড নিয়ন্ত্রণে সক্রিয় রয়েছেন শীর্ষ সন্ত্রাসী জিসান আহমেদ ওরফে মন্টি। চলতি মাসের ৭ ডিসেম্বর ঢাকায় দুই ঘনিষ্ঠ সহযোগীর কাছে ফোন করেন তিনি। উজ্জ্বল ও বিপ্লব নামে ওই দুই সহযোগীকে ঢাকার আসন্ন সিটি করপোরেশন নির্বাচন ঘিরে নিজের কিছু পরিকল্পনার কথা জানান। একটি দলের সম্ভাব্য এক মেয়র প্রার্থীর সঙ্গে দুবাইয়ে কীভাবে বৈঠকের আয়োজন করা যায় সে ব্যাপারে নির্দেশনা দেন। জিসান দীর্ঘদিন ধরে ঢাকায় তার যেসব সহযোগীর সঙ্গে যোগাযোগ রাখেন তাদের অনেকের ওপর গোয়েন্দা নজর রাখা হয়। সেই সূত্র ধরে নির্বাচন ঘিরে উজ্জ্বল ও বিপ্লবের সঙ্গে জিসানের কথোপকথনের এমন তথ্য পেয়েছে একটি দায়িত্বশীল গোয়েন্দা সংস্থা। শুধু জিসান নন, আরও একাধিক পলাতক শীর্ষ সন্ত্রাসী নির্বাচন ঘিরে আন্ডারওয়ার্ল্ডে নতুন মেরুকরণের চেষ্টা চালাচ্ছে। তারা বিভিন্ন কাউন্সিলর পদে নিজ নিজ বলয়ের প্রার্থীর মনোনয়ন পাইয়ে দেওয়ার তৎপরতা চালিয়ে আসছে। আবার কোনো কোনো প্রার্থী মনোনয়ন নিশ্চিত করতে নিজেরাই নানাভাবে শীর্ষ সন্ত্রাসীদের সঙ্গে যোগাযোগ রাখছেন। গত রোববার ঢাকার দুই সিটি করপোরেশনের তফসিল ঘোষণা করা হয়। তবে তফসিল ঘোষণার আগে থেকেই নির্বাচন ঘিরে কয়েকজন শীর্ষ সন্ত্রাসীর তৎপরতার তথ্য গোয়েন্দাদের হাতে আসে।

ঢাকা মহানগর পুলিশের অতিরিক্ত কমিশনার (অপরাধ ও অপারেশন) কৃষ্ণপদ রায় সমকালকে বলেন, নির্বাচনকে প্রভাবমুক্ত রাখতে সম্ভাব্য সব ধরনের প্রস্তুতি নিচ্ছে পুলিশ। যাতে কেউ দেশে-বিদেশে বসে অপতৎপরতা চালাতে না পারে সে দিকে নজর রাখা হয়েছে।

র‌্যাবের আইন ও গণমাধ্যম শাখার পরিচালক লে. কর্নেল সারওয়ার বিন কাশেম বলেন, কোনো অপরাধীচক্র যাতে নির্বাচনে হস্তক্ষেপ করতে না পারে সে ব্যাপারে র‌্যাবের একাধিক টিম কাজ করবে।

আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর দায়িত্বশীল এক কর্মকর্তা জানান, বিদেশে পলাতক সন্ত্রাসীরা নানা কারণে ঢাকার আন্ডারওয়ার্ল্ডের নিয়ন্ত্রণ নিতে মরিয়া। প্রথমত, শিষ্যদের মাধ্যমে ঢাকায় চাঁদাবাজির একটি বড় ভাগ তারা নিয়মিত পেয়ে থাকেন। আবার অসাধু রাজনৈতিক নেতাদের মাধ্যমে বিভিন্ন দপ্তরের বড় বড় টেন্ডার ও ঈদের সময় কোরবানির গরুর হাটের নিয়ন্ত্রণ বজায় রাখার চেষ্টা করে পলাতক সন্ত্রাসীরা। অনেক সময় পলাতক শীর্ষ সন্ত্রাসীদের ব্যবহার করে কেউ কেউ নিজস্ব প্রভাব বিস্তারের চেষ্টাও করে। সম্প্রতি ক্যাসিনোকাে যুবলীগ নেতা খালেদ মাহমুদ ভূঁঁঁইয়া ও ঠিকাদার জি কে শামীম গ্রেপ্তার হওয়ার পর নতুন করে আলোচনায় আসেন জিসান। ওই দু’জনকে জিজ্ঞাসাবাদে জিসানের দুবাইয়ে অবস্থানের ব্যাপারে অনেকটাই নিশ্চিত হয় আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী। ঠিকাদারি নিয়ন্ত্রণ নিয়ে শামীম ও খালেদের সঙ্গে জিসানের বিরোধ তৈরি হয়। তাদের হত্যা করতে একে-২২-এর একটি চালানও পাঠান জিসান। এ ছাড়া গ্রেপ্তারে পর জি কে শামীম জানান, এক সময় তার এতসংখ্যক দেহরক্ষী ছিল না। শীর্ষ সন্ত্রাসী জিসানের ভয়ে তিনি সাতজন দেহরক্ষী নিয়ে চলতেন। জিসানের নাম ব্যবহার করে এক সময় সরকারি বিভিন্ন দপ্তরের ঠিকাদারি কাজ নিয়ন্ত্রণ করতেন তিনি। পরে শামীম তাকে এড়িয়ে যুবলীগের সিন্ডিকেটে যুক্ত হওয়ার পর জিসানের সঙ্গে তার বিরোধ তৈরি হয়।

একাধিক সূত্র জানায়, এক সময় টিটিপাড়ায় একচ্ছত্র আধিপত্য ছিল সন্ত্রাসী নাছিরের। বিএনপি-জামায়াত জোটের সময় শীর্ষ সন্ত্রাসীদের তালিকা তৈরি হলে দেশ থেকে পালিয়ে যান তিনি। বর্তমানে নাছির ইতালিতে। মাঝেমধ্যে ভারতে যাতায়াত করেন। আসন্ন সিটি করপোরেশন নির্বাচনে ‘র’ আদ্যাক্ষরের সাবেক এক দেহরক্ষীকে কাউন্সিলর প্রার্থী করতে মরিয়া নাছির। ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের ৩৯ নম্বর ওয়ার্ডে তাকে কাজ করে যাওয়ার পরামর্শ দিচ্ছেন নাছির। নাছিরের হয়ে এলাকায় বর্তমানে যারা মাস্তানি করে যাচ্ছেন তাদের মধ্যে রয়েছেন সবুর ওরফে মাস্টার সবুর ও শাহিন।

আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর দায়িত্বশীল এক কর্মকর্তা জানান, বর্তমানে ঢাকার আন্ডারওয়ার্ল্ডের একটি বড় অংশের নিয়ন্ত্রণ করছেন জিসান। মগবাজার, বাড্ডা, রামপুরা, মালিবাগ, শাহজাহানপুর ও গোড়ানে তার শিষ্যরা প্রভাব বিস্তার করছে। সর্বশেষ গত ঈদুল ফিতরের আগে ঢাকায় যুবলীগ নেতা রাজীবকে হত্যা করা হয়। ওই হত্যার তদন্ত করতে গিয়ে গোয়েন্দারা চমকপ্রদ তথ্য পান। জানা যায়, রাজীব এক সময় জিসানের ঘনিষ্ঠ ছিলেন। জিসানের অস্ত্র শাখার নিয়ন্ত্রণকারী শুভকে হত্যা করতে রাজীবকে নির্দেশ দেন জিসান। তবে শুভকে খুন না করে রাজীব জিসানের পরিকল্পনা ফাঁস করে দেন। পরে জিসান বুঝে ফেলেন রাজীবকে দিয়ে ওই অপারেশন সফল করা সম্ভব হবে না। তখন খিলগাঁওয়ের আরিফ-তারিফ নামে দুই ভাইকে হত্যা করার জন্য শুভকে নির্দেশ দেন তিনি। ওই সহোদর জিসানের বিশ্বস্ত ক্যাডার। এই নির্দেশনার বিষয়টিও জেনে ফেলেন রাজীব। পরে তিনি তা শুভকে জানিয়ে দেন। এরপর শুভ খিলগাঁওয়ে আরিফকে হত্যা করে। পরে জিসানের অস্ত্রভাণ্ডারের ৮-১০টি অস্ত্র নিয়ে পালিয়ে যায় শুভ। বারবার নিজের পরিকল্পনা ব্যর্থ করে দেওয়ায় একপর্যায়ে রাজীবকে পরিকল্পিতভাবে আশিক নামে এক ক্যাডারের মাধ্যমে হত্যা করে জিসান।

জানা যায়, সম্প্রতি দুবাইয়ের ন্যাশনাল সেন্ট্রাল ব্যুরো (এনসিবি) সেখানে জিসানের অবস্থান শনাক্ত করে বাংলাদেশকে জানায়। তখন থেকেই সেখানে তাকে নজরদারিতে রাখা হয়। দুবাইয়ে তিনি আলী আকবর চৌধুরী নামে পরিচিত। পাসপোর্টও ছিল সেই নামে। এনসিবি ঢাকা ও দুবাই তথ্য মিলে যাওয়ার পর জিসানকে সেখানে গ্রেপ্তার করা হয়। পরে জিসানের পরিবারের সদস্যরা সেখানকার একজন প্রখ্যাত আইনজীবীর মাধ্যমে তার জামিন করান। ওই আইনজীবী এর আগে নরসিংদীর মেয়র লোকমান হত্যা মামলার অভিযুক্ত মোবার জামিন করিয়ে তার গ্রেপ্তার ঠেকান।

রাজধানীর মতিঝিল, মালিবাগ, বাড্ডা, গুলশান, বনানীসহ বিভিন্ন এলাকায় একসময় ত্রাস হিসেবে পরিচিত ছিলেন জিসান। দুই ডিবি কর্মকর্তা হত্যার পর তিনি প্রথমে ভারতে পালিয়ে যান। পরে সেখান থেকে দুবাই যান। সেখানে বসেই তিনি ঢাকার অপরাধ জগৎ নিয়ন্ত্রণ করে আসছিলেন। তার নামে চাঁদাবাজি করে আসছিল সহযোগীরা। মাঝেমধ্যে বিদেশের ফোন নম্বর থেকে কল করে জিসান পরিচয়ে ব্যবসায়ীসহ বিভিন্ন পেশার মানুষের কাছে চাঁদা দাবি করা হতো। আর চাঁদা না পেলে গুলি করা বা ককটেল হামলার ঘটনাও অনেকবার ঘটেছে। ২০০১ সালে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের করা ২৩ শীর্ষ সন্ত্রাসীর তালিকায় ছিল তার নাম।

পুলিশের একটি সূত্র বলছে, কানাডায় বসে মিরপুরের আন্ডারওয়ার্ল্ড নিয়ন্ত্রণ করছেন শাহিন শিকদার। চাঁদা দাবি করে বিভিন্ন সময় তিনি ব্যবসায়ীদের নিজেই ফোন করেছেন। আবার কখনও কখনও শিষ্যদের মাধ্যমে চাঁদা দাবি করেন।

পলাতক শীর্ষ সন্ত্রাসীরা বিভিন্ন দেশে পালিয়ে আছেন। তাদের অনেককে ধরিয়ে দিতে পুরস্কার ঘোষণা করা হয়েছে। আবার কোনো শীর্ষ সন্ত্রাসী দেশে কারাগরে বন্দি রয়েছে। বিদেশে দীর্ঘদিন পলাতক আছেন সুব্রত বাইন, মোল্লা মাসুদ, খন্দকার তানভীরুল ইসলাম জয়, হারিস আহমেদ হারেস, নবী হোসেন, রফিকুল ইসলাম, ইমাম হোসেন, প্রকাশ কুমার বিশ্বাস, বিকাশ কুমার, শামীম আহমেদ ওরফে আগা শামীম, জাফর আহমেদ মানিক ওরফে মানিক, আমিন রসুল সাগর ওরফে টোকাই সাগর, লেদার লিটন, কামরুজ্জামান। আসলাম ওরফে সুইডেন আসলাম, বিপ্লব রহমান ওরফে লম্বু সেলিম, কিলার আব্বাস, এসএম আরমান রয়েছেন দেশের বিভিন্ন কারাগারে বন্দি।