ঢাকা ০৬:৩৭ অপরাহ্ন, রবিবার, ০৮ ডিসেম্বর ২০২৪, ২৪ অগ্রহায়ণ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ




কুরিয়ার সার্ভিস টাকা পাঠালে জেল-জরিমানা

প্রতিনিধির নাম
  • আপডেট সময় : ১০:৪৪:৪৭ অপরাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ৩ অক্টোবর ২০১৯ ১৪৩ বার পড়া হয়েছে

নিজস্ব প্রতিবেদক; 

কুরিয়ার সার্ভিস পণ্যের সঙ্গে টাকা স্থানান্তর করলে জেল ও জরিমানার মুখে পড়তে হবে। এমন বিধান রেখে ‘মেইলিং অপারেটর ও কুরিয়ার সার্ভিস আইন, ২০১৯’ খসড়া প্রণয়ন করেছে ডাক ও টেলিযোগাযোগ বিভাগ।

বর্তমানে কুরিয়ার সার্ভিসগুলো পণ্যের সঙ্গে নির্দিষ্ট ফি দিয়ে টাকা স্থানান্তরের কাজও করছে।

খসড়া আইন অনুযায়ী, লাইসেন্স ছাড়া বা মেয়াদোত্তীর্ণ লাইসেন্স ব্যবহার করে ব্যবসা পরিচালনা, বৈদেশিক মুদ্রা গ্রহণ-পরিবহন, বুকিংয়ের সময় বন্ধ প্যাকেট বা পার্সেল গ্রহণ, নিষিদ্ধ পণ্য পরিবহন করলেও জেল ও জরিমানা দিতে হবে কুরিয়ার সেবা দেয়া প্রতিষ্ঠানকে।

কুরিয়ার সেবা দেয়া প্রতিষ্ঠানগুলোকে লাইসেন্স দেয়া ও তদারকির জন্য একটি লাইসেন্সিং কর্তৃপক্ষ গঠন করা হবে। সরকার তিন ধরনের কুরিয়ার সার্ভিসের লাইসেন্স দেবে বলে আইনের উল্লেখ করা হয়েছে।

ডাক ও টেলিযোগাযোগ বিভাগের এক কর্মকর্তা জানান, মেইলিং অপারেটর ও কুরিয়ার সার্ভিসের কার্যক্রম সুষ্ঠুভাবে পরিচালনা, কুরিয়ার সার্ভিসের মাধ্যমে নিষিদ্ধ দ্রব্য পরিবহন প্রতিরোধ, গ্রাহকের অধিকার সংরক্ষণে এ আইন করা হচ্ছে। এর আগে ২০১৩ সালে মেইলিং অপারেটর ও কুরিয়ার সার্ভিস বিধিমালা ও ২০১৬ সালে কুরিয়ার সার্ভিস (শুল্কায়ন) পরিচালনা এবং লাইসেন্সিং বিধিমালা প্রণয়ন করা হয়।

বিধিমালা অনুযায়ী ইতোমধ্যে লাইসেন্সিং কর্তৃপক্ষ গঠন করা হয়েছে। গত ২৩ সেপ্টেম্বর মেইলিং অপারেটর ও কুরিয়ার সার্ভিস লাইসেন্সিং কর্তৃপক্ষের প্রথম চেয়ারম্যান হিসেবে নিয়োগ পেয়েছেন ডাক ও টেলিযোগাযোগ বিভাগের অতিরিক্ত সচিব মো. শাহাদাৎ হোসেন। নতুন চেয়ারম্যান নিয়োগ না দেয়া পর্যন্ত তিনি অতিরিক্ত হিসেবে চেয়ারম্যানের দায়িত্ব পালন করবেন।

ডাক ও টেলিযোগাযোগ বিভাগের সচিব অশোক কুমার বিশ্বাস জাগো নিউজকে বলেন, ‘মেইলিং অপারেটর ও কুরিয়ার সার্ভিস আইনের খসড়া নিয়ে আমরা আন্তঃমন্ত্রণালয় সভা করেছি। খসড়াটি চূড়ান্তের কাছাকাছি আমরা। আশা করছি শিগগিরই খসড়াটি চূড়ান্ত করে মন্ত্রিসভার অনুমোদনের জন্য মন্ত্রিপরিষদ বিভাগে পাঠাব।’

সচিব বলেন, ‘কুরিয়ার সার্ভিস নিয়ে বিধিমালা জারি হয়েছে ২০১৩ সালে। সেক্টরটির সুষ্ঠু পরিচালনায় বিধিমালাটি যথেষ্ট নয়, তাই আমরা আইন করার উদ্যোগ নিয়েছি।’

রাষ্ট্রপতি ও প্রধানমন্ত্রীর ডাক ব্যাগ, কূটনৈতিক ডাক ব্যাগ, সশস্ত্র বাহিনী ও আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর ডাক ব্যাগ পরিবহন ও বিতরণের জন্য নিয়োজিত বিশেষ প্রতিষ্ঠান বা সংস্থার ক্ষেত্রে এ আইনের কোনো কিছুই প্রযোজ্য হবে না বলে খসড়া আইনে উল্লেখ করা হয়েছে।

মেইলিং অপারেটর ও কুরিয়ার সার্ভিসের জন্য একটি লাইসেন্সিং কর্তৃপক্ষ থাকবে। লাইসেন্সিং কর্তৃপক্ষ মন্ত্রণালয়ের ডাক ও টেলিযোগাযোগ বিভাগের প্রশাসনিক আওতাধীন একটি সংস্থা হবে।

লাইসেন্সিং কর্তৃপক্ষ তিন সদস্যের সমন্বয়ে গঠিত হবে। তাদের মধ্যে অতিরিক্ত সচিব পদমর্যাদার একজন কর্মকর্তা চেয়ারম্যান থাকবেন। এছাড়া যুগ্ম সচিব পদমর্যাদার এক কর্মকর্তা ও বাংলাদেশ ডাক বিভাগের এক অতিরিক্ত মহাপরিচালক সদস্য হিসেবে থাকবেন। চেয়ারম্যান কর্তৃপক্ষের প্রধান নির্বাহী হবেন।

মেইলিং অপারেটর ও কুরিয়ার সার্ভিস প্রতিষ্ঠানের লাইসেন্সের শর্তাবলি ভঙ্গ বা লঙ্ঘনের জন্য কারাদণ্ড, অর্থদণ্ড, জামানত বাজেয়াপ্ত, প্রশাসনিক ব্যবস্থা গ্রহণ এবং তা আদায়ে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করবে কর্তৃপক্ষ।

সর্বোচ্চ ডাক পাঠানো গ্রাহক, সংস্থা বা ব্যক্তি ও সর্বোচ্চ মানের সেবা প্রদানকারী মেইলিং অপারেটর ও কুরিয়ার সার্ভিস প্রতিষ্ঠানকে সম্মাননা দেবে কর্তৃপক্ষ। আইনের বিধান লঙ্ঘন করে কোনো মেইলিং অপারেটর বা কুরিয়ার সার্ভিস প্রতিষ্ঠান ব্যবসা পরিচালনা করছে কি-না, তা তদারকি ও ব্যবস্থা গ্রহণ করবে।

আইনে কুরিয়ার সার্ভিস প্রতিষ্ঠানকে তিনটি শ্রেণিতে ভাগ করা হয়েছে- অভ্যন্তরীণ মেইলিং অপারেটর ও কুরিয়ার সার্ভিস প্রতিষ্ঠান, অন-বোর্ড মেইলিং অপারেটর ও কুরিয়ার সার্ভিস প্রতিষ্ঠান, আন্তর্জতিক মেইলিং অপারেটর ও কুরিয়ার সার্ভিস প্রতিষ্ঠান। এছাড়া ব্যবসার ধরন অনুযায়ী প্রতিটি শ্রেণির উপশ্রেণি থাকতে পারবে বলে আইনে উল্লেখ করা হয়েছে।

খসড়া আইনে বলা হয়েছে, নিষিদ্ধ দ্রব্য, অস্ত্র, মাদকদ্রব্য ইত্যাদি পরিবহন প্রতিরোধের স্বার্থে গ্রাহকের কাছ থেকে প্যাকেট বা পার্সেল বুকিংয়ের সময় খোলা অবস্থায় গ্রহণ করতে হবে। প্রেরক প্যাকেট বা পার্সেলের দ্রব্য বা পণ্য সম্পর্কে একটি ঘোষণাপত্র দেবেন। প্যাকেট বা পার্সেল গ্রহণকারী প্যাকেট বা পার্সেলটির প্রেরক, প্রাপকের পূর্ণ নাম ও ঠিকানা, টেলিফোন নম্বর (যদি থাকে) গ্রহণের তারিখ, সময়, পণ্য বা দ্রব্যের বিস্তারিত বিবরণ, পরিমাণ/ওজন, আদায়কৃত মাশুলের পরিমাণ একটি রেজিস্টারে আবশ্যিকভাবে লিপিবদ্ধ করবেন। প্রত্যয়নসহ একজন দায়িত্বশীল কর্মচারীর পূর্ণ নাম, পদবি সম্বলিত সিলসহ স্বাক্ষর করতে হবে। এ প্রত্যয়নের একটি কপি পার্সেল বা প্যাকেটের মোড়কে লাগিয়ে দিতে হবে। প্যাকেট বা পার্সেলে কোনো ধরনের নিষিদ্ধ দ্রব্য বা পণ্য পাওয়া গেলে প্রত্যয়নকারী কর্মচারী এক্ষেত্রে দায়ী হবেন।

অপরাধ ও দণ্ড

খসড়া আইন অনুযায়ী, কুরিয়ার সার্ভিস প্রতিষ্ঠান লাইসেন্স ছাড়া বা মেয়াদোত্তীর্ণ লাইসেন্স ব্যবহার করে ব্যবসা প্রতিষ্ঠান পরিচালনা করলে কমপক্ষে ৫০ হাজার টাকা, সর্বোচ্চ এক লাখ টাকা অর্থদণ্ড বা সর্বোচ্চ তিন মাসের কারাদণ্ড বা উভয় দণ্ডে দণ্ডিত হবে।

সেবার মূল্যতালিকা মেইলিং অপারেটর বা কুরিয়ার সার্ভিস প্রতিষ্ঠানের প্রধান কার্যালয়সহ সকল শাখা কার্যালয়ে সহজে দৃশ্যমান কোনো স্থানে টাঙিয়ে দিতে হবে। অন্যথায় সর্বোচ্চ ২০ হাজার টাকা অর্থদণ্ড বা সর্বোচ্চ এক মাসের কারাদণ্ড বা উভয় দণ্ডে দণ্ডিত হবে।

কোনো মেইলিং অপারেটর বা কুরিয়ার সার্ভিস প্রতিষ্ঠান এ আইন বা বিধির অধীনে নির্ধারিত মূল্যের বেশি রাখলে বা রাখার প্রস্তাব করলে সর্বোচ্চ ২০ হাজার টাকা অর্থদণ্ড বা সর্বোচ্চ এক মাসের কারাদণ্ড বা উভয় দণ্ডে দণ্ডিত হবে বলে আইনে উল্লেখ করা হয়েছে।

লাইসেন্স ব্যবহার করে কোনো ধরনের নগদ অর্থ বা বৈদেশিক মুদ্রা গ্রহণ বা পরিবহন করা যাবে না উল্লেখ করে খসড়ায় বলা হয়েছে, কোনো পার্সেল বা প্যাকেটের মধ্যে এবং প্যাকেট বা পার্সেল হিসাবে নগদ অর্থ বা কোনো বৈদেশিক মুদ্রা গ্রহণ বা পরিবহন করা যাবে না। এ শর্ত ভঙ্গ করলে কমপক্ষে ৫০ হাজার টাকা, সর্বোচ্চ এক লাখ টাকা অর্থদণ্ড বা সর্বোচ্চ তিন মাসের কারাদণ্ড বা উভয় দণ্ডে দণ্ডিত হবে।

আইন অনুযায়ী নিষিদ্ধ দ্রব্য পরিবহন, সংরক্ষণ, গ্রহণ বা পাঠানোর মাধ্যমে সংঘটিত অপরাধের ক্ষেত্রে ওই দ্রব্যের সংশ্লিষ্ট আইন প্রযোজ্য হবে। যেমন- মাদক দ্রব্যের ক্ষেত্রে ‘মাদক দ্রব্য নিয়ন্ত্রণ আইন, ২০১৮’ প্রযোজ্য হবে ইত্যাদি। তবে লাইসেন্সিং কর্তৃপক্ষের প্রশাসনিক ব্যবস্থা গ্রহণে কোনো বাধা থাকবে না।

কোনো মেইলিং অপারেটর বা কুরিয়ার সার্ভিস প্রতিষ্ঠান নির্ধারিত সময়ে সরকারের প্রাপ্য ক্ষতিপূরণ ফিস জমা না করলে কমপক্ষে ২০ হাজার টাকা, সর্বোচ্চ ৫০ হাজার টাকা অর্থদণ্ড বা সর্বোচ্চ এক মাসের কারাদণ্ড বা উভয় দণ্ডে দণ্ডিত হবে।

কুরিয়ার সার্ভিস প্রতিষ্ঠান কারচুপির আশ্রয় নিয়ে ক্ষতিপূরণ ফিস কম দেখানো বা ফাঁকি দেয়ার চেষ্টা করলে কমপক্ষে ৫০ হাজার টাকা, সর্বোচ্চ এক লাখ টাকা অর্থদণ্ড বা সর্বোচ্চ তিন মাসের কারাদণ্ড বা উভয় দণ্ডে দণ্ডিত হবে।

কোনো মেইলিং অপারেটর বা কুরিয়ার সার্ভিস প্রতিষ্ঠান যদি বুকিংয়ের সময় বন্ধ প্যাকেট বা পার্সেল গ্রহণ করলে কমপক্ষে ২০ হাজার টাকা, সর্বোচ্চ ৫০ হাজার টাকা অর্থদণ্ড বা সর্বোচ্চ ২ মাসের কারাদণ্ড বা উভয় দণ্ডে দণ্ডিত হতে হবে।

লাইসেন্সিং কর্তৃপক্ষের অনুমতিপত্র গ্রহণ ও নবায়ন ছাড়া এজেন্সির মাধ্যমে ব্যবসা পরিচালনা করলে কমপক্ষে ৫০ হাজার টাকা, সর্বোচ্চ এক লাখ টাকা অর্থদণ্ড বা সর্বোচ্চ তিন মাসের কারাদণ্ড বা উভয় দণ্ড পেতে হবে।

কোনো ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠান এজেন্ট নিয়োগের অনুমতি ছাড়া কোনো মেইলিং অপারেটর বা কুরিয়ার সার্ভিস প্রতিষ্ঠানের এজেন্ট হিসাবে ব্যবসা পরিচালনা করলে কমপক্ষে ২০ হাজার টাকা, সর্বোচ্চ ৫০ হাজার টাকা অর্থদণ্ড বা সর্বোচ্চ দুই মাসের কারাদণ্ড বা উভয় দণ্ডের বিধান রয়েছে খসড়া আইনে।

কুরিয়ার সার্ভিস প্রতিষ্ঠান যে শ্রেণির লাইসেন্স গ্রহণ করেছে সেই শ্রেণির ব্যবসার পাশাপাশি অননুমোদিত অন্য শ্রেণির ব্যবসা পরিচালনা করেন বা শ্রেণি পরিবর্তন করে অন্য শ্রেণির ব্যবসা পরিচালনা করেন সেক্ষেত্রে কমপক্ষে ২০ হাজার টাকা, সর্বোচ্চ ৫০ হাজার টাকা অর্থদণ্ড বা সর্বোচ্চ দুই মাসের কারাদণ্ড বা উভয় দণ্ড পেতে হবে।

আইনে উল্লেখ করা কোনো অপরাধের জন্য দণ্ডিত কোনো প্রতিষ্ঠান বা ব্যক্তি যদি পুনরায় একই অপরাধ করেন তবে তিনি ওই অপরাধের জন্য নির্ধারিত সর্বোচ্চ দণ্ডের দ্বিগুণ দণ্ডে দণ্ডিত হবেন।

আইন অনুযায়ী, কোন মেইলিং অপারেটর বা কুরিয়ার সার্ভিস প্রতিষ্ঠান এ আইনের কোনো বিধান লঙ্ঘন করলে, ওই মেইলিং অপারেটর বা কুরিয়ার সার্ভিস প্রতিষ্ঠানের মালিক, পরিচালক, ব্যবস্থাপনা পরিচালক, ম্যানেজার, সচিব বা অন্য কোনো কর্মচারী বা এজেন্ট যে বিধানটি লঙ্ঘন করেছেন বলে গণ্য হবে, যদি না তিনি প্রমাণ করতে সমর্থ হন যে ওই লঙ্ঘন তার অজ্ঞাতে হয়েছে বা ওই লঙ্ঘন রোধ করার জন্য তিনি যথাসাধ্য চেষ্টা করেছেন।

নিউজটি শেয়ার করুন

আপনার মন্তব্য

Your email address will not be published. Required fields are marked *

আপনার ইমেইল এবং অন্যান্য তথ্য সংরক্ষন করুন

ট্যাগস :




কুরিয়ার সার্ভিস টাকা পাঠালে জেল-জরিমানা

আপডেট সময় : ১০:৪৪:৪৭ অপরাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ৩ অক্টোবর ২০১৯

নিজস্ব প্রতিবেদক; 

কুরিয়ার সার্ভিস পণ্যের সঙ্গে টাকা স্থানান্তর করলে জেল ও জরিমানার মুখে পড়তে হবে। এমন বিধান রেখে ‘মেইলিং অপারেটর ও কুরিয়ার সার্ভিস আইন, ২০১৯’ খসড়া প্রণয়ন করেছে ডাক ও টেলিযোগাযোগ বিভাগ।

বর্তমানে কুরিয়ার সার্ভিসগুলো পণ্যের সঙ্গে নির্দিষ্ট ফি দিয়ে টাকা স্থানান্তরের কাজও করছে।

খসড়া আইন অনুযায়ী, লাইসেন্স ছাড়া বা মেয়াদোত্তীর্ণ লাইসেন্স ব্যবহার করে ব্যবসা পরিচালনা, বৈদেশিক মুদ্রা গ্রহণ-পরিবহন, বুকিংয়ের সময় বন্ধ প্যাকেট বা পার্সেল গ্রহণ, নিষিদ্ধ পণ্য পরিবহন করলেও জেল ও জরিমানা দিতে হবে কুরিয়ার সেবা দেয়া প্রতিষ্ঠানকে।

কুরিয়ার সেবা দেয়া প্রতিষ্ঠানগুলোকে লাইসেন্স দেয়া ও তদারকির জন্য একটি লাইসেন্সিং কর্তৃপক্ষ গঠন করা হবে। সরকার তিন ধরনের কুরিয়ার সার্ভিসের লাইসেন্স দেবে বলে আইনের উল্লেখ করা হয়েছে।

ডাক ও টেলিযোগাযোগ বিভাগের এক কর্মকর্তা জানান, মেইলিং অপারেটর ও কুরিয়ার সার্ভিসের কার্যক্রম সুষ্ঠুভাবে পরিচালনা, কুরিয়ার সার্ভিসের মাধ্যমে নিষিদ্ধ দ্রব্য পরিবহন প্রতিরোধ, গ্রাহকের অধিকার সংরক্ষণে এ আইন করা হচ্ছে। এর আগে ২০১৩ সালে মেইলিং অপারেটর ও কুরিয়ার সার্ভিস বিধিমালা ও ২০১৬ সালে কুরিয়ার সার্ভিস (শুল্কায়ন) পরিচালনা এবং লাইসেন্সিং বিধিমালা প্রণয়ন করা হয়।

বিধিমালা অনুযায়ী ইতোমধ্যে লাইসেন্সিং কর্তৃপক্ষ গঠন করা হয়েছে। গত ২৩ সেপ্টেম্বর মেইলিং অপারেটর ও কুরিয়ার সার্ভিস লাইসেন্সিং কর্তৃপক্ষের প্রথম চেয়ারম্যান হিসেবে নিয়োগ পেয়েছেন ডাক ও টেলিযোগাযোগ বিভাগের অতিরিক্ত সচিব মো. শাহাদাৎ হোসেন। নতুন চেয়ারম্যান নিয়োগ না দেয়া পর্যন্ত তিনি অতিরিক্ত হিসেবে চেয়ারম্যানের দায়িত্ব পালন করবেন।

ডাক ও টেলিযোগাযোগ বিভাগের সচিব অশোক কুমার বিশ্বাস জাগো নিউজকে বলেন, ‘মেইলিং অপারেটর ও কুরিয়ার সার্ভিস আইনের খসড়া নিয়ে আমরা আন্তঃমন্ত্রণালয় সভা করেছি। খসড়াটি চূড়ান্তের কাছাকাছি আমরা। আশা করছি শিগগিরই খসড়াটি চূড়ান্ত করে মন্ত্রিসভার অনুমোদনের জন্য মন্ত্রিপরিষদ বিভাগে পাঠাব।’

সচিব বলেন, ‘কুরিয়ার সার্ভিস নিয়ে বিধিমালা জারি হয়েছে ২০১৩ সালে। সেক্টরটির সুষ্ঠু পরিচালনায় বিধিমালাটি যথেষ্ট নয়, তাই আমরা আইন করার উদ্যোগ নিয়েছি।’

রাষ্ট্রপতি ও প্রধানমন্ত্রীর ডাক ব্যাগ, কূটনৈতিক ডাক ব্যাগ, সশস্ত্র বাহিনী ও আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর ডাক ব্যাগ পরিবহন ও বিতরণের জন্য নিয়োজিত বিশেষ প্রতিষ্ঠান বা সংস্থার ক্ষেত্রে এ আইনের কোনো কিছুই প্রযোজ্য হবে না বলে খসড়া আইনে উল্লেখ করা হয়েছে।

মেইলিং অপারেটর ও কুরিয়ার সার্ভিসের জন্য একটি লাইসেন্সিং কর্তৃপক্ষ থাকবে। লাইসেন্সিং কর্তৃপক্ষ মন্ত্রণালয়ের ডাক ও টেলিযোগাযোগ বিভাগের প্রশাসনিক আওতাধীন একটি সংস্থা হবে।

লাইসেন্সিং কর্তৃপক্ষ তিন সদস্যের সমন্বয়ে গঠিত হবে। তাদের মধ্যে অতিরিক্ত সচিব পদমর্যাদার একজন কর্মকর্তা চেয়ারম্যান থাকবেন। এছাড়া যুগ্ম সচিব পদমর্যাদার এক কর্মকর্তা ও বাংলাদেশ ডাক বিভাগের এক অতিরিক্ত মহাপরিচালক সদস্য হিসেবে থাকবেন। চেয়ারম্যান কর্তৃপক্ষের প্রধান নির্বাহী হবেন।

মেইলিং অপারেটর ও কুরিয়ার সার্ভিস প্রতিষ্ঠানের লাইসেন্সের শর্তাবলি ভঙ্গ বা লঙ্ঘনের জন্য কারাদণ্ড, অর্থদণ্ড, জামানত বাজেয়াপ্ত, প্রশাসনিক ব্যবস্থা গ্রহণ এবং তা আদায়ে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করবে কর্তৃপক্ষ।

সর্বোচ্চ ডাক পাঠানো গ্রাহক, সংস্থা বা ব্যক্তি ও সর্বোচ্চ মানের সেবা প্রদানকারী মেইলিং অপারেটর ও কুরিয়ার সার্ভিস প্রতিষ্ঠানকে সম্মাননা দেবে কর্তৃপক্ষ। আইনের বিধান লঙ্ঘন করে কোনো মেইলিং অপারেটর বা কুরিয়ার সার্ভিস প্রতিষ্ঠান ব্যবসা পরিচালনা করছে কি-না, তা তদারকি ও ব্যবস্থা গ্রহণ করবে।

আইনে কুরিয়ার সার্ভিস প্রতিষ্ঠানকে তিনটি শ্রেণিতে ভাগ করা হয়েছে- অভ্যন্তরীণ মেইলিং অপারেটর ও কুরিয়ার সার্ভিস প্রতিষ্ঠান, অন-বোর্ড মেইলিং অপারেটর ও কুরিয়ার সার্ভিস প্রতিষ্ঠান, আন্তর্জতিক মেইলিং অপারেটর ও কুরিয়ার সার্ভিস প্রতিষ্ঠান। এছাড়া ব্যবসার ধরন অনুযায়ী প্রতিটি শ্রেণির উপশ্রেণি থাকতে পারবে বলে আইনে উল্লেখ করা হয়েছে।

খসড়া আইনে বলা হয়েছে, নিষিদ্ধ দ্রব্য, অস্ত্র, মাদকদ্রব্য ইত্যাদি পরিবহন প্রতিরোধের স্বার্থে গ্রাহকের কাছ থেকে প্যাকেট বা পার্সেল বুকিংয়ের সময় খোলা অবস্থায় গ্রহণ করতে হবে। প্রেরক প্যাকেট বা পার্সেলের দ্রব্য বা পণ্য সম্পর্কে একটি ঘোষণাপত্র দেবেন। প্যাকেট বা পার্সেল গ্রহণকারী প্যাকেট বা পার্সেলটির প্রেরক, প্রাপকের পূর্ণ নাম ও ঠিকানা, টেলিফোন নম্বর (যদি থাকে) গ্রহণের তারিখ, সময়, পণ্য বা দ্রব্যের বিস্তারিত বিবরণ, পরিমাণ/ওজন, আদায়কৃত মাশুলের পরিমাণ একটি রেজিস্টারে আবশ্যিকভাবে লিপিবদ্ধ করবেন। প্রত্যয়নসহ একজন দায়িত্বশীল কর্মচারীর পূর্ণ নাম, পদবি সম্বলিত সিলসহ স্বাক্ষর করতে হবে। এ প্রত্যয়নের একটি কপি পার্সেল বা প্যাকেটের মোড়কে লাগিয়ে দিতে হবে। প্যাকেট বা পার্সেলে কোনো ধরনের নিষিদ্ধ দ্রব্য বা পণ্য পাওয়া গেলে প্রত্যয়নকারী কর্মচারী এক্ষেত্রে দায়ী হবেন।

অপরাধ ও দণ্ড

খসড়া আইন অনুযায়ী, কুরিয়ার সার্ভিস প্রতিষ্ঠান লাইসেন্স ছাড়া বা মেয়াদোত্তীর্ণ লাইসেন্স ব্যবহার করে ব্যবসা প্রতিষ্ঠান পরিচালনা করলে কমপক্ষে ৫০ হাজার টাকা, সর্বোচ্চ এক লাখ টাকা অর্থদণ্ড বা সর্বোচ্চ তিন মাসের কারাদণ্ড বা উভয় দণ্ডে দণ্ডিত হবে।

সেবার মূল্যতালিকা মেইলিং অপারেটর বা কুরিয়ার সার্ভিস প্রতিষ্ঠানের প্রধান কার্যালয়সহ সকল শাখা কার্যালয়ে সহজে দৃশ্যমান কোনো স্থানে টাঙিয়ে দিতে হবে। অন্যথায় সর্বোচ্চ ২০ হাজার টাকা অর্থদণ্ড বা সর্বোচ্চ এক মাসের কারাদণ্ড বা উভয় দণ্ডে দণ্ডিত হবে।

কোনো মেইলিং অপারেটর বা কুরিয়ার সার্ভিস প্রতিষ্ঠান এ আইন বা বিধির অধীনে নির্ধারিত মূল্যের বেশি রাখলে বা রাখার প্রস্তাব করলে সর্বোচ্চ ২০ হাজার টাকা অর্থদণ্ড বা সর্বোচ্চ এক মাসের কারাদণ্ড বা উভয় দণ্ডে দণ্ডিত হবে বলে আইনে উল্লেখ করা হয়েছে।

লাইসেন্স ব্যবহার করে কোনো ধরনের নগদ অর্থ বা বৈদেশিক মুদ্রা গ্রহণ বা পরিবহন করা যাবে না উল্লেখ করে খসড়ায় বলা হয়েছে, কোনো পার্সেল বা প্যাকেটের মধ্যে এবং প্যাকেট বা পার্সেল হিসাবে নগদ অর্থ বা কোনো বৈদেশিক মুদ্রা গ্রহণ বা পরিবহন করা যাবে না। এ শর্ত ভঙ্গ করলে কমপক্ষে ৫০ হাজার টাকা, সর্বোচ্চ এক লাখ টাকা অর্থদণ্ড বা সর্বোচ্চ তিন মাসের কারাদণ্ড বা উভয় দণ্ডে দণ্ডিত হবে।

আইন অনুযায়ী নিষিদ্ধ দ্রব্য পরিবহন, সংরক্ষণ, গ্রহণ বা পাঠানোর মাধ্যমে সংঘটিত অপরাধের ক্ষেত্রে ওই দ্রব্যের সংশ্লিষ্ট আইন প্রযোজ্য হবে। যেমন- মাদক দ্রব্যের ক্ষেত্রে ‘মাদক দ্রব্য নিয়ন্ত্রণ আইন, ২০১৮’ প্রযোজ্য হবে ইত্যাদি। তবে লাইসেন্সিং কর্তৃপক্ষের প্রশাসনিক ব্যবস্থা গ্রহণে কোনো বাধা থাকবে না।

কোনো মেইলিং অপারেটর বা কুরিয়ার সার্ভিস প্রতিষ্ঠান নির্ধারিত সময়ে সরকারের প্রাপ্য ক্ষতিপূরণ ফিস জমা না করলে কমপক্ষে ২০ হাজার টাকা, সর্বোচ্চ ৫০ হাজার টাকা অর্থদণ্ড বা সর্বোচ্চ এক মাসের কারাদণ্ড বা উভয় দণ্ডে দণ্ডিত হবে।

কুরিয়ার সার্ভিস প্রতিষ্ঠান কারচুপির আশ্রয় নিয়ে ক্ষতিপূরণ ফিস কম দেখানো বা ফাঁকি দেয়ার চেষ্টা করলে কমপক্ষে ৫০ হাজার টাকা, সর্বোচ্চ এক লাখ টাকা অর্থদণ্ড বা সর্বোচ্চ তিন মাসের কারাদণ্ড বা উভয় দণ্ডে দণ্ডিত হবে।

কোনো মেইলিং অপারেটর বা কুরিয়ার সার্ভিস প্রতিষ্ঠান যদি বুকিংয়ের সময় বন্ধ প্যাকেট বা পার্সেল গ্রহণ করলে কমপক্ষে ২০ হাজার টাকা, সর্বোচ্চ ৫০ হাজার টাকা অর্থদণ্ড বা সর্বোচ্চ ২ মাসের কারাদণ্ড বা উভয় দণ্ডে দণ্ডিত হতে হবে।

লাইসেন্সিং কর্তৃপক্ষের অনুমতিপত্র গ্রহণ ও নবায়ন ছাড়া এজেন্সির মাধ্যমে ব্যবসা পরিচালনা করলে কমপক্ষে ৫০ হাজার টাকা, সর্বোচ্চ এক লাখ টাকা অর্থদণ্ড বা সর্বোচ্চ তিন মাসের কারাদণ্ড বা উভয় দণ্ড পেতে হবে।

কোনো ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠান এজেন্ট নিয়োগের অনুমতি ছাড়া কোনো মেইলিং অপারেটর বা কুরিয়ার সার্ভিস প্রতিষ্ঠানের এজেন্ট হিসাবে ব্যবসা পরিচালনা করলে কমপক্ষে ২০ হাজার টাকা, সর্বোচ্চ ৫০ হাজার টাকা অর্থদণ্ড বা সর্বোচ্চ দুই মাসের কারাদণ্ড বা উভয় দণ্ডের বিধান রয়েছে খসড়া আইনে।

কুরিয়ার সার্ভিস প্রতিষ্ঠান যে শ্রেণির লাইসেন্স গ্রহণ করেছে সেই শ্রেণির ব্যবসার পাশাপাশি অননুমোদিত অন্য শ্রেণির ব্যবসা পরিচালনা করেন বা শ্রেণি পরিবর্তন করে অন্য শ্রেণির ব্যবসা পরিচালনা করেন সেক্ষেত্রে কমপক্ষে ২০ হাজার টাকা, সর্বোচ্চ ৫০ হাজার টাকা অর্থদণ্ড বা সর্বোচ্চ দুই মাসের কারাদণ্ড বা উভয় দণ্ড পেতে হবে।

আইনে উল্লেখ করা কোনো অপরাধের জন্য দণ্ডিত কোনো প্রতিষ্ঠান বা ব্যক্তি যদি পুনরায় একই অপরাধ করেন তবে তিনি ওই অপরাধের জন্য নির্ধারিত সর্বোচ্চ দণ্ডের দ্বিগুণ দণ্ডে দণ্ডিত হবেন।

আইন অনুযায়ী, কোন মেইলিং অপারেটর বা কুরিয়ার সার্ভিস প্রতিষ্ঠান এ আইনের কোনো বিধান লঙ্ঘন করলে, ওই মেইলিং অপারেটর বা কুরিয়ার সার্ভিস প্রতিষ্ঠানের মালিক, পরিচালক, ব্যবস্থাপনা পরিচালক, ম্যানেজার, সচিব বা অন্য কোনো কর্মচারী বা এজেন্ট যে বিধানটি লঙ্ঘন করেছেন বলে গণ্য হবে, যদি না তিনি প্রমাণ করতে সমর্থ হন যে ওই লঙ্ঘন তার অজ্ঞাতে হয়েছে বা ওই লঙ্ঘন রোধ করার জন্য তিনি যথাসাধ্য চেষ্টা করেছেন।