স্টাফ রিপোর্টার: ঢাকা মহানগর উত্তর যুবলীগেরসহ সভাপতি, ঢাকা উত্তর সিটি কর্পোরেশনের ১৮ নম্বর ওয়ার্ড কাউন্সিলর জাকির হোসেন বাবুলের বিরুদ্ধে জুয়া, জমিদখল, চাঁদাবাজী, টেন্ডারবাজি, কড়াইল বস্তিতে অবৈধভাবে গ্যাস সংযোগ প্রদান সহ বিভিন্ন ধরনের সন্ত্রাসী কর্মকান্ডের মাধ্যমে জনমনে ভীতিপ্রদর্শনের অভিযোগ পাওয়া গেছে। বাবুল ঢাকা মহানগর উত্তরের যুবলীগের সহ সভাপতি ও ওয়ার্ড কাউন্সিলর হওয়ার সুবাদে স্থানীয় থানা পুলিশকে বোতল বন্দি করে এলাকায় ত্রাসের রাজত্ব কায়েম করেছে। পান থেকে চুন খসলেই যে কারোর উপর চালায় নির্যাতনের ষ্টীমরোলার। তার বিরুদ্ধে কেউ প্রতিবাদ করতে সাহস পায় না। গুলশান, বাড়িধারা, শাহাদাতপুর, নতুন বাজার, নর্দ্দা ও কালাচাঁদপুর আশপাশের এলাকায় এখন সে ‘অঘোষিত মহারাজা। তার কথার বাইরে গিয়ে পুলিশও কোন কাজ করে না। তার কথাই যেন ঐ এলাকার আইনকানুন। ফুটপাতের দোকান থেকে শুরু করে বড় বড় ব্যবসা প্রতিষ্ঠান সহ সবখানেই চলে তার চাঁদাবাজি। চলাফেরা করেন সশস্ত্র ক্যাডার বাহিনী নিয়ে। সহ-সভাপতি ও কাউন্সিলর পদ দুটিকে সাইনবোর্ড বানিয়ে ক্ষমতার অপব্যবহার করে নিরবে হাতিয়ে নিচ্ছেন কোটি কোটি টাকা। দুর্নীতির বিরুদ্ধে প্রধানমন্ত্রীর শুদ্ধি অভিযান শুরু হওয়ার পর থেকে স্থানীয় এলাকাবাসী তার অপকর্মের বিরুদ্ধে মুখ খুলতে শুরু করেছে।
অনুসন্ধানে জানা গেছে, বাবুল কলেজ জীবন থেকেই সশস্ত্র ক্যাডার পরিবেষ্টিত হয়ে চলাফেরা করেন । বিএনপির শীর্ষ নেতাদের সঙ্গে রয়েছে রাতের সম্পর্ক। দিনে আওয়ামীলীগ আর রাতের বেলা বিএনপি। স্থানীয় আওয়ামীলের ত্যাগীদের বাদ দিয়ে বিএনপি-জামায়াতের লোকজন নিয়ে গড়ে তুলেছেন তার বিশেষ বাহিনী।
তার এই বাহিনীর ক্যাডারদের অনেকের নামেই খুন, ধর্ষণ, চাদাঁবাজী ও মাদক ব্যবসা সহ নানা অপকর্মের একাদিক মামলা রয়েছে। শুরু দিকে আওয়ামী যুব লীগের সাবেক এক সভাপতির ছত্রছায়ায় বাবুল কালাচাঁদপুর বাড়িধারা, গুলশান এলাকার একক নিয়ন্ত্রণ নেয়। এরপর থেকে তাকে আর পিছন ফিরে আর তাকাতে হয়নি। গড়ে তুলেছেন সম্পদের বিশাল পাহাড়। যা নিয়ে দুদকের অনুসন্ধান চলমান রয়েছে।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছু স্থানীয় বাসিন্দাদের মধ্যে অনেকেই বলেন, ১৮ নম্বর ওয়ার্ডে কোন বাড়ি করতে হলে আগেই কাউন্সিলর বাবুল বাহিনীকে বড় অঙ্কের টাকা চাঁদা দিতে হয়। চাঁদার টাকা দিয়ে তার ‘ক্লিয়ারেন্স’ নিয়ে বাড়ি কাজে হাত দিতে হয়। নইলে বাড়ি তৈরি করা অসম্ভব। কেউ বাড়ী কেনাবেচা করলে তাকে নিরবে ২০% চাঁদা দিতে হয়। অর্থাৎ ১ কোটি টাকায় বাড়ী ক্রয় বা বিক্রয় করলে তাকে ২০ লাখ টাকা চাঁদা দিতে হবে।
সুত্র জানান, কড়াইল বস্তিবাসীরা গ্যাস বিল ঠিকই পরিশোধ করে। তবে তা সরকারের কোষাগারে জমা পড়ে না। আর এই বস্তিতে অবৈধভাবে গ্যাস সংযোগ প্রদান করে ঢাকা উত্তর-দক্ষিনের ৮ জন কাউন্সিলর সহ অন্তত অর্ধশতাধিক প্রভাবশালী নেতা মাসে কোটি কোটি টাকা গ্যাস বিল বাবদ মাসোয়ারা আদায় করেন। তাদের মধ্যে কাউন্সিলর জাকির হোসেন বাবুল অন্যতম। কড়াইল বস্তির একটি অংশের অবৈধ গ্যাস বিল হতে সে লাখ লাখ টাকা মাসিক বাটোয়ারা পেয়ে থাকেন।
অনুসন্ধনে আরো জানা গেছে, নর্দ্দা, নতুন বাজার বাস স্ট্যান্ড ও তার নিয়ন্ত্রতিত এলাকা থেকে বাবুল ক্যাডার বাহিনীর আয় প্রতিদিন প্রায় ২ লাখ টাকা চাঁদা আদায় করেন। বাড়িধারা ১২নং গেটের কালাচাঁদপুর ক্লাবে জুয়া নিয়ন্ত্রণ করে বাবুল বাহিনী। জুয়ায় একজন জিতলেও হেরে যায় দশজন। যার কারনে বাবুলে পকেট ফান্ডে জমা পড়ে লাখ লাখ টাকা। তাছাড়া জুয়ার পাশাপাশি তার ক্যাডারা মাদক ব্যবসাও চালায় বুক ফুলিয়ে।
স্থানীয় একাধিক আওয়ামী লীগ নেতা আক্ষেপ করে জানান, কাউন্সিলর বাবুলের কাছে আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীদের কোনো জায়গাই নেই, তিনি শুধু ক্যাডার বাহিনীর মাধ্যমেই তার সাম্রাজ্যের রাজত্ব করতে চান। তার সঙ্গের বেশিরভাগ লোকই একসময় বিএনপির ক্যাডার ছিল। খোলস পাল্টিয়ে এখন তারা আওয়ামী লীগ।
আওয়ামী লীগের নেতারা আরো জানান, বাবুল তার সন্ত্রাসী বাহিনীর কর্মকা- পরিচালনা করে কালাচাঁদপুর বালুর মাঠকেন্দ্রিক। বালুর মাঠের পাশে একটি ভবনে তার বাহিনীর সদস্যরা নিয়মিত আড্ডা দেয়। ওই সময় বাবুল সশস্ত্র ক্যাডার পরিবেষ্টিত থাকেন। কেউ কেউ বলেন, বাবুলের লাইসেন্স করা অস্ত্রের পাশাপাশি তার কাছে বিপুল পরিমান অবৈধ অস্ত্রও রয়েছে। যা দিয়ে সে এলাকা ভয়ে রাজত্ব কায়েম করেছে।
এ ব্যাপারে বাবুলের কাছে জানতে চাইলে তিনি মোবাইলে জানান, আমি ১৮ নং ওয়ার্ড কমিশনার। আমার নামে এমন অভিযোগ থাকতেই পারে। আপনি কালাচাঁদপুর ক্লাবে গিয়ে দেখেন জুয়া চলে কি না। অস্ত্রর বিষয় জানতে চাইলে, তিনি জানান, আমার কাছে বৈধ অস্ত্র আছে কিন্তু আমার ছেলেদের কাছে কোন অস্ত্র নেই।