একেমন প্রশ্ন যুবলীগ চেয়ারম্যানের?
- আপডেট সময় : ১০:২৩:১৩ অপরাহ্ন, বুধবার, ১৮ সেপ্টেম্বর ২০১৯ ১১৪ বার পড়া হয়েছে
নিউজ ডেস্ক
আওয়ামী যুবলীগের নেতাদের বিরুদ্ধে অভিযোগ থাকলে এতদিন কেন আইনশৃঙ্খলা বাহিনী ব্যবস্থা নেয়নি- এমন প্রশ্ন তুলেছেন যুবলীগের চেয়ারম্যান ওমর ফারুক চৌধুরী।
রাজধানীর মতিঝিলের ফকিরাপুল এলাকায় ইয়াং ম্যান্স ক্লাবের অবৈধ ক্যাসিনোর মালিক ঢাকা মহানগর যুবলীগ দক্ষিণের সাংগঠনিক সম্পাদক খালেদ মাহমুদ ভূঁইয়াকে আটকের পর তাৎক্ষণিক প্রতিক্রিয়ায় সংবাদকর্মীদের কাছে ওমর ফারুক চৌধুরী এমন প্রশ্ন রাখেন।
বুধবার রাত ৮টা ২৫ মিনিটের দিকে র্যাবের একটি দল গুলশানের নিজ বাসা থেকে খালেদ মাহমুদ ভূঁইয়াকে আটক করেন। এ সময় ওই বাসা থেকে অবৈধ অস্ত্র ও মাদক উদ্ধার করা হয়। সেই সঙ্গে ফকিরাপুলে অবস্থিত তার ক্যাসিনোতে অভিযান চালিয়ে ১৪২ জনকে আটক করে বিভিন্ন মেয়াদে সাজাও দেয়া হয়। উদ্ধার করা হয় ২০ লক্ষাধিক টাকা ও বিপুল পরিমাণ মাদক।
খালেদ মাহমুদ ভূঁইয়াকে আটকের প্রতিক্রিয়ায় যুবলীগ চেয়ারম্যান ওমর ফারুক বলেন, ‘ঢাকা মহানগর দক্ষিণ যুবলীগ অত্যন্ত সুসংগঠিত একটি ইউনিট। তাদের বিরুদ্ধে এতদিন কোনো অভিযোগ এলো না, হঠাৎ কেন অভিযোগ আসল? আর অভিযোগ থাকলে এতদিন কেন ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়নি?’ খালেদের গ্রেফতার দল ও যুবলীগকে পঙ্গু করার ষড়যন্ত্র কি-না, সে প্রশ্নও রাখেন যুবলীগের চেয়ারম্যান।
তিনি বলেন, ‘নেতাকর্মীদের বিরুদ্ধে অভিযোগ থাকলে তা আওয়ামী যুবলীগের নিজস্ব ট্রাইব্যুনালের মাধ্যমে তদন্ত করা হবে এবং দোষীদের বিরুদ্ধে দলীয় কঠোর সিদ্ধান্ত নেয়া হবে।’
তিনি এ সময় অনলাইন সাংবাদিকদেরও সমালোচনা করেন। বলেন, অনলাইন মিডিয়ায় আসল ৫শ’ জায়গায় ক্যাসিনো চলছে, তো ৫শ’ জায়গায় তো ক্যাসিনো একদিনে হয়নি। প্রিন্ট মিডিয়ায় আসলো না কেন?
সম্প্রতি আওয়ামী লীগের কয়েকজন কেন্দ্রীয় নেতাকে যুবলীগের ওপর ক্ষুব্ধ প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, ‘ঢাকায় অবৈধভাবে ক্যাসিনো ব্যবসা চালিয়ে যাচ্ছে যুবলীগ নেতারা। আমার কাছে সবার সব তথ্য আছে।’
এরপর গত শনিবার দলের কার্যনির্বাহী সংসদের সভায় যুবলীগ নিয়ে কঠোর হুঁশিয়ারি উচ্চারণ করেন আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনা। যুবলীগ দক্ষিণের সভাপতি ইসমাইল চৌধুরী সম্রাটকে ইঙ্গিত করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘ঢাকায় ক্যাডার চাঁদাবাজ বাহিনী গড়ে তুলে সবকিছু নিয়ন্ত্রণ করে সে। আমার সংগঠনে চাঁদাবাজ দরকার নেই।’ আওয়ামী লীগের কয়েকজন কেন্দ্রীয় নেতা বলেন, ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশ একটি প্রতিবেদনে প্রধানমন্ত্রীকে জানিয়েছে, রাজধানীতে যুবলীগের বিভিন্ন অপতৎপরতা চলছে। শেখ হাসিনাকে অবহিত করা হয়েছে ঢাকায় অন্তত ১০০টি ক্যাসিনো চলছে যুবলীগের তত্ত্বাবধানে। পুলিশের এই প্রতিবেদন পেয়ে যুবলীগের ওপর ক্ষোভ প্রকাশ করেন তিনি।
শেখ হাসিনার উদ্ধৃতি দিয়ে আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় নেতারা বলেন, রাজধানীর সর্বত্র যুবলীগের নেতাদের ক্যাসিনো গড়ে উঠেছে। কেন্দ্রীয় নেতাদের প্রধানমন্ত্রী আরও বলেন, যেখানে নেপাল থেকে ক্যাসিনো পরিচালনার জন্য মেয়ে পর্যন্ত আনা হয়েছে। ওইসব ক্যাসিনোর জন্য নিরাপত্তা প্রহরীও আনা হয়েছে নেপাল থেকে। দলের সম্পাদকমণ্ডলীর এক সদস্য বলেন, প্রধানমন্ত্রীর কাছে তথ্য আছে, রাজধানীর সেগুনবাগিচা এলাকায় যুবলীগ নিয়ন্ত্রিত ক্যাসিনো-বার রয়েছে ছয়টি। এর সঙ্গে যুবলীগ দক্ষিণের প্রভাবশালী নেতাসহ অন্যরা রয়েছে।
শেখ হাসিনা আরও বলেন, আমার কাছে আরও তথ্য আছে, রাজধানীর সব সুউচ্চ ভবনের ছাদ দখল নিয়েছে যুবলীগের নেতারা। সেখানে ক্যাসিনো খোলা হয়েছে। প্রধানমন্ত্রী বলেন, যুবলীগের সবার আমলনামা আমার হাতে এসেছে। আমি সবার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে বলে দিয়েছি। আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর আরেক সদস্য বলেন, গত শনিবার আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় কার্যনির্বাহী সংসদের সভায়ও যুবলীগের প্রতি প্রধানমন্ত্রী ক্ষোভ প্রকাশ করেন। ওই নেতা বলেন, প্রধানমন্ত্রীর অভিযোগ যুবলীগের মহানগর উত্তর-দক্ষিণের প্রায় সব নেতা ঢাকায় ক্যাসিনো পরিচালনা করে আসছে দীর্ঘদিন ধরে। আর এর ভাগ যুবলীগের সবার পকেটে যায়।
প্রধানমন্ত্রীর উদ্ধৃতি দিয়ে তিনি আরও বলেন, প্রধানমন্ত্রীর জন্মদিন উপলক্ষে যুবলীগের মাসব্যাপী কর্মসূচি পালনের বিষয়টি অবহিত হলে শেখ হাসিনা বলেন, চাঁদাবাজির টাকা হালাল করতে আমার জন্মদিন উপলক্ষে কর্মসূচি নিয়েছে যুবলীগ। আমি এসব দোয়া চাই না। সভাপতিমণ্ডলীর ওই সদস্য আরও বলেন, যুবলীগের নেতারা চাঁদাবাজি করে কে, কত টাকার মালিক হয়েছে সব হিসাব আমার কাছে আছে।
দলের সভাপতিমণ্ডলীর আরেক সদস্য বলেন, যুবলীগ মহানগর দক্ষিণের সাংগঠনিক সম্পাদক খালেদ মাহমুদ ভূঁইয়ার ব্যাপারে ক্ষোভ প্রকাশ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, তিন গাড়ি অস্ত্র থাকে তার বহরে। তিনি আরও বলেন, আমার দলে চাঁদাবাজ-সন্ত্রাসী দরকার নাই। এরা দলকে, রাজনীতিকে কিছু দেয় না। এরা দলের বোঝা। সংশোধন না হলে এ দেশে জঙ্গি যেভাবে দমন করেছি সন্ত্রাসী বাহিনীও সেভাবে দমন করব।
শেষ খবর পাওয়া পর্যন্ত রাজধানীর আরও দুই ক্যাসিনোতে র্যাবের অভিযান চলছিল।