অনলাইন ডেস্ক;
বিগত বিএনপি-জামায়াত নেতৃত্বাধীন চারদলীয় জোট সরকার ঘোষিত ২৩ শীর্ষ সন্ত্রাসীর অন্যতম আব্বাস ওরফে কিলার আব্বাস বিএনপি-জামায়াত নেতৃত্বাধীন চারদলীয় জোট সরকারের আমলে ঘোষিত ২৩ শীর্ষসন্ত্রাসীর অন্যতম আব্বাস ওরফে কিলার আব্বাস। ২০০৩ সালের ১৪ ফেব্রুয়ারি থেকে কারাগারে ৪টি হত্যাসহ ১০ মামলার এ আসামি। এর মধ্যে হত্যার ৪টিসহ ৯টি মামলায় তিনি ইতোমধ্যেই খালাস পেয়েছেন। অবশিষ্ট মামলাটি ডাকাতির, এতেও তিনি জামিনে আছেন। এ মামলায় প্রডাকশন ওয়ারেন্ট (পিডব্লিউ) প্রত্যাহারের মাধ্যমে যে কোনোদিন তার কারাগার থেকে মুক্তি মিলতে পারে। খবর একাধিক সূত্রের।
এদিকে মামলার নথিতেও দেখে গেছে, কিলার আব্বাস ৪টি হত্যামামলার প্রতিটিতেই খালাস পেয়েছেন। এ ছাড়া চাঁদাবাজিসহ অন্যান্য অভিযোগে করা মামলাগুলোয়ও তিনি বিভিন্ন সময়ে খালাস পেয়েছেন। খালাস পাওয়া এসব মামলার মধ্যে রয়েছে জাতীয়তাবাদী ছাত্রদলের সাবেক সহসভাপতি ও ঢাকা সিটি করপোরেশন ৮ নং ওয়ার্ড কমিশনার ছায়েদুর রহমান নিউটন হত্যা মামলা। এ মামলায় ২০০৬ সালের ২৪ মে ঢাকার ১ নম্বর দ্রুত বিচার ট্রাইব্যুনাল কিলার আব্বাসসহ ১০ জনের ফাঁসির রায় দেন। এ মামলায় ২০১১ সালের ২৬ জুলাই হাইকোর্টে করা আপিলে আব্বাসসহ ৩ জনের মৃত্যুদ-ের সাজা বাতিল করে খালাস দেন আদালত।
২০০২ সালের ১০ মে অস্ত্রধারীরা গুলি করে নিউটনকে হত্যা করে। ২২টি তাজা বুলেটে তার পুরো শরীর ঝাঁঝরা হয়ে যায়। তৎকালে সরকার সমর্থিত প্রবল ক্ষমতাধর একজন ওয়ার্ড কমিশনার এভাবে শত শত লোকের সামনে খুন হওয়ায় সারাদেশে তোলপাড় সৃষ্টি হয়। বিএনপির সাবেক এমপি প্রয়াত নাসিরউদ্দিন আহমেদ পিন্টুর ভগ্নিপতি ছিলেন নিউটন।
ছাত্রলীগের সাবেক নেতা কিলার আব্বাস তার বিরুদ্ধে আরও যে তিনটি হত্যামামলা ছিল, সেগুলোতে বেকসুর খালাস পেয়েছেন অনেকটাই নীরবে। ভীষণ গোপনীয়তার সঙ্গে মামলাগুলোর রায় ঘোষণা হয়। এ কারণে রায়ের খবর কোনো মিডিয়া পর্যন্ত জানতে পারেনি, হয়নি এ সংক্রান্ত কোনো সংবাদ। মামলা তিনটি হচ্ছেÑ চাল ব্যবসায়ী আতাউর রহমান আজাদ, ব্যবসায়ী এছহাক আহম্মেদ দুলাল ও ব্যবসায়ী আতিকুর রহমান হত্যা মামলা।
মামলাগুলোর মধ্যে ১৯৯৯ সালের ২৯ জুন বেলা ১১টার দিকে ঢাকা জেলা ও দায়রা জজ আদালত ভবনের পাশে অন্নপূর্ণা হোটেলের সামনে প্রকাশ্যে চাল ব্যবসায়ী আতাউর রহমান আজাদকে গুলি করে হত্যা করা হয়। মামলার আসামি কিলার আব্বাস, জাহাঙ্গীর ও গিয়াস উদ্দিন প্রকাশ্যে গুলি করেন বলে মামলার এজাহারে অভিযোগ করা হয়। এ মামলায় চার্জশিটভুক্ত ২১ সাক্ষীর মধ্যে তদন্ত কর্মকর্তা এবং বাদীসহ ৯ সাক্ষীর সাক্ষ্যগ্রহণ ছাড়াই ২০১৫ সালের ১৪ জুন ঢাকার চতুর্থ অতিরিক্ত মহানগর দায়রা জজ আদালতের তৎকালীন বিচারক রুহুল আমিন খালাসের রায় ঘোষণা করেন কিলার আব্বাস, জাহাঙ্গীর আলম ওরফে কালা জাহাঙ্গীর (পলাতক), আহসান উল্লাহ চৌধুরী ওরফে হাসান (পলাতক), আবু হায়দার বাবু (পলাতক), আকরাম বাবু ও সেলিম ওরফে কানা সেলিমসহ সব আসামির।
অন্যদিকে ২০০১ সালের ২৮ জানুয়ারি বেলা ২টার দিকে কাফরুল থানাধীন কচুক্ষেতের রজনীগন্ধা সুপার মার্কেট এলাকায় ব্যবসায়ী এছহাক আহম্মেদ দুলালকে গুলি করে হত্যা করা হয়। ওই মামলায় চার্জশিটের ১২ সাক্ষীর মধ্যে মাত্র চারজনের সাক্ষ্য গ্রহণ হয়। তদন্ত কর্মকর্তাসহ সাত জনকে আদালতে হাজির করেনি রাষ্ট্রপক্ষ। মামলাটিতে ২০১৫ সালের ২৯ এপ্রিল একই আদালতে কিলার আব্বাস, মাহফুজ ওরফে মাহফুজুর রহমান ও কসাই মিজান খালাস পান।
এছহাক ও আজাদ হত্যা মামলা ২টি ঢাকার প্রথম অতিরিক্ত মহানগর দায়রা জজ আদালতে প্রথমে বিচার চলছিল। কিন্তু ২০১৪ সালের ২২ অক্টোবর আসামিপক্ষ আদালত পরিবর্তনের জন্য ফৌজদারি বিবিধ মামলা করলে ঢাকা মহানগর দায়রা জজ মামলা দুটি ছয় মাসের মধ্যে নিষ্পত্তি করার নির্দেশ দিয়ে ঢাকার চতুর্থ অতিরিক্ত মহানগর দায়রা জজ আদালতে বদলি করেন। ওই আদালতে রাষ্ট্রপক্ষ ৬ মাসের মধ্যে আর কোনো সাক্ষী হাজির করতে না পারায় আগে গৃহীত সাক্ষ্য-প্রমাণে অভিযোগ প্রমাণিত না হওয়ায় আদালত আসামিদের খালাস দেন।
সর্বশেষ খালাস পাওয়া হত্যামামলায় ব্যবসায়ী আতিকুর রহমানকে কাফরুল থানাধীন মিলি সুপার মার্কেটের বিপরীতে ভাগ্যকুল মিষ্টান্ন ভা-ারের ভেতরে ২০০১ সালের ২০ ফেব্রুয়ারি গুলি করে হত্যা করা হয়। মামলায় কিলার আব্বাসসহ চার্জশিটভুক্ত আসামি ছিল ১১ জন। আব্বাস ছাড়া অন্যান্য আসামি হলোÑ জাফর আহমেদ, সামসুদ্দিন, সাইফুল ইসলাম, মঈন উদ্দিন, জাহাঙ্গীর ওরফে পিচ্চি জাহাঙ্গীর, জাফর, জাবেদ, ইকবাল, লিটন ও ইব্রাহিম। ২০০১ সালের ২০ আগস্ট মামলাটিতে চার্জশিট দাখিল করেন ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশের ইন্সপেক্টর মাহতাব হোসেন। এ মামলায় ২০১২ সালের ৫ নভেম্বর ঢাকার জননিরাপত্তা বিঘœকারী অপরাধ দমন ট্রাইব্যুনাল আসামিদের বিরুদ্ধে চার্জগঠন করেন। মামলাটিতে গত বছরের ২ আগস্ট রায় ঘোষণা করেন ওই ট্রাইব্যুনালের বিচারক বেগম চমন চৌধুরী। আব্বাসসহ সব আসামির বিরুদ্ধে রাষ্ট্রপক্ষ অভিযোগ সন্দেহাতীতভাবে প্রমাণ করতে না পারায় খালাস দেওয়া হয়েছে বলে রায়ে বলেন বিচারক। রায় ঘোষণার আগে ট্রাইব্যুনাল মামলার চার্জশিটের ২৪ সাক্ষীর মধ্যে নিহতের স্ত্রী মিসেস সুলতানা রহমানসহ ১১ জনের সাক্ষ্য গ্রহণ করেন। মামলার আসামি সামসুদ্দিনের ছোট ভাই মইনুদ্দিনের বিরুদ্ধে আতিকুর রহমান আদালতে সাক্ষ্য দেওয়ায় তাকে হত্যা করা হয় বলে মামলায় অভিযোগ করা হয়েছিল।
এদিকে বিচারাধীন মামলাটি রাজধানীর বারিধারার ডিওএইচএস, ২ নং লেনস্থ ১৭২, ইন্টান রোডে ২০০২ সালের ২০ ফেব্রুয়ারি কাজী মশিউর রহমানের বাড়িতে ডাকাতি সংঘটনসংক্রান্ত। ওই মামলায় ২০০৬ সালের ৩০ সেপ্টেম্বর ডিবি পুলিশ আব্বাসসহ ২ জনের বিরুদ্ধে চার্জশিট দাখিল করে। পরের বছর ৩০ অক্টোবর ঢাকা মহানগরীর তৎকালীন সহকারী দায়রা জজ আদালত আসামিদের বিরুদ্ধে চার্জগঠন করেন। মামলাটি বর্তমানে ঢাকার ৯ নম্বর বিশেষ জজ আদালতে বিচারাধীন। ২৫ সাক্ষীর ওই মামলায় ২০১৫ সালের ২ মার্চ এক পুলিশ সদস্য সাক্ষ্য দেন। এরপর আর কোনো সাক্ষীর সাক্ষ্য না হওয়ায় ওই মামলায় আগামী ১ জানুয়ারি সাক্ষ্যগ্রহণের দিন ধার্য রয়েছে। এ মামলায় ২০১৬ সালের ৯ মে আদালত আব্বাসের জামিন মঞ্জুর করেছেন। অপর আসামি ইব্রাহিম জামিন পাওয়ার পর পলাতক।
কিলার আব্বাসের খালাস পাওয়ার বিষয়ে ঢাকা মহানগর পাবলিক প্রসিকিউটর আবদুল্লাহ আবু বলেন, ছোট বড় সব মামলাতেই রাষ্ট্রপক্ষ প্রমাণের চেষ্টা করে। কিন্তু শীর্ষ সন্ত্রাসীদের বিরুদ্ধে কেউ সাক্ষ্য দিতে চায় না। অনেক সময় আদালতকে বিচারের সময় বেঁধে দেওয়া হয়। পুলিশ সাক্ষী হাজির না করলেও নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে রায় ঘোষণা করতে বাধ্য হন আদালত। তাই রায় ঘোষণার সময় যে সমস্ত সাক্ষ্য-প্রমাণ থাকে, তার ভিত্তিতেই আদালত রায় প্রদান করেন। এক্ষেত্রে অভিযোগ প্রমাণ না হলে আদালত খালাস প্রদান করেন।