অনলাইন রিপোর্টঃ
পুরান ঢাকার গেন্ডারিয়ার ১০৬ লাল মোহনদাস লেনে মমতাজ ভিলা নামে এনামুল হক ভূঁইয়া-রূপন ভূঁইয়ার ১০ তলা বাড়ি। ক্যাসিনো ব্যবসায় জড়িত স্থানীয় আওয়ামী লীগের নেতা এই দুই ভাই ভবনটির দ্বিতীয় ও তৃতীয় তলায় রাজকীয়ভাবে থাকেন। তবে বাকি ফ্ল্যাটগুলো ভাড়া দেওয়া হয়নি। এর মধ্যে কয়েকটি ফ্ল্যাটে থাকেন তাদের আত্মীয়-স্বজন। তারা মূলত দুই ভাইয়ের সহযোগী হিসেবেই কাজ করেন।
জুয়ার টাকায় বিলাসী জীবনযাপন করতেন এই দুই ভাই। অবৈধ অস্ত্রের হুমকি দিয়ে সাধারণ মানুষকে ভয়ভীতি দেখাতেন বলে অভিযোগ রয়েছে। নির্দিষ্ট কোনো পেশা না থাকলেও তারা নগদ কোটি কোটি টাকায় পুরান ঢাকার সূত্রাপুর, বংশাল, ইসলামপুর, কোতোয়ালি এলাকায় একাধিক ফ্ল্যাট ও বাড়ি কিনেছেন। সেগুলোর সন্ধান করছে র্যাব। তবে গতকাল বুধবার পর্যন্ত এই দুই ভাই আটক হননি।
সূত্রাপুরের বানিয়া নগরের ৩১ নম্বর বাড়ির মালিকও এই দুই ভাই। এই ছয় তলা ভবনটিতেও থাকেন তাদের আত্মীয়-স্বজনরা। ভবনের দ্বিতীয় ও পঞ্চম তলায় এনামুল হকের শ্যালক ও শাশুড়ি থাকেন। এই বাড়িরই দ্বিতীয় ও তৃতীয় তলায় দুইটি সিন্দুকে মঙ্গলবার পাওয়া যায় ৭৩০ ভরি সোনা। তার সহযোগী আবুল কালাম ওরফে কালার বাসায় একটি সিন্দুক পাওয়া গেছে। যার মালিকও এনামুল। যেখান থেকে ২ কোটি টাকা, একটি অবৈধ অস্ত্র ও ১৮ রাউন্ড গুলি উদ্ধার করা হয়েছে।
স্থানীয়রা জানান, কালা দীর্ঘদিন ধরে ওয়ারীর টিপু সুলতান রোডে লেদ মেশিনের দোকান চালাতেন। হঠাত্ দোকান বাদ দিয়ে মতিঝিলের কোথায় যেন চাকরি নেন। ঐ দুই ভাইয়ের কর্মচারী এই কালা। বিশ্বস্ত কর্মচারী হওয়ায় কালার বাসায় রাখা হয়েছিল টাকাভরা একটি সিন্দুক।
স্থানীয় বাসিন্দা সেকেন্দার আলী জানান, ১৯৮৫ সাল থেকেই এনামুল ওয়ান্ডার্স ক্লাব ও রূপন আরামবাগ ক্লাবে জুয়া খেলতেন। একটা সময় তারা জুয়ার বোর্ডের মালিক বনে যান। সেখান থেকে আসতে থাকে কাঁচা টাকা। সেই টাকাতেই ঢাকা শহরের বিভিন্ন স্থানে একের পর এক ফ্ল্যাট ও বাড়ি কিনেছেন তারা। জুয়ার বোর্ড থেকে যে টাকা আসত, সেই টাকার একটি অংশ বাসাতেই রাখতেন।
এদিকে গেন্ডারিয়া থানা আওয়ামী লীগের সহসভাপতি এনামুল হক ভূঁইয়া ও তার ভাই যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক রূপন ভূঁইয়ার বিরুদ্ধে গতকাল মঙ্গলবার রাতে তিনটি মামলা করেছে র্যাব। সূত্রাপুর ও গেন্ডারিয়া থানায় করা মামলায় তাদের বন্ধু জাকির ও কর্মচারী আবুল কালাম আজাদকেও আসামি করা হয়েছে। মঙ্গলবার তিনটি অভিযানে ওয়ান্ডার্স ক্লাবের অংশীদার এনামুল ও রূপন এবং তাদের দুই সহযোগীর বাসা থেকে ৫ কোটি টাকা, আট কেজি সোনা ও ছয়টি অস্ত্র উদ্ধার করে র্যাব। মানিলন্ডারিং ও অস্ত্র আইনে এসব মামলা দায়ের করা হয়।
মামলার সত্যতা নিশ্চিত করে র্যাব-৩ এর অধিনায়ক লে. কর্নেল কে এম শফিউল্লাহ বলেন, অভিযানের পর মামলার জন্য অনেক কাগজপত্র তৈরি করতে হয়। আমাদের টিমের সদস্যরা এই কাজে ব্যস্ত ছিল। আমরা এনামুল-রূপনসহ যারাই এর সঙ্গে জড়িত সবাইকে আইনের আওতায় আনতে চাই।