ঢাকা ০৩:০৭ অপরাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ১২ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ২৮ ভাদ্র ১৪৩১ বঙ্গাব্দ
সংবাদ শিরোনাম :
Logo নিবন্ধন অধিদপ্তরের দুর্নীতির সম্রাট সালাম আজাদ! Logo ইন্সপেক্টর রেজায়ে রাব্বীর বিষয়ে বিভ্রান্তি নিরসনে ফায়ার সার্ভিসের বক্তব্য Logo স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে লাটিম ঘুরাচ্ছেন ৬ ‘কুতুব’ Logo ওয়াসা প্রকৌশলী ফকরুলের আমলনামা: অবৈধ সম্পদের সাম্রাজ্য Logo আশা ইউনিভার্সিটির আইন বিভাগে নবীন বরণ অনুষ্ঠিত Logo চাঁদার টাকা না পেয়ে সাংবাদিকের বিরুদ্ধে মিথ্যা মামলা Logo সাংবাদিকদের হত্যা চেষ্টার ঘটনায় চ্যানেল এস এর কর্তৃপক্ষের বিরুদ্ধে মামলা Logo জামিনে মুক্ত রিজেন্টের চেয়ারম্যান সাহেদ Logo স্বাস্থ্য খাতে দুর্নীতির রাঘব বোয়াল বায়ো ট্রেড ধরাছোঁয়ার বাইরে Logo ছাত্র আন্দোলনে গণহত্যায় জড়িত ফায়ার সার্ভিস কর্মকর্তা রাব্বি লাপাত্তা




পরকীয়াতেও ক্ষান্ত হননি ভাই-বোন, অবশেষে বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ হলেন তারা

প্রতিনিধির নাম
  • আপডেট সময় : ১০:৫৬:৫০ পূর্বাহ্ন, সোমবার, ২১ অক্টোবর ২০১৯ ৯১ বার পড়া হয়েছে

জেলা প্রতিনিধি

পরকীয়ায় জড়ানোর পরও ক্ষান্ত হননি একই বাবার ঔরসজাত দুই ভাই-বোন। এবার বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ হয়েছেন তারা। শনিবার জয়পুরহাটের ক্ষেতলালে এই ঘটনা ঘটেছে।

জানা গেছে, উপজেলার তারাকুল গ্রামের বাসিন্দা আব্দুর রশিদের প্রথম স্ত্রীর ছেলে শিজু (৩৫) এবং দ্বিতীয় স্ত্রীর মেয়ে রাজিয়া খাতুন (২৬) নিকা রেজিস্ট্রিমূলে বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ হয়েছেন।

এদিকে ঘটনাটি জানাজানি হলে তাদের বিচারের দাবি করেছেন এলাকাবাসী। যাতে করে আর কেউ এমন ঘটনার পুনরাবৃত্তি না ঘটাতে পারে এজন্য তাদের শাস্তির দাবি করছেন সচেতন মহল। আর এ বিয়ে বৈধ নয় বলে জানিয়েছেন আলেম-ওলামারা।

পরিবারের সদস্য ও স্থানীয়রা জানান, আব্দুর রশিদ প্রথম স্ত্রীকে নিয়ে বগুড়ার শিবগঞ্জ উপজেলার কিচক হরিপুর গ্রামে বসবাস করেছিলেন। তখন তাদের সংসারে ছেলে শিজু জন্ম নেয়। তাদের মধ্যে বিবাহ বিচ্ছেদের পর, আব্দুর রশিদ জয়পুরহাটের ক্ষেতলাল উপজেলার তারাকুল গ্রামের মৃত আব্দুল মজিদের মেয়ে মাহমুদা খাতুনকে দ্বিতীয় বিয়ে করেন। এরপর তাদের সংসারে জন্ম নেয় মেয়ে রাজিয়া খাতুন। ছেলে শিজু ও মেয়ে রাজিয়াকে আব্দুর রশিদ উপযুক্ত বয়সে বিয়েও দেন। তাদের ঘরে ছেলে-মেয়েও রয়েছে। এরই মধ্যে শিজু ও রাজিয়া তাদের বাবার বাড়িতে আসা-যাওয়ার মাঝে পরকীয়ার সম্পর্কে জড়িয়ে পড়েন।

রাজিয়ার মামা আব্দুল হান্নান বিয়ের বিষয়টি নিশ্চিত করে জানান, এর আগে অনৈতিক মেলামেশার কারণে গ্রামবাসী তাদের আটক করে মারপিট দিয়ে ক্ষেতলাল থানায় সোপর্দ করেছিল। সে সময় তারা দুজনেই এমন কাজে আর জড়াবেন না বলে মুচলেকা দেন। তারপরও এমন জঘন্য কর্মকাণ্ডে জড়িয়েছে ওরা।

তাদের বাবা আব্দুর রশিদ বলেন, নিজের জন্ম দেয়া সন্তানরা এমন কর্মকাণ্ডে জড়িয়ে পড়বে তা কোন বাবা-মা সহ্য করতে পারবে না। এমন ঘটনা জানার পর থেকেই আমি আর বাইরে বের হতে পারছি না। এমন ঘটনা শোনার আগে আমার মৃত্যু কেন হলো না।

শনিবার বগুড়ার শিবগঞ্জ উপজেলার ময়দানহাটা ইউনিয়নের কাজী মাসুম বিল্ল্যার অফিসে এই বিয়ে রেজিস্ট্রি হয়। তবে এ ঘটনায় তিনিও বিব্রত। বললেন, ‘এ বিয়ের রেজিস্ট্রি নিয়ে বেশ ঝামেলায় আছি। বিভিন্ন মহল থেকে ফোন আসছেই।’

রাজিয়ার স্বামী পৌর শহরের বিশ্বাসপাড়া এলাকার বাসিন্দা ও জয়পুরহাট পৌরসভার অফিস সহায়ক মজনু হোসেন জানান, ২০০৬ সালে রাজিয়ার সঙ্গে আমার পারিবারিকভাবে বিয়ে হয়। আমাদের নয় (৯) বছরের রিয়াদ হাসান ও সাত (৭) বছরের রাকিবুল হাসান নামে দুইটি ছেলে সন্তান আছে।তারা মাদরাসায় লেখাপড়া করে। ছয় মাস আগে আমি জানতে পারি আমার শ্বশুরের আগের স্ত্রীর মেজ ছেলে শিজুর সঙ্গে রাজিয়ার প্রেমের সম্পর্ক। এরই এক পর্যায়ে সে আমার বাড়ি থেকে শ্বশুর বাড়ি চলে গেলে আমার আত্মীয়-স্বজনদের মাঝেও বিষয়টি জানাজানি হয়। এ নিয়ে ক্ষেতলাল থানায় আমার অনুপস্থিতিতে তারা এ প্রেমের সম্পর্ক রাখবে না বলে মুচলেকা দেয়। পরে সে সংসার করবে না বলে জানালে পারিবারিকভাবে চার মাস আগে আমাদের বিবাহ-বিচ্ছেদ হয়। কিছুদিন পর রাজিয়া তার ভুল স্বীকার করে আবার নতুন করে সংসার করতে চাইলে ছেলেদের কথা চিন্তা করে আবার তাকে বিবাহ করি। বিবাহ করার কিছুদিন পর তো তার ভাইয়ের সঙ্গে পালিয়ে গেছে। আমি তার খোঁজ করতে করতে বগুড়ার শিবগঞ্জ ভাইয়েরপুকুর এলাকায় গিয়ে সেখানকার ইউপি চেয়ারম্যানের মাধ্যমে জানতে পারি শিজু তার বাবা আব্দুর রশিদের নাম পরিবর্তনের মাধ্যমে হাশেম আলী করে নিকাহ্ বিবাহ করেছেন।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক স্থানীয় একটি কামিল মাদরাসার অধ্যক্ষ বলেন, ‘এ বিয়ে বৈধ নয়। যেকোনো বিবাহ রেজিস্ট্রি হলে সরকার ফি পাবে, কিন্তু একই বাবার দুই স্ত্রীর ছেলে-মেয়ের মধ্যে বিবাহ হলে সেটা বৈধ হবে না।’

ক্ষেতলাল উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) আরাফাত হোসেন বলেন, এমন ঘটনা কখনও শুনিনি। তবে এ বিয়ে সামাজিক স্বীকৃতি পাওয়ার কথা নয়।

নিউজটি শেয়ার করুন

আপনার মন্তব্য

Your email address will not be published. Required fields are marked *

আপনার ইমেইল এবং অন্যান্য তথ্য সংরক্ষন করুন

ট্যাগস :




পরকীয়াতেও ক্ষান্ত হননি ভাই-বোন, অবশেষে বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ হলেন তারা

আপডেট সময় : ১০:৫৬:৫০ পূর্বাহ্ন, সোমবার, ২১ অক্টোবর ২০১৯

জেলা প্রতিনিধি

পরকীয়ায় জড়ানোর পরও ক্ষান্ত হননি একই বাবার ঔরসজাত দুই ভাই-বোন। এবার বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ হয়েছেন তারা। শনিবার জয়পুরহাটের ক্ষেতলালে এই ঘটনা ঘটেছে।

জানা গেছে, উপজেলার তারাকুল গ্রামের বাসিন্দা আব্দুর রশিদের প্রথম স্ত্রীর ছেলে শিজু (৩৫) এবং দ্বিতীয় স্ত্রীর মেয়ে রাজিয়া খাতুন (২৬) নিকা রেজিস্ট্রিমূলে বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ হয়েছেন।

এদিকে ঘটনাটি জানাজানি হলে তাদের বিচারের দাবি করেছেন এলাকাবাসী। যাতে করে আর কেউ এমন ঘটনার পুনরাবৃত্তি না ঘটাতে পারে এজন্য তাদের শাস্তির দাবি করছেন সচেতন মহল। আর এ বিয়ে বৈধ নয় বলে জানিয়েছেন আলেম-ওলামারা।

পরিবারের সদস্য ও স্থানীয়রা জানান, আব্দুর রশিদ প্রথম স্ত্রীকে নিয়ে বগুড়ার শিবগঞ্জ উপজেলার কিচক হরিপুর গ্রামে বসবাস করেছিলেন। তখন তাদের সংসারে ছেলে শিজু জন্ম নেয়। তাদের মধ্যে বিবাহ বিচ্ছেদের পর, আব্দুর রশিদ জয়পুরহাটের ক্ষেতলাল উপজেলার তারাকুল গ্রামের মৃত আব্দুল মজিদের মেয়ে মাহমুদা খাতুনকে দ্বিতীয় বিয়ে করেন। এরপর তাদের সংসারে জন্ম নেয় মেয়ে রাজিয়া খাতুন। ছেলে শিজু ও মেয়ে রাজিয়াকে আব্দুর রশিদ উপযুক্ত বয়সে বিয়েও দেন। তাদের ঘরে ছেলে-মেয়েও রয়েছে। এরই মধ্যে শিজু ও রাজিয়া তাদের বাবার বাড়িতে আসা-যাওয়ার মাঝে পরকীয়ার সম্পর্কে জড়িয়ে পড়েন।

রাজিয়ার মামা আব্দুল হান্নান বিয়ের বিষয়টি নিশ্চিত করে জানান, এর আগে অনৈতিক মেলামেশার কারণে গ্রামবাসী তাদের আটক করে মারপিট দিয়ে ক্ষেতলাল থানায় সোপর্দ করেছিল। সে সময় তারা দুজনেই এমন কাজে আর জড়াবেন না বলে মুচলেকা দেন। তারপরও এমন জঘন্য কর্মকাণ্ডে জড়িয়েছে ওরা।

তাদের বাবা আব্দুর রশিদ বলেন, নিজের জন্ম দেয়া সন্তানরা এমন কর্মকাণ্ডে জড়িয়ে পড়বে তা কোন বাবা-মা সহ্য করতে পারবে না। এমন ঘটনা জানার পর থেকেই আমি আর বাইরে বের হতে পারছি না। এমন ঘটনা শোনার আগে আমার মৃত্যু কেন হলো না।

শনিবার বগুড়ার শিবগঞ্জ উপজেলার ময়দানহাটা ইউনিয়নের কাজী মাসুম বিল্ল্যার অফিসে এই বিয়ে রেজিস্ট্রি হয়। তবে এ ঘটনায় তিনিও বিব্রত। বললেন, ‘এ বিয়ের রেজিস্ট্রি নিয়ে বেশ ঝামেলায় আছি। বিভিন্ন মহল থেকে ফোন আসছেই।’

রাজিয়ার স্বামী পৌর শহরের বিশ্বাসপাড়া এলাকার বাসিন্দা ও জয়পুরহাট পৌরসভার অফিস সহায়ক মজনু হোসেন জানান, ২০০৬ সালে রাজিয়ার সঙ্গে আমার পারিবারিকভাবে বিয়ে হয়। আমাদের নয় (৯) বছরের রিয়াদ হাসান ও সাত (৭) বছরের রাকিবুল হাসান নামে দুইটি ছেলে সন্তান আছে।তারা মাদরাসায় লেখাপড়া করে। ছয় মাস আগে আমি জানতে পারি আমার শ্বশুরের আগের স্ত্রীর মেজ ছেলে শিজুর সঙ্গে রাজিয়ার প্রেমের সম্পর্ক। এরই এক পর্যায়ে সে আমার বাড়ি থেকে শ্বশুর বাড়ি চলে গেলে আমার আত্মীয়-স্বজনদের মাঝেও বিষয়টি জানাজানি হয়। এ নিয়ে ক্ষেতলাল থানায় আমার অনুপস্থিতিতে তারা এ প্রেমের সম্পর্ক রাখবে না বলে মুচলেকা দেয়। পরে সে সংসার করবে না বলে জানালে পারিবারিকভাবে চার মাস আগে আমাদের বিবাহ-বিচ্ছেদ হয়। কিছুদিন পর রাজিয়া তার ভুল স্বীকার করে আবার নতুন করে সংসার করতে চাইলে ছেলেদের কথা চিন্তা করে আবার তাকে বিবাহ করি। বিবাহ করার কিছুদিন পর তো তার ভাইয়ের সঙ্গে পালিয়ে গেছে। আমি তার খোঁজ করতে করতে বগুড়ার শিবগঞ্জ ভাইয়েরপুকুর এলাকায় গিয়ে সেখানকার ইউপি চেয়ারম্যানের মাধ্যমে জানতে পারি শিজু তার বাবা আব্দুর রশিদের নাম পরিবর্তনের মাধ্যমে হাশেম আলী করে নিকাহ্ বিবাহ করেছেন।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক স্থানীয় একটি কামিল মাদরাসার অধ্যক্ষ বলেন, ‘এ বিয়ে বৈধ নয়। যেকোনো বিবাহ রেজিস্ট্রি হলে সরকার ফি পাবে, কিন্তু একই বাবার দুই স্ত্রীর ছেলে-মেয়ের মধ্যে বিবাহ হলে সেটা বৈধ হবে না।’

ক্ষেতলাল উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) আরাফাত হোসেন বলেন, এমন ঘটনা কখনও শুনিনি। তবে এ বিয়ে সামাজিক স্বীকৃতি পাওয়ার কথা নয়।