অনলাইন ডেস্ক;
রাজধানী সুপার মার্কেটে অগ্নিকাণ্ডে ভস্মীভূত নিজের দোকানের পাশে বসে আহাজারি করছেন এক মালিক। ছবি: যুগান্তর
রাজধানী সুপার মার্কেটে অগ্নিকাণ্ডের ঘটনায় নিঃস্ব হয়েছেন অনেক দোকান মালিক। বৃহস্পতিবার এসব দোকানদার নিজেদের ভস্মীভূত দোকানঘরের সামনে আহাজারি করছিলেন।
জানা গেছে, মার্কেটের দ্বিতীয়তলায় ৭৭টি দোকান ছিল। এর মধ্যে ৪১ নম্বর দোকানে ছিল নয়ন নামে এক ব্যক্তির ফোমের গোডাউন। বুধবার ওই দোকানের শাটারে ওয়েল্ডিংয়ের কাজ চলছিল। এ সময় সেখান থেকেই আগুনের সূত্রপাত হয়। এতে অর্ধশতাধিক দোকান পুড়ে ছাই হয়ে গেছে। প্রায় আট কোটি টাকার ক্ষতি হয়েছে বলে দোকান মালিকরা জানিয়েছেন।
যদিও বুধবার রাতে অগ্নিনির্বাপনের পর তাৎক্ষণিকভাবে ফায়ার সার্ভিসের পক্ষ থেকে বলা হয়েছিল ১৪-১৫টি দোকান পুড়েছে। ক্ষতির পরিমাণ তদন্ত সাপেক্ষ জানা যাবে। তবে বৃহস্পতিবার সন্ধ্যা পর্যন্ত ফায়ার সার্ভিসের পক্ষ থেকে কোনো তদন্ত কমিটি হয়নি।
এদিন দুপুরে রাজধানী সুপার মার্কেটে গিয়ে দেখা যায়, পুরো মার্কেটের বিদ্যুৎ সংযোগ বিচ্ছিন্ন। নিচতলা-দোতালা মিলিয়ে এক হাজার ৭৫৯টি দোকান। যেসব দোকান আগুনে ক্ষতিগ্রস্ত হয়নি সেসব দোকান খোলা ছিল অন্ধকার অবস্থাতেই। তবে মার্কেটে কোনো ক্রেতা চোখে পড়েনি। ক্ষতিগ্রস্ত দোকানগুলো থেকে ছাই-ভস্ম সরাতে দেখা গেছে দোকান মালিকদের।
নিউ সুপার মার্কেটে নিজ গোডাউনের সামনে মাথায় হাত দিয়ে বসেছিলেন গোডাউন মালিক দিদার মোল্লাহ। তিনি যুগান্তরকে বলেন, আমার গোডাউনে নানা ধরনের কাঁচের জিনিসপত্র ছিল। নতুন গোডাউন। মাস দেড়েক আগে এটি প্রতিষ্ঠা করেছি। গোডাউনে ২৫ লাখ টাকার মালামাল ছিল। কিছুই বের করতে পারিনি। সব পুড়ে গেছে। এখন আমি নিঃস্ব হয়ে গেলাম।
২৯ নম্বর দোকানের মালিক আমিনুল ইসলাম বলেন, আমার দোকানের নাম বিক্রমপুর ইলেকট্রনিক। সেখানে ৩০ লাখ টাকার মালামাল ছিল। সামান্যতম জিনিসও সেখান থেকে বের করতে পারিনি। আগুন শুধু আমার ৩০ লাখ টাকার ইলেকট্রনিক সামগ্রীই কেড়ে নেয়নি, কেড়ে নিয়েছে আমার স্বপ্ন।
ভস্মীভূত ৫ ও ৬ নম্বর দোকানে গিয়ে জানা যায়, এ দুটির মালিক মো. ইউনুস। দুই দোকানে শিশুদের খেলনাসামগ্রী বিক্রি হতো। সেখানে থাকা তিনটি কোরআন শরিফ ছাড়া সবই পুড়ে গেছে। দোকান মালিক মো. ইউনুস জানান, দোকানে প্রায় এক কোটি টাকার খেলনাসামগ্রী ছিল।
মোল্লাহ কোকারিজের মালিক হাফিজুর রহমান বলেন, আগুনে সব মিলিয়ে ৭-৮ কোটি টাকার ক্ষতি হয়েছে। মার্কেটে অগ্নিনির্বাপণ ব্যবস্থা ছিল। কিন্তু অগ্নিনির্বাপণ যন্ত্রে গ্যাস ছিল না। এ কারণে ওই যন্ত্র কাজে লাগানো যায়নি। তিনি জানান, নয়নের গোডাউনে মজনু নামে এক ব্যক্তি ওয়েল্ডিংয়ের কাজ করছিল। ঘটনার পর থেকে সে পলাতক।
নয়নের গোডাউনটি মার্কেটের দ্বিতীয়তলায় হলেও নিচতলায় রয়েছে তার দুটি দোকান। ১৮৫ ও ১৮৬ নম্বর দোকানের নাম ইসলাম বেডিং স্টোর। নয়নের বক্তব্য নিতে সেখানে যাওয়া হলেও তাকে পাওয়া যায়নি।
পরে তিনি টেলিফোনে বলেন, গোডাউন সবসময় বন্ধ থাকে। যখন দোকানে কোনো মালামাল শর্ট পড়ে তখন তা আনার জন্য গোডাউন খোলা হয়। এরপর আবার বন্ধ করে দেয়া হয়। দোকান বন্ধ থাকা অবস্থায়ই সেখানে ওয়েল্ডিংয়ের কাজ চলছিল। অন্য দোকান মালিকরাও আমাকে দোষারোপ করছে। এখন আমি কী করব বুঝতে পারছি না।