ফেরি নেই, অথচ ঘাট ‘বানিয়ে’ চলছে চাঁদাবাজি আর নির্যাতন!
- আপডেট সময় : ০১:৫১:০২ অপরাহ্ন, শনিবার, ২৮ সেপ্টেম্বর ২০১৯ ১২৮ বার পড়া হয়েছে
শখালীর চাম্বল বাংলাবাজারের জ্বলকদর খাল
বাঁশখালী (চট্টগ্রাম) প্রতিনিধি।
বাঁশখালীর চাম্বল বাংলাবাজার এলাকায় জ্বলকদর খালের ওপর একসময় ব্রিজ ছিল না। ওই সময় গণ্ডামারা ইউনিয়ন ও চাম্বল ইউনিয়নের বাসিন্দাদের নৌকা কিংবা ফেরিতে পারাপার করতে হতো।
তাই জেলা পরিষদ থেকে এ ঘাটটি প্রতিবছর ইজারা দেওয়া হতো। ১৯৯৭ সালে ওই খালের ওপর বিশাল ব্রিজ নির্মিত হয়। এর পর থেকে যাবতীয় যানবাহন ও মানুষ পারাপার হয়ে থাকে ওই ব্রিজের ওপর দিয়ে। কিন্তু ব্রিজ নির্মাণের গত ২২ বছর পার হলেও ঘাটটি এখনো একইভাবে ইজারা দেওয়া হচ্ছে। ফলে ফেরি না থাকলেও ফেরিঘাটের নামে ইজারা নিয়ে ফিশিং বোটের দুই শতাধিক মালিকের কাছ থেকে প্রকাশ্যে চলছে চাঁদাবাজি। চাঁদা না দিলে কুতুবদিয়া, মহেশখালী, কক্সবাজার থেকে আসা নিরীহ জেলেদের ওপর চলে নির্মম নির্যাতন। চাঁদার টাকায় স্থানীয় প্রশাসন ম্যানেজড থাকায় নির্যাতনের শিকার ভিন্ন উপজেলার জেলেরা অভিযোগই করতে পারেন না। ফলে এ ঘাটে প্রতিদিনের বহুমুখী নির্যাতনের চিত্র নীরবেই সহ্য করতে হচ্ছে কয়েক শ জেলেকে।
সরেজমিন ঘুরে এসব অভিযোগের সত্যতা পাওয়া গেছে।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক ভুক্তভোগী জেলে ও ফিশিং বোটের মালিকদের কাছ থেকে জানা গেছে, ইজারা নিয়ে ইজারাদার নিয়মবহির্ভূতভাবে দুই শতাধিক ফিশিং বোটের মালিকের কাছ থেকে টাকা আদায় করে চলেছেন। ইজারায় ফিশিং বোট থেকে এক টাকাও নেওয়ার নিয়ম না থাকলেও স্থানীয় আহমদ কবিরের ছেলে মোস্তাক প্রতিদিনই লাঠিসোঁটা নিয়ে মাথাপিছু ৪০০ থেকে দুই হাজার টাকা পর্যন্ত জোরপূর্বক আদায় করছেন। এর পেছনে নেতৃত্ব দিচ্ছেন স্বঘোষিত বোট মালিক সমিতির সভাপতি হেফাজুল ইসলাম। ঘাটটি মাহমুদুল ইসলাম নামের এক ব্যক্তি ১০ লাখ ১০ হাজার ২১০ টাকায় ইজারা পেয়েছেন। ওই ইজারাদারের কাছ থেকে ১৪ লাখ টাকায় সাব-ঠিকাদারি নিয়েছেন বোট মালিক সমিতির নামে কিছু ব্যক্তি। সাব-ঠিকাদারি নেওয়া হলেও নিয়মবহির্ভূত অসংখ্য জেলের কাছ থেকে এককালীন ১৫ হাজার টাকা আদায় এবং ঘাটে মাছ নামাতে দৈনিক ৫০০ থেকে ৬০০ টাকা নেওয়া হচ্ছে। এভাবে দৈনিক দেড় থেকে দুই লাখ টাকা আদায় হয়ে থাকে। ফলে বছরে কোটি টাকা আদায় হওয়ায় এ ঘাটটি দখল-বেদখল নিয়ে প্রায়ই ঝগড়া-মারামারি লেগেই থাকে। ফিশিং বোটের মালিকরা টাকা না দিলে সন্ত্রাসী লেলিয়ে দিয়ে ফিশিং বোটের মাছ ও ইঞ্জিন লুটপাট করা হয়।
চুক্তি মোতাবেক ১৩টি শর্ত অনুসারে জেলা পরিষদ থেকে ইজারা নিলেও ইজারাদার একটি শর্তও পালন করছেন না। এমনকি ওই সব শর্ত পালনের পরিস্থিতিও নেই ফেরিঘাটটিতে। ইজারা চুক্তির ৬ নম্বর শর্ত অনুসারে, ওই ঘাটে ইজারাদারের মালিকাধীন আটটি নৌযান রাখার নিয়ম থাকলেও ইজারাদারের একটি নৌযানও নেই। যত নৌযান আছে এর সবই ফিশিং বোটের মালিকদের। কোথাও ইজারার শর্ত মোতাবেক সাইনবোর্ডও নেই।
এ বিষয়ে বাংলাবাজার ফিশিং বোট মালিক সমিতির স্বঘোষিত সভাপতি ও ফেরিঘাটের সাব-ইজারাদার হেফাজুল ইসলাম বলেন, ‘প্রকৃত ইজারাদারদের কাছ থেকে আমরা বোট মালিকরা সাব-ইজারা নিয়েছি। এখানে সমিতির অন্তর্ভুক্ত ফিশিং বোটের মালিক ১২৫ জন। অন্যান্য এলাকা থেকে আরো শতাধিক ফিশিং বোট এ ঘাটে মাছ নামায়। আমাদের সমিতির অন্তর্ভুক্ত ১২৫ ফিশিং বোট থেকে এককালীন ১৫ হাজার টাকা নিয়েছি। ওই টাকা নিয়ে ইজারার টাকা দিয়েছি। এখানে কোনো চাঁদাবাজি হয় না। ’
উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মোমেনা আক্তার বলেন, ‘ফেরিঘাটে চাঁদাবাজি হয় এমন অভিযোগ কেউ করেনি। অভিযোগ পেলে তদন্তপূর্বক ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে। ইজারার বিষয়টিও দেখা হবে। ’