ঢাকা ০৪:৩৮ পূর্বাহ্ন, বুধবার, ২৪ এপ্রিল ২০২৪, ১০ বৈশাখ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ
সংবাদ শিরোনাম :
Logo মানসম্পন্ন শিক্ষা নিশ্চিত করা আমাদের অঙ্গীকারঃ ড. তৌফিক রহমান চৌধুরী  Logo মেট্রোপলিটন ইউনিভার্সিটির নতুন বাসের উদ্বোধন Logo মানসম্পন্ন শিক্ষা নিশ্চিত করতে শিক্ষকদের ভূমিকা অগ্রগণ্য: ভিসি প্রফেসর ড. মোহাম্মদ জহিরুল হক Logo মঙ্গল শোভাযাত্রা – তাসফিয়া ফারহানা ঐশী Logo সাস্টিয়ান ব্রাহ্মণবাড়িয়া এর ইফতার মাহফিল সম্পন্ন Logo কুবির চট্টগ্রাম স্টুডেন্টস ওয়েলফেয়ার এসোসিয়েশনের ইফতার ও পূর্নমিলনী Logo অধ্যাপক জহীর উদ্দিন আহমেদের মায়ের মৃত্যুতে শাবির মহান মুক্তিযুদ্ধের চেতনা ও মুক্ত চিন্তা চর্চায় ঐক্যবদ্ধ শিক্ষকবৃন্দ পরিষদের শোক প্রকাশ Logo শাবির অধ্যাপক জহীর উদ্দিনের মায়ের মৃত্যুতে উপাচার্যের শোক প্রকাশ Logo বিশ কোটিতে গণপূর্তের প্রধান হওয়ার মিশনে ‘ছাত্রদল ক্যাডার প্রকৌশলী’! Logo দূর্নীতির রাক্ষস ফায়ার সার্ভিসের এডি আনোয়ার!




প্রাথমিক বিদ্যালয়ের কোটি কোটি টাকা লোপাট করছে অসাধু সিন্ডিকেট!

প্রতিনিধির নাম
  • আপডেট সময় : ১২:৩১:১৯ অপরাহ্ন, রবিবার, ২৫ অগাস্ট ২০১৯ ১৩৫ বার পড়া হয়েছে

জেলা প্রতিনিধি:
কুড়িগ্রামে শিক্ষা বিভাগ ও প্রভাবশালী মহলের একটি সিন্ডিকেট সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের বিভিন্ন প্রকল্পের কোটি কোটি টাকা হরিলুট করছে। সবকিছু জেনেও অদৃশ্য কারণে নীরব রয়েছে কর্তৃপক্ষ। এতে সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় উন্নয়নে সরকারের উদ্দেশ্য ব্যাহত হচ্ছে।

দেশের প্রাথমিক শিক্ষার মান উন্নয়নের জন্য বিভিন্ন প্রকল্পে সরকার কোটি কোটি ব্যয় করছে। সরকারের সদিচ্ছা সত্ত্বেও কিছু অসাধু শিক্ষা কর্মকর্তা, প্রধান শিক্ষক, ম্যানেজিং কমিটিসহ প্রভাবশালী সিন্ডিকেটের কারণে মাঠ পর্যায়ে মিলছে না এর সুফল। ফলে দিনের পর দিন শত ভোগান্তির মধ্যেই বিদ্যালয়গুলোতে পাঠদান চলছে। যার প্রমাণ মিলেছে কুড়িগ্রাম জেলার সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে ক্ষুদ্র মেরামত ও সংস্কার নামের একটি প্রকল্পে।

প্রভাবশালীদের মদদপুষ্ট হয়ে সদরের বেলগাছা ইউনিয়নের ১নং ওয়ার্ড কাউন্সিলর আমিনুল ইসলামের নেতৃত্বে একটি চক্র হাতিয়ে নিচ্ছে লাখ-লাখ টাকা। তারা শিক্ষকদের ভয়ভীতি দেখিয়ে ৩৫টি চেকের মাধ্যমে ক্ষুদ্র মেরামত ও সংস্কার প্রকল্পের ৩৫ লাখ টাকা হাতিয়ে নিয়েছে। আর এই সুযোগে কিছু প্রধান শিক্ষক সিন্ডিকেটের কাছে চেক বিক্রি করে নিজেরাই সেই অর্থ আত্মসাৎ করছেন।

জানা গেছে বিদ্যালয়গুলোতে সরকারের কোনো উন্নয়ন প্রকল্প আসলেও সহকারী শিক্ষকরা জানতে পারেন না। ফলে সহকারী শিক্ষক ও ম্যানেজিং কমিটির অগোচরেই প্রকল্পের টাকা গায়েব হয়ে যাচ্ছে। জেলার বিভিন্ন সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে যেসব প্রকল্প বাস্তবায়িত হচ্ছে এর মধ্যে ক্ষুদ্র মেরামত ও সংস্কারে দেড় থেকে দুই লাখ টাকা, নিয়মিত রক্ষণাবেক্ষণে ৪০ হাজার টাকা, স্লিপ ৪০ থেকে ১ লাখ টাকা, ওয়াশ ব্লক মেইনটেনেন্সে ২০ হাজার টাকা, সীমানা প্রাচীর নির্মাণে সর্বোচ্চ ৭ লাখ টাকা এবং প্রাক-প্রাথমিকে ১০ হাজার টাকা বরাদ্দ রয়েছে।

সরেজমিনে দেখা যায় পূর্ব হলোখানা, বীর প্রতীক তারামন বিবি, চাঁন্দের খামার, কাতলামারী এবং ঘোগাদহসহ বিভিন্ন সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় অর্থ বরাদ্দ পেলেও একটুও কাজ হয়নি। উল্টো বরাদ্দের টাকা লোপাট হয়েছে। নাম প্রকাশ না করার শর্তে এসব বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষকরা বলেন, সরকার কী কী বরাদ্দ দেয় সেটা প্রধান শিক্ষক আর কমিটির সভাপতিই ভালো জানেন। আমাদেরকে কেউ কিছুই জানান না।

কাতলামারী সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক মখমল হোসেন বলেন, অফিসের নির্দেশেই আমি স্কুলের ক্ষুদ্র মেরামত ও সংস্কার প্রকল্পের দেড় লাখ টাকার চেক দিয়েছি। আমাকে প্রশ্ন না করে অফিসে গিয়ে প্রশ্ন করেন।

এদিকে বেশ কয়েকটি বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, আমিনুল মেম্বার তার ক্যাডার বাহিনী নিয়ে এসে হুমকি দিয়ে চেক নিয়ে গেছে। হুমকির মুখে পড়ে অনেকেই ৫০ হাজার/ ৮০ হাজার টাকায় তাকে চেক দিয়েছে। বিষয়টি শিক্ষা অফিসকে জানানোর পরও তারা কোনো ব্যবস্থা নেয়নি।

তারা আরও বলেন, প্রকল্প ভেদে উপজেলা শিক্ষা অফিসকে ৫/২০ হাজার টাকা, উপজেলার অন্যান্য বিভাগকে ৫/১০ হাজার টাকা এবং জেলা-উপজেলার শিক্ষক নেতাসহ স্থানীয় প্রভাবশালীদের মোটা অঙ্কের উৎকোচ দিতে হয়।

পূর্ব হলোখানা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের ম্যানেজিং কমিটির সভাপতি আনসার আলী বলেন, স্কুলের প্রধান শিক্ষক কোনো সভা না করেই কয়েক মাসের মাথায় আমার কাছ থেকে ৫টি চেকে সই করে নেন। আমি জিজ্ঞেস করলেই বলেন বরাদ্দ পাওয়া যাবে তাই দরকার। আমি বয়স্ক মানুষ এতো কিছু বুঝি না, তাই সই দিয়েছি।

অন্যদিকে রাজারহাট উপজেলার আবুল হোসেন কিং ছিনাই সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সভাপতি মোস্তফা কামাল বলেন, ‘আমি লোকমুখে জানতে পারি প্রধান শিক্ষক আমার সই জাল করে ৮১ হাজার টাকা উঠিয়েছেন। পরে তাকে এ নিয়ে জিজ্ঞাসা করলে তিনি ভুল স্বীকার করেন।’

এ বিষয়ে স্কুলের প্রধান শিক্ষক নুরন্নবী বলেন, ভাই আমি ভুল করেছি। স্কুলে কাজ চলছে তাই টাকা তোলা জরুরি ছিল। সভাপতির সঙ্গে যোগাযোগ করেছিলাম, কিন্তু তার দেখা না পাওয়ায় এই কাজ করেছি।

সিন্ডিকেট চক্রের মূল হোতা আমিনুল ইসলাম বলেন, এসব বিষয় কি আর ফোনে বলা যায়। আপনি আসেন সামনাসামনি চা খেতে খেতে কথা হবে।

এ বিষয়ে সদর উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিসার লুৎফর রহমান সবকিছুই নিয়মের মধ্যে হচ্ছে দাবি করে বলেন, আমার কাছে কোনো শিক্ষক অভিযোগ দেয়নি, অভিযোগ দিলে তখন দেখা যাবে।

অপরদিকে জেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিসার শহিদুল ইসলাম বলেন, বিষয়গুলো নিয়ে শিক্ষা সচিব স্যার অবগত আছেন। এ বিষয়ে দ্রুতই ব্যবস্থা নেয়া হবে।

নিউজটি শেয়ার করুন

আপনার মন্তব্য

Your email address will not be published. Required fields are marked *

আপনার ইমেইল এবং অন্যান্য তথ্য সংরক্ষন করুন

ট্যাগস :




প্রাথমিক বিদ্যালয়ের কোটি কোটি টাকা লোপাট করছে অসাধু সিন্ডিকেট!

আপডেট সময় : ১২:৩১:১৯ অপরাহ্ন, রবিবার, ২৫ অগাস্ট ২০১৯

জেলা প্রতিনিধি:
কুড়িগ্রামে শিক্ষা বিভাগ ও প্রভাবশালী মহলের একটি সিন্ডিকেট সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের বিভিন্ন প্রকল্পের কোটি কোটি টাকা হরিলুট করছে। সবকিছু জেনেও অদৃশ্য কারণে নীরব রয়েছে কর্তৃপক্ষ। এতে সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় উন্নয়নে সরকারের উদ্দেশ্য ব্যাহত হচ্ছে।

দেশের প্রাথমিক শিক্ষার মান উন্নয়নের জন্য বিভিন্ন প্রকল্পে সরকার কোটি কোটি ব্যয় করছে। সরকারের সদিচ্ছা সত্ত্বেও কিছু অসাধু শিক্ষা কর্মকর্তা, প্রধান শিক্ষক, ম্যানেজিং কমিটিসহ প্রভাবশালী সিন্ডিকেটের কারণে মাঠ পর্যায়ে মিলছে না এর সুফল। ফলে দিনের পর দিন শত ভোগান্তির মধ্যেই বিদ্যালয়গুলোতে পাঠদান চলছে। যার প্রমাণ মিলেছে কুড়িগ্রাম জেলার সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে ক্ষুদ্র মেরামত ও সংস্কার নামের একটি প্রকল্পে।

প্রভাবশালীদের মদদপুষ্ট হয়ে সদরের বেলগাছা ইউনিয়নের ১নং ওয়ার্ড কাউন্সিলর আমিনুল ইসলামের নেতৃত্বে একটি চক্র হাতিয়ে নিচ্ছে লাখ-লাখ টাকা। তারা শিক্ষকদের ভয়ভীতি দেখিয়ে ৩৫টি চেকের মাধ্যমে ক্ষুদ্র মেরামত ও সংস্কার প্রকল্পের ৩৫ লাখ টাকা হাতিয়ে নিয়েছে। আর এই সুযোগে কিছু প্রধান শিক্ষক সিন্ডিকেটের কাছে চেক বিক্রি করে নিজেরাই সেই অর্থ আত্মসাৎ করছেন।

জানা গেছে বিদ্যালয়গুলোতে সরকারের কোনো উন্নয়ন প্রকল্প আসলেও সহকারী শিক্ষকরা জানতে পারেন না। ফলে সহকারী শিক্ষক ও ম্যানেজিং কমিটির অগোচরেই প্রকল্পের টাকা গায়েব হয়ে যাচ্ছে। জেলার বিভিন্ন সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে যেসব প্রকল্প বাস্তবায়িত হচ্ছে এর মধ্যে ক্ষুদ্র মেরামত ও সংস্কারে দেড় থেকে দুই লাখ টাকা, নিয়মিত রক্ষণাবেক্ষণে ৪০ হাজার টাকা, স্লিপ ৪০ থেকে ১ লাখ টাকা, ওয়াশ ব্লক মেইনটেনেন্সে ২০ হাজার টাকা, সীমানা প্রাচীর নির্মাণে সর্বোচ্চ ৭ লাখ টাকা এবং প্রাক-প্রাথমিকে ১০ হাজার টাকা বরাদ্দ রয়েছে।

সরেজমিনে দেখা যায় পূর্ব হলোখানা, বীর প্রতীক তারামন বিবি, চাঁন্দের খামার, কাতলামারী এবং ঘোগাদহসহ বিভিন্ন সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় অর্থ বরাদ্দ পেলেও একটুও কাজ হয়নি। উল্টো বরাদ্দের টাকা লোপাট হয়েছে। নাম প্রকাশ না করার শর্তে এসব বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষকরা বলেন, সরকার কী কী বরাদ্দ দেয় সেটা প্রধান শিক্ষক আর কমিটির সভাপতিই ভালো জানেন। আমাদেরকে কেউ কিছুই জানান না।

কাতলামারী সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক মখমল হোসেন বলেন, অফিসের নির্দেশেই আমি স্কুলের ক্ষুদ্র মেরামত ও সংস্কার প্রকল্পের দেড় লাখ টাকার চেক দিয়েছি। আমাকে প্রশ্ন না করে অফিসে গিয়ে প্রশ্ন করেন।

এদিকে বেশ কয়েকটি বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, আমিনুল মেম্বার তার ক্যাডার বাহিনী নিয়ে এসে হুমকি দিয়ে চেক নিয়ে গেছে। হুমকির মুখে পড়ে অনেকেই ৫০ হাজার/ ৮০ হাজার টাকায় তাকে চেক দিয়েছে। বিষয়টি শিক্ষা অফিসকে জানানোর পরও তারা কোনো ব্যবস্থা নেয়নি।

তারা আরও বলেন, প্রকল্প ভেদে উপজেলা শিক্ষা অফিসকে ৫/২০ হাজার টাকা, উপজেলার অন্যান্য বিভাগকে ৫/১০ হাজার টাকা এবং জেলা-উপজেলার শিক্ষক নেতাসহ স্থানীয় প্রভাবশালীদের মোটা অঙ্কের উৎকোচ দিতে হয়।

পূর্ব হলোখানা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের ম্যানেজিং কমিটির সভাপতি আনসার আলী বলেন, স্কুলের প্রধান শিক্ষক কোনো সভা না করেই কয়েক মাসের মাথায় আমার কাছ থেকে ৫টি চেকে সই করে নেন। আমি জিজ্ঞেস করলেই বলেন বরাদ্দ পাওয়া যাবে তাই দরকার। আমি বয়স্ক মানুষ এতো কিছু বুঝি না, তাই সই দিয়েছি।

অন্যদিকে রাজারহাট উপজেলার আবুল হোসেন কিং ছিনাই সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সভাপতি মোস্তফা কামাল বলেন, ‘আমি লোকমুখে জানতে পারি প্রধান শিক্ষক আমার সই জাল করে ৮১ হাজার টাকা উঠিয়েছেন। পরে তাকে এ নিয়ে জিজ্ঞাসা করলে তিনি ভুল স্বীকার করেন।’

এ বিষয়ে স্কুলের প্রধান শিক্ষক নুরন্নবী বলেন, ভাই আমি ভুল করেছি। স্কুলে কাজ চলছে তাই টাকা তোলা জরুরি ছিল। সভাপতির সঙ্গে যোগাযোগ করেছিলাম, কিন্তু তার দেখা না পাওয়ায় এই কাজ করেছি।

সিন্ডিকেট চক্রের মূল হোতা আমিনুল ইসলাম বলেন, এসব বিষয় কি আর ফোনে বলা যায়। আপনি আসেন সামনাসামনি চা খেতে খেতে কথা হবে।

এ বিষয়ে সদর উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিসার লুৎফর রহমান সবকিছুই নিয়মের মধ্যে হচ্ছে দাবি করে বলেন, আমার কাছে কোনো শিক্ষক অভিযোগ দেয়নি, অভিযোগ দিলে তখন দেখা যাবে।

অপরদিকে জেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিসার শহিদুল ইসলাম বলেন, বিষয়গুলো নিয়ে শিক্ষা সচিব স্যার অবগত আছেন। এ বিষয়ে দ্রুতই ব্যবস্থা নেয়া হবে।