ঢাকা ০৮:৩৯ পূর্বাহ্ন, মঙ্গলবার, ২৯ এপ্রিল ২০২৫, ১৬ বৈশাখ ১৪৩২ বঙ্গাব্দ
সংবাদ শিরোনাম :
Logo শেখ সোহেলের সহচর কাউট রাজু গ্রুপের তাণ্ডব: অস্ত্র ঠেকিয়ে প্রাণনাশের হুমকি Logo পদোন্নতি,বদলি. কেনাকাটায় পাহাড়সম দুর্নীতি ফায়ার সার্ভিস অধিদপ্তরে: দুদকের বিশেষ অভিযান Logo সুনামগঞ্জে প্রবাসী সাংবাদিকের বাড়িতে আওয়ামী সন্ত্রাসীদের হামলা Logo নিজেই মাদকাসক্ত মাদক নিয়ন্ত্রণ কর্মকর্তা; মাসে মাসোহারা আদায় ৭লাখ! Logo দেশকে অস্থিতিশীল করার ষড়যন্ত্রকারী মাস্টারমাইন্ড সেচ্ছাসেবকলীগ নেত্রী ফাতেমা আক্তার শাপলা Logo ‘শেখ হাসিনা ও জিয়াউলের বিরুদ্ধে ২০০ গুমের প্রমাণ মিলেছে’ Logo দুর্নীতির ছায়ায় রাজউক ইমারত পরিদর্শক মনিরুজ্জামান! Logo নিয়মিত চুমু খেলে মিলবে যে শারীরিক উপকার Logo প্রধান উপদেষ্টা কাতার যাচ্ছেন আজ, সফরসঙ্গী যারা Logo জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র হলেন মুহাম্মদ আবু আবিদ




রাখাইনে রাষ্ট্রীয় সন্ত্রাস চালানো হয়েছে: মাহাথির

প্রতিনিধির নাম
  • আপডেট সময় : ১১:৩৮:৫৭ অপরাহ্ন, বুধবার, ২৫ সেপ্টেম্বর ২০১৯ ১৩১ বার পড়া হয়েছে

অনলাইন ডেস্ক

মিয়ানমারের রাখাইন রাজ্যে রাষ্ট্রীয় সন্ত্রাস চালানো হয়েছে বলে মন্তব্য করেছেন মালয়েশিয়ার প্রধানমন্ত্রী ড. মাহাথির মোহাম্মদ।

তিনি বলেন, মিয়ানমার বলছে, সন্ত্রাসী হুমকি মোকাবিলায় তারা রাখাইনে অভিযান চালিয়েছে। কিন্তু বাস্তবতা হচ্ছে, সেখানে যা ঘটেছে তা গণহত্যা। আসুন আমরা কোদালকে কোদাল বলতে শিখি। খবর সিএনএ’র।

মঙ্গলবার জাতিসংঘ সদর দফতরে ওআইসি এবং জাতিসংঘে বাংলাদেশের স্থায়ী মিশন কর্তৃক আয়োজিত ‘রোহিঙ্গা সংকট: উত্তরণের উপায়’ শীর্ষক উচ্চ পর্যায়ের এক সভায় তিনি এসব কথা বলেন। জাতিসংঘ সাধারণ পরিষদের এবারের অধিবেশনে এটিই মাহাথিরের প্রথম ভাষণ।

সভায় মালয়েশিয়ার প্রধানমন্ত্রী বলেন, আসুন সোজাসাপ্টা কথা বলি। রাখাইনে অসংখ্য মানুষ অবর্ণনীয় নৃশংসতার শিকার হয়েছে। সেখানে গণহত্যা, পদ্ধতিগত ধর্ষণসহ গুরুতর মানবাধিকার লঙ্ঘনের ঘটনা ঘটেছে।

তিনি বলেন, এই নির্যাতনের মুখে রোহিঙ্গারা দেশ ছেড়ে পালাতে বাধ্য হয়। যাদের অধিকাংশ আশ্রয় নিয়েছে বাংলাদেশের কক্সবাজারে। সেখানে ১২ লাখের বেশি রোহিঙ্গাকে আশ্রয় দেওয়া হয়েছে।

ড. মাহাথির বলেন, এই বিপুল সংখ্যক রোহিঙ্গা শরণার্থীকে আশ্রয় দেওয়ায় আমরা বাংলাদেশকে সাধুবাদ জানাই। মালয়েশিয়াও যতটুকু সম্ভব করার চেষ্টা করেছে।

মালয়েশিয়া এক লাখ নিবন্ধিত রোহিঙ্গাকে আশ্রয় দিয়েছে জানিয়ে মাহাথির বলেন, মালয়েশিয়ায় অনিবন্ধিত রোহিঙ্গার সংখ্যা আরও বেশি। তবে, বাংলাদেশে আশ্রয় নেওয়া বিপুল সংখ্যক রোহিঙ্গাদের তুলনায় এ সংখ্যা একেবারেই কম।

তিনি বলেন, শরণার্থীরা যত দিন শিবিরে থাকবে ততই তারা আরও হতাশ ও মরিয়া হয়ে উঠবে। এ ধরনের ক্ষেত্রে যা হয়, সেটি হচ্ছে শরণার্থীরা অন্য ধরনের শোষণের ঝুঁকির মধ্যে পড়ে যায়। তারা মানবপাচার এবং যৌন দাসত্বের মতো ঘটনার লক্ষ্যবস্তুতে পরিণত হয়। তারা কেবল সামনে একটি হিমশীতল ভবিষ্যৎ দেখতে পায়।

মিয়ানমারে পরিস্থিতি মোটেও ভালো না উল্লেখ করে মাহাথির বলেন, রাখাইনে রয়ে যাওয়া রোহিঙ্গারা অভ্যন্তরীণভাবে বাস্তুচ্যুত। তাদের স্থান হয়েছে অভ্যন্তরীণ ক্যাম্পে। বিশ্ব এসব কুখ্যাত বন্দিশিবির সম্পর্কে জানতে পারলে মিয়ানমার কর্তৃপক্ষ তা অস্বীকার করে। তারা সেখানে জাতিসংঘের প্রতিনিধি ও মানবাধিকার কর্মীদের প্রবেশ করতে দেয়নি।

মাহাথির মোহাম্মদ বলেন, যদি মিয়ানমারের লুকানোর কিছু না থাকে, তবে সেখানকার পরিস্থিতি দেখাতে এত বাধা কেন? জাতিসংঘ প্র্রতিনিধিসহ সাহায্যকারী কর্মীদের সেখানে পরিদর্শন ও সেখানকার ক্যাম্পে যারা আছে তাদের সহায়তার সুযোগ দিক।

রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসন ব্যর্থ হওয়ার জন্য মিয়ানমারকে দায়ী করে মালয়েশিয়ার প্রধানমন্ত্রী বলেন, তাদের উচিত এ সংকট সমাধান করা। প্রত্যাবর্তন প্রথমেই প্রাধান্য পাওয়া উচিত। এর আগে রোহিঙ্গাদের মাতৃভূমিতে ফিরে যাওয়ার দু’টি প্রচেষ্টাই ব্যর্থ হয়েছে।

রোহিঙ্গাদের মিয়ানমারে ফিরতে না চাওয়াটাই স্বাভাবিক বলে মন্তব্য করেন মাহাথির। তিনি বলেন, এর কারণগুলো স্পষ্ট। কেউ যদি তার সুরক্ষার নিশ্চয়তা বোধ না করে তবে সে ফিরবে না।

রোহিঙ্গাদের নিরাপদ, সম্মানজনক ও স্বেচ্ছাপ্রত্যাবর্তন নিশ্চিতে মালয়েশিয়া চাপ অব্যাহত রাখবে বলে জানান দেশটির প্রধানমন্ত্রী।

সম্মানজনক প্রত্যাবর্তনে রোহিঙ্গাদের পূর্ণ নাগরিকত্ব দেওয়ার আহ্বান জানান তিনি।

মিয়ানমার কর্তৃপক্ষ রোহিঙ্গা ইস্যুতে ভয়, ঘৃণা, ত্রাস সৃষ্টি করে প্রত্যাবর্তন বিলম্বিত করছে বলে অভিযোগ করেন মাহাথির মোহাম্মদ। তিনি বলেন, এটা পরিষ্কার, রোহিঙ্গা সংকট সমাধানে কোনো ধরনের পদক্ষেপ নিতে মিয়ানমার সরকার অনিচ্ছুক। সুতরাং এ পরিস্থিতে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়কেই কিছু করতে হবে।

রোহিঙ্গা সংকট নিরসনে জাতিসংঘের সাহায্য চেয়ে তিনি বলেন, ভবিষ্যতে মানবসৃষ্ট দুর্যোগ মোকাবিলার উদ্দেশ্যেই জাতিসংঘ প্রতিষ্ঠা করা হয়েছিল। এখন সংস্থাটির উচিত রোহিঙ্গা সংকট নিরসনে ভূমিকা রাখা।

রোহিঙ্গা সংকট সমাধান ও অপরাধীদের বিচারের আওতায় আনতে জাতিসংঘের নিরাপত্তা কাউন্সিলের পদক্ষেপসহ অন্যদেরও নিজ নিজ ভূমিকা রাখার আহ্বান জানান মাহাথির।

নিউজটি শেয়ার করুন

আপনার মন্তব্য

Your email address will not be published. Required fields are marked *

আপনার ইমেইল এবং অন্যান্য তথ্য সংরক্ষন করুন

ট্যাগস :




রাখাইনে রাষ্ট্রীয় সন্ত্রাস চালানো হয়েছে: মাহাথির

আপডেট সময় : ১১:৩৮:৫৭ অপরাহ্ন, বুধবার, ২৫ সেপ্টেম্বর ২০১৯

অনলাইন ডেস্ক

মিয়ানমারের রাখাইন রাজ্যে রাষ্ট্রীয় সন্ত্রাস চালানো হয়েছে বলে মন্তব্য করেছেন মালয়েশিয়ার প্রধানমন্ত্রী ড. মাহাথির মোহাম্মদ।

তিনি বলেন, মিয়ানমার বলছে, সন্ত্রাসী হুমকি মোকাবিলায় তারা রাখাইনে অভিযান চালিয়েছে। কিন্তু বাস্তবতা হচ্ছে, সেখানে যা ঘটেছে তা গণহত্যা। আসুন আমরা কোদালকে কোদাল বলতে শিখি। খবর সিএনএ’র।

মঙ্গলবার জাতিসংঘ সদর দফতরে ওআইসি এবং জাতিসংঘে বাংলাদেশের স্থায়ী মিশন কর্তৃক আয়োজিত ‘রোহিঙ্গা সংকট: উত্তরণের উপায়’ শীর্ষক উচ্চ পর্যায়ের এক সভায় তিনি এসব কথা বলেন। জাতিসংঘ সাধারণ পরিষদের এবারের অধিবেশনে এটিই মাহাথিরের প্রথম ভাষণ।

সভায় মালয়েশিয়ার প্রধানমন্ত্রী বলেন, আসুন সোজাসাপ্টা কথা বলি। রাখাইনে অসংখ্য মানুষ অবর্ণনীয় নৃশংসতার শিকার হয়েছে। সেখানে গণহত্যা, পদ্ধতিগত ধর্ষণসহ গুরুতর মানবাধিকার লঙ্ঘনের ঘটনা ঘটেছে।

তিনি বলেন, এই নির্যাতনের মুখে রোহিঙ্গারা দেশ ছেড়ে পালাতে বাধ্য হয়। যাদের অধিকাংশ আশ্রয় নিয়েছে বাংলাদেশের কক্সবাজারে। সেখানে ১২ লাখের বেশি রোহিঙ্গাকে আশ্রয় দেওয়া হয়েছে।

ড. মাহাথির বলেন, এই বিপুল সংখ্যক রোহিঙ্গা শরণার্থীকে আশ্রয় দেওয়ায় আমরা বাংলাদেশকে সাধুবাদ জানাই। মালয়েশিয়াও যতটুকু সম্ভব করার চেষ্টা করেছে।

মালয়েশিয়া এক লাখ নিবন্ধিত রোহিঙ্গাকে আশ্রয় দিয়েছে জানিয়ে মাহাথির বলেন, মালয়েশিয়ায় অনিবন্ধিত রোহিঙ্গার সংখ্যা আরও বেশি। তবে, বাংলাদেশে আশ্রয় নেওয়া বিপুল সংখ্যক রোহিঙ্গাদের তুলনায় এ সংখ্যা একেবারেই কম।

তিনি বলেন, শরণার্থীরা যত দিন শিবিরে থাকবে ততই তারা আরও হতাশ ও মরিয়া হয়ে উঠবে। এ ধরনের ক্ষেত্রে যা হয়, সেটি হচ্ছে শরণার্থীরা অন্য ধরনের শোষণের ঝুঁকির মধ্যে পড়ে যায়। তারা মানবপাচার এবং যৌন দাসত্বের মতো ঘটনার লক্ষ্যবস্তুতে পরিণত হয়। তারা কেবল সামনে একটি হিমশীতল ভবিষ্যৎ দেখতে পায়।

মিয়ানমারে পরিস্থিতি মোটেও ভালো না উল্লেখ করে মাহাথির বলেন, রাখাইনে রয়ে যাওয়া রোহিঙ্গারা অভ্যন্তরীণভাবে বাস্তুচ্যুত। তাদের স্থান হয়েছে অভ্যন্তরীণ ক্যাম্পে। বিশ্ব এসব কুখ্যাত বন্দিশিবির সম্পর্কে জানতে পারলে মিয়ানমার কর্তৃপক্ষ তা অস্বীকার করে। তারা সেখানে জাতিসংঘের প্রতিনিধি ও মানবাধিকার কর্মীদের প্রবেশ করতে দেয়নি।

মাহাথির মোহাম্মদ বলেন, যদি মিয়ানমারের লুকানোর কিছু না থাকে, তবে সেখানকার পরিস্থিতি দেখাতে এত বাধা কেন? জাতিসংঘ প্র্রতিনিধিসহ সাহায্যকারী কর্মীদের সেখানে পরিদর্শন ও সেখানকার ক্যাম্পে যারা আছে তাদের সহায়তার সুযোগ দিক।

রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসন ব্যর্থ হওয়ার জন্য মিয়ানমারকে দায়ী করে মালয়েশিয়ার প্রধানমন্ত্রী বলেন, তাদের উচিত এ সংকট সমাধান করা। প্রত্যাবর্তন প্রথমেই প্রাধান্য পাওয়া উচিত। এর আগে রোহিঙ্গাদের মাতৃভূমিতে ফিরে যাওয়ার দু’টি প্রচেষ্টাই ব্যর্থ হয়েছে।

রোহিঙ্গাদের মিয়ানমারে ফিরতে না চাওয়াটাই স্বাভাবিক বলে মন্তব্য করেন মাহাথির। তিনি বলেন, এর কারণগুলো স্পষ্ট। কেউ যদি তার সুরক্ষার নিশ্চয়তা বোধ না করে তবে সে ফিরবে না।

রোহিঙ্গাদের নিরাপদ, সম্মানজনক ও স্বেচ্ছাপ্রত্যাবর্তন নিশ্চিতে মালয়েশিয়া চাপ অব্যাহত রাখবে বলে জানান দেশটির প্রধানমন্ত্রী।

সম্মানজনক প্রত্যাবর্তনে রোহিঙ্গাদের পূর্ণ নাগরিকত্ব দেওয়ার আহ্বান জানান তিনি।

মিয়ানমার কর্তৃপক্ষ রোহিঙ্গা ইস্যুতে ভয়, ঘৃণা, ত্রাস সৃষ্টি করে প্রত্যাবর্তন বিলম্বিত করছে বলে অভিযোগ করেন মাহাথির মোহাম্মদ। তিনি বলেন, এটা পরিষ্কার, রোহিঙ্গা সংকট সমাধানে কোনো ধরনের পদক্ষেপ নিতে মিয়ানমার সরকার অনিচ্ছুক। সুতরাং এ পরিস্থিতে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়কেই কিছু করতে হবে।

রোহিঙ্গা সংকট নিরসনে জাতিসংঘের সাহায্য চেয়ে তিনি বলেন, ভবিষ্যতে মানবসৃষ্ট দুর্যোগ মোকাবিলার উদ্দেশ্যেই জাতিসংঘ প্রতিষ্ঠা করা হয়েছিল। এখন সংস্থাটির উচিত রোহিঙ্গা সংকট নিরসনে ভূমিকা রাখা।

রোহিঙ্গা সংকট সমাধান ও অপরাধীদের বিচারের আওতায় আনতে জাতিসংঘের নিরাপত্তা কাউন্সিলের পদক্ষেপসহ অন্যদেরও নিজ নিজ ভূমিকা রাখার আহ্বান জানান মাহাথির।