জাবি প্রতিনিধি
মঙ্গলবার থেকে জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ে (জাবি) আবারও কর্মসূচি পালনে মাঠে নামছেন আন্দোলনকারীরা। তবে উপাচার্য অধ্যাপক ফারজানা ইসলামের অপসারণের দাবিতে আন্দোলনকারী শিক্ষার্থীদের বাড়িতে বাড়িতে গিয়ে পুলিশ খোঁজখবর নিচ্ছে এবং পরিবারের সদস্যদের 'হয়রানি' করছে বলে অভিযোগ উঠেছে।
আন্দোলনে নেতৃত্বদানকারী অন্তত ১০ জন সংগঠক জানিয়েছেন, তাদের বাড়িতে 'পুলিশি হয়রানির' ঘটনা ঘটেছে। অধিকাংশের বাড়িতেই এ ঘটনা ঘটেছে গত ৮ ও ৯ নভেম্বরে। অভিযোগকারীদের মধ্যে রয়েছেন ছাত্র ইউনিয়ন বিশ্ববিদ্যালয় সংসদের সাধারণ সম্পাদক আরিফুল ইসলাম অনিক, দপ্তর সম্পাদক হাসান জামিল, কার্যকরী সদস্য রাকিবুল হক রনি, সমাজতান্ত্রিক ছাত্র ফ্রন্ট (মার্কসবাদী) সভাপতি মাহাথির মুহাম্মদ, সাধারণ সম্পাদক সুদীপ্ত দে, সমাজতান্ত্রিক ছাত্র ফ্রন্টের সাংগঠনিক সম্পাদক শোভন রহমান, জাহাঙ্গীরনগর সাংস্কৃতিক জোটের সাবেক সহসভাপতি মুশফিক উস সালেহিন, ছাত্র অধিকার সংরক্ষণ পরিষদ বিশ্ববিদ্যালয় শাখার মুখপাত্র খান মুনতাসির আরমান, আহ্বায়ক শাকিল উজ্জামান ও জাহাঙ্গীরনগর থিয়েটারের সহসাংগঠনিক সম্পাদক মুজিবুর রহমান।
এ বিষয়ে আরিফুল ইসলাম অনিক বলেন, 'আমার বাসায় পুলিশ গিয়েছিল। এতে পরিবারের সবাই ভীতসন্ত্রস্ত হয়ে পড়েছে। আরও কয়েকজনের বাসায়ও পুলিশ গেছে। রাষ্ট্র কোনো বিষয়ে তদন্ত করতে চাইলে তার একটা নিয়ম আছে। কিন্তু পুলিশ দিয়ে পরিবারকে এ ধরনের হয়রানি কেন!' এ ঘটনার নিন্দা জানান তিনি।
মুশফিক উস সালেহিন বলেন, 'পুলিশ নানাবাড়িতে গিয়ে আমার পরিবারের নানা তথ্য নেয়। এতে সবাই আতঙ্কিত ও চিন্তিত হয়ে পড়েছে। উপাচার্য ঊর্ধ্বতন মহলে যোগাযোগের ক্ষমতার অপব্যবহার করে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীকে দিয়ে শিক্ষার্থীদের ভয়ভীতি দেখানোর চেষ্টা করছেন। এভাবে আন্দোলন দমনের চেষ্টা করা নিন্দনীয়।'
শাকিল উজ্জামান বলেন, 'পুলিশ বাড়িতে গিয়ে আমাকে আন্দোলন থেকে সরে আসতে বলেছে। তা না হলে যে কোনো সময় গ্রেপ্তার করা হতে পারে বলে হুমকি দিয়েছে।' বাসায় গিয়ে পুলিশের খোঁজখবর নেওয়ার বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন রাকিবুল হক রনি, শোভন রহমান, মাহাথির মুহাম্মদ প্রমুখ।
এ ঘটনায় নিন্দা জানিয়ে বিবৃতি দিয়েছে ছাত্র ইউনিয়নের কেন্দ্রীয় সংসদ। বিবৃতিতে বলা হয়, সব তথ্য-উপাত্ত সরকারের কাছে পাঠানোর পরও ভিসি ফারজানা ইসলামকে রক্ষার জন্য সরকার একের পর এক অবৈধ কাজ করে যাচ্ছে। আন্দোলনকারীদের বাড়িতে বাড়িতে পুলিশ পাঠানো হচ্ছে। পরিবারের লোকজনের সঙ্গে খারাপ আচরণ ও তাদের হেনস্তা করা হচ্ছে। এই দমননীতি আন্দোলনকে বরং আরও বিস্তৃত করবে।
এ বিষয়ে 'দুর্নীতির বিরুদ্ধে জাহাঙ্গীরনগর' আন্দোলনের মুখপাত্র অধ্যাপক রায়হান রাইন বলেন, 'এভাবে পুলিশের আন্দোলনকারীদের বাসায় যাওয়া মোটেই ঠিক নয়। এতে তাদের পরিবার আতঙ্কের মধ্যে আছে। এ ক্ষেত্রে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের ইন্ধন থাকতে পারে। আন্দোলনকে দমন করার একটি অপকৌশল হিসেবেই এসব করা হচ্ছে।'
তবে ভারপ্রাপ্ত প্রক্টর আ স ম ফিরোজ-উল-হাসান বলেন, 'এ বিষয়ে গোয়েন্দা সংস্থা কাজ করছে। আমরা এ বিষয়ে কিছু জানি না। বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন এ বিষয়ে অবগত নয়।'
এর আগে গত শনিবার এক সংবাদ সম্মেলনে দুর্যোগপূর্ণ আবহাওয়ার কারণে দু'দিন কোনো কর্মসূচি না দেওয়ার সিদ্ধান্ত নেন আন্দোলনকারীরা। এ সময় তারা জানান, মঙ্গলবার সকাল ১১টায় উপাচার্যের দুর্নীতির বিষয়ে আঁকা ব্যঙ্গাত্মক ক্যানভাস প্রদর্শন, বিকেল ৩টায় সংহতি সমাবেশ, সন্ধ্যা ৬টায় গানে গানে সংহতি এবং রাত সাড়ে ৭টায় পথনাটক প্রদর্শনী হবে। বুধবার সকাল ১১টায় বিক্ষোভ মিছিল হবে।
এদিকে, শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের বিশ্ববিদ্যালয় উইংয়ে খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, আন্দোলনকারীদের দেওয়া অভিযোগের ভিত্তিতে সোমবার পর্যন্ত কোনো তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়নি। তবে মন্ত্রণালয় থেকে চিঠি দিয়ে বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশনকে এ বিষয়ে কমিটি গঠন করে তদন্ত করতে বলা হবে। এ বিষয়ে বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশনের পাবলিক ইউনিভার্সিটি ম্যানেজমেন্ট ডিভিশনের উপপরিচালক মৌলি আজাদ বলেন, সোমবার পর্যন্ত তারা এ বিষয়ে মন্ত্রণালয়ের কোনো নির্দেশনা পাননি।