আবরারের দাদার কান্না যেন থামছেই না
- আপডেট সময় : ০৩:৪০:০৯ অপরাহ্ন, শনিবার, ১২ অক্টোবর ২০১৯ ৭২ বার পড়া হয়েছে
জেলা প্রতিনিধি:
আব্দুল গফুর। বয়স ৮০ পেরিয়েছে। বয়সের ভারে এখন অনেকটায় নুয়ে পড়েছেন। ঠিকমত হাঁটতে পারেন না। এমনকি ঠিক মত কথাও বলতে পারেন না। কথা জড়িয়ে আসে। বংশের সবার বড় অতিপ্রিয় নাতি আবরার ফাহাদকে হারিয়ে বৃদ্ধ আব্দুল গফুরের কান্না যেন থামছেই না। বার বার আবরারের কবরের কাছে ছুটে যাচ্ছেন।
কবর ছুঁয়ে চারপাশে ঘুরছেন আর আহাজারি করছেন। কবরের পাশে বসে বিলাপ করছেন রাব্বি ভাই, রাব্বি ভাই (আবরারের ডাক নাম) তুই কেমন আছিস? হাও মাও করে কাঁদতে কাঁদতে বলছেন- ‘আ-আ-আ আমার নাতি রাব্বিকে (আবরার ফাহাদের পারিবারিক নাম) বাইরি মাইরি ফেলিচে বুইচেন, হায় কি কষ্ট পাইচে–, অসুকি (রোগগ্রস্ত) যদি মইরি যায় তালি স্বাভাবিক, কিন্তু একটা লোককে যেদি বাইরি মারে তালি কি কষ্টই হয় আপনেরা কন। আহ কি কষ্টই না হয়চে। আল্লা যিন তার আত্মাকে জান্নাতবাসী করি দ্যায়।’
এদিকে বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বুয়েট) শিক্ষার্থী আবরার ফাহাদ রাব্বির কুলখানি অনুষ্ঠিত হয়েছে। শুক্রবার বাদ জুমা আবরারের কবরের সামনে রায়ডাঙ্গা জামে মসজিদে কুলখানির আয়োজন করে আবরারের পরিবার। কুলখানিতে রাজনৈতিক কোনো নেতা উপস্থিত না থাকলেও রায়ডাঙ্গাবাসীসহ সর্বস্তরের মানুষের অংশগ্রহণ করে।
কুলখানিতে দোয়া পরিচালনা করেন মাওলানা রেজাউল করীম। কুলখানি শেষে পরিবারের সদস্যরা আবরারের কবর জিয়ারত করেন। এসময় আবরারের পিতা বরকতুল্লাহ, ছোট ভাই আবরার ফাইয়াজ, দাদা আব্দুল গফুর ৫ চাচাসহ পরিবারের সদস্যরা উপস্থিত ছিলেন।
এছাড়াও আবরারের আত্মার মাগফেরাত কামনা করে শনিবার কুমারখালীর রায়ডাঙ্গা গ্রামে গ্রামবাসীদের উদ্যোগে দোয়া মাহফিল অনুষ্ঠিত হওয়ার কথা রয়েছে।
আবরার ফাহাদের গ্রাম কুমারখালীর রায়ডাঙ্গা এক সময়ে বিএনপির ঘাঁটি হিসেবে পরিচিত ছিল। এই গ্রামে আওয়ামী লীগের সমর্থক হিসেবে পরিচিত হাতে গোনা দু-একটি পরিবারের মধ্যে একটি আবরারের দাদা আব্দুল গফুরের বাড়ি। আওয়ামী লীগের দুঃসময়ে গফুরের বাড়ি নেতাকর্মীদের যোগাযোগের স্থান ছিল। বঙ্গন্ধুর সহযোগী কুমারখালীর সাবেক এমপি মরহুম গোলাম কিবরিয়া এই বাড়িতে অনেকবার মিটিং করেছেন। অনেক আগে থেকেই এই বিশ্বাস বাড়ির লোকজন আওয়ামী লীগের সমর্থক ছিলেন। বিপদে আপদে আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীদের ভরসার স্থান ছিল এই বিশ্বাস বাড়ি।
আবরারের বাবা বরকতুল্লাহ বলেন, আমার ছেলের জন্য সবাই দেয়া করবেন। সে যেন জান্নাতবাসী হতে পারে। আমার ছেলে কোনো দিন কারও সঙ্গে খারাপ ব্যবহার তো দূরের কথা কারও সঙ্গে জোরে কথা বলেনি। নিয়মিত পাঁচ ওয়াক্ত নামাজ আদায় করত। তার এক প্রাইভেট শিক্ষকের মাধ্যমে সে নামাজ ও তাবলিকে মনোযোগী হয়।