বিনোদন প্রতিবেদকঃ
‘কাঙ্ক্ষিত চরিত্রের’ অভাবে কয়েক বছর ধরে চলচ্চিত্রে অনিয়মিত আটবার জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কাপ্রাপ্ত অভিনয়শিল্পী আনোয়ারা বেগম; মাঝে-মধ্যে দুয়েকটা চলচ্চিত্রে অভিনয়ের বাইরে অসুস্থ স্বামীর শুশ্রুষা করেই সময় কাটছে তার।
ভারত-বাংলাদেশ ফিল্ম অ্যাওয়ার্ডে (বিবিএফএ) আজীবন সম্মাননা পাওয়ায় সম্প্রতি খবরের শিরোনামে এসেছেন দীর্ঘদিন ধরে খবরের আড়ালে থাকা সত্তর বছর পেরোনো এ অভিনয়শিল্পী।
‘কাঙ্ক্ষিত চরিত্র’ না পাওয়ায় বেশ কয়েক বছর ধরেই অভিনয়ের বাইরে রয়েছেন তিনি; মাঝে মধ্যে দুয়েকটা চরিত্রে অভিনয় করলেও কয়েক বছর ধরে গুরুত্বর অসুস্থ স্বামীর শুশ্রুষায় নিভৃতে জীবন কাটছে তার।
এফডিসি কেন্দ্রিক আয়োজনেও আগের মতো উপস্থিতি দেখা মেলে না তার। আগের মতো কেউ খোঁজখবরও নেয় না। তবে সহশিল্পীদের মধ্যে কেউ মারা গেলে সাংবাদিকরা তার খোঁজখবর নেন বলে জানান আনোয়ারা।
খানিকটা রসিকতার সুরে বললেন, “…কেউ মারা গেলে আমার বেশি খোঁজখবর নেয়। বিশেষ করে সাংবাদিক ভাই-বোনেরা আমাকে ভালোবাসেন। যার জন্য উনারা ফোন করে জানতে চান, আমার শরীর কেমন? তখন আমি বলি, মরি নাই। বেঁচে আছি এখনও। ভালোভাবেই বেঁচে আছি আল্লাহর রহমতে।”
বেশ কয়েক বছর আগে তার স্বামী মহিতুল ইসলাম স্ট্রোক করে চিকিৎসাধীন রয়েছেন।
“উনার সেবা করেই আমার সময়গুলো কাটে। এই বিষয়টিই আমার কাছে গুরুত্বপূর্ণ। উনি এখন কথা বলতে পারেন। শুধু হাঁটতে পারেন না। আমি একটা সময় আমার বাচ্চা-স্বামীকে সময় দিতে পারিনি। এখন যদি উনাদের সময় দিলে খুশি থাকেন তাহলে আমিও খুশি থাকি।”
অভিনয়ের আগ্রহ থাকলেও কাঙ্ক্ষিত চরিত্রের অভাবেই তা হয়ে উঠছে না বলে জানালেন আনোয়ারা। “ভালো চরিত্র না পেলে কাজ করতে ইচ্ছা করে। মনমরা হয়ে থাকি, বলি এটা কী চরিত্র! কারণ আমি যখন ছবিতে কাজ করি তখন গুরুত্বপূর্ণ চরিত্রগুলোই করি। আর এখনকার চরিত্রে অভিনয়ের মতো কিছুই থাকে না। যার জন্য আমি কাজ কম করি।”
ষাটের দশকের গোড়ার দিকে কিশোরী বয়সে চলচ্চিত্রে নৃত্যশিল্পী হিসেবে পা ফেলার পর পাঁচ দশকের বেশি দীর্ঘ ক্যারিয়ারে কখনও পার্শ্ব চরিত্রে, কখনও নায়িকার চরিত্রে আবার কখনও মায়ের চরিত্রে অভিনয় করে দর্শকদের হৃদয়ে স্থায়ী আসন করে নিয়েছেন তিনি।
দীর্ঘ ক্যারিয়ারে জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার ছাড়াও অনেক পুরস্কার পেয়েছেন তিনি। এবার বাংলাদেশ ও কলকাতার চলচ্চিত্র নিয়ে প্রথমবারের মতো আয়োজিত ভারত-বাংলাদেশ ফিল্ম অ্যাওয়ার্ডে (বিবিএফএ) বাংলাদেশ থেকে আজীবন সম্মাননা পাচ্ছেন তিনি।
ভারতের ফিল্ম ফেডারেশন অব ইন্ডিয়া ও বাংলাদেশের বসুন্ধরা গ্রুপের যৌথ আয়োজনে সোমবার রাতে রাজধানীর ইন্টারন্যাশনাল কনভেনশন সিটি বসুন্ধরায় সম্মাননা তুলে দেওয়া হবে তাকে। তার সঙ্গে যৌথভাবে আজীবন সম্মাননা পাচ্ছেন কলকাতার অভিনয়শিল্পী রঞ্জিত মল্লিক।
তাৎক্ষণিক প্রতিক্রিয়ায় আনোয়ারা বলেন, “আমি তো কখনও কল্পনাও করতে পারিনি। এতো বড় সম্মাননা দেওয়া হচ্ছে; খুব ভালো লাগছে। এটি সারাজীবন আমার মনে থাকবে।
“আমি এখন যে সম্মানটা পাচ্ছি; মৃত্যুর পরও যেন এই সম্মানটা থাকে। মৃত্যুর আগে যে সম্মান পেয়েছি মৃত্যুর পরও যেন এই সম্মানটা পাই।”
‘আমার মা’ শিরোনামে একটি চলচ্চিত্রে কয়েকবছর আগে অভিনয় করেছিলেন; শিগগিরই ছবিটি মুক্তি পাবে বলে আশা প্রকাশ করলেন তিনি।