রাজারবাগী পীরের অলৌকিক মামলার জাল! পর্ব-১

- আপডেট সময় : ১২:০০:১৬ অপরাহ্ন, রবিবার, ২৭ অক্টোবর ২০১৯ ১৪২ বার পড়া হয়েছে

ইসমাইল হোসেন টিটু:
প্রথমে একটি মামলায় গ্রেপ্তার হলে তারপর আর রক্ষা নেই। এক জামিন নিলে অন্য মামলা কড়া নাড়ে। আসামি নিজেও জানেনা তার কি অপরাধ, কোন অপরধে তার জেল জীবন। শুধু একটির পর একটি মামালায় তার আমলনামা ভারি হতে থাকে। রাজারবাগের পীরের এমন অলৌকিক মামলার মুজেজার কথা শুনলে আপনি অবাক না হয়ে যাবেন কোই! পীরের এই মামলাবাজির সংবাদ উঠে এসেছে সকালের সংবাদের অনুসন্ধানী প্রতিবেদকের অনুসন্ধানে।
সামান্য শত্রুতায় দেওয়া হয় একটি মামলা, এরপর বাড়তে থাকে মামলার সংখ্যা। অপেক্ষার প্রহর গুনতে হয় দীর্ঘ থেকে দীর্ঘ। কেউ একমাস, কেউ বছরের পর বছর, আবার কারো বা যুগ পেরিয়ে যাচ্ছে জেলের ঘানি টানতে টানতে। একটি দুটি কিংবা দশ বিষটি নয়, পঞ্চাশ-ষাটটি সাজানো মামলাও আছে কারো কারো বিরুদ্ধে।
রাজধানীর শেওড়াপাড়ার আকরামুল আহসান কাঞ্চন ৪৬টি মামলার আসামী। দেশের খুব কম থানাই আছে যেখানে তার বিরুদ্ধে মামলা হয়নি। যেখানে মামলার শুনানী সেখানকার জেল খানাই তার আবাস স’ল।
খুলনার আদালতের কাঠগড়া থেকে কারাগারে যাওয়ার পথে সাংবাদিকের প্রশ্নের জবাবে কাঞ্চন দাবী করেন, এমন কোনো অভিযোগ বাকী নেই তার বিরুদ্ধে প্রয়োগ করা হয়নি। হত্যা, ধর্ষণ, চুরি- ছিনতাই-চাঁদাবাজি ও মানবপাচারের মতো ভয়ংকর অপরাধের সাজানো মামলার আসামী বানানো হয়েছে তাকে।
তিনি জানান, একটি মামালায় জামিন নিলে আরেকটি মামলা হাজির হয় তার বিরুদ্ধে। এভাবেই গত ১৫ বছরে মামলার পাহাড় জমেছে, মুক্তির প্রহর যেনো শেষ হতে চায় না। কাঞ্চনের দাবী মিথ্যা প্রমাণ হওয়ায় অধিকাংশ মামলাতেই খালাস পেয়েছেন তিনি। আর এসব মামলা করেছেন রাজারবাগের কথিত পীর দিলৱুর রহমান তার সহযোগী সাকেরুল কবির, মফিজুল ইসলাম, আনিসুর রহমান, রেজা আহমেদ শেখর, ইকবাল এমন মিথ্যা ও বানোয়াট মামলা সাজান।
শান্তিবাগের ১০৭ নম্বও বাড়িটি লিখে নেওয়ার পর নারায়নগঞ্জের পিলকুনীর জমি আর বাণিজ্যিক গ্যাসের লাইন লিখে না দেয়ায় কাঞ্চনের বিরুদ্ধে একের পর এক মামলা দিচ্ছে কথিত পীর চক্র ।
দুধের শিশুটিকে বুকে নিয়ে মামলার জালে জড়িয়েছে হতভাগ্য পিতা, সেই শিশুটি এখন কিশোরে পা দিলেও
মুক্তি পায়নি ওই বাবা। তার যে একজন বাবা আছে, সেটিও বিশ্বাস করতে চায় না ওই শিশু। কারণ
যখন থেকে ওই শিশুটি বুঝতে শিখেছে, বাবা ডাকতে পেরেছে তখন থেকেই তো তার বাবা কারাগারের অন্ধকার প্রকোষ্ঠে। মিলন হয়নি বাবা ছেলের।
কাঞ্চনের স্ত্রী তামান্না আকরামের বলেন, আঠারো বছরের বিবাহিত জীবনের মাত্র ৮ বছর স্বামীর সাথে সংসার করতে পেরেছেন, বাকী দশ বছর কারাগারেই কেটেছে কাঞ্চন । বাবা চিনেনা সন্তানকে, সন্তান চিনেনা বাবাকে। বহু জায়গায় গিয়েছি, সাজানো মামলার দায় থেকে তবুও মুক্তি মেলেনি। তামান্নার অভিযোগ তার শ্বাশুরি কমরেন নেহারকে হাতে নিয়ে রাজারবাগের পীর দিললুর রহমানচক্র এই মামলা সাজায়।
কাঞ্চনের স্ত্রী তামান্না আকরামের গণমাধ্যমকে জানান ৪৬টি মিথ্যা হয়রানিমূলক মামলা থেকে, ২৯টি মামলা নিষ্পত্তি পেয়েছেন। ১৬ টি মামলা খালাস হওয়ার পথে। বর্তমানে তার স্বামী যশোর কারাগারে রয়েছেন।
এ বিষয়ে পীর সাহেবের বক্তব্য জানতে চাইলে রাজারবাগ পীরের মুখপাত্র মাহবুব আলম মুঠোফোনে বলেন, এইসব অভিযোগ মিথ্যা কেউ যদি তার প্রমাণ করতে পারে তাকে ১০০ কোটি টাকা ক্ষতিপূরণ দেওয়া হবে।
এবং রাষ্ট্রের বিভিন্ন গণ্যমান্য ব্যক্তি এবং প্রশাসনের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা পরিচয় দিতে থাকেন। আপনাদের বিরুদ্ধে এত অভিযোগ কেন জানতে চাইলে তিনি ভিন্ন সুরে অবলম্বন চেষ্টা করেন।