ফিল্মের ডনকেও হার মানায়, মানুষ খুন করাই এরশাদের নেশা!
- আপডেট সময় : ০৯:০৮:০৩ পূর্বাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ৭ নভেম্বর ২০১৯ ১০৫ বার পড়া হয়েছে
চট্টগ্রাম ব্যুরো;
চট্টগ্রামের রাঙ্গুনিয়ার ত্রাস জেলার তালিকাভুক্ত শীর্ষ সন্ত্রাসী এরশাদুর রহমান গ্রেফতার হওয়ার পর তার নানা কাহিনী বেরিয়ে আসছে। মুখ খুলছেন স্থানীয়রাও। দিন মজুরের সন্তান এরশাদুরের বৈধ আয় না থাকলেও তিনি এখন বাড়ি, ফ্ল্যাট, গাড়ি, ইটভাটার মালিক।
এলাকায় রয়েছে তার বিঘায় বিঘায় জমি। তার আয়ের মূল উৎসই হচ্ছে চাঁদাবাজি, অবৈধ বালু উত্তোলন, দখল ও কন্ট্রাক্ট কিলিং। কথায় কথায় মানুষ খুন করা তার নেশা। ত্রাসের রাজত্ব বজায় রাখতে ’৮০-এর দশক থেকেই দলবদল করে আসা এরশাদুর রহমানের গ্রেফতারের পর এলাকায় স্বস্তি ফিরে এসেছে।
যখন যে দল ক্ষমতায় আসেন এরশাদ তখন সেই দলে ভিড়েছেন বিনা বাধায়। ২৯ অক্টোবর রাতে অক্সিজেন এলাকা থেকে র্যাব গ্রেফতার করার আগে তিনি আওয়ামী লীগ করতেন। রাঙ্গুনিয়া থানা পুলিশ চার মামলায় গ্রেফতার দেখিয়ে তাকে আদালতে সোপর্দ করার আগে তিনি ছিলেন রাঙ্গুনিয়ার ত্রাস। অভিযোগ আছে, থানা পুলিশকে ‘ম্যানেজ’ করে চলায় গ্রেফতার এড়িয়ে যাচ্ছিলেন রাঙ্গুনিয়ার ইসলামপুর ইউনিয়নের ৭ নম্বর ওয়ার্ডের আল আমীন পাড়ার মৃত তাজুল ইসলামের ছেলে এরশাদ।
যেভাবে উত্থান : জেলার শীর্ষ সন্ত্রাসী আইয়ুব বাহিনীর প্রধান আইয়ুবের হাত ধরে ’৮০-এর দশকের মাঝামাঝি এরশাদ সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ডে পা বাড়ান। পরে আইয়ুবের সেকেন্ড ইন কমান্ড হন এরশাদ। আইয়ুবের সঙ্গে তিনি যোগ দেন সালাউদ্দিন কাদের (সাকা) চৌধুরীর এনডিপিতে। সাকা চৌধুরী পরে বিএনপিতে যোগ দিলে এরশাদও বিএনপিতে ভেড়েন।
আওয়ামী লীগ সরকার ক্ষমতায় এলে এরশাদও বাহিনীর প্রধান আইয়ুবের সঙ্গে আওয়ামী লীগে যোগ দেন। ৫ অক্টোবর আততায়ীর গুলিতে গুরুতর আহত হয়ে চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল ভর্তি হন আইয়ুব। চিকিৎসাধীন অবস্থায় ১৯ অক্টোবর মারা যান। স্থানীয়রা বলছেন, এরশাদ জাত সন্ত্রাসী। শুধু সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ড ধরে রাখতেই সরকার বদলের সঙ্গে সঙ্গে তিনি বদল করেন দল। ফলে সরকর বদল হলেও তার রাজত্বের বদল হয় না।
অপকর্ম : রাঙ্গুনিয়ার আশপাশের লোকজনের কাছে এরশাদ মূর্তিমান আতঙ্কের নাম। মানুষ খুন করা তার নেশায় পরিণত হয়েছে। তার বিরুদ্ধে রাঙ্গুনিয়ার দক্ষিণ রাজানগর এলাকায় ১৯৯১ সালে মুক্তিযোদ্ধা আবদুস সোবহানকে জীবিত কবর দিয়ে হত্যা, ১৯৮৯ সালে ইসলামপুরে মেহেরুজ্জামান ও ২০০২ সালে তার ছেলে ননাইয়াকে হত্যা, ১৯৯১ সালের ইসমাইল ও গফুরকে হত্যা, ২০১৪ সালে আ’লীগ কর্মী মাহাবুব আলমকে হত্যার অভিযোগে মামলা হয়েছে।
এছাড়া রাঙ্গুনিয়ার মোহাম্মদ আমীনকে পিটিয়ে পঙ্গু করা ছাড়াও বেশ কয়েকটি ডাকাতি মামলা আছে তার বিরুদ্ধে। এরমধ্যে মুক্তিযোদ্ধা সোবহান হত্যা মামলায় যাবজ্জীবন এবং রাজারহাট বাজার ডাকাতি মামলায় ১০ বছরের দণ্ড দিয়েছেন আদালত।
সম্পদ : সন্ত্রাসী ও চাঁদাবাজিই তার আয়ের অন্যতম উৎস। উপজেলার ইসলামপুর ইউনিয়নের রানীরহাট বাজারসংলগ্ন এক আত্মীয়ের জমি দখল করে গড়ে তুলেছেন অন্তত ২০টি ঘর। সেখান থেকে প্রতি মাসে লাখ টাকা ভাড়া পান।
তার ইসলামপুর ছাদেক নগর এলাকায় ‘বিবিএম-২’ ও রুইস্যা বিল এলাকায় ‘বিআরবি’ নামে দুটি ইটভাটা, দুটি ট্রাক, নগরীর অক্সিজেন এলাকায় আছে দুটি ফ্ল্যাট। এলাকায় তার বিঘায় বিঘায় জমি আছে। এছাড়া জানা গেছে, ব্যাংকেও আছে তার তার বিপুল অংকের টাকা।
আয়ের উৎস : রাঙ্গুনিয়া উপজেলার ইছামতি খালের বগারবিল, গোদারপাড়, বেথছড়ি, রানীরহাট, রাজারহাট, পাড়–য়াসহ উত্তর রাঙ্গুনিয়ার বেশ কয়েকটি এলাকা থেকে ড্রেজার দিয়ে অবৈধভাবে বালু উত্তোলন করে তা বিক্রি, ইটভাটা থেকে চাঁদা আদায়, রাঙ্গামাটি সড়কসহ বিভিন্ন সড়কের যানবাহন থেকে চাঁদা আদায়, গাছ পাচার, অস্ত্র বেচাকেনা ও মাদক ব্যবসা।
কথা হয় ২০১৪ সালে এরশাদের বর্বরতার শিকার উপজেলার ইসলামপুরের ফয়েজ আহমেদের ছেলে মোহাম্মদ আমীনের সঙ্গে। আমীন বলেন, এরশাদ নিজেই লোহার রড দিয়ে আমাকে পেটান।
তিনি বলেন, নির্যাতনে আমার সঙ্গে থাকা মাহাবুব নিহত হলেও আমি মরতে মরতে বেঁচে যাই। এরশাদের কারণে আমি এলাকায় যেতে পারিনি। নিহত মুক্তিযোদ্ধা আবদুস সোবাহানের ছেলে উকিল আহমেদ বলেন, ‘সন্ত্রাসী এরশাদ এলাকার একজন মূর্তিমান আতঙ্ক। আমার বাবাকে এরশাদসহ অন্য আসামিরা নৃশংসভাবে হত্যা করেছে। এ মামলায় এরশাদের যাবজ্জীবন সাজা হলেও তিনি এলাকায় বহাল তবিয়তে।’
রাঙ্গুনিয়া থানার পরিদর্শক (তদন্ত) মাহাবুব মিল্কি বলেন, ‘এরশাদ রাঙ্গুনিয়া থানার তালিকাভুক্ত একজন সন্ত্রাসী। র্যাব নগরী থেকে তাকে গ্রেফতারের পর তার বিরুদ্ধে থাকা ৪টি মামলায় গ্রেফতারি পরোয়ানা দেখিয়ে আদালতে সোপর্দ করা হয়।’