হুইপপুত্রের অস্ত্র ও মদ বিলাস
- আপডেট সময় : ১১:২২:৫৮ পূর্বাহ্ন, শনিবার, ২৮ সেপ্টেম্বর ২০১৯ ১০৬ বার পড়া হয়েছে
আওয়ামী লীগে ছাইচাপা আগুন পটিয়ায়, ত্যাগী নেতা দিদারুলের চ্যালেঞ্জ
নিজস্ব প্রতিবেদক
এবার আলোচনায় চলে এসেছেন জাতীয় সংসদের হুইপ শামসুল হক চৌধুরীর পুত্র নাজমুল করিম চৌধুরী ওরফে শারুন চৌধুরী। অত্যাধুনিক অস্ত্র দিয়ে গুলিবর্ষণের ভিডিও ছড়িয়ে বিতর্ক সৃষ্টি করেছেন তিনি নিজেই। ধারণা করা হচ্ছে, আতঙ্ক ছড়িয়ে অন্যদের ভয় দেখিয়ে দাপুটে অবস্থান তৈরি করতেই হুইপপুত্রের এমন কান্ড । এ ছাড়া নিজের সামনে দামি মদের বোতল ছড়িয়ে রেখে ছবি তুলে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমেও দিয়েছেন নিজেই। কারণ, গত কয়েক বছর ধরে নিজেকে ধরাছোঁয়ার বাইরে মনে করছেন শারুন চৌধুরী। প্রায়ই সরকারের গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তিদের নাম ব্যবহার করে ধমকাধমকি করছেন। হুইপ শামসুল হকের বিরুদ্ধে জুয়ার ১৮০ কোটি টাকা আয়ের অভিযোগ তোলা পুলিশ কর্মকর্তার বরখাস্ত হওয়ার খবরও দাম্ভিকতার সঙ্গে ছড়াতে দেখা গেছে তাকে। প্রবীণ আওয়ামী লীগ নেতা দিদারুল আলম চৌধুরীকে হুমকি দিয়ে ক্ষোভ ও বিতর্কের সৃষ্টি করেছেন আগেই। এ ঘটনা শুধু চট্টগ্রামেই নয়, সারা দেশেই আওয়ামী লীগ নেতা-কর্মীর মধ্যে ক্ষোভের সৃষ্টি করেছে। গতকাল ঢাকায় মুক্তিযুদ্ধ মঞ্চ নামের একটি সংগঠন হুইপ শামসুল হকের কুশপুত্তলিকা নিক্ষেপ করেছে ডাস্টবিনে। ভাইরাল হওয়া সেই ভিডিওতে দেখা যায়, আওয়ামী লীগের অর্থবিষয়ক উপকমিটির সদস্য শারুন চৌধুরী সামরিক মহড়ার মতোই একে-৪৭ রাইফেলসদৃশ আগ্নেয়াস্ত্র থেকে গুলিবর্ষণ করছেন। বিকট শব্দে পরপর গুলিবর্ষণের পর সেই রাইফেল থেকে ধোঁয়া বের হচ্ছে। ঠিক তখনই ভিডিও ক্যামেরার দিকে দম্ভ নিয়ে তাকান শারুন। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে এই ভিডিও লিঙ্ক ঘিরে তির্যক মন্তব্য আসছে একের পর এক। অনেকের মন্তব্য- ‘যুদ্ধক্ষেত্রের মহড়ার মতো ভিডিও ফুটেজই প্রমাণ করে এ সমাজে কতটা লাগামহীন এই হুইপপুত্র!’ কেউ বলছেন, ‘অস্ত্র চালানো দেখে মনে হচ্ছে, শারুন খুব প্রশিক্ষিত। কারণ এ ধরনের অস্ত্র ফায়ারিংয়ের সময় শরীর কন্ট্রোল খুবই কষ্টসাধ্য। অথচ তিনি ধারাবাহিকভাবে ফায়ার করে চলেছেন।’ আওয়ামী লীগের নেতা-কর্মীরা বলছেন, এটি শুধু একজন উচ্ছন্নে যাওয়া যুবকের রূপ নয়, ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের পরিচ্ছন্ন ভাবমূর্তিকেও মাঠপর্যায়ে ছিন্নভিন্ন করছে এই চেহারা। প্রধানমন্ত্রী-ঘোষিত দুর্নীতিবিরোধী অভিযানকে প্রশ্নবিদ্ধ করতে প্রশাসনের বিরুদ্ধে অভিযোগের আঙ্গুল তুলে ব্যাপক সমালোচনার মুখে পড়েন হুইপ শামসুল হক। এ ঘটনা ঘিরেই তার পুত্র শারুনের বিরুদ্ধে প্রবীণ আওয়ামী লীগ নেতা চট্টগ্রাম আবাহনীর প্রতিষ্ঠাতা সাধারণ সম্পাদক মুক্তিযোদ্ধা দিদারুল আলম চৌধুরীকে টেলিফোনে অশ্লীল বাক্যবাণ নিক্ষেপ করেন। পিতার বয়সী দিদারুল আলম চৌধুরীকে শারুন বলেন, ‘গালবাজি যেখানে-সেখানে করবি রাস্তাঘাটে চড় মেরে মুখের দাঁত সবগুলো ফেলে দেব। বেআদব কোথাকার।’ এ ছাড়া শারুন বেশ কিছু গালাগালও করেন দিদারুল আলম চৌধুরীকে। মোবাইল ফোনের সেই আলাপের অডিও ভাইরাল হওয়ার ২৪ ঘণ্টা না যেতেই এই ভিডিওটি ভাইরাল হলো। এর ফলে মাঠপর্যায়ের অনেক আওয়ামী লীগ নেতাও বিব্রতকর অবস্থায় পড়ছেন। অবশ্য ফাঁস হওয়া অডিও নিয়ে নাজমুল করিম চৌধুরী শারুন গণমাধ্যমে বলেন, ‘দিদারুল আলম চৌধুরী নিজের উসকানিমূলক অশ্লীল কথাগুলো কেটে ফেলে দিয়ে বিভিন্ন অংশ জোড়া লাগিয়ে শুধু আমার রাগান্বিত বক্তব্যগুলো প্রচার করে আমাকে হেয় প্রতিপন্ন করার অপচেষ্টা চালাচ্ছেন।’ কিন্তু শারুনের এ বক্তব্যও যে মিথ্যা তা জানিয়ে চ্যালেঞ্জ ছুড়েছেন দিদারুল আলম চৌধুরী।
১০ কোটি টাকার চ্যালেঞ্জ : চট্টগ্রাম আবাহনী লিমিটেডের প্রতিষ্ঠাতা মহাসচিব নগর আওয়ামী লীগের যুব ও ক্রীড়া সম্পাদক দিদারুল আলম চৌধুরী বলেছেন, ‘১৯৮৪ সালের ২১ জানুয়ারি আমার শিশু পুত্র মো. জাবের চৌধুরী এক মাস সাত দিন বয়সে মৃত্যুবরণ করলে তার দাফন সেরে আমি ক্রিকেট দল নিয়ে ফাইনাল খেলায় মাঠে নেমে বিজয় দিবস ক্রিকেটে চ্যাম্পিয়ন হয়েছিলাম। গত শেখ কামাল আন্তর্জাতিক ক্লাব কাপ টুর্নামেন্ট চলাকালে শামসুল হক চৌধুরীর ছেলে শারুনের সঙ্গে উপরোক্ত বিষয়ে আলাপচারিতায় সে বলে, আংকেল আমার জন্মও তো ১৯৮৪ সালে। ওই মুহূর্তে আমি তাকে বুকে জড়িয়ে ধরে আমার ছেলে বলে সম্বোধন করি।’ তিনি আরও বলেন, ‘মোবাইলে আলাপচারিতার বিষয়কে কেন্দ্র করে বিভিন্ন সংগঠন ও বিভিন্ন জনের পক্ষ থেকে তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ার চাপ সৃষ্টি করলেও ওই ছেলে সম্পর্কটি মনে এনে কিছু করিনি এবং কাউকে করতেও দিইনি। তবে জুয়ার একটি ভাগে লাভবান হয়ে কোনো সন্ত্রাসী দিয়ে আমার ওপর আক্রমণ করতে পারে ভেবে পাঁচলাইশ থানায় একটি আবেদন করে রাখি। পরে বিভিন্ন মিডিয়ার মাধ্যমে জানতে পারলাম, তার সঙ্গে কথোপকথনের অডিও রেকর্ডটি এডিট করা হয়েছে বলে শারুন দাবি করেছে। এটা জেনে নিশ্চিত হলাম যে, রক্ত তার নিজস্ব গতিতে চলে-এটাই স্বাভাবিক। অডিও রেকর্ডে একটি শব্দও যদি এডিট করা হয়েছে প্রমাণ মেলে আমি ১০ কোটি টাকার চ্যালেঞ্জ ঘোষণা করলাম। এ ছাড়া আমি তাকে বার বার কল করেছি বলে যে উক্তি করেছে, সে উক্তির পরিপ্রেক্ষিতে বলছি, গত কয়েক বছরের মধ্যে তার সঙ্গে আমার মোবাইলে কথোপকথন হয়েছে কললিস্ট থেকে প্রমাণে আরও ১০ কোটি টাকার চ্যালেঞ্জ ঘোষণা করলাম।’
হুইপ শামসুল হকের কুশপুত্তলিকা ডাস্টবিনে নিক্ষেপ : কুশপুত্তলিকায় ঘৃণা প্রদর্শন এবং তা ঢাকঢোল পিটিয়ে ডাস্টবিনে ফেলে প্রতিবাদ জানিয়েছে মুক্তিযুদ্ধ মঞ্চ। গতকাল বিকালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের রাজু ভাস্কর্যের সামনে এক মানববন্ধনে এ প্রতিবাদ জানানো হয়। সংবিধান লঙ্ঘন ও শপথভঙ্গের অপরাধে জাতীয় সংসদের হুইপ শামসুল হক চৌধুরীকে দ্রুত অপসারণেরও দাবি জানিয়েছেন তারা। মানববন্ধনে মুক্তিযুদ্ধ মঞ্চের আহ্বায়ক ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সমাজবিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক আ ক ম জামাল উদ্দিন বলেন, ‘সরকার ও দেশপ্রেমিক আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী যে অভিযান পরিচালনা করছে, তাকে আমরা স্বাগত জানাই। দেরিতে হলেও এ ধরনের অভিযান দুর্নীতিমুক্ত বাংলাদেশ গড়তে সাহায্য করবে। দলের ভিতর জায়গা করে নেওয়া কিছু অনুপ্রবেশকারী একের পর এক বিতর্কিত কর্মকান্ড দ্বারা দেশরত শেখ হাসিনার সফল অর্জনগুলো নষ্ট করে দেওয়ার অপচেষ্টা করছে। জাতীয় পার্টি থেকে আসা নব্য হাইব্রিড নেতা জাতীয় সংসদের হুইপ শামসুল হক চৌধুরী সম্প্রতি ক্যাসিনো ও জুয়া খেলার পক্ষে বক্তব্য দিয়ে রাষ্ট্রের বিপক্ষে অবস্থান গ্রহণ করেছেন। আমরা সরকারের কাছে অবিলম্বে তাকে গ্রেফতার ও কঠোর শাস্তির আওতায় আনার দাবি জানাচ্ছি।’ মানববন্ধন থেকে শামসুল হক চৌধুরীর অস্থাবর-স্থাবর সম্পত্তির হিসাব প্রকাশের দাবি জানান বক্তারা। এ সময় মুক্তিযুদ্ধ মঞ্চের ঢাবি শাখার সভাপতি আমিনুল ইসলাম বুলবুল, সাধারণ সম্পাদক আল মামুন উপস্থিত ছিলেন।
সব ষড়যন্ত্র, দাবি হুইপ শামসুল হক চৌধুরীর : গতকাল বিকালে ঢাকা থেকে চট্টগ্রাম যাওয়া হুইপ শামসুল হক চৌধুরী দাবি করেছেন, তাকে নিয়ে ষড়যন্ত্র চলছে। এই ষড়যন্ত্র বেশিদিন টিকবে না। চট্টগ্রাম শাহ আমানত (রহ.) আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে হুইপ শামসুল হক চৌধুরী বলেন, স্থানীয়রাই জানেন আমি কোনো সময় জাতীয় পার্টি করেছিলাম কিনা। তিনি বলেন, প্রধানমন্ত্রী সব খোঁজখবর নিয়ে জেনেশোনেই আমাকে হ্যাটট্রিক এমপি হওয়ার সুযোগ দিয়েছেন।