ঢাকা ০১:৩৩ অপরাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ০৫ ডিসেম্বর ২০২৪, ২১ অগ্রহায়ণ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ




তুরাগের ছাত্রলীগের সাধারন সম্পাদকের সীমাহীন চাঁদাবাজী

প্রতিনিধির নাম
  • আপডেট সময় : ১২:০২:২০ পূর্বাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ২৬ সেপ্টেম্বর ২০১৯ ১৪১ বার পড়া হয়েছে

অপরাধ প্রতিবেদকঃ  

আওয়ামী লীগের ‘লীগ’ শব্দটির নাম ভাঙিয়ে দীর্ঘদিন ধরে যারা অপকর্ম করে দলের ইমেজ ক্ষুন্ন করেছে তারা এখন রীতিমত দৌড়ের ওপর। ছাত্রলীগের শোভন-রাব্বানীকে দল থেকে অপসারণ, অভিযান শুরু হলেও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার দুর্নীতির বিরুদ্ধে জিরো টলারেন্স নীতির অংশ হিসেবে, ছাত্রলীগের সকল বিতর্কিত, অপকর্মকারী, দুর্নীতিবাজদের শান্তি দিয়ে দলকে শুদ্ধ করা হবে। তৃণমূলের সম্মেলনের মাধ্যমে চূড়ান্তভাবে দলের দুর্নীতিবাজদের মূল উৎপাটন করা হবে বলে জানা গেছে।

সূত্র জানায়, আওয়ামী লীগ বা অঙ্গসংগঠনের কোনো পাতি নেতাকে সচিবালয় বা এর আশপাশেও দেখা মিলছে না। তদবির নিয়ে যারা সর্বদাই ঘুর ঘুর করতো তাদের সঙ্গে যোগাযোগ করতে পারছে না টাকা দেয়া ভুক্তভোগিরা। বিতর্কিত অপকর্মকারী এসব নেতাদের তাদের পূর্ব-পরিচিত জায়গাতেও দেখা মিলছে না। বাসাতেও থাকছেন না তারা। যেসব ক্লাব বা তাদের নির্দিষ্ট স্থানগুলোতে নিয়মিত আড্ডা চলতো, মদ, জুয়া আর মাদকের মজমা বসতো তা এখন পুরোপুরি ফাঁকা। বাসস্ট্যান্ড, টেম্পু বা রিকশার চাঁদা তোলার মানুষ নেই এই কয়েকদিন ধরে। ফুটপাথের দোকানের চাঁদাবাজির টাকাও কেউ নিচ্ছে না, দোকানদারের কাছেই জমছে বকেয়া। মাদকের ক্রেতা থাকলেও বিক্রেতা সঙ্কট। অঙ্গসংগঠনের এসব বিতর্কিত নেতাদের মোবাইল নাম্বার বন্ধ। কয়দিনের জন্য গা ঢাকা দিয়েছেন। হয়তো সুযোগ পেলে আবার প্রশাসনের সহায়তায় আগের মত অপকর্ম শুরু করবে।

এ বিষয়ে আওয়ামী লীগের পক্ষ থেকে ওবায়দুল কাদের ও অন্যান্য নেতারা বলেছেন, শুদ্ধি অভিযানের অংশ হিসেবেই দলের এসব সুনাম ক্ষুন্নকারীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা। ঢাকা থেকে পুরো দেশেই অভিযান চালানো হবে এবং বিতর্কিত, অপকর্মকারীদের বিরুদ্ধে প্রশাসনকে সর্বোচ্চ ব্যবস্থাগ্রহণের নির্দেশা দেয়া হয়েছে। আগামী ডিসেম্বরের মধ্যে তৃণমূল পর্যায়ে সম্মেলনের মাধ্যমে সকল বিতর্কিত, অনুপ্রবেশকারীদের ছেঁটে ফেলা হবে।

রাজধানীর বিভিন্ন স্থান পরিদর্শন করে দেখা যায়, সায়দাবাদ, মহাখালী, গাবতলী বাস টার্মিনালে হাতে রশিদ নিয়ে যারা বাস থেকে চাঁদা তুলতো তারা এখন নেই। গুলিন্তানের ফুটপাথের দোকানগুলো থেকে ঢাকা মহানগর দক্ষিণ আওয়ামী লীগ ও শ্রমিক লীগের নামে যারা চাঁদা তুলতো তারা কয়েকদিন ধরে চাঁদা নিতে আসছে না। মুক্তাঙ্গনের গাড়ি পার্কিং থেকে শ্রমিক লীগের নামে চাঁদা নেয়া হলেও এখন চাঁদা নেয়ার মানুষ নেই। রাজধানীর তেজগাঁও, ফার্মগেট, খিলগাঁও, ধানমন্ডি, মোহাম্মদপুর টেম্পুস্ট্যান্ডের চাঁদা নেয়ার কোনো লাইনম্যান নেই।

এদিকে ছাত্রলীগের অনেক নেতা বিয়ে করে সংসার করছেন। কিন্তু তারপরও স্বপদে বহাল রয়েছেন। দক্ষিণ খান থানা ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক জোবায়ের হোসেন সৌরভ সংগঠনের নেতাদের সবাইকে দাওয়া দিয়ে বিয়ে করেছেন। তুরাগ থানার সভাপতি শফিকুর রহমানও বিবাহিত। এছাড়া তুরাগ থানার সাধারণ সম্পাদক আরিফ হাসানের নামে মহানগরে অভিযোগের পাহাড়। সাউদার্ন গার্মেন্ট, আইএফএল গার্মেন্টস, সাইফ টেকসহ স্থানীয় ১৫টি গার্মেন্টস থেকে চাঁদা তোলা, প্রায় তিন হাজার অবৈধ ব্যাটারি চালিত রিকশা পরিচালনা করে ১৫ থেকে ২০ লাখ টাকা চাঁদা উত্তোলন, ১৩ নং সেক্টরে রাজউকের জায়গায় অবৈধভাবে মার্কেট নির্মাণ করে ভাড়া দেয়াসহ মাদক ব্যবসার ছত্রছায়া দান করার অভিযোগ তার বিরুদ্ধে।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক স্থানীয় আওয়ামী লীগের একজন নেতা জানান, আরিফ হাসানের কারণে দলের ইমেজ নষ্ট হচ্ছে, কিন্তু প্রভাবশালীদের আশ্রয়ে তার অপকর্মের মাত্র দিন দিন বেড়েই চলছে।

এ বিষয়ে আরিফ বলেন, তিনি এ ধরণের কাজের সঙ্গে জড়িত নন। ঢাকা মহানগর উত্তর ছাত্রলীগের সভাপতি ইব্রাহিম হোসেন বলেন, আরিফ হাসানের বিরুদ্ধে নানা অভিযোগ পেয়েছি। যদি আমরা পর্যাপ্ত তথ্য প্রমাণ পাই তাহলে তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণ করব।

আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনার পদক্ষেপে খুশি তৃণমূল আওয়ামী লীগ ও জনসাধারণ। এ বিষয়ে ছাত্রলীগের উপ-সম্পাদক খাদিমুল বাশার জয় বলেন, প্রধানমন্ত্রীর পদক্ষেপে রাজনীতির দুর্নীতি দূর হচ্ছে। আগামী দিনের চাঁদাবাজ, টেন্ডারবাজ ও দুর্নীতিমুক্ত সুন্দর ও সুস্থ রাজনীতি দেশকে অনেক দূর এগিয়ে নিয়ে যাবে।

নিউজটি শেয়ার করুন

আপনার মন্তব্য

Your email address will not be published. Required fields are marked *

আপনার ইমেইল এবং অন্যান্য তথ্য সংরক্ষন করুন

ট্যাগস :




তুরাগের ছাত্রলীগের সাধারন সম্পাদকের সীমাহীন চাঁদাবাজী

আপডেট সময় : ১২:০২:২০ পূর্বাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ২৬ সেপ্টেম্বর ২০১৯

অপরাধ প্রতিবেদকঃ  

আওয়ামী লীগের ‘লীগ’ শব্দটির নাম ভাঙিয়ে দীর্ঘদিন ধরে যারা অপকর্ম করে দলের ইমেজ ক্ষুন্ন করেছে তারা এখন রীতিমত দৌড়ের ওপর। ছাত্রলীগের শোভন-রাব্বানীকে দল থেকে অপসারণ, অভিযান শুরু হলেও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার দুর্নীতির বিরুদ্ধে জিরো টলারেন্স নীতির অংশ হিসেবে, ছাত্রলীগের সকল বিতর্কিত, অপকর্মকারী, দুর্নীতিবাজদের শান্তি দিয়ে দলকে শুদ্ধ করা হবে। তৃণমূলের সম্মেলনের মাধ্যমে চূড়ান্তভাবে দলের দুর্নীতিবাজদের মূল উৎপাটন করা হবে বলে জানা গেছে।

সূত্র জানায়, আওয়ামী লীগ বা অঙ্গসংগঠনের কোনো পাতি নেতাকে সচিবালয় বা এর আশপাশেও দেখা মিলছে না। তদবির নিয়ে যারা সর্বদাই ঘুর ঘুর করতো তাদের সঙ্গে যোগাযোগ করতে পারছে না টাকা দেয়া ভুক্তভোগিরা। বিতর্কিত অপকর্মকারী এসব নেতাদের তাদের পূর্ব-পরিচিত জায়গাতেও দেখা মিলছে না। বাসাতেও থাকছেন না তারা। যেসব ক্লাব বা তাদের নির্দিষ্ট স্থানগুলোতে নিয়মিত আড্ডা চলতো, মদ, জুয়া আর মাদকের মজমা বসতো তা এখন পুরোপুরি ফাঁকা। বাসস্ট্যান্ড, টেম্পু বা রিকশার চাঁদা তোলার মানুষ নেই এই কয়েকদিন ধরে। ফুটপাথের দোকানের চাঁদাবাজির টাকাও কেউ নিচ্ছে না, দোকানদারের কাছেই জমছে বকেয়া। মাদকের ক্রেতা থাকলেও বিক্রেতা সঙ্কট। অঙ্গসংগঠনের এসব বিতর্কিত নেতাদের মোবাইল নাম্বার বন্ধ। কয়দিনের জন্য গা ঢাকা দিয়েছেন। হয়তো সুযোগ পেলে আবার প্রশাসনের সহায়তায় আগের মত অপকর্ম শুরু করবে।

এ বিষয়ে আওয়ামী লীগের পক্ষ থেকে ওবায়দুল কাদের ও অন্যান্য নেতারা বলেছেন, শুদ্ধি অভিযানের অংশ হিসেবেই দলের এসব সুনাম ক্ষুন্নকারীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা। ঢাকা থেকে পুরো দেশেই অভিযান চালানো হবে এবং বিতর্কিত, অপকর্মকারীদের বিরুদ্ধে প্রশাসনকে সর্বোচ্চ ব্যবস্থাগ্রহণের নির্দেশা দেয়া হয়েছে। আগামী ডিসেম্বরের মধ্যে তৃণমূল পর্যায়ে সম্মেলনের মাধ্যমে সকল বিতর্কিত, অনুপ্রবেশকারীদের ছেঁটে ফেলা হবে।

রাজধানীর বিভিন্ন স্থান পরিদর্শন করে দেখা যায়, সায়দাবাদ, মহাখালী, গাবতলী বাস টার্মিনালে হাতে রশিদ নিয়ে যারা বাস থেকে চাঁদা তুলতো তারা এখন নেই। গুলিন্তানের ফুটপাথের দোকানগুলো থেকে ঢাকা মহানগর দক্ষিণ আওয়ামী লীগ ও শ্রমিক লীগের নামে যারা চাঁদা তুলতো তারা কয়েকদিন ধরে চাঁদা নিতে আসছে না। মুক্তাঙ্গনের গাড়ি পার্কিং থেকে শ্রমিক লীগের নামে চাঁদা নেয়া হলেও এখন চাঁদা নেয়ার মানুষ নেই। রাজধানীর তেজগাঁও, ফার্মগেট, খিলগাঁও, ধানমন্ডি, মোহাম্মদপুর টেম্পুস্ট্যান্ডের চাঁদা নেয়ার কোনো লাইনম্যান নেই।

এদিকে ছাত্রলীগের অনেক নেতা বিয়ে করে সংসার করছেন। কিন্তু তারপরও স্বপদে বহাল রয়েছেন। দক্ষিণ খান থানা ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক জোবায়ের হোসেন সৌরভ সংগঠনের নেতাদের সবাইকে দাওয়া দিয়ে বিয়ে করেছেন। তুরাগ থানার সভাপতি শফিকুর রহমানও বিবাহিত। এছাড়া তুরাগ থানার সাধারণ সম্পাদক আরিফ হাসানের নামে মহানগরে অভিযোগের পাহাড়। সাউদার্ন গার্মেন্ট, আইএফএল গার্মেন্টস, সাইফ টেকসহ স্থানীয় ১৫টি গার্মেন্টস থেকে চাঁদা তোলা, প্রায় তিন হাজার অবৈধ ব্যাটারি চালিত রিকশা পরিচালনা করে ১৫ থেকে ২০ লাখ টাকা চাঁদা উত্তোলন, ১৩ নং সেক্টরে রাজউকের জায়গায় অবৈধভাবে মার্কেট নির্মাণ করে ভাড়া দেয়াসহ মাদক ব্যবসার ছত্রছায়া দান করার অভিযোগ তার বিরুদ্ধে।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক স্থানীয় আওয়ামী লীগের একজন নেতা জানান, আরিফ হাসানের কারণে দলের ইমেজ নষ্ট হচ্ছে, কিন্তু প্রভাবশালীদের আশ্রয়ে তার অপকর্মের মাত্র দিন দিন বেড়েই চলছে।

এ বিষয়ে আরিফ বলেন, তিনি এ ধরণের কাজের সঙ্গে জড়িত নন। ঢাকা মহানগর উত্তর ছাত্রলীগের সভাপতি ইব্রাহিম হোসেন বলেন, আরিফ হাসানের বিরুদ্ধে নানা অভিযোগ পেয়েছি। যদি আমরা পর্যাপ্ত তথ্য প্রমাণ পাই তাহলে তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণ করব।

আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনার পদক্ষেপে খুশি তৃণমূল আওয়ামী লীগ ও জনসাধারণ। এ বিষয়ে ছাত্রলীগের উপ-সম্পাদক খাদিমুল বাশার জয় বলেন, প্রধানমন্ত্রীর পদক্ষেপে রাজনীতির দুর্নীতি দূর হচ্ছে। আগামী দিনের চাঁদাবাজ, টেন্ডারবাজ ও দুর্নীতিমুক্ত সুন্দর ও সুস্থ রাজনীতি দেশকে অনেক দূর এগিয়ে নিয়ে যাবে।