সকালের সংবাদ;
চুলের নিয়মিত যত্ন ও পুষ্টিকর খাবারই পারে চুলের সমস্যাগুলোর সমাধান দিতে। যেমন নিয়মিত চুল পরিষ্কার করতে হবে, চুলের গোড়া ঘামতে দেওয়া যাবে না, পর্যাপ্ত পানি পান করতে হবে, নিয়মিত পুষ্টিকর খাবার খেতে হবে, গোসলের পরই চুল শুকিয়ে ফেলতে হবে। সোজা করা চুলে বা রঙিন চুলে যেহেতু রাসায়নিক পদার্থ থাকে, তাই যত্ন নিতে হবে একটু আলাদা করে।
চুলের যত্ন মানেই চুল না পড়া, নরম ও পরিষ্কার রাখা। মাথার চুল পড়া একটি সাধারণ সমস্যা। নারী-পুরুষ উভয়েরই চুল পড়ে। তবে মাত্রাতিরিক্ত চুল পড়লে এবং বিষয়টি টাক হওয়ার পর্যায়ে চলে গেলে চিকিৎসা নেওয়া প্রয়োজন। এ নিয়ে চিন্তার অন্ত নেই।
ঢাকা মেডিকেল কলেজ ও হাসপাতালের চর্ম ও যৌন বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক মাসুদা খাতুন জানান, সাধারণত সবার ক্ষেত্রেই খুশকি বড় সমস্যা। বিশেষ করে যাঁরা ভেজা চুলে অনেকক্ষণ থাকেন। স্যাঁতসেঁতে পরিবেশে ছত্রাকের বিস্তার বেশি ঘটে। ছেলেদের ক্ষেত্রে বংশগত কারণ, অ্যান্ড্রোজেনিক হরমোন, দুশ্চিন্তা; আবার মেয়েদের ক্ষেত্রে অপুষ্টি, গর্ভধারণ, শিশুকে দুধ দান, অতিরিক্ত ডায়েট, চুলে বিভিন্ন ধরনের প্রসাধনী ব্যবহার করার জন্য চুল পড়ে থাকে। থাইরয়েডের সমস্যা, রক্তশূন্যতা, দীর্ঘ সময় জ্বরে ভোগা ও বংশগত সমস্যার কারণেও চুল পড়তে পারে। তবে একটু সচেতন হলেই চুল পড়া রোধ করা যায়।
উপায় তবে কী?
অ্যান্ড্রোজেনিক হরমোন নারীর চুল পড়া ও পুরুষের টাকের সবচেয়ে বড় কারণ। এই হরমোন সাধারণত পুরুষের শরীরে বেশি পরিমাণে থাকে। যাঁদের শরীরে এই হরমোনের প্রভাব বেশি, তাঁদেরই বেশি করে চুল পড়ে। নারীর মেনোপজের সময় ও পরে অ্যান্ড্রোজেনিক হরমোন আনুপাতিক হারে বেড়ে যায়। তখন হঠাৎ চুল বেশি করে পড়তে শুরু করে। এ ক্ষেত্রে খুব বেশি কিছু করণীয় থাকে না। তবে সমস্যা বেশি মনে করলে চিকিৎসকের পরামর্শ নিতে পারেন।
ছত্রাক সংক্রমণ বা খুশকি চুল পড়ার অন্যতম কারণ। তাই চুল ভেজা রাখা যাবে না। প্রয়োজনে চুলে ছত্রাকরোধী শ্যাম্পু ব্যবহার করতে হবে। ছত্রাকরোধী শ্যাম্পু ব্যবহারকালে অন্য শ্যাম্পু ব্যবহারের কোনো প্রয়োজন নেই। শ্যাম্পু সপ্তাহে কত দিন ব্যবহার করতে হবে, তা নির্ভর করে খুশকির তীব্রতার ওপর। ওষুধও খেতে হতে পারে। সংক্রমণ ভালো হয়ে গেলে চুল আবার গজায়।
চুলের স্বাস্থ্য কিসের ওপর নির্ভর করে?
শরীরের পুষ্টির ওপর চুলের স্বাস্থ্য নির্ভর করে। দৈনিক খাদ্যতালিকায় প্রোটিন, শর্করা, চর্বি, খনিজ ও ভিটামিন পরিমিত পরিমাণে না থাকলে চুল পড়ে যায়। এ ছাড়া দীর্ঘদিন শরীরে কোনো একটি উপাদানের অভাবে চুল পড়ে যায়। আবার যাঁরা না খেয়ে অতিরিক্ত ডায়েট করেন, তাঁদেরও পুষ্টিহীনতার কারণে অতিরিক্ত চুল পড়তে পারে। প্রত্যেকেরই উচিত নিয়মিত সুষম খাবার খাওয়া।
দুশ্চিন্তায় ভুগলে বা মানসিক সমস্যা থাকলে স্বাভাবিকের চেয়ে বেশি চুল পড়তে পারে। অবশ্য এ চুল পড়া সাময়িক এবং পুনরায় চুল গজায়। তবে দীর্ঘদিন মানসিক দুশ্চিন্তায় থাকলে বা দুশ্চিন্তা কাটিয়ে উঠতে না পারলে অনেক বেশি চুল পড়ে যেতে পারে।
অ্যান্ড্রোজেনিক হরমোন ছাড়াও থাইরয়েড হরমোনের মাত্রা কম বা বেশি হলে, গর্ভবতী অবস্থায় ও সন্তান জন্মের পর মায়ের শরীরে হরমোনের ভারসাম্য পরিবর্তিত হয় বলে তখন চুল বেশি পড়ে। হরমোন আগের অবস্থায় ফিরে গেলে পুনরায় চুল গজায়।
ক্যানসার চিকিৎসায় কেমোথেরাপি দেওয়ার পর চুল উঠে যায়। কেমোথেরাপির প্রথম ডোজ দেওয়ার দুই-তিন সপ্তাহ পর চুল পড়ে এবং সর্বশেষ ডোজের তিন-চার মাস পর পুনরায় চুল গজাতে শুরু করে।
চুলের বিশেষ কোনো স্টাইলের জন্য যদি দীর্ঘদিন খুব টেনে চুল বাঁধা হয় বা টাইট করে খোঁপা বা ব্যান্ড করা হয়, তাহলে চুল পড়া শুরু হতে পারে। খুব বেশি পরিমাণে চুল রঙিন করা, চুল সোজা করা বা ক্রমাগত রিবন্ডিং করলে চুল পড়ার হার বেড়ে যায়। কিছু ক্ষেত্রে আবার চুল ওঠে, কিন্তু অনেক সময় হেয়ার ফলিকলের স্থায়ী ক্ষতি হয়ে গেলে চুল আবার না–ও গজাতে পারে।
কিছু অসুখ, যেমন অ্যানিমিয়া, টাইফয়েড, জন্ডিস, ম্যালেরিয়া, ডায়াবেটিস ইত্যাদিতে চুল পড়ে যেতে পারে। অনেক সময় অসুখ ভালো হওয়ার পরও চুল আর আগের অবস্থায় ফেরে না। তাই অসুখের সময় সঠিক চিকিৎসা করাতে হবে।
চুলকে নিয়মিত পরিষ্কার রাখতে হবে, নিয়মিত পর্যাপ্ত পরিমাণে পুষ্টিকর খাবার খেতে হবে, পর্যাপ্ত পরিমাণে পানি পান করতে হবে ও দুশ্চিন্তামুক্ত জীবন যাপন করতে হবে। যেকোনো ওষুধ গ্রহণের আগে চিকিৎসকের পরামর্শ নিতে হবে। তবেই চুল পড়া রোধ করা বা কমানো সম্ভব।
লেখক: চিকিৎসক