ঢাকা ১১:২৪ পূর্বাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ১৮ এপ্রিল ২০২৪, ৫ বৈশাখ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ
সংবাদ শিরোনাম :
Logo মঙ্গল শোভাযাত্রা – তাসফিয়া ফারহানা ঐশী Logo সাস্টিয়ান ব্রাহ্মণবাড়িয়া এর ইফতার মাহফিল সম্পন্ন Logo কুবির চট্টগ্রাম স্টুডেন্টস ওয়েলফেয়ার এসোসিয়েশনের ইফতার ও পূর্নমিলনী Logo অধ্যাপক জহীর উদ্দিন আহমেদের মায়ের মৃত্যুতে শাবির মহান মুক্তিযুদ্ধের চেতনা ও মুক্ত চিন্তা চর্চায় ঐক্যবদ্ধ শিক্ষকবৃন্দ পরিষদের শোক প্রকাশ Logo শাবির অধ্যাপক জহীর উদ্দিনের মায়ের মৃত্যুতে উপাচার্যের শোক প্রকাশ Logo বিশ কোটিতে গণপূর্তের প্রধান হওয়ার মিশনে ‘ছাত্রদল ক্যাডার প্রকৌশলী’! Logo দূর্নীতির রাক্ষস ফায়ার সার্ভিসের এডি আনোয়ার! Logo ঝড় ও শিলাবৃষ্টিতে ক্ষতি হওয়া শাহজালাল বিশ্ববিদ্যালয়ে অবকাঠামোর সংস্কার শুরু Logo বুয়েটে নিয়মতান্ত্রিক ছাত্র রাজনীতির দাবিতে শাবিপ্রবি ছাত্রলীগের মানববন্ধন Logo কুবি উপাচার্যের বক্তব্যের প্রমাণ দিতে শিক্ষক সমিতির সাত দিনের আল্টিমেটাম




যুবলীগের পদ পেতে সম্রাটের প্রধান সহযোগী মাকসুদের দৌড়ঝাঁপ!

প্রতিনিধির নাম
  • আপডেট সময় : ০৩:৫৮:৫০ অপরাহ্ন, শুক্রবার, ২২ নভেম্বর ২০১৯ ৯৪ বার পড়া হয়েছে

ক্যাসিনো-জুয়ার কারবার, চাঁদাবাজি, টেন্ডারবাজি, মাদক ব্যবসাসহ সবকিছুতেই জড়িত ছিলেন মাকসুদ। গ্রেফতার যুবলীগ নেতা ইসমাইল চৌধুরী সম্রাট ও খালেদ মাহমুদ ভূঁইয়ার ‘ক্যাশিয়ার’ হিসেবেও তার পরিচিতি রয়েছে। শীর্ষ নেতাদের সঙ্গে সখ্যের সুবাদে তার ক্ষমতার দাপট ছিল সবখানে। এ সুযোগে অবৈধ পথে তিনি কামিয়েছেন কোটি কোটি টাকা। ঢাকা মহানগর দক্ষিণ যুবলীগের সাবেক এই নেতার পুরো নাম মাকসুদুর রহমান। চলমান শুদ্ধি অভিযানে যুবলীগের কয়েক নেতা গ্রেফতারের পর তার নামও ব্যাপকভাবে আলোচনায় আসে। তবে তিনি আগামীকাল যুবলীগের সম্মেলন উপলক্ষে রাজধানীজুড়ে পোস্টার-ব্যানার সাঁটিয়ে যুবলীগের পদ পেতে দৌড়ঝাঁপ করছেন। সম্মেলনস্থল ও তার আশপাশ এলাকায় তার পোস্টার ব্যানার চোখে পড়ার মতো। অনেক যুবলীগের নেতারা এ নিয়ে ক্ষোভ প্রকাশ করছেন।

জানা গেছে, ক্যাসিনোবিরোধী অভিযানের শুরুতেই গত ১৮ সেপ্টেম্বর গুলশানের বাসা থেকে যুবলীগ নেতা (পরে বহিস্কৃত) খালেদ মাহমুদ ভূঁইয়াকে গ্রেফতার করে র‌্যাব। রিমান্ডে জিজ্ঞাসাবাদে তিনি মাকসুদুর রহমানসহ বেশ কয়েকজন সম্পর্কে গুরুত্বপূর্ণ তথ্য দেন। তখন থেকেই বিভিন্ন গণমাধ্যমে মাকসুদের অপকর্ম নিয়ে প্রতিবেদন প্রকাশ হতে থাকে। এর পরই দলীয় কার্যালয় ও কর্মকাণ্ড থেকে নিজেকে দূরে রেখেছেন তিনি।

আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর দায়িত্বশীল সূত্র জানায়, ক্যাসিনো কারবারে জড়িত যুবলীগ নেতাদের মধ্যে মাকসুদুর রহমানের নামও রয়েছে। সম্রাট ও খালেদের ঘনিষ্ঠ এই সহযোগীকে গ্রেফতার করা গেলে গুরুত্বপূর্ণ অনেক তথ্য পাওয়া যাবে। তার বিরুদ্ধে এর আগে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ছবি ‘সুপার ইম্পোজে’র মাধ্যমে নিজের পোস্টারে ব্যবহার করে অনৈতিক সুবিধা আদায়ের অভিযোগ রয়েছে।

সংশ্নিষ্ট সূত্র জানায়, মহানগর যুবলীগ দক্ষিণের সাংগঠনিক সম্পাদক থাকার সময় প্রধানমন্ত্রীর ছবি ব্যবহার করে পোস্টার ছাপান মাকসুদ। সেই পোস্টার লাগানো হয় ঢাকার অলিগলিসহ তার গ্রামের বাড়ি ভোলার বিভিন্ন এলাকায়। পরে তার প্রতারণার বিষয়টি ধরা পড়ে। প্রধানমন্ত্রীকেও বিষয়টি অবহিত করা হয়। এর পর তাকে সংগঠন থেকে বহিস্কার করা হয়। অবশ্য বিভিন্ন নেতাকে মোটা অঙ্কের টাকা দিয়ে ম্যানেজ করে তিনি এই বহিস্কারাদেশ প্রত্যাহারের ব্যবস্থা করেন।

যুবলীগের একাধিক সূত্র জানায়, নেতাদের নাম ভাঙিয়ে চাঁদাবাজি-টেন্ডারবাজির এন্তার অভিযোগ রয়েছে তার বিরুদ্ধে। যুবলীগের একাধিক শীর্ষ নেতার বিশেষ অনুগত ছিলেন তিনি। তাদের নির্দেশে নানা অপকর্ম করেছেন। ফলে তাকে পাওয়া গেলে ওই নেতাদের অপকর্মের ব্যাপারেও অনেক তথ্য মিলবে বলে পুলিশের ধারণা।

একটি সূত্রের তথ্য অনুযায়ী, মতিঝিলের বিভিন্ন ক্লাব থেকে প্রতি রাতে নির্ধারিত হারে টাকা তুলতেন মাকসুদ। এর পর সেসব টাকা তিনি পৌঁছে দিতেন যুবলীগের এক শীর্ষ নেতার কাছে। প্রতিরাতে অন্তত এক লাখ টাকা পেতেন সেই নেতা। আবার কোনো রাতে পেতেন ১০ লাখের বেশি। এভাবে কয়েক বছরে মাকসুদ কোটি কোটি টাকা তুলেছেন ক্যাসিনো-জুয়া পরিচালনাকারী ক্লাবগুলো থেকে। পাশাপাশি যুবলীগ নেতা সম্রাটের পক্ষে মতিঝিল এলাকায় চাঁদাবাজিও করতেন। এই চাঁদার একটি বড় অংশ আসত বিদেশে লোক পাঠানোর নামে মানব পাচারে জড়িত চক্রের হোতাদের কাছ থেকে। ঢাকা মহানগর দক্ষিণ যুবলীগের ওয়ার্ড কমিটি দেওয়ার ক্ষেত্রেও তিনি ‘কমিশন’ আদায় করতেন। বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের ঠিকাদারি কাজও ছিল তার নিয়ন্ত্রণে। নেতাদের ক্যাশিয়ার হিসেবে কাজ করার সুবাদে তিনি নিজেও কামিয়েছেন বিপুল অর্থ। মতিঝিল ও পুরান ঢাকায় রয়েছে তার তিনটি ফ্ল্যাট।

ছাত্রাবস্থায় জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ে ছাত্রলীগের কর্মী ছিলেন মাকসুদ। পুরো সময় কমিটিতে কোনো পদ না থাকলেও রিপন-রোটন কমিটির সম্মেলনের আগে বিশেষ ব্যবস্থায় তাকে কেন্দ্রীয় সহ-সম্পাদক করা হয়। রাজনৈতিক ক্যারিয়ারে ধারাবাহিকতা না থাকলেও পরে তিনি যুবলীগে যোগ দেন। বাগিয়ে নেন মহানগর দক্ষিণের সাংগঠনিক সম্পাদকের মতো গুরুত্বপূর্ণ পদ। তার বিরুদ্ধে রমনা টেনিস ক্লাব ও ইস্কাটন এলাকায় দুই ঠিকাদারকে গুলি করে হত্যাচেষ্টায় সম্পৃক্ততার অভিযোগ রয়েছে। মহানগর দক্ষিণ যুবলীগের সাবেক উপ-অর্থ সম্পাদক রাজীব হত্যাকাণ্ডেও তার নাম আসে।

এসব অভিযোগের বিষয়ে মাকসুদ সকালের সংবাদকে বলেন, এ বিষয়ে আমি কিছুই জানি না।

 

নিউজটি শেয়ার করুন

আপনার মন্তব্য

Your email address will not be published. Required fields are marked *

আপনার ইমেইল এবং অন্যান্য তথ্য সংরক্ষন করুন

ট্যাগস :




যুবলীগের পদ পেতে সম্রাটের প্রধান সহযোগী মাকসুদের দৌড়ঝাঁপ!

আপডেট সময় : ০৩:৫৮:৫০ অপরাহ্ন, শুক্রবার, ২২ নভেম্বর ২০১৯

ক্যাসিনো-জুয়ার কারবার, চাঁদাবাজি, টেন্ডারবাজি, মাদক ব্যবসাসহ সবকিছুতেই জড়িত ছিলেন মাকসুদ। গ্রেফতার যুবলীগ নেতা ইসমাইল চৌধুরী সম্রাট ও খালেদ মাহমুদ ভূঁইয়ার ‘ক্যাশিয়ার’ হিসেবেও তার পরিচিতি রয়েছে। শীর্ষ নেতাদের সঙ্গে সখ্যের সুবাদে তার ক্ষমতার দাপট ছিল সবখানে। এ সুযোগে অবৈধ পথে তিনি কামিয়েছেন কোটি কোটি টাকা। ঢাকা মহানগর দক্ষিণ যুবলীগের সাবেক এই নেতার পুরো নাম মাকসুদুর রহমান। চলমান শুদ্ধি অভিযানে যুবলীগের কয়েক নেতা গ্রেফতারের পর তার নামও ব্যাপকভাবে আলোচনায় আসে। তবে তিনি আগামীকাল যুবলীগের সম্মেলন উপলক্ষে রাজধানীজুড়ে পোস্টার-ব্যানার সাঁটিয়ে যুবলীগের পদ পেতে দৌড়ঝাঁপ করছেন। সম্মেলনস্থল ও তার আশপাশ এলাকায় তার পোস্টার ব্যানার চোখে পড়ার মতো। অনেক যুবলীগের নেতারা এ নিয়ে ক্ষোভ প্রকাশ করছেন।

জানা গেছে, ক্যাসিনোবিরোধী অভিযানের শুরুতেই গত ১৮ সেপ্টেম্বর গুলশানের বাসা থেকে যুবলীগ নেতা (পরে বহিস্কৃত) খালেদ মাহমুদ ভূঁইয়াকে গ্রেফতার করে র‌্যাব। রিমান্ডে জিজ্ঞাসাবাদে তিনি মাকসুদুর রহমানসহ বেশ কয়েকজন সম্পর্কে গুরুত্বপূর্ণ তথ্য দেন। তখন থেকেই বিভিন্ন গণমাধ্যমে মাকসুদের অপকর্ম নিয়ে প্রতিবেদন প্রকাশ হতে থাকে। এর পরই দলীয় কার্যালয় ও কর্মকাণ্ড থেকে নিজেকে দূরে রেখেছেন তিনি।

আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর দায়িত্বশীল সূত্র জানায়, ক্যাসিনো কারবারে জড়িত যুবলীগ নেতাদের মধ্যে মাকসুদুর রহমানের নামও রয়েছে। সম্রাট ও খালেদের ঘনিষ্ঠ এই সহযোগীকে গ্রেফতার করা গেলে গুরুত্বপূর্ণ অনেক তথ্য পাওয়া যাবে। তার বিরুদ্ধে এর আগে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ছবি ‘সুপার ইম্পোজে’র মাধ্যমে নিজের পোস্টারে ব্যবহার করে অনৈতিক সুবিধা আদায়ের অভিযোগ রয়েছে।

সংশ্নিষ্ট সূত্র জানায়, মহানগর যুবলীগ দক্ষিণের সাংগঠনিক সম্পাদক থাকার সময় প্রধানমন্ত্রীর ছবি ব্যবহার করে পোস্টার ছাপান মাকসুদ। সেই পোস্টার লাগানো হয় ঢাকার অলিগলিসহ তার গ্রামের বাড়ি ভোলার বিভিন্ন এলাকায়। পরে তার প্রতারণার বিষয়টি ধরা পড়ে। প্রধানমন্ত্রীকেও বিষয়টি অবহিত করা হয়। এর পর তাকে সংগঠন থেকে বহিস্কার করা হয়। অবশ্য বিভিন্ন নেতাকে মোটা অঙ্কের টাকা দিয়ে ম্যানেজ করে তিনি এই বহিস্কারাদেশ প্রত্যাহারের ব্যবস্থা করেন।

যুবলীগের একাধিক সূত্র জানায়, নেতাদের নাম ভাঙিয়ে চাঁদাবাজি-টেন্ডারবাজির এন্তার অভিযোগ রয়েছে তার বিরুদ্ধে। যুবলীগের একাধিক শীর্ষ নেতার বিশেষ অনুগত ছিলেন তিনি। তাদের নির্দেশে নানা অপকর্ম করেছেন। ফলে তাকে পাওয়া গেলে ওই নেতাদের অপকর্মের ব্যাপারেও অনেক তথ্য মিলবে বলে পুলিশের ধারণা।

একটি সূত্রের তথ্য অনুযায়ী, মতিঝিলের বিভিন্ন ক্লাব থেকে প্রতি রাতে নির্ধারিত হারে টাকা তুলতেন মাকসুদ। এর পর সেসব টাকা তিনি পৌঁছে দিতেন যুবলীগের এক শীর্ষ নেতার কাছে। প্রতিরাতে অন্তত এক লাখ টাকা পেতেন সেই নেতা। আবার কোনো রাতে পেতেন ১০ লাখের বেশি। এভাবে কয়েক বছরে মাকসুদ কোটি কোটি টাকা তুলেছেন ক্যাসিনো-জুয়া পরিচালনাকারী ক্লাবগুলো থেকে। পাশাপাশি যুবলীগ নেতা সম্রাটের পক্ষে মতিঝিল এলাকায় চাঁদাবাজিও করতেন। এই চাঁদার একটি বড় অংশ আসত বিদেশে লোক পাঠানোর নামে মানব পাচারে জড়িত চক্রের হোতাদের কাছ থেকে। ঢাকা মহানগর দক্ষিণ যুবলীগের ওয়ার্ড কমিটি দেওয়ার ক্ষেত্রেও তিনি ‘কমিশন’ আদায় করতেন। বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের ঠিকাদারি কাজও ছিল তার নিয়ন্ত্রণে। নেতাদের ক্যাশিয়ার হিসেবে কাজ করার সুবাদে তিনি নিজেও কামিয়েছেন বিপুল অর্থ। মতিঝিল ও পুরান ঢাকায় রয়েছে তার তিনটি ফ্ল্যাট।

ছাত্রাবস্থায় জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ে ছাত্রলীগের কর্মী ছিলেন মাকসুদ। পুরো সময় কমিটিতে কোনো পদ না থাকলেও রিপন-রোটন কমিটির সম্মেলনের আগে বিশেষ ব্যবস্থায় তাকে কেন্দ্রীয় সহ-সম্পাদক করা হয়। রাজনৈতিক ক্যারিয়ারে ধারাবাহিকতা না থাকলেও পরে তিনি যুবলীগে যোগ দেন। বাগিয়ে নেন মহানগর দক্ষিণের সাংগঠনিক সম্পাদকের মতো গুরুত্বপূর্ণ পদ। তার বিরুদ্ধে রমনা টেনিস ক্লাব ও ইস্কাটন এলাকায় দুই ঠিকাদারকে গুলি করে হত্যাচেষ্টায় সম্পৃক্ততার অভিযোগ রয়েছে। মহানগর দক্ষিণ যুবলীগের সাবেক উপ-অর্থ সম্পাদক রাজীব হত্যাকাণ্ডেও তার নাম আসে।

এসব অভিযোগের বিষয়ে মাকসুদ সকালের সংবাদকে বলেন, এ বিষয়ে আমি কিছুই জানি না।