বাঞ্ছারামপুর (ব্রাহ্মণবাড়িয়া) প্রতিনিধি
ব্রাহ্মণবাড়িয়ার বাঞ্ছারামপুর থানার এসআই মোহাম্মদ জাকির হোসেনকে ঘুষ না দেয়ায় সরেজমিন তদন্ত না করেই মামলার বাদী ও সাক্ষীর বিরুদ্ধে মনগড়া আপত্তিকর বক্তব্য দিয়ে আদালতে প্রতিবেদন দাখিল করার অভিযোগ পাওয়া গেছে।
এ ঘটনায় ভুক্তভোগী সৌদি আরব প্রবাসী বাঞ্ছারামপুর উপজেলার ফতেপুর গ্রামের মো. এলেম মিয়া মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা মোহাম্মদ জাকির হোসেনের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণ করতে গত ৩০ অক্টোবর ব্রাহ্মণবাড়িয়া পুলিশ সুপার বরাবর লিখিত আবেদন করেন।
মামলা ও বাদী সূত্রে জানা গেছে, বাঞ্ছারামপুর উপজেলার ফতেপুর গ্রামের মৃত বজলু মিয়ার ছেলে সৌদি আরব প্রবাসী মো. এলেম মিয়ার কাছে প্রতিবেশী নাছির উদ্দিন নসু, হানিফ মিয়া ও মজিবুর মিয়ার বিরুদ্ধে চাঁদা দাবি ও নানাভাবে ভয়ভীতি প্রদর্শন করার অভিযোগ করেন।
এরই প্রেক্ষিতে গত ৯ সেপ্টেম্বর এলেম মিয়া বাদী হয়ে ব্রাহ্মণবাড়িয়া সিনিয়র জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেটের আদালতে ৫ লাখ টাকার চাঁদা দাবির অভিযোগে মামলা দায়ের করেন।
এই মামলায় আদালত বাঞ্ছারামপুর মডেল থানার ওসিকে মামলাটি তদন্ত করে আদালতে প্রতিবেদন দাখিল করতে বলেন। বাঞ্ছারামপুর থানার এসআই মোহাম্মদ জাকির হোসেন বাদী মো. এলেম মিয়ার কাছে মামলার প্রতিবেদন তার পক্ষে দেয়ার কথা বলে ২০ হাজার টাকা দাবি করেন।
এলেম মিয়া টাকা না দেয়ায় মামলাটি কোনো প্রকার তদন্ত কিংবা ঘটনাস্থল পরিদর্শন না করে আসামিপক্ষ থেকে টাকা নিয়ে সাক্ষীদের ও বাদীর সঙ্গে কথা না বলে এসআই জাকির মনগড়া বক্তব্য দিয়ে আদালতে প্রতিবেদন দাখিল করেন। আদালতে যে প্রতিবেদন দাখিল করেছেন তার সঙ্গে এজাহারের কোনো মিল নেই।
মো. এলেম মিয়া তার কাছ থেকে চাঁদা চাওয়ার লোকদের বিরুদ্ধে মারধর ও প্রাণনাশের হুমকি উল্লেখ করেন এজাহারে। অথচ এসআই জাকির হোসেন বাদী ও সাক্ষীদের কথা না বলে তার ইচ্ছেমতো আসামি মজিবুর মিয়ার স্ত্রী হোসনেয়ারা বেগম ও কন্যা লাকি আক্তারকে মো. এলেম মিয়া ও তার বড় ভাই সেলিম মিয়া কুপ্রস্তাব দিয়েছেন। এ ছাড়া এলাকায় বিষয়টি মীমাংসা হয়েছে এই ধরনের মিথ্যা কথা প্রতিবেদনে উল্লেখ করে আদালতে প্রতিবেদন দাখিল করেছেন।
বাদী মো. এলেম মিয়া জানান, আমি সৌদি আরব থেকে দেশে আসার পর থেকে আমার প্রতিবেশী মজিবুর মিয়া ও তার লোকজন আমাকে নানাভাবে ভয়ভীতি দেখিয়ে আমার কাছে ৫ লাখ টাকা দাবি করে। আমি চাঁদা না দেয়ায় মজিবুর মিয়া আমাকে নানাভাবে ভয়ভীতি ও হত্যার হুমকি দিয়ে আসছিল।
এ বিষয়ে মামলার সাক্ষী সেলিম মিয়া বলেন, আমার সৌদি আরব প্রবাসী ছোট ভাই মো. এলেম মামলা করলেও চাঁদাবাজির কারণে তিনজনকে আসামি করে মামলা দেয়া হয়। মামলার তদন্ত কর্মকর্তা আমাদের কাছে ২০ হাজার টাকা ঘুষ চাইছিল।
না দেয়ায় উল্টো আমাদের বিরুদ্ধে মামলার আসামি মজিবুর রহমানের স্ত্রী ও মেয়েকে জড়িয়ে আপত্তিকর মিথ্যা ও বানোয়াট প্রতিবেদন দিয়েছেন। আমরা এসপি স্যারের কাছে তদন্ত কর্মকর্তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে আবেদন করেছি এবং আদালতেও আবেদন করব, বলেন তিনি।
এ বিষয়ে এসআই মোহাম্মদ জাকির হোসেন ঘুষ দাবির অভিযোগ অস্বীকার করে বলেন, এলেম মিয়া ও তার পরিবারের কাছে আমি কোনো ঘুষ চাইনি। তাদের সঙ্গে কথা বলেই স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি বক্তব্য আদালতে পাঠিয়েছি। এখন তারা অস্বীকার করলে আমার কিছু করার নেই।
তিনি আরও বলেন, যে চাঁদাবাজির অভিযোগে মামলা করা হয়েছে তদন্তের সময় আমি তা পাইনি। সাক্ষীদের সঙ্গে আমি ফোনে কথা বলার চেষ্টা করেছি। আসামিদের কাছ থেকে কোনো আর্থিক সুবিধা নেইনি কিংবা বাদীর কাছ থেকে টাকাও দাবি করিনি।
বাঞ্ছারামপুর মডেল থানার ওসি সালাহউদ্দিন চৌধুরী জানান, মামলার প্রতিবেদনের সঙ্গে এজাহারের কোনো মিল নেই। তিনি কিভাবে এই প্রতিবেদন দিলেন এটা আমার মাথায় আসছে না। চাঁদাবাজির ঘটনার সত্যতা না পেলে অন্য বিষয়গুলোর আলোকে প্রতিবেদন দেয়া যেত। এ বিষয়ে নবীনগর সার্কেলের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার মো. মেহেদী হাসান বলেন, এসপি স্যারের কাছে লিখিত অভিযোগ করায় আমি উভয়পক্ষকে বিষয়টি তদন্তের জন্য ডেকেছি। তদন্ত করে জানা যাবে বিস্তারিত।