নিজস্ব প্রতিবেদকঃ প্রবাসীর সম্পত্তিতে এমপি'র কালো থাবা! ময়মনসিংহ-১১ (ভালুকা) আসনের সংসদ কাজিম উদ্দীন আহমেদ ধনু'র বিরুদ্ধে এমন অভিযোগ করেছে ইংল্যান্ড প্রবাসী খালেদ ইবনে এরশাদ। ক্ষমতার প্রভাব বিস্তার করে ময়মনসিংহ-১১ (ভালুকা) আসনের এমপি কাজিম উদ্দীন আহমেদ ধনু, দ্বিতীয় স্ত্রী জেসমিন এরশাদ পুতুল ও তার আপন ভাই এস এম খালেদ ইবনে এরশাদের মধ্যে জমি জমা সক্রান্ত বিরোধ চাঙ্গা করে তুলেছেন বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে। এ নিয়ে থানা পুলিশ থেকে শুরু করে আইন শৃঙ্খলা বাহিনীর দপ্তরে বিচারের জন্য ঘুরে বেরাচ্ছেন ভুক্তভোগী এস এম খালেদ ইবনে এরশাদ। থানায় একাধিক সাধারণ ডায়েরী ও আইন শৃঙ্খলা বাহিনীর কাছে অভিযোগ করেও কোন প্রতিকার পান নি তিনি। উল্টো মিথ্যা অভিযোগ দিয়ে নারী নির্যাতন সহ বিভিন্ন মামলা করার হুমকি দিচ্ছেন এমপি কাজিম উদ্দীন ও তাঁর লোকজন।
অভিযোগ রয়েছে, জেসমিন এরশাদ পুতুলের এমন প্রতারনা নিয়ে তাঁর ভাই খালেদ ইবনে এরশাদ আদালতে একটি মামলা করেন। আদালত উক্ত মামলায় জেসমিন এরশাদ পুতুলের বিরুদ্ধে গ্রেফতারী পরোয়ানা জারি করেছেন। এ মামলার গ্রেফতারী পরোয়ানা মাথায় নিয়ে-ই স্বামী এমপি কাজিম উদ্দীন আহমেদ ধনু'র নির্বাচনী এলাকা ভালুকায় বীর দর্পে সভা সমাবেশ করেন এ নারী। তবে পুলিশ তাঁকে গ্রেফতার না করে উল্টো বলেছেন এ আসামীকে পাওয়া যাচ্ছে না। একাধিক বার ভুক্তভোগী খালেদ ইবনে এরশাদের মামলার গ্রেফতারী পরোয়ানা ভুক্ত আসামী জেসমিন এরশাদ পুতুলের অবস্থান সম্পর্কে অবগত করলেও থানা পুলিশ নিরব ভূমিকা পালন করছেন।
জানা গেছে, সম্প্রতি বেইলি রোডের একটি জমি ও বাড়ী সহ দখল করতে বাড়ীর কাজের লোক দিয়ে থানায় একটি মিথ্যা অভিযোগ দেন এমপি কাজিম উদ্দীন আহমেদ ও তাঁর দ্বিতীয় স্ত্রী জেসমিন এরশাদ পুতুল। অভিযোগ পেয়ে থানা পুলিশ ঘটনাস্থল পরিদর্শনে গেলে ঘটনা মোর নেয় অন্যদিকে। নারী নির্যাতনের আলামত না পেলেও থানা পুলিশকে চাপ প্রয়োগ করে নারী নির্যাতন আইনে খালেদ ইবনে এরশাদের বিরুদ্ধে মামলা নিতে বলেন এমপি কাজিম উদ্দীন আহমেদ ধনু।
অভিযোগ রয়েছে, জেসমিন এরশাদ পুতুলের সাবেক স্বামী ব্যারিস্টার সফিকুল কবির খানের সাথে সংসারকালীন সময় থেকেই এমপি কাজিম উদ্দীন আহমেদ ধনু'র সাথে অবৈধ সম্পর্কে লিপ্ত হন জেসমিন এরশাদ পুতুল। ব্যারিস্টার ও জেসমিন এরশাদ পুতুলের দুই সন্তানও রয়েছে। এই সন্তানদেরকে এতিম করে জেসমিন এরশাদ পুতুল এমপি কাজিমের নৌকায় পাল তুলেন। টানা দীর্ঘদিন অবৈধ সম্পর্কের পর চলতি বছরের জানুয়ারী মাসে এমপি কাজিম উদ্দীন আহমেদ ধনু'র সাথে বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ হন জেসমিন এরশাদ পুতুল।
সূত্র জানায়, এমপি কাজিম উদ্দীনের সাথে অবৈধ সম্পর্কে লিপ্ত হয়েই ২০১৫ সালে বাবার পৈত্রিক সম্পত্তি দখল করতে নানা রকম ষড়যন্ত্র শুরু করেন। তৈরি করেন জাল আম মোক্তার নামা সহ বিভিন্ন কাগজ পত্র। এই জাল জালিয়াতির আশ্রয় নিয়েই বিক্রি করে দেন রাজধানী সহ সাভার ও টঙ্গী থানাধীন জমি। এগুলো বিক্রি করেও থেমে থাকেন নি এ নারী। এরপর ৩ নং নিউ বেইলী রোডের অবস্থিত ভাই এস এ এম খালেদ ইবনে এরশাদের দখলীয় সম্পত্তি বিক্রি করতে নানান ফন্দি ফিকির শুরু করেন। এই জমি বিক্রি করতে না পেরে এস এ এম খালেদ ইবনে এরশাদের পিছনে সন্ত্রাসী বাহিনী লেলিয়ে দেন। এ বাহিনী দিয়ে প্রতিনিয়ত তাঁকে হত্যা করার হুমকি দেন।
এস এ এম খালেদ ইবনে এরশাদ কর্তৃক আইন শৃঙ্খলা বাহিনীর দপ্তরের অভিযোগ থেকে জানা যায়, তাঁর বাবা, মা মৃত্যুর পর উত্তরাধিকার হিসেবে তিনি ও তাঁর বোন জেসমিন এরশাদ পুতুল তাঁদের বাবা, মা'র রেখে যাওয়া সকল সম্পত্তির ওয়ারিশ হন। ৩নং বেইলী রোডে ১৪ কাঠা জমির উপর একটি পুরানো দ্বিতলা বাড়ী ও রাস্তা সংলগ্ন ৩ তলা বিশিষ্ট মার্কেট বিদ্যমান। এছাড়াও টঙ্গী, সাভার ও ময়মনসিংহ তাঁদের মা সম্পত্তি রেখে যান। এর মধ্যে এস এ এম খালেদ ইবনে এরশাদের নামে ঢাকার সবুজবাগ থানার নন্দীপাড়া মৌজার ৮ শতাংশ জমি ছিল।
খালেদ ইবনে এরশাদ বলেন, ওয়ারিশ সূত্রে এবং নিজের খরিদ সূত্রে প্রাপ্ত সম্পত্তির ব্যাপারে বোন জেসমিন এরশাদ পুতুলের উপর অগাধ আস্থা ও বিশ্বাসের কারণে তেমন নজরদারী করার প্রয়োজন অনুভব করিনি। কিন্তু সে আমার বিশ্বাস ও সরলতার সুযোগ নিয়ে আমার নামে জাল আম-মোক্তার নামা দলিল সৃজন করে আমার নিজ নামীয় নন্দীপাড়া মৌজার সম্পত্তি বিক্রয় করে দিয়েছে। একইভাবে আমার মায়ের নামে জাল আম-মোক্তার নামা দলিল সৃজন করে টঙ্গী-গাজীপুর ও আশুলিয়া, ঢাকার সম্পত্তি অন্যত্র হস্তান্তর করে দিয়েছে।
তিনি বলেন, সম্প্রতি আমার বোনের এই অবিশ্বাস্য প্রতারণার সংবাদ পেয়ে দেশে এসে শুনতে পাই আমার বোন তাঁর পূর্বের স্বামীকে তালাক দিয়ে ১৫৬ নং সংসদীয় আসনের এমপি কাজিম উদ্দীন আহমেদ ধনুকে ২য় বিবাহ করেছে। বিয়ে করেই তাঁরা আমাকে আমার পৈত্রিক বাড়ী থেকে বের করতে বিভিন্ন প্রকার ভয়ভীতি ও প্রানে মারার হুমকি দেয়। এ বিষয়ে আমি গত ০১/০৪/২০১৯ ইং তারিখে পুলিশ কমিশনার বরাবরে জীবনের নিরাপত্তা চেয়ে আবেদন করি। ঠিক পরের দিন জীবনের নিরাপত্তা চেয়ে রমনা মডেল থানায় একটি সাধারণ ডায়েরী করি। যাহা রমনা মডেল থানার জিডি নং ১১৯/১৯। সাধারণ ডায়েরী করার পরও গত ১৫/০৪/২০১৯ তারিখ এমপি কাজিম উদ্দীন ও আমার বোন জেসমিন এরশাদ ৮/১০ জন গুন্ডা মাস্তান নিয়ে এসে আমাকে ভয়ভীতি ও হত্যার হুমকি দেয়। এর প্রেক্ষিতে পুনরায় রমনা থানায় আরো একটি সাধারন ডায়েরি করি। যাহা রমনা মডেল থানার জিডি নং ৯০২/১৯। এরপরও তাঁদের হুমকি ধামকি থেমে নেই। প্রতি দিন কোন না কোন লোক পাঠিয়ে আমাকে হত্যা করে লাশ গুম করে ফেলার হুমকি দেয়। আমি তাঁদের হুমকির মুখে জীবনের নিরাপত্তাহীনতায় ভুগছি।
এ বিষয়ে জানতে একাধিকবার ভালুকা আসনের এমপি কাজিম উদ্দীন আহমেদ ধনুকে ফোন করলেও তিনি ফোন রিসিভ করেননি। এমনকি তাঁর নাম্বারে একটি ক্ষুদে বার্তা পাঠানোর পরও তিনি এ প্রতিবেদকের সাথে যোগাযোগ করেননি।
অভিযোগের বিষয়ে জানতে জেসমিন এরশাদ পুতুলকে কয়েকবার ফোন করলেও তিনি ফোন ধরেন নি। তাই তারও বক্তব্য নেওয়া সম্ভব হয়নি।