গুলশান পুলিশ চেকপোস্টে জব্দ করা ইয়াবা বিক্রি করে কনস্টেবল!
![](https://sokalersongbad.com/wp-content/themes/newspaper-pro/assets/images/reporter.jpg)
- আপডেট সময় : ১০:৩৩:৪৬ পূর্বাহ্ন, বুধবার, ১৮ সেপ্টেম্বর ২০১৯ ১২৫ বার পড়া হয়েছে
![](https://sokalersongbad.com/wp-content/plugins/print-bangla-news/assest/img/print-news.png)
ডি এম পি প্রতিবেদকঃ
রাজধানীর গুলশানের গুদারাঘাট চেকপোস্টে জব্দ করা ইয়াবার একটি অংশ ফের বিক্রি করা হয় গাজীপুরের কোনাবাড়ীর দুই মাদক ব্যবসায়ীর কাছে। আর তা বিক্রি করেন সেই চেকপোস্টে দায়িত্ব পালনকারী কনস্টেবল শরিফুল ইসলাম। পুলিশ এখন গাজীপুরের দুই ইয়াবা ব্যবসায়ী শাহিন ও মফিজকে খুঁজছে। প্রাথমিকভাবে তাদের কাছে দেড়শ’ পিস ইয়াবা বিক্রির তথ্য মিলেছে।
টাকার বিনিময়ে আসামি ছেড়ে দেওয়ায় ও জব্দ ইয়াবা থানায় জমা না দেওয়ার ঘটনায় গ্রেফতার পুলিশের পাঁচ সদস্যকে জিজ্ঞাসাবাদে এসব তথ্য পেয়েছেন তদন্ত-সংশ্নিষ্ট কর্মকর্তারা। উত্তরা পূর্ব থানায় তাদের রিমান্ডে জিজ্ঞাসাবাদ চলছে।
রিমান্ডে থাকা পাঁচ সদস্যকে জিজ্ঞাসাবাদে যুক্ত পুলিশের উত্তরা বিভাগের দায়িত্বশীল এক কর্মকর্তা বলেন, আসামিদের তথ্যমতে, সেদিন এক ব্যক্তিকে আটক করে এক হাজার পিসের বেশি ইয়াবা জব্দ করা হয়েছিল। কিন্তু লোভে পড়ে তারা জব্দ করা ইয়াবাগুলো অবৈধভাবে নিজেদের হেফাজতে রাখে। যার কাছ থেকে ইয়াবা জব্দ করা হয়েছিল এবং পরে যে দু’জনের কাছে ইয়াবা বিক্রি করা হয়েছে, তাদের গ্রেফতার করা গেলে আসল রহস্য বেরিয়ে আসবে।
পুলিশ কর্মকর্তা বলেন, গতকাল মঙ্গলবার রিমান্ডের প্রথম দিন আসামিদের দেওয়া তথ্যগুলো যাচাই-বাচাই করা হচ্ছে। এ ছাড়া দুই মাদক ব্যবসায়ীকে গ্রেফতার করে জিজ্ঞাসাবাদ করা হলে হয়তো জানা যাবে, এর আগেও তারা এসব আসামির কাছ থেকে ইয়াবা কিনেছিল কি-না।
গত ১১ সেপ্টেম্বর গুলশানে গুদারাঘাট এলাকার চেকপোস্টে দায়িত্বরত পুলিশ সদস্যরা এক ব্যক্তিকে ধরার পর ইয়াবা রেখে টাকার বিনিময়ে ছেড়ে দেন। গত রোববার উত্তরায় আমর্ড পুলিশ ব্যাটালিয়ন (এপিবিএন)-১-এর একটি ব্যারাকে তারা সেই ইয়াবার একটি অংশ ভাগবাটোয়ারা করে। সে সময় এপিবিএন-১-এর কনস্টেবল প্রশান্ত মটক করা হয়। তাদের দেওয়া তথ্য অনুযায়ী ঘটনার দিন চেকপোস্টের নেতৃত্বে থাকা গুলশান থানার সহকারী উপপরিদর্শক (এএসআই) মাসুদ আহমেদ মিয়াজীকে গ্রেফতার করা হয়। উত্তরা পূর্ব থানায় তাদের বিরুদ্ধে মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ আইনে মামলার পর গত সোমবার আদালতে হাজির করে বিভিন্ন মেয়াদে রিমান্ডে নেয় পুলিশ।
রিমান্ডে থাকা কনস্টেবল শরিফুল ইসলাম জিজ্ঞাসাবাদে জানিয়েছে, সে দেড়শ’ পিস ইয়াবা ভাগে পেয়েছিল। সেগুলো পূর্বপরিচিত গাজীপুরের কোনাবাড়ীর আমবাগান মিতালী ক্লাব এলাকার শাহিন ও নছের মার্কেট এলাকার মফিজের কাছে ১৫ হাজার টাকায় বিক্রি করেন। অপর আসামি কনস্টেবল প্রশান্ত মণ্ডল জিজ্ঞাসাবাদে জানান, ইয়াবাগুলো জব্দ করার পর চেকপোস্টের নেতৃত্বে থাকা এএসআই মাসুদ আহমেদ মিয়াজীর নির্দেশেই তারা তা নিজেদের মধ্যে বণ্টন করে নেয়। এএসআই এ সময় নিজের কাছে ২০০ পিস ইয়াবা রাখে। নায়েক জাহাঙ্গীর আলম এবং কনস্টেবল রনি মোল্লাও দেড়শ’ পিস করে ইয়াবা পায়। তবে রনি মোল্লা দাবি করেছে, তার ভাগের ইয়াবাগুলো সে কনস্টেবল শরিফুলের কাছে বিক্রি করেছে।
তদন্ত-সংশ্নিষ্ট এক পুলিশ কর্মকর্তা জানিয়েছেন, তারা ধারণা করছেন এএসআই মাসুদ ও নায়েক জাহাঙ্গীরও তাদের ভাগের ইয়াবা বিক্রি করে দিয়েছে। কিন্তু জিজ্ঞাসাবাদে তারা সে বিষয়ে মুখ না খুলে বিভ্রান্তিকর তথ্য দিচ্ছে। এর আগেও তারা একই ধরনের অপকর্ম করেছিল কি-না সে বিষয়েও তাদের জিজ্ঞাসাবাদ করা হচ্ছে।
মামলার তদন্ত কর্মকর্তা উত্তরা পূর্ব থানার পরিদর্শক (তদন্ত) পরিতোষ চন্দ্র সমকালকে বলেন, পাঁচ আসামিকে জিজ্ঞাসাবাদ চলছে। তাদের রিমান্ডের সময় শেষ হলে বিস্তারিত জানা যাবে। তবে এখন পর্যন্ত জিজ্ঞাসাবাদে তারা তাদের অপকর্মের কথা স্বীকার করেছে। কনস্টেবল প্রশান্ত মণ্ডলের কাছ থেকে এখন পর্যন্ত ৫৫২ পিস ইয়াবা উদ্ধার হলেও একই দলে থাকা অপর আসামিদের ইয়াবা কোথায়, তা জিজ্ঞাসাবাদ করে জানার চেষ্টা করা হচ্ছে।
ঢাকা মহানগর পুলিশের এক কর্মকর্তা জানিয়েছেন, নিয়ম অনুযায়ী পুলিশের কোনো সদস্যের বিরুদ্ধে ফৌজদারি মামলা হলে সেই সদস্য সঙ্গে সঙ্গে সাসপেন্ড হয়ে যায়। ইয়াবাকাণ্ডে জড়িত পুলিশের এই পাঁচ সদস্যকে নূ্যনতম ছাড় দেওয়া হয়নি। তদন্তেও ছাড় দেওয়া হবে না। এর বাইরে যদি পুলিশের কোনো সদস্য একই ধরনের অনিয়ম বা অপরাধ করার চেষ্টা চালায়, তাদেরও ছাড় দেওয়া হবে না।