ঢাকা ০৬:০৬ অপরাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ
সংবাদ শিরোনাম :
Logo মানসম্পন্ন শিক্ষা নিশ্চিত করা আমাদের অঙ্গীকারঃ ড. তৌফিক রহমান চৌধুরী  Logo মেট্রোপলিটন ইউনিভার্সিটির নতুন বাসের উদ্বোধন Logo মানসম্পন্ন শিক্ষা নিশ্চিত করতে শিক্ষকদের ভূমিকা অগ্রগণ্য: ভিসি প্রফেসর ড. মোহাম্মদ জহিরুল হক Logo মঙ্গল শোভাযাত্রা – তাসফিয়া ফারহানা ঐশী Logo সাস্টিয়ান ব্রাহ্মণবাড়িয়া এর ইফতার মাহফিল সম্পন্ন Logo কুবির চট্টগ্রাম স্টুডেন্টস ওয়েলফেয়ার এসোসিয়েশনের ইফতার ও পূর্নমিলনী Logo অধ্যাপক জহীর উদ্দিন আহমেদের মায়ের মৃত্যুতে শাবির মহান মুক্তিযুদ্ধের চেতনা ও মুক্ত চিন্তা চর্চায় ঐক্যবদ্ধ শিক্ষকবৃন্দ পরিষদের শোক প্রকাশ Logo শাবির অধ্যাপক জহীর উদ্দিনের মায়ের মৃত্যুতে উপাচার্যের শোক প্রকাশ Logo বিশ কোটিতে গণপূর্তের প্রধান হওয়ার মিশনে ‘ছাত্রদল ক্যাডার প্রকৌশলী’! Logo দূর্নীতির রাক্ষস ফায়ার সার্ভিসের এডি আনোয়ার!




মাদ্রাসাছাত্রী নুসরাত হত্যা মামলার রায় আজ, অপেক্ষায় সারাদেশ 

প্রতিনিধির নাম
  • আপডেট সময় : ১০:৫৭:০৬ পূর্বাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ২৪ অক্টোবর ২০১৯ ১১৮ বার পড়া হয়েছে

ফেনী ও সোনাগাজী প্রতিনিধি

সোনাগাজীর মাদ্রাসাছাত্রী নুসরাত জাহান রাফি হত্যা মামলার রায় আজ ঘোষণা করা হবে। ফেনীর নারী ও শিশু নির্যাতন ট্রাইব্যুনালের বিচারক মামুনুর রশিদ রায় ঘোষণা করবেন। রাষ্ট্রপক্ষের যুক্তিতর্ক উপস্থাপন ও বাদীপক্ষের খণ্ডন শেষে রায় ঘোষণার দিন ২৪ অক্টোবর (আজ) ধার্য করা হয়। রায়কে ঘিরে ফেনী ও সোনাগাজীর বিভিন্ন স্থানে বাড়তি নিরাপত্তার ব্যবস্থা নেয়া হয়েছে।

এ মামলায় অপরাধ প্রমাণ হয়েছে দাবি করে আসামিদের ‘সর্বোচ্চ শাস্তি’ দাবি করেছেন রাষ্ট্র ও বাদীপক্ষের আইনজীবীরা। বাদীপক্ষের আইনজীবী অ্যাডভোকেট শাহজাহান সাজু বলেন, আসামিরা যে রাফির গায়ে কেরোসিন ঢেলে আগুনে পুড়িয়ে হত্যা করেছে তা আদালতে সন্দেহাতীতভাবে প্রমাণ করতে সক্ষম হয়েছি। আশা করছি, আসামিরা সর্বোচ্চ শাস্তি পাবে। মামলার রায় বাংলাদেশে উদাহরণ হিসেবে বিবেচিত হবে।

তবে আসামিপক্ষের আইনজীবী ফেনী বারের সিনিয়র অ্যাডভোকেট গিয়াস উদ্দিন নান্নু ও কামরুল হাসান দাবি করেছেন, ন্যায়বিচারে আসামিরা খালাস পাবেন। কারণ রাষ্ট্রপক্ষ তাদের মামলার কিছুই প্রমাণ করতে পারেনি। ফেনীর মানবাধিকার নেতা ও আন্তর্জাতিক অপরাধ বিশ্লেষক অ্যাডভোকেট জাহাঙ্গীর আলম নান্টু যুগান্তরকে বলেন, এ মামলায় এমন একটা রায় চাই, যে রায় উদাহরণ হয়ে থাকবে। এর ফল হিসেবে নারী নির্যাতনের বিরুদ্ধে সামাজিক আন্দোলন গড়ে উঠবে।

সোনাগাজী ইসলামিয়া ফাজিল মাদ্রাসার আলিম পরীক্ষার্থী ছিলেন নুসরাত জাহান রাফি। মাদ্রাসার অধ্যক্ষ সিরাজউদ্দৌলা নিজ কক্ষে ডেকে নিয়ে তাকে যৌন হয়রানি করেন। এ ঘটনায় রাফির মা শিরিন আক্তার বাদী হয়ে ২৭ মার্চ সোনাগাজী থানায় মামলা দায়ের করেন। এরপর অধ্যক্ষকে গ্রেফতার করে পুলিশ। পরে মামলা তুলে নিতে বিভিন্নভাবে রাফির পরিবারকে হুমকি দেয়া হয়।

৬ এপ্রিল সকাল ৯টার দিকে আলিম পর্যায়ের আরবি প্রথম পত্রের পরীক্ষা দিতে ওই মাদ্রাসার কেন্দ্রে যায় রাফি। এ সময় বোরকা পরিহিত কয়েকজন তাকে পাশের বহুতল ভবনের ছাদে ডেকে নিয়ে অধ্যক্ষের বিরুদ্ধে মামলা তুলে নিতে চাপ দেয়। রাজি না হলে রাফির গায়ে কেরোসিন ঢেলে আগুন দেয় তারা। এতে রাফির পুরো শরীর দগ্ধ হয়। ১০ এপ্রিল রাত সাড়ে ৯টার দিকে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের বার্ন ইউনিটে চিকিৎসাধীন অবস্থায় সে মারা যায়। এ ঘটনায় নুসরাতের বড় ভাই বাদী হয়ে ৮ এপ্রিল সোনাগাজী মডেল থানায় মামলা করেন।

রাফি হত্যা মামলায় পুলিশ ও পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশন (পিবিআই) অধ্যক্ষ সিরাজউদ্দৌলাসহ ২১ জনকে বিভিন্ন স্থান থেকে গ্রেফতার করে। পরে ২৯ মে ১৬ জনকে আসামি করে ৮০৮ পৃষ্ঠার অভিযোগপত্র দাখিল করে পিবিআই।

অভিযোগপত্রে সোনাগাজী ইসলামিয়া সিনিয়র ফাজিল মাদ্রাসার অধ্যক্ষ সিরাজউদ্দৌলা, নূর উদ্দিন, শাহাদাত হোসেন শামীম, সোনাগাজী পৌরসভার কাউন্সিলর মাকসুদ আলম, সাইফুর রহমান মোহাম্মদ জোবায়ের, জাবেদ হোসেন ওরফে সাখাওয়াত হোসেন জাবেদ, হাফেজ আবদুল কাদের, আবছার উদ্দিন, কামরুন নাহার মনি, উম্মে সুলতানা ওরফে পপি ওরফে তুহিন ওরফে শম্পা ওরফে চম্পা, আবদুর রহিম শরীফ, ইফতেখার উদ্দিন রানা, ইমরান হোসেন ওরফে মামুন, মোহাম্মদ শামীম, মাদ্রাসার গভর্নিং বডির সহসভাপতি রুহুল আমীন ও মহিউদ্দিন শাকিলের নাম উল্লেখ করে সর্বোচ্চ শান্তি দাবি করেন মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা ও ফেনীর পিবিআই পরিদর্শক মো. শাহ আলম।

চার্জশিটভুক্ত ১৬ আসামির মধ্যে ১২ জন আদালতে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দিয়েছে। ৩০ মে মামলাটি ফেনীর নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনালে স্থানান্তর করা হয়। ১০ জুন আদালত মামলাটি আমলে নিলে শুনানি শুরু হয়। ২০ জুন অভিযুক্ত ১৬ জনের বিরুদ্ধে অভিযোগ গঠন করেন বিচারিক আদালত। ২৭ ও ৩০ জুন মামলার বাদী মাহমুদুল হাসান নোমানকে জেরার মধ্য দিয়ে বিচারকাজ শুরু হয়। এরপর ৯২ সাক্ষীর মধ্যে ৮৭ জন সাক্ষ্য দেন আদালতে।

পিবিআইর শাহ আলম বলেন, রায়কে কেন্দ্র করে আদালত প্রাঙ্গণে নিরাপত্তা ব্যবস্থা জোরদার করা হবে। অভিযুক্ত ১৬ আসামিকে আদালতে আনা হবে।

ন্যায়বিচারের আশা নুসরাতের পরিবার : রায়কে সামনে রেখে রাফির মা শিরিন আক্তার মেয়ের খুনিদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি কামনা করছেন। বলেছেন, আমার একমাত্র মেয়েকে যেভাবে হাত-পা বেঁধে পুড়িয়ে হত্যা করা হয়েছে, অভিযুক্তদের যেন তেমন ভাবেই কঠিন সাজা দেয়া হয়।

মেয়ের মৃত্যুর সেই দুঃসহ স্মৃতি এক মুহূর্তের জন্যও ভুলতে পারেননি জানিয়ে তিনি বলেন, ঘুরেফিরে চোখের সামনে ভেসে ওঠে ঝলসে যাওয়া রাফির সেই বীভৎস ছবি। মেয়ের শরীরের পোড়া গন্ধ এখনও নাকে এসে লাগে। ঘুমাতেও পারি না। রাতে রাফির মা-মা ডাকে ঘুম ভেঙে যায়। তারপর ওকে খুঁজতে থাকি।

বুধবার দুপুরে সোনাগাজী পৌর এলাকার উত্তর চরচান্দিয়া গ্রামে নুসরাতের বাড়িতে শিরিন আক্তার বলেন, সেই ঘটনা সারাক্ষণ মনে ভাসে। মানসিকভাবে অসুস্থ হয়ে পড়েছি। চলাফেরা করতে পারি না।

তিনি বলেন, আমার একমাত্র মেয়েকে ঘাতকরা যেভাবে হাত-পা বেঁধে পুড়িয়ে হত্যা করেছে, তেমন কঠিন সাজা যেন দেয়া হয় অভিযুক্ত প্রত্যেক আসামিকে।

রাফির ভাই ও মামলার বাদী মাহমুদুল হাসান নোমান বলেন, রাফির কক্ষে তার কাপড়-চোপড়, বইখাতা, আসবাবপত্র সবই আছে। শুধু নেই রাফি। ওই কক্ষে দিনের বেশিরভাগ সময় কাটান মা।

তিনি বলেন, আমরা দোষীদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি চাই। দোষীরা দৃষ্টান্তমূলক সাজা পেলে কেউ এ ধরনের ঘটনা ঘটাতে সাহস পাবে না।

মামলায় লড়তে কোনো টাকা লাগেনি রাফির পরিবারের : কোনো রকম পারিশ্রমিক ছাড়াই এ মামলায় আইনি সহায়তা দিয়েছেন অ্যাডভোকেট হাফেজ আহাম্মদ, অ্যাডভোকেট আকরামুজ্জামান ও অ্যাডভোকেট শাহজাহান সাজুসহ বেশ কয়েকজন আইনজীবী। অ্যাডভোকেট শাহজাহান সাজু বলেন, ২৭ মার্চ নুসরাতের শ্লীলতাহানির মামলাটি পরিচালনা করি। নুসরাত মারা যাওয়ার পর ১০ এপ্রিল থেকে এ মামলার সঙ্গে সম্পৃক্ত হই।

সামাজিক দায়বদ্ধতা থেকে আসামিদের সর্বোচ্চ দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি নিশ্চিত করার জন্য আইনি লড়াই করেছি উল্লেখ করে তিনি বলেন, আমারও তিনটা মেয়ে আছে, আমার মেয়েরাও লেখাপড়া করতে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে যায়। আর কোনো মেয়েকে যাতে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে গিয়ে এমন নির্মমতার শিকার হতে না হয় তার জন্য বিনা পারিশ্রমিকে নিরলসভাবে কাজ করছি।

দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবিতে নান্দাইলে মানববন্ধন : নান্দাইল (ময়মনসিংহ) প্রতিনিধি জানান, রাফি হত্যাকারীদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবিতে বুধবার নান্দাইল উপজেলা সদরে মানববন্ধন করেছে সমাজ রূপান্তর সাংস্কৃতিক সংঘ নামে একটি সংগঠন। সংগঠনের আহ্বায়ক আবদুল হান্নান মিয়ার সভাপতিত্বে মানববন্ধনে আজহারুল ইসলাম খোকন, আরিফ খান, মনোয়ার হোসেন মাস্টার, আবদুল হান্নান প্রমুখ বক্তব্য দেন।

নিউজটি শেয়ার করুন

আপনার মন্তব্য

Your email address will not be published. Required fields are marked *

আপনার ইমেইল এবং অন্যান্য তথ্য সংরক্ষন করুন

ট্যাগস :




মাদ্রাসাছাত্রী নুসরাত হত্যা মামলার রায় আজ, অপেক্ষায় সারাদেশ 

আপডেট সময় : ১০:৫৭:০৬ পূর্বাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ২৪ অক্টোবর ২০১৯

ফেনী ও সোনাগাজী প্রতিনিধি

সোনাগাজীর মাদ্রাসাছাত্রী নুসরাত জাহান রাফি হত্যা মামলার রায় আজ ঘোষণা করা হবে। ফেনীর নারী ও শিশু নির্যাতন ট্রাইব্যুনালের বিচারক মামুনুর রশিদ রায় ঘোষণা করবেন। রাষ্ট্রপক্ষের যুক্তিতর্ক উপস্থাপন ও বাদীপক্ষের খণ্ডন শেষে রায় ঘোষণার দিন ২৪ অক্টোবর (আজ) ধার্য করা হয়। রায়কে ঘিরে ফেনী ও সোনাগাজীর বিভিন্ন স্থানে বাড়তি নিরাপত্তার ব্যবস্থা নেয়া হয়েছে।

এ মামলায় অপরাধ প্রমাণ হয়েছে দাবি করে আসামিদের ‘সর্বোচ্চ শাস্তি’ দাবি করেছেন রাষ্ট্র ও বাদীপক্ষের আইনজীবীরা। বাদীপক্ষের আইনজীবী অ্যাডভোকেট শাহজাহান সাজু বলেন, আসামিরা যে রাফির গায়ে কেরোসিন ঢেলে আগুনে পুড়িয়ে হত্যা করেছে তা আদালতে সন্দেহাতীতভাবে প্রমাণ করতে সক্ষম হয়েছি। আশা করছি, আসামিরা সর্বোচ্চ শাস্তি পাবে। মামলার রায় বাংলাদেশে উদাহরণ হিসেবে বিবেচিত হবে।

তবে আসামিপক্ষের আইনজীবী ফেনী বারের সিনিয়র অ্যাডভোকেট গিয়াস উদ্দিন নান্নু ও কামরুল হাসান দাবি করেছেন, ন্যায়বিচারে আসামিরা খালাস পাবেন। কারণ রাষ্ট্রপক্ষ তাদের মামলার কিছুই প্রমাণ করতে পারেনি। ফেনীর মানবাধিকার নেতা ও আন্তর্জাতিক অপরাধ বিশ্লেষক অ্যাডভোকেট জাহাঙ্গীর আলম নান্টু যুগান্তরকে বলেন, এ মামলায় এমন একটা রায় চাই, যে রায় উদাহরণ হয়ে থাকবে। এর ফল হিসেবে নারী নির্যাতনের বিরুদ্ধে সামাজিক আন্দোলন গড়ে উঠবে।

সোনাগাজী ইসলামিয়া ফাজিল মাদ্রাসার আলিম পরীক্ষার্থী ছিলেন নুসরাত জাহান রাফি। মাদ্রাসার অধ্যক্ষ সিরাজউদ্দৌলা নিজ কক্ষে ডেকে নিয়ে তাকে যৌন হয়রানি করেন। এ ঘটনায় রাফির মা শিরিন আক্তার বাদী হয়ে ২৭ মার্চ সোনাগাজী থানায় মামলা দায়ের করেন। এরপর অধ্যক্ষকে গ্রেফতার করে পুলিশ। পরে মামলা তুলে নিতে বিভিন্নভাবে রাফির পরিবারকে হুমকি দেয়া হয়।

৬ এপ্রিল সকাল ৯টার দিকে আলিম পর্যায়ের আরবি প্রথম পত্রের পরীক্ষা দিতে ওই মাদ্রাসার কেন্দ্রে যায় রাফি। এ সময় বোরকা পরিহিত কয়েকজন তাকে পাশের বহুতল ভবনের ছাদে ডেকে নিয়ে অধ্যক্ষের বিরুদ্ধে মামলা তুলে নিতে চাপ দেয়। রাজি না হলে রাফির গায়ে কেরোসিন ঢেলে আগুন দেয় তারা। এতে রাফির পুরো শরীর দগ্ধ হয়। ১০ এপ্রিল রাত সাড়ে ৯টার দিকে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের বার্ন ইউনিটে চিকিৎসাধীন অবস্থায় সে মারা যায়। এ ঘটনায় নুসরাতের বড় ভাই বাদী হয়ে ৮ এপ্রিল সোনাগাজী মডেল থানায় মামলা করেন।

রাফি হত্যা মামলায় পুলিশ ও পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশন (পিবিআই) অধ্যক্ষ সিরাজউদ্দৌলাসহ ২১ জনকে বিভিন্ন স্থান থেকে গ্রেফতার করে। পরে ২৯ মে ১৬ জনকে আসামি করে ৮০৮ পৃষ্ঠার অভিযোগপত্র দাখিল করে পিবিআই।

অভিযোগপত্রে সোনাগাজী ইসলামিয়া সিনিয়র ফাজিল মাদ্রাসার অধ্যক্ষ সিরাজউদ্দৌলা, নূর উদ্দিন, শাহাদাত হোসেন শামীম, সোনাগাজী পৌরসভার কাউন্সিলর মাকসুদ আলম, সাইফুর রহমান মোহাম্মদ জোবায়ের, জাবেদ হোসেন ওরফে সাখাওয়াত হোসেন জাবেদ, হাফেজ আবদুল কাদের, আবছার উদ্দিন, কামরুন নাহার মনি, উম্মে সুলতানা ওরফে পপি ওরফে তুহিন ওরফে শম্পা ওরফে চম্পা, আবদুর রহিম শরীফ, ইফতেখার উদ্দিন রানা, ইমরান হোসেন ওরফে মামুন, মোহাম্মদ শামীম, মাদ্রাসার গভর্নিং বডির সহসভাপতি রুহুল আমীন ও মহিউদ্দিন শাকিলের নাম উল্লেখ করে সর্বোচ্চ শান্তি দাবি করেন মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা ও ফেনীর পিবিআই পরিদর্শক মো. শাহ আলম।

চার্জশিটভুক্ত ১৬ আসামির মধ্যে ১২ জন আদালতে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দিয়েছে। ৩০ মে মামলাটি ফেনীর নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনালে স্থানান্তর করা হয়। ১০ জুন আদালত মামলাটি আমলে নিলে শুনানি শুরু হয়। ২০ জুন অভিযুক্ত ১৬ জনের বিরুদ্ধে অভিযোগ গঠন করেন বিচারিক আদালত। ২৭ ও ৩০ জুন মামলার বাদী মাহমুদুল হাসান নোমানকে জেরার মধ্য দিয়ে বিচারকাজ শুরু হয়। এরপর ৯২ সাক্ষীর মধ্যে ৮৭ জন সাক্ষ্য দেন আদালতে।

পিবিআইর শাহ আলম বলেন, রায়কে কেন্দ্র করে আদালত প্রাঙ্গণে নিরাপত্তা ব্যবস্থা জোরদার করা হবে। অভিযুক্ত ১৬ আসামিকে আদালতে আনা হবে।

ন্যায়বিচারের আশা নুসরাতের পরিবার : রায়কে সামনে রেখে রাফির মা শিরিন আক্তার মেয়ের খুনিদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি কামনা করছেন। বলেছেন, আমার একমাত্র মেয়েকে যেভাবে হাত-পা বেঁধে পুড়িয়ে হত্যা করা হয়েছে, অভিযুক্তদের যেন তেমন ভাবেই কঠিন সাজা দেয়া হয়।

মেয়ের মৃত্যুর সেই দুঃসহ স্মৃতি এক মুহূর্তের জন্যও ভুলতে পারেননি জানিয়ে তিনি বলেন, ঘুরেফিরে চোখের সামনে ভেসে ওঠে ঝলসে যাওয়া রাফির সেই বীভৎস ছবি। মেয়ের শরীরের পোড়া গন্ধ এখনও নাকে এসে লাগে। ঘুমাতেও পারি না। রাতে রাফির মা-মা ডাকে ঘুম ভেঙে যায়। তারপর ওকে খুঁজতে থাকি।

বুধবার দুপুরে সোনাগাজী পৌর এলাকার উত্তর চরচান্দিয়া গ্রামে নুসরাতের বাড়িতে শিরিন আক্তার বলেন, সেই ঘটনা সারাক্ষণ মনে ভাসে। মানসিকভাবে অসুস্থ হয়ে পড়েছি। চলাফেরা করতে পারি না।

তিনি বলেন, আমার একমাত্র মেয়েকে ঘাতকরা যেভাবে হাত-পা বেঁধে পুড়িয়ে হত্যা করেছে, তেমন কঠিন সাজা যেন দেয়া হয় অভিযুক্ত প্রত্যেক আসামিকে।

রাফির ভাই ও মামলার বাদী মাহমুদুল হাসান নোমান বলেন, রাফির কক্ষে তার কাপড়-চোপড়, বইখাতা, আসবাবপত্র সবই আছে। শুধু নেই রাফি। ওই কক্ষে দিনের বেশিরভাগ সময় কাটান মা।

তিনি বলেন, আমরা দোষীদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি চাই। দোষীরা দৃষ্টান্তমূলক সাজা পেলে কেউ এ ধরনের ঘটনা ঘটাতে সাহস পাবে না।

মামলায় লড়তে কোনো টাকা লাগেনি রাফির পরিবারের : কোনো রকম পারিশ্রমিক ছাড়াই এ মামলায় আইনি সহায়তা দিয়েছেন অ্যাডভোকেট হাফেজ আহাম্মদ, অ্যাডভোকেট আকরামুজ্জামান ও অ্যাডভোকেট শাহজাহান সাজুসহ বেশ কয়েকজন আইনজীবী। অ্যাডভোকেট শাহজাহান সাজু বলেন, ২৭ মার্চ নুসরাতের শ্লীলতাহানির মামলাটি পরিচালনা করি। নুসরাত মারা যাওয়ার পর ১০ এপ্রিল থেকে এ মামলার সঙ্গে সম্পৃক্ত হই।

সামাজিক দায়বদ্ধতা থেকে আসামিদের সর্বোচ্চ দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি নিশ্চিত করার জন্য আইনি লড়াই করেছি উল্লেখ করে তিনি বলেন, আমারও তিনটা মেয়ে আছে, আমার মেয়েরাও লেখাপড়া করতে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে যায়। আর কোনো মেয়েকে যাতে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে গিয়ে এমন নির্মমতার শিকার হতে না হয় তার জন্য বিনা পারিশ্রমিকে নিরলসভাবে কাজ করছি।

দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবিতে নান্দাইলে মানববন্ধন : নান্দাইল (ময়মনসিংহ) প্রতিনিধি জানান, রাফি হত্যাকারীদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবিতে বুধবার নান্দাইল উপজেলা সদরে মানববন্ধন করেছে সমাজ রূপান্তর সাংস্কৃতিক সংঘ নামে একটি সংগঠন। সংগঠনের আহ্বায়ক আবদুল হান্নান মিয়ার সভাপতিত্বে মানববন্ধনে আজহারুল ইসলাম খোকন, আরিফ খান, মনোয়ার হোসেন মাস্টার, আবদুল হান্নান প্রমুখ বক্তব্য দেন।