বিজয়ের ৪৮ বছরের মাথায় আগামী ১৫ ডিসেম্বর মুক্তিযুদ্ধের বিরোধী রাজাকার-আলবদর ও আল-শাম্স এর প্রাথমিক তালিকা প্রকাশ করতে যাচ্ছে মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রণালয়। মন্ত্রণালয়ের মন্ত্রী আ ক ম মোজাম্মেল হক গতকাল সোমবার ইত্তেফাককে এ তথ্য জানিয়ে বলেন, ১৫ ডিসেম্বর সংবাদ সম্মেলনের মাধ্যমে প্রাথমিকভাবে ৮ হাজার রাজাকারের নাম প্রকাশ করা হবে। পরবর্তীতে এ ধারা অব্যাহত থাকবে।
মন্ত্রী জানান, স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় ও বিভিন্ন জেলা থেকে প্রাপ্ত নাম যাচাই-বাছাই করে ৮ হাজার রাজাকারের নাম চূড়ান্ত করা হয়েছে। তবে বেশির ভাগ জেলা উপজেলা থেকে নাম না পাঠানোয় ক্ষুব্ধ প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করেন মন্ত্রী। মন্ত্রী জানান, মুক্তিযুদ্ধের সময় থানা ও রাষ্ট্রীয় কোষাগার থেকে বেতন ভাতা উত্তোলনকারী রাজাকারদের তালিকা সংরক্ষণ এবং তাদের তালিকা মন্ত্রণালয়ে প্রেরণের জন্য গত ২১ মে সব জেলা প্রশাসককে চিঠি দেওয়া হয়। পরে ২৮ আগস্ট আবারও তাগিদপত্র দেওয়া হয়। কিন্তু মাত্র ১০ জেলা-উপজেলা থেকে তথ্য পাওয়া গেছে।
স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল বলেন, তার মন্ত্রণালয়ে ১১ হাজার রাজাকারের নাম পাওয়া গেছে। এগুলো মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রণালয়ে পাঠানো হয়েছে। তিনি বলেন, গণহত্যাসহ মুক্তিযুদ্ধবিরোধী কর্মকাণ্ডে জড়িত থাকার অভিযোগে এসব রাজাকারের বিরুদ্ধে ১৯৭২ সালে গঠিত বিশেষ ট্রাইব্যুনালে মামলা ছিল। সে সময় তারা বিভিন্ন থানা থেকে মাসোহারা পেত।
সংশ্লিষ্ট একটি সূত্র জানায়, বিশেষ ট্রাইব্যুনালে মামলা ছিল এমন রাজাকারের সংখ্যা প্রায় ৫৫ হাজার। এগুলোর অনুসন্ধান চলছে। কারণ বঙ্গবন্ধুকে হত্যার পর মন্ত্রণালয়ের এ সংক্রান্ত নথিপত্র ধ্বংস করা হয়েছে।
জেলা থেকে প্রাপ্ত তথ্যে দেখা যায়, মেহেরপুর জেলায় সর্বোচ্চ ১৬৯ জন রাজাকারের নাম, চাঁদপুরে ৯ জন, শরীয়তপুরে ৪৪ জন, বাগেরহাটে এক জন ও নড়াইলে ৫০ জনের নাম পাওয়া গেছে। তবে যশোরের শার্শা উপজেলা, গাইবান্ধা, শেরপুর, মাগুরা ও খাগড়াছড়ি জেলায় কোনো রাজাকার নেই বলে জেলা প্রশাসকদের প্রতিবেদন থেকে জানা গেছে। যদিও সংশ্লিষ্ট এলাকায় খোঁজ নিয়ে জানা যায়, এখনো জীবিত রয়েছে এমন রাজাকারের সংখ্যা উল্লেখযোগ্য। বিশেষ করে শার্শা উপজেলা যেখানে রাজাকারদের সঙ্গে মুক্তিবাহিনীর সম্মুখযুদ্ধে শতাধিক শহিদ হওয়ার ঘটনা রয়েছে।
অন্যদিকে ওয়ার ক্রাইমস ফ্যাক্টস ফাইন্ডিং কমিটির ট্রুথ কমিশন ফর জেনোসাইড ইন বাংলাদেশ গ্রন্থ থেকে জানা যায়, মাগুরা জেলায় রাজাকারের সংখ্যা ২১ জন, ঢাকা জেলায় চার জন, গাজীপুর জেলায় সাত, টাঙ্গাইল জেলায় ১৪ জন, ময়মনসিংহ জেলার সদর উপজেলায় ১৮ জন, নান্দাইল উপজেলায় ১১ জন, ফুলপুর ও হালুয়াঘাট উপজেলায় ৪৩ জন, গফরগাঁও উপজেলায় ১৫ জন, মুক্তাগাছা উপজেলায় ২০, ফুলবাড়িয়া উপজেলায় ৪০ জন, ত্রিশালে ৪৩ জন, ভালুকায় ১৯ জন, শেরপুর সদরে ৩১ জন, নালিতাবাড়ী উপজেলায় ৪৯ জন, জামালপুর সদরে ১১ জন, নেত্রকোনা সদরে ১৩ জন, আটপাড়ায় সাত জন, বারহাট্টায় ১১ জন, কলমাকান্দায় আট জন, পূর্বধলায় সাত জন, কেন্দুয়ায় ১০ জন, মোহনগঞ্জ উপজেলায় ২৪ জন, দুর্গাপুরে ১৬ জন, মদনে সাত জন, কিশোরগঞ্জ জেলায় ৩১ জন, গাজীপুর জেলায় সাত জন, ফরিদপুর জেলায় ১৭ জন, মাদারীপুর জেলায় ১৪ জন, শরীয়তপুর জেলায় এক জন, গোপালগঞ্জ জেলায় সাত জন, রাজশাহী জেলায় ১৪ জন, পাবনা জেলায় তিন জন, সিরাজগঞ্জ জেলায় আট জন, বগুড়া জেলায় ১৪ জন, নওগাঁ জেলায় চার জন, নাটোর জেলায় ছয় জন, কুড়িগ্রাম জেলায় এক জন, দিনাজপুর জেলায় ২৮ জন, ঠাকুরগাঁও জেলায় চার জন, লালমনিরহাট জেলায় সাত জন, মাগুরা জেলায় ১৮ জন, ঝিনাইদহ জেলায় তিন জন, মেহেরপুর জেলায় তিন জন, যশোর জেলায় চার জন, বাগেরহাট জেলায় ৯ জন, বরিশাল জেলায় এক জন, পটুয়াখালী জেলায় তিন জন, পিরোজপুর জেলায় ১৮ জন, বরগুনা জেলায় ১১ জন, ঝালকাঠি জেলায় চার জন, মৌলভীবাজার জেলায় তিন জন, সিলেট জেলায় পাঁচ জন, সুনামগঞ্জ জেলায় ১৩ জন, নোয়াখালী জেলায় তিন জন ও ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলায় এক জন। তবে এই হিসাব পুরো জেলা বা উপজেলার নয় বরং আংশিক।