বরিশাল প্রতিনিধিঃ
ধীর গতিতে হলেও দিনে দিনে বাড়ছে বরিশাল বিমানবন্দরে সার্বিক সেবার মান। পাশাপাশি সময়ের সঙ্গে বিমানবন্দরকে আধুনিকায়নের কাজও চলছে পর্যায়ক্রমে। আর এসব কারণে আকাশপথে যাত্রীর সংখ্যা বাড়ছে। ফলে এয়ারওয়েজ কোম্পানিগুলো বাড়িয়ে যাচ্ছে তাদের ফ্লাইটের সংখ্যা।
গত ১০ বছরের বেশি সময় ধরে বরিশাল-ঢাকা রুটে নিয়মিত যাতায়াত করছেন এমন কয়েকজন যাত্রীর সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, গত ২ থেকে ৩ বছরে সবচেয়ে বেশি পরিবর্তন ঘটেছে বিমানবন্দরের নিরাপত্তা ব্যবস্থায়।
এ রুটের নিয়মিত যাত্রী ডা. মারুফ জানান, বরিশাল বিমানবন্দরে আগে থেকেই দ্রুত সেবা পাওয়া যেত। তবে বর্তমানে টার্মিনাল এলাকায় নিরাপত্তা ব্যবস্থা কঠোর করা হয়েছে। যাত্রীদের বসার জন্য পর্যাপ্ত চেয়ারের ব্যবস্থাও করা হয়েছে।
অপরদিকে ব্যবসায়ী সিদ্দিকুর রহমান জানান, কিছুদিন আগেও বরিশাল এয়ারপোর্টে লাগেজ সনাতন পদ্ধতিতে যাত্রীদের বুঝিয়ে দিতো। সে কারণে প্রতিটি ফ্লাইটের যাত্রীদের লাগেজ নিতে গিয়ে পড়তে হতো ভোগান্তিতে। এ সিস্টেমে লাগেজ ক্ষতিগ্রস্তও হতো। তবে সম্প্রতি বেল্ট লাগানোয় এ সমস্যার সমাধান হয়ে গেছে।
শুধু যাত্রীরা নয়, বিমানবন্দরে সেবার মান বাড়ার বিষয়টি জানিয়েছেন বেসরকারি বিমান সংস্থাগুলোর ফ্লাইট পরিচালনার দায়িত্বে থাকা স্টাফরাও।
বরিশাল বিমানবন্দর সূত্রে জানা গেছে, ৩৪ বছর আগে নির্মিত এই বিমানবন্দরে বর্তমানে বাংলাদেশ বিমান, বেসরকারি সংস্থা মিলিয়ে সপ্তাহে ১৫টি ফ্লাইটে যাত্রী পরিবহন করা হচ্ছে। আর এর সবগুলোই বরিশাল-ঢাকা রুটে। এরমধ্যে বিমান বাংলাদেশ প্রতি সপ্তাহে ৫টি, নভোএয়ার ৭টি ও ইউএস বাংলা ৩টি ফ্লাইট পরিচালনা করছে। যেখানে বছর খানেক আগেও সপ্তাহে ৪/৫ দিন মাত্র ৭/৮ টি ফ্লাইট পরিচালিত হতো।
পরিসংখ্যান অনুযায়ী দিনে দিনে এ এয়ারপোর্টে যাত্রীদের সংখ্যা বাড়ছে। শুধু আগস্ট মাসের হিসেব থেকে দেখা যায়, বরিশাল বিমানবন্দর থেকে ৪ হাজার ২০৮ জন যাত্রী ঢাকার উদ্দেশ্যে যাত্রা করেছেন। বছর দুই আগেও এ সংখ্যা অর্ধেকের মতো ছিল।
এদিকে এয়ারওয়েজ সংস্থাগুলোর পাশাপাশি যাত্রীদের সেবার মান বাড়াতে বরিশাল বিমানবন্দর আধুনিকায়নের কাজ প্রতিনিয়ত চলছে। বর্তমানে রানওয়েতে ওভার-লে দেওয়ার কাজ চলছে। এছাড়া রানওয়েকে সি গ্রেড থেকে বি গ্রেডে উন্নীতকরণসহ রাত্রীকালিন ফ্লাইট পরিচালনার জন্য লাইন লাগানোর কাজ শুরু হওয়ার বিষয়টিও প্রক্রিয়াধীন। পাশাপাশি বরিশাল বিমানবন্দরে সার্বক্ষণিক নিরাপত্তার জন্য আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর জন্য একটি ব্যারাক হাউস তৈরি করা হচ্ছে। অল্প সময়ের মধ্যেই আবহাওয়া অফিসের কার্যক্রমও শুরু হতে যাচ্ছে বরিশাল বিমানবন্দরে।
এছাড়াও সাম্প্রতিক সময়ে গোটা বিমানবন্দর এলাকার সীমানা প্রাচীর সংস্কার করা হয়েছে। সীমানা সংলগ্ন নিরাপত্তা ব্যবস্থা নিশ্চিতের জন্য পোস্টলাইট আধুনিকায়ন করা হয়েছে। সংস্কারের মাধ্যমে আধুনিকায়ন করা হচ্ছে একটি ভিআইপি রেস্ট হাউজ।
বিমান সংস্থাগুলোকে যুগোপযোগী সেবা দিতে সংযুক্ত করা হয়েছে বিমানবন্দরে দায়িত্বরত ফায়ার সার্ভিস অ্যান্ড সিভিল ডিফেন্সের জন্য আধুনিক গাড়ি, রয়েছে যাত্রী সেবার জন্য একটি সচল অ্যাম্বুলেন্স।
আর সার্বিক নিরাপত্তার জন্য বিমানবন্দর কর্তৃপক্ষের নিজস্ব যানবাহন, সিকিউরিটি ছাড়াও বরিশাল মট্রোপলিটন পুলিশ, ১০ আর্মড ব্যাটেলিয়ান পুলিশ ও আনসার সদস্যরা নিয়মিত দায়িত্ব পালন করছেন।
বিমানবন্দরের কর্মকর্তাদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, বরিশাল বিমানবন্দরের টার্মিনালে আসা এবং যাওয়ার যাত্রীদের জন্য আলাদাভাবে সব ব্যবস্থা চালু রাখা হয়েছে। শুধুমাত্র জনবল (ক্লিনার-মালি) সংকটের কারণে মাঝে মধ্যে ছোট-খাটো কিছু সমস্যা দেখা দেয়।
তাদের মতে, বিমান সংস্থাগুলোকে প্রয়োজনীয় সব সেবা দেওয়ার কারণেই এখন সপ্তাহে নিয়মিত ১৫টি ফ্লাইট ঢাকা-বরিশাল রুটে আসা যাওয়া করছে। আর প্রতিটি ফ্লাইটেই পর্যাপ্ত যাত্রী হচ্ছে।
কর্মকর্তারা জানান, আগে রানওয়েতে কুকুর-শেয়াল ও পাখির উপদ্রব থাকলেও নিয়মিত তত্ত্বাবধানের কারণে সেগুলো এখন নেই বললেই চলে। আবার আইন অনুযায়ী এয়ারপোর্ট এলাকার ৫ ফিটের মধ্যে কোনো ধরনের স্থাপনা এবং ২ হাজার ফিটের মধ্যে বড় কোনো স্থাপনা থাকার নিয়ম নেই। এয়ারপোর্টের দক্ষিণ দিকে ব্যক্তি মালিকানাধীন কিছু গাছপালা থাকলেও সম্প্রতি সেগুলো ছেটে দেওয়া হয়েছে। যাতে নির্বিঘ্নে ফ্লাইট পরিচালনা করা সম্ভব হয়।
তবে বরিশাল বিমানবন্দরে যেমন দক্ষ জনবলের সংকট রয়েছে, তেমনি সময়ের চাহিদা অনুযায়ী এখন ভিওআর নেভিগেশন সিস্টেম চালু করাটাও প্রয়োজন বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা। যদিও এ কার্যক্রম ইতোমধ্যে হাতে নেওয়া হয়েছে বলে জানিয়েছেন সংশ্লিষ্টরা। আর নতুন সিভিল অ্যাভিয়েশন নীতিমালা বাস্তবায়ন হলে জনবল সংকটসহ বিভিন্ন সমস্যা নিরসন হবে বলে আশা কর্মকর্তাদের।