ঢাকা ০৮:৫৯ অপরাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ২৮ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০ বঙ্গাব্দ
সংবাদ শিরোনাম :
Logo বুড়িচংয়ে আইনশৃঙ্খলা কমিটির সভায় সাংবাদিকদের প্রবেশে নিষেধাজ্ঞা ইউএনও’র! Logo ইবি উপাচার্যকে ১০লাখ ঘুষ প্রস্তাব এক তরুনীর! Logo মামলায় জর্জরিত কুলাউড়ার ছাত্রদল নেতা মিতুল পালিয়ে আছেন প্রবাসে Logo ২৫ মার্চ গণহত্যা দিবসে মোমবাতি প্রজ্জ্বলনের মধ্য দিয়ে শাবি ছাত্রলীগের কার্যক্রম শুরু Logo থিয়েটার কুবির ইফতার মাহফিল Logo রাজধানীর শান্তিনগর বাজার নিয়ে শত কোটি টাকার লুটপাট Logo ঢাবির সামাজিক বিজ্ঞান অনুষদের ডিন অধ্যাপক ড. জিয়া রহমানের মৃত্যুতে শাবি শিক্ষক সমিতির শোক Logo ঢাবি শিক্ষক ড. জিয়া রহমানের মৃত্যুতে শাবি উপাচার্যের শোক প্রকাশ Logo ময়মনসিংহ স্টুডেন্টস এসোসিয়েশনের নতুন সভাপতি সজীব, সম্পাদক আশিক Logo পুরান ঢাকায় জুতার কারখানার আগুন




সৌদি পুলিশের হেফাজতে নির্যাতনের শিকার সেই সুমি

প্রতিনিধির নাম
  • আপডেট সময় : ০৮:৩৩:৩৮ পূর্বাহ্ন, বুধবার, ৬ নভেম্বর ২০১৯ ১৩১ বার পড়া হয়েছে

অনলাইন রিপোর্ট

সৌদি আরবে পাশবিক নির্যাতনের শিকার গৃহকর্মী সুমি আক্তারকে তার কর্মস্থল থেকে উদ্ধার করে সেখানকার পুলিশ হেফাজতে নেয়া হয়েছে।

সোমবার রাতে জেদ্দার দক্ষিণে নাজরান এলাকার কর্মস্থল থেকে তাকে উদ্ধার করে থানা হেফাজতে নিয়ে যাওয়া হয়েছে।

এ বিষয়ে রাতে সুমির স্বামী নুরুল ইসলাম জানান, সুমির সঙ্গে দুপুরে একবার কথা হয়েছে। সুমি বলেছে, সৌদি পুলিশ তাকে নেয়ার জন্য আসবে। পরে রাতে আবার কথা হলে সুমি জানায়, এখন আর ফোন দিয়েন না, কিছু সময়ের মধ্যে পুলিশ এসে আমাকে নিয়ে যাবে।

নাম প্রকাশ না করার শর্তে জেদ্দায় বাংলাদেশ কনস্যুলেটের এক কর্মকর্তা বলেন, সুমিকে থানায় নিয়ে আসা হলেও তার এখানকার নিয়োগকর্তা (কফিল) তাকে ছাড়তে চাইছেন না।

তিনি সুমিকে আরও রাখতে চান। সুমিকে ছাড়তে হলে যারা বাংলাদেশ থেকে মধ্যস্থতা করে (রূপসী বাংলা ওভারসিজ) তাকে সেখানে পাঠিয়েছে, তাদের কাছ থেকে সৌদির কফিলকে অর্থ আদায় করে দিতে হবে।

কফিলের ভাষ্য, কারণ এখানে সুমিকে আনতে তার প্রায় তিন লাখ টাকার মতো খরচ হয়েছে, এই টাকা সেবায় শোধ হয়নি।

সৌদি আরবে পাশবিক নির্যাতন সহ্য করতে না পেরে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুকে দেশে ফেরার আকুতি জানিয়েছে সৌদি প্রবাসী নারী সুমি আক্তার (২৬)।

সুমি আশুলিয়ার চারাবাগ এলাকার নুরুল ইসলামের স্ত্রী। সুমির আকুতির ভিডিওটি ফেসবুকে ভাইরাল হওয়ার পর নুরুল ইসলাম রাজধানীর পল্টন থানায় একটি সাধারণ ডায়েরি (জিডি) করেছেন।

ভিডিওতে সুমি বলেন, ‘ওরা আমারে মাইরা ফালাইব, আমারে দেশে ফিরাইয়া নিয়া যান। আমি আমার সন্তান ও পরিবারের কাছে ফিরতে চাই। আমাকে আমার পরিবারের কাছে নিয়ে যান। আর কিছু দিন থাকলে আমি মরে যাব।’

সুমির পরিবার জানায়, ২০১৬ সালে নুরুল ইসলাম সুমি আক্তারকে বিয়ে করেন। সুমি পঞ্চগড় জেলার বোদা সদর থানার রফিকুল ইসলামের মেয়ে। বিয়ের পর তিনি জানতে পারেন তার স্বামী আগেও বিয়ে করেছেন।

বাধ্য হয়ে সুমি সতীনের সংসার শুরু করেন। বিয়ের দেড় বছর পর সুমির সংসারেও একজন সন্তান জন্মায়। সতীনের বিভিন্ন নির্যাতন সহ্য করতে না পেরে নিজের সন্তানকে মানুষ করার জন্য বিদেশ যাওয়ার সিদ্ধান্ত নেয় সুমি। এ জন্য চলতি বছরের জানুয়ারিতে গৃহকর্মীর ট্রেনিং শেষ করেন সুমি।

তখন বিনামূল্যে বিদেশে যাওয়ার সুযোগ পেয়ে সেটি হাতছাড়া করতে চাননি সুমি। দালালদের দেখানো লোভ আর বিদেশে গিয়ে ভালো টাকা আয়ের আশ্বাসে বিনামূল্যে মধ্যপ্রাচ্যের সৌদি আরবে পাড়ি জমান নিম্নবিত্ত ঘরের এই গৃহবধূ।

কিন্তু দালালরা বিদেশে পাঠানোর কথা বলে যে বিক্রি করে দিয়েছে সে কথা জানতেন না সুমি। সৌদি যাওয়ার সপ্তাহখানেক পর থেকে শুরু হয় তার ওপর মারধর, যৌন হয়রানিসহ নানা নির্যাতন।

সম্প্রতি ফেসবুকে কান্নাজড়িত কণ্ঠে তার সঙ্গে ঘটে যাওয়া পাশবিক নির্যাতনের কথা বলে তাকে দেশে ফিরিয়ে আনার জন্য প্রধানমন্ত্রীর কাছে অনুরোধ জানান সুমি। পরবর্তী ভিডিওটি ভাইরাল হয়।

আশুলিয়ার চারাবাগ এলাকায় নুরুল ইসলামের বাড়িতে গিয়ে জানা গেছে, চলিত বছরের জানুয়ারিতে গৃহকর্মীর ট্রেনিং শেষ করেন সুমি।

এর পর গত ৩০ মে ‘রূপসী বাংলা ওভারসিজ’ নামে একটি এজেন্সির মাধ্যমে হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর থেকে সৌদি অ্যারাবিয়ান এয়ারলাইনস (এসভি) ৮০৫ যোগে সৌদি যান সুমি। সেখানে যাওয়ার পর সবসময় স্বজনদের সঙ্গে যোগাযোগ করে তার ওপর বয়ে যাওয়া নির্যাতনের ঘটনা বর্ণনা দেন।

এ ব্যাপারে সুমির স্বামী নুরুল ইসলাম বলেন, সৌদিতে যাওয়ার পর পরই তার ওপর নানাভাবে নির্যাতন চলে। আমার সঙ্গে মাঝে যোগাযোগ করতে দেইনি। এর পর যখনই আমার সঙ্গে কথা হয় তখনই সুমি বাড়ি আসতে চায়। সে আর সৌদিতে থাকতে চায় না।

তিনি বলেন, আমি গত ১১ অক্টোবর পল্টন থানায় ‘রূপসী বাংলা ওভারসিজ’র মালিক আক্তার হোসেনের নামে সাধারণ ডাইরি (জিডি) করেছি। এ ছাড়া ন্যায়বিচারের জন্য জনশক্তি কর্মসংস্থান রফতানি ব্যুরোর মহাপরিচালকের দফতরে একটি লিখিত অভিযোগ দিয়েছি।

পল্টন থানার এসআই রাজিউর বলেন, সৌদি প্রবাসে এক নারী নির্যাতনের ঘটনায় তার স্বামী নুরুল ইসলাম এজেন্সির মালিক আক্তার হোসেনের নামে সাধারণ ডায়েরি (জিডি) করেছেন। পরবর্তীকালে আমি তাকে মামলা করতে পরামর্শ দিয়েছি। এ ঘটনায় মামলার পর প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।

নিউজটি শেয়ার করুন

আপনার মন্তব্য

Your email address will not be published. Required fields are marked *

আপনার ইমেইল এবং অন্যান্য তথ্য সংরক্ষন করুন

ট্যাগস :




সৌদি পুলিশের হেফাজতে নির্যাতনের শিকার সেই সুমি

আপডেট সময় : ০৮:৩৩:৩৮ পূর্বাহ্ন, বুধবার, ৬ নভেম্বর ২০১৯

অনলাইন রিপোর্ট

সৌদি আরবে পাশবিক নির্যাতনের শিকার গৃহকর্মী সুমি আক্তারকে তার কর্মস্থল থেকে উদ্ধার করে সেখানকার পুলিশ হেফাজতে নেয়া হয়েছে।

সোমবার রাতে জেদ্দার দক্ষিণে নাজরান এলাকার কর্মস্থল থেকে তাকে উদ্ধার করে থানা হেফাজতে নিয়ে যাওয়া হয়েছে।

এ বিষয়ে রাতে সুমির স্বামী নুরুল ইসলাম জানান, সুমির সঙ্গে দুপুরে একবার কথা হয়েছে। সুমি বলেছে, সৌদি পুলিশ তাকে নেয়ার জন্য আসবে। পরে রাতে আবার কথা হলে সুমি জানায়, এখন আর ফোন দিয়েন না, কিছু সময়ের মধ্যে পুলিশ এসে আমাকে নিয়ে যাবে।

নাম প্রকাশ না করার শর্তে জেদ্দায় বাংলাদেশ কনস্যুলেটের এক কর্মকর্তা বলেন, সুমিকে থানায় নিয়ে আসা হলেও তার এখানকার নিয়োগকর্তা (কফিল) তাকে ছাড়তে চাইছেন না।

তিনি সুমিকে আরও রাখতে চান। সুমিকে ছাড়তে হলে যারা বাংলাদেশ থেকে মধ্যস্থতা করে (রূপসী বাংলা ওভারসিজ) তাকে সেখানে পাঠিয়েছে, তাদের কাছ থেকে সৌদির কফিলকে অর্থ আদায় করে দিতে হবে।

কফিলের ভাষ্য, কারণ এখানে সুমিকে আনতে তার প্রায় তিন লাখ টাকার মতো খরচ হয়েছে, এই টাকা সেবায় শোধ হয়নি।

সৌদি আরবে পাশবিক নির্যাতন সহ্য করতে না পেরে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুকে দেশে ফেরার আকুতি জানিয়েছে সৌদি প্রবাসী নারী সুমি আক্তার (২৬)।

সুমি আশুলিয়ার চারাবাগ এলাকার নুরুল ইসলামের স্ত্রী। সুমির আকুতির ভিডিওটি ফেসবুকে ভাইরাল হওয়ার পর নুরুল ইসলাম রাজধানীর পল্টন থানায় একটি সাধারণ ডায়েরি (জিডি) করেছেন।

ভিডিওতে সুমি বলেন, ‘ওরা আমারে মাইরা ফালাইব, আমারে দেশে ফিরাইয়া নিয়া যান। আমি আমার সন্তান ও পরিবারের কাছে ফিরতে চাই। আমাকে আমার পরিবারের কাছে নিয়ে যান। আর কিছু দিন থাকলে আমি মরে যাব।’

সুমির পরিবার জানায়, ২০১৬ সালে নুরুল ইসলাম সুমি আক্তারকে বিয়ে করেন। সুমি পঞ্চগড় জেলার বোদা সদর থানার রফিকুল ইসলামের মেয়ে। বিয়ের পর তিনি জানতে পারেন তার স্বামী আগেও বিয়ে করেছেন।

বাধ্য হয়ে সুমি সতীনের সংসার শুরু করেন। বিয়ের দেড় বছর পর সুমির সংসারেও একজন সন্তান জন্মায়। সতীনের বিভিন্ন নির্যাতন সহ্য করতে না পেরে নিজের সন্তানকে মানুষ করার জন্য বিদেশ যাওয়ার সিদ্ধান্ত নেয় সুমি। এ জন্য চলতি বছরের জানুয়ারিতে গৃহকর্মীর ট্রেনিং শেষ করেন সুমি।

তখন বিনামূল্যে বিদেশে যাওয়ার সুযোগ পেয়ে সেটি হাতছাড়া করতে চাননি সুমি। দালালদের দেখানো লোভ আর বিদেশে গিয়ে ভালো টাকা আয়ের আশ্বাসে বিনামূল্যে মধ্যপ্রাচ্যের সৌদি আরবে পাড়ি জমান নিম্নবিত্ত ঘরের এই গৃহবধূ।

কিন্তু দালালরা বিদেশে পাঠানোর কথা বলে যে বিক্রি করে দিয়েছে সে কথা জানতেন না সুমি। সৌদি যাওয়ার সপ্তাহখানেক পর থেকে শুরু হয় তার ওপর মারধর, যৌন হয়রানিসহ নানা নির্যাতন।

সম্প্রতি ফেসবুকে কান্নাজড়িত কণ্ঠে তার সঙ্গে ঘটে যাওয়া পাশবিক নির্যাতনের কথা বলে তাকে দেশে ফিরিয়ে আনার জন্য প্রধানমন্ত্রীর কাছে অনুরোধ জানান সুমি। পরবর্তী ভিডিওটি ভাইরাল হয়।

আশুলিয়ার চারাবাগ এলাকায় নুরুল ইসলামের বাড়িতে গিয়ে জানা গেছে, চলিত বছরের জানুয়ারিতে গৃহকর্মীর ট্রেনিং শেষ করেন সুমি।

এর পর গত ৩০ মে ‘রূপসী বাংলা ওভারসিজ’ নামে একটি এজেন্সির মাধ্যমে হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর থেকে সৌদি অ্যারাবিয়ান এয়ারলাইনস (এসভি) ৮০৫ যোগে সৌদি যান সুমি। সেখানে যাওয়ার পর সবসময় স্বজনদের সঙ্গে যোগাযোগ করে তার ওপর বয়ে যাওয়া নির্যাতনের ঘটনা বর্ণনা দেন।

এ ব্যাপারে সুমির স্বামী নুরুল ইসলাম বলেন, সৌদিতে যাওয়ার পর পরই তার ওপর নানাভাবে নির্যাতন চলে। আমার সঙ্গে মাঝে যোগাযোগ করতে দেইনি। এর পর যখনই আমার সঙ্গে কথা হয় তখনই সুমি বাড়ি আসতে চায়। সে আর সৌদিতে থাকতে চায় না।

তিনি বলেন, আমি গত ১১ অক্টোবর পল্টন থানায় ‘রূপসী বাংলা ওভারসিজ’র মালিক আক্তার হোসেনের নামে সাধারণ ডাইরি (জিডি) করেছি। এ ছাড়া ন্যায়বিচারের জন্য জনশক্তি কর্মসংস্থান রফতানি ব্যুরোর মহাপরিচালকের দফতরে একটি লিখিত অভিযোগ দিয়েছি।

পল্টন থানার এসআই রাজিউর বলেন, সৌদি প্রবাসে এক নারী নির্যাতনের ঘটনায় তার স্বামী নুরুল ইসলাম এজেন্সির মালিক আক্তার হোসেনের নামে সাধারণ ডায়েরি (জিডি) করেছেন। পরবর্তীকালে আমি তাকে মামলা করতে পরামর্শ দিয়েছি। এ ঘটনায় মামলার পর প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।