ঢাকা ০২:৩২ পূর্বাহ্ন, শুক্রবার, ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ
সংবাদ শিরোনাম :
Logo মানসম্পন্ন শিক্ষা নিশ্চিত করা আমাদের অঙ্গীকারঃ ড. তৌফিক রহমান চৌধুরী  Logo মেট্রোপলিটন ইউনিভার্সিটির নতুন বাসের উদ্বোধন Logo মানসম্পন্ন শিক্ষা নিশ্চিত করতে শিক্ষকদের ভূমিকা অগ্রগণ্য: ভিসি প্রফেসর ড. মোহাম্মদ জহিরুল হক Logo মঙ্গল শোভাযাত্রা – তাসফিয়া ফারহানা ঐশী Logo সাস্টিয়ান ব্রাহ্মণবাড়িয়া এর ইফতার মাহফিল সম্পন্ন Logo কুবির চট্টগ্রাম স্টুডেন্টস ওয়েলফেয়ার এসোসিয়েশনের ইফতার ও পূর্নমিলনী Logo অধ্যাপক জহীর উদ্দিন আহমেদের মায়ের মৃত্যুতে শাবির মহান মুক্তিযুদ্ধের চেতনা ও মুক্ত চিন্তা চর্চায় ঐক্যবদ্ধ শিক্ষকবৃন্দ পরিষদের শোক প্রকাশ Logo শাবির অধ্যাপক জহীর উদ্দিনের মায়ের মৃত্যুতে উপাচার্যের শোক প্রকাশ Logo বিশ কোটিতে গণপূর্তের প্রধান হওয়ার মিশনে ‘ছাত্রদল ক্যাডার প্রকৌশলী’! Logo দূর্নীতির রাক্ষস ফায়ার সার্ভিসের এডি আনোয়ার!




নীল কষ্ট

প্রতিনিধির নাম
  • আপডেট সময় : ০৯:৪১:০৫ অপরাহ্ন, রবিবার, ১৬ ডিসেম্বর ২০১৮ ১১২ বার পড়া হয়েছে

 

মুক্তিযুদ্ধের পটভূমিতে সত্য ঘটনা অবলম্বনে ছোট গল্পটি লিখেছেন—-ফারহানা মোবিন

উড়ে যাচ্ছে নীল মেঘ। পার্কের কাশফুলও মৃদু হাওয়ায় দুলছে। সেই কাশফুলের মতো করে বাতাসে দুলছে নীলার চুল। দীঘল কালো চুলগুলো পার্কের বেঞ্চের নীচে ঝুলছে। হাল্কা রোদ লেগে চুলগুলো রেশম কালো লাগছে। এতো বড় চুল নীলার ভালো লাগেনা। কিন্তু উপল এর ভীষণ প্রিয় বড় চুল। তাই নীলা তার প্রিয় বয়কাট চুলগুলোকে এতো বড় করেছে। শুধুমাত্র উপলের জন্য। উপলের ভালো লাগাকে সম্মান দেয়ার জন্য নীলার এই সাধনা।

ঘড়ির কাঁটাটা ছুটেই চলছে। বিরক্তি মাখা মুখে নীলা তাকাচ্ছে চারিদিকে। আজ কতো গুরুত্বপূর্ণ দিন। অথচ উপলের কোন খোঁজ নেই। এতো দেরী করছে।
বাদামওয়ালা ঃ আফা, বাদাম লন। স্যার আইয়া পড়বো। মনে কষ্ট লইয়েন না।
নীলা ঃ না ভাই, বাদাম লাগবে না। তুমি যাও।
হঠাৎ ছেঁড়া জামা পরে সামনে এলো ছোট্ট একটি মেয়ে। ধূলায় জট বেঁধে গেছে চুলে। দুই পা ভর্তি কাদা। বিস্ময়ের দৃষ্টিতে প্রশ্ন করলো, মেডাম, আপনি কি ছ্যাকা খাইছেন? একা একা পার্কে বইয়া আছেন?
রাগে লাল হয়ে উঠলো নীলার দুই চোখ। বিরক্তিতে বেঞ্চ ছেড়ে ঘাসের উপর বসল। বিকালটা বিদায় নিয়েছে। পাখিগুলো প্রস্তুতি নিচ্ছে বাসায় ফেরার।

ওহ! কি যে বিরক্ত লাগছে! উপল ফোন রিসিভ করছে না। হয়তো জ্যামে বসে আছে। হঠাৎ কে যেন পেছন থেকে আলতো করে ধরলো নীলার দুই চোখ। পারফিউমের মিষ্টি গন্ধ ! আধুনিকতা আর ব্যক্তিত্বে উজ্জ্বল নীলার উপল। নীলা মুহূর্তেই বুঝে ফেলল, এই প্রিয় আঙ্গুলগুলো কার।
নীল ঃ আমি যাচ্ছি। গুডবাই। তুমি অন্য মেয়ের কাছে চলে যাও।
উপল ঃ প্লীজ ‘নীল’, এমন করোনা। অফিসে মিটিং ছিলো। রাস্তায় ভয়ানক জ্যাম। তুমি এতোবার ফোন করেছো, আমি বুঝতেই পারিনি। আমি দুপুরে খাবার খাওয়ার সময় পাইনি। এখন সন্ধ্যা ৬টা।

নীলা ঃ হায় ! হায় ! চলো আগে কিছু খাবা।
উপল ঃ না কিছুই খাবোনা। অন্য মেয়ের কাছে যাবো।
নীলা ঃ তার মানে ?
উপল ঃ তুমি যে বললা, গুডবায়। আর অন্য মেয়ের কাছে যেতে।
নীলা ঃ সেটাতো অভিমান করে বলেছি। মন থেকে বলিনি।
নীলার খুব সুন্দর হাসির কাছে পরাজিত হলো উপল। দুজনে হাত ধরে বের হয়ে গেলা পার্ক থেকে।

২য় দৃশ্য ঃ
উপল ঃ এতো কষ্ট করোনাতো। ছেলেরা মেয়েদের বাসায় যায় বিয়ের প্রস্তাব নিয়ে। আর ওরা আসবে আমাদের বাসায়। এতো রান্না করার কিছু নাই।
মহতী বেগম ঃ এতো ধনী মানুষ আমার বাসায় আসবে। এতো আমার ভাগ্যের ব্যাপার। আমার এই টিনের বাড়ীতে তারা আসবে।
উপল ঃ মা, নীলা আমাকে মানুষ হিসাবে পছন্দ করেছে। আমাদের টাকা পয়সা দেখে না। তোমার ছেলে এতো গুডবয় যে, নীলা তার বাবার প্রাসাদ ছেড়ে এই টিনের ঘরে স্বেচ্ছায় থাকতে প্রস্তুত। শুধুমাত্র তোমার গুডবয়ের জন্য।

বুকের সাথে জড়িয়ে ধরলেন উপলকে। আনন্দে ভিজে উঠল মায়ের দুই চোখ।
হঠাৎ বেজে উঠল কলিং বেল। উপল দরজা খুলল। নীলার বাবাকে দেখা মাত্রই ভয়ে চিৎকার করে উঠলেন মহতী বেগম।

তার হাত থরথর করে কাঁপতে শুরু করল। হাত থেকে ছিটকে পড়লো মাংসের বাটি। চিৎকার করে কাঁদতে কাঁদতে বলতে শুরু করলেন ৪৩ বছরের না বলা সব কথা। নীলার বাবা একজন রাজাকার। মহতী বেগমকে মুক্তিযুদ্ধের সময় তুলে দেন পাকিস্তানী সেনাদের হাতে।

মহতী বেগম জানেন না, উপল কার সন্তান। কি তার পিতৃ পরিচয়। মুহূর্তে মাথায় আকশ ভেঙ্গে পড়লো উপলের। উপলের হৃদয় ভেঙ্গে গেল টুকরো টুকরো হয়ে। লজ্জা, ঘৃনায় বাকশূন্য হয়ে পড়লো উপল। এই সমাজে যার এতো সম্মান, এতো বছর ধরে গড়ে তোলা ক্যারিয়ার তা মুহূর্তে ধূলায় মিশে গেল। কাঁদতে কাঁদতে মূর্ছা গেলেন মহতী বেগম।

দৃশ্য ৩ ঃ

অফিস থেকে ফেরার পথে হতবাক হলো উপল। নীলাদের প্রাসাদসম বাড়ীর দরজায় এতো কিসের ভীড়। রক্ত জমাট বেধে গেল উপলের। একি দেখছে সে।

নীল বাসার আট তলা ছাদের উপর থেকে কিছুক্ষণ পূর্বে লাফ দিয়েছে। রক্তে ভিজে যাচ্ছে তার মাথা, লাল সিঁদুড় হয়ে গেছে তার দীঘল কালো চুল। উপল চিৎকার করে কেঁদে উঠল। বসে পড়ল রক্তে ভেজা মার্বেল পাথরের মেঝেতে। চিৎকার করে কাঁদতে কাঁদতে বলল “এ তুমি কি করলে নীলা, এ তুমি কি করলে নীল, কেন এমন করলে ?” তোমারতো কোন অপরাধ ছিলোনা।

কে একজন উপলের হাতে গুঁজে দিল একটি চিরকুট। তাতে নীলার হাতের লেখা “আমায় ক্ষমা কর উপল, আমার বাবা একজন রাজাকার, তার এই লুটপাটের সাম্রাজ্য তে আমার নিঃশ্বাস বন্ধ হয়ে আসছিল।

তোমার মায়ের সাথে আমার বাবা যা করেছে, তা ক্ষমার অযোগ্য অপরাধ, এই মুখ আমি পৃথিবীকে কিভাবে দেখাবো উপল ? আমায় তুমি ক্ষমা করো।”

শক্ত পাথর হয়ে গেল উপল। দুই হাত দিয়ে মুখ চেপে ধরে বসে রইল নীলার নিথর দেহের পাশে। বাড়তে শুরু করল উৎসুক জনতার কোলাহল। নীলকষ্টে বাকরুদ্ধ হয়ে রইল উপল।

নিউজটি শেয়ার করুন

আপনার মন্তব্য

Your email address will not be published. Required fields are marked *

আপনার ইমেইল এবং অন্যান্য তথ্য সংরক্ষন করুন

ট্যাগস :




নীল কষ্ট

আপডেট সময় : ০৯:৪১:০৫ অপরাহ্ন, রবিবার, ১৬ ডিসেম্বর ২০১৮

 

মুক্তিযুদ্ধের পটভূমিতে সত্য ঘটনা অবলম্বনে ছোট গল্পটি লিখেছেন—-ফারহানা মোবিন

উড়ে যাচ্ছে নীল মেঘ। পার্কের কাশফুলও মৃদু হাওয়ায় দুলছে। সেই কাশফুলের মতো করে বাতাসে দুলছে নীলার চুল। দীঘল কালো চুলগুলো পার্কের বেঞ্চের নীচে ঝুলছে। হাল্কা রোদ লেগে চুলগুলো রেশম কালো লাগছে। এতো বড় চুল নীলার ভালো লাগেনা। কিন্তু উপল এর ভীষণ প্রিয় বড় চুল। তাই নীলা তার প্রিয় বয়কাট চুলগুলোকে এতো বড় করেছে। শুধুমাত্র উপলের জন্য। উপলের ভালো লাগাকে সম্মান দেয়ার জন্য নীলার এই সাধনা।

ঘড়ির কাঁটাটা ছুটেই চলছে। বিরক্তি মাখা মুখে নীলা তাকাচ্ছে চারিদিকে। আজ কতো গুরুত্বপূর্ণ দিন। অথচ উপলের কোন খোঁজ নেই। এতো দেরী করছে।
বাদামওয়ালা ঃ আফা, বাদাম লন। স্যার আইয়া পড়বো। মনে কষ্ট লইয়েন না।
নীলা ঃ না ভাই, বাদাম লাগবে না। তুমি যাও।
হঠাৎ ছেঁড়া জামা পরে সামনে এলো ছোট্ট একটি মেয়ে। ধূলায় জট বেঁধে গেছে চুলে। দুই পা ভর্তি কাদা। বিস্ময়ের দৃষ্টিতে প্রশ্ন করলো, মেডাম, আপনি কি ছ্যাকা খাইছেন? একা একা পার্কে বইয়া আছেন?
রাগে লাল হয়ে উঠলো নীলার দুই চোখ। বিরক্তিতে বেঞ্চ ছেড়ে ঘাসের উপর বসল। বিকালটা বিদায় নিয়েছে। পাখিগুলো প্রস্তুতি নিচ্ছে বাসায় ফেরার।

ওহ! কি যে বিরক্ত লাগছে! উপল ফোন রিসিভ করছে না। হয়তো জ্যামে বসে আছে। হঠাৎ কে যেন পেছন থেকে আলতো করে ধরলো নীলার দুই চোখ। পারফিউমের মিষ্টি গন্ধ ! আধুনিকতা আর ব্যক্তিত্বে উজ্জ্বল নীলার উপল। নীলা মুহূর্তেই বুঝে ফেলল, এই প্রিয় আঙ্গুলগুলো কার।
নীল ঃ আমি যাচ্ছি। গুডবাই। তুমি অন্য মেয়ের কাছে চলে যাও।
উপল ঃ প্লীজ ‘নীল’, এমন করোনা। অফিসে মিটিং ছিলো। রাস্তায় ভয়ানক জ্যাম। তুমি এতোবার ফোন করেছো, আমি বুঝতেই পারিনি। আমি দুপুরে খাবার খাওয়ার সময় পাইনি। এখন সন্ধ্যা ৬টা।

নীলা ঃ হায় ! হায় ! চলো আগে কিছু খাবা।
উপল ঃ না কিছুই খাবোনা। অন্য মেয়ের কাছে যাবো।
নীলা ঃ তার মানে ?
উপল ঃ তুমি যে বললা, গুডবায়। আর অন্য মেয়ের কাছে যেতে।
নীলা ঃ সেটাতো অভিমান করে বলেছি। মন থেকে বলিনি।
নীলার খুব সুন্দর হাসির কাছে পরাজিত হলো উপল। দুজনে হাত ধরে বের হয়ে গেলা পার্ক থেকে।

২য় দৃশ্য ঃ
উপল ঃ এতো কষ্ট করোনাতো। ছেলেরা মেয়েদের বাসায় যায় বিয়ের প্রস্তাব নিয়ে। আর ওরা আসবে আমাদের বাসায়। এতো রান্না করার কিছু নাই।
মহতী বেগম ঃ এতো ধনী মানুষ আমার বাসায় আসবে। এতো আমার ভাগ্যের ব্যাপার। আমার এই টিনের বাড়ীতে তারা আসবে।
উপল ঃ মা, নীলা আমাকে মানুষ হিসাবে পছন্দ করেছে। আমাদের টাকা পয়সা দেখে না। তোমার ছেলে এতো গুডবয় যে, নীলা তার বাবার প্রাসাদ ছেড়ে এই টিনের ঘরে স্বেচ্ছায় থাকতে প্রস্তুত। শুধুমাত্র তোমার গুডবয়ের জন্য।

বুকের সাথে জড়িয়ে ধরলেন উপলকে। আনন্দে ভিজে উঠল মায়ের দুই চোখ।
হঠাৎ বেজে উঠল কলিং বেল। উপল দরজা খুলল। নীলার বাবাকে দেখা মাত্রই ভয়ে চিৎকার করে উঠলেন মহতী বেগম।

তার হাত থরথর করে কাঁপতে শুরু করল। হাত থেকে ছিটকে পড়লো মাংসের বাটি। চিৎকার করে কাঁদতে কাঁদতে বলতে শুরু করলেন ৪৩ বছরের না বলা সব কথা। নীলার বাবা একজন রাজাকার। মহতী বেগমকে মুক্তিযুদ্ধের সময় তুলে দেন পাকিস্তানী সেনাদের হাতে।

মহতী বেগম জানেন না, উপল কার সন্তান। কি তার পিতৃ পরিচয়। মুহূর্তে মাথায় আকশ ভেঙ্গে পড়লো উপলের। উপলের হৃদয় ভেঙ্গে গেল টুকরো টুকরো হয়ে। লজ্জা, ঘৃনায় বাকশূন্য হয়ে পড়লো উপল। এই সমাজে যার এতো সম্মান, এতো বছর ধরে গড়ে তোলা ক্যারিয়ার তা মুহূর্তে ধূলায় মিশে গেল। কাঁদতে কাঁদতে মূর্ছা গেলেন মহতী বেগম।

দৃশ্য ৩ ঃ

অফিস থেকে ফেরার পথে হতবাক হলো উপল। নীলাদের প্রাসাদসম বাড়ীর দরজায় এতো কিসের ভীড়। রক্ত জমাট বেধে গেল উপলের। একি দেখছে সে।

নীল বাসার আট তলা ছাদের উপর থেকে কিছুক্ষণ পূর্বে লাফ দিয়েছে। রক্তে ভিজে যাচ্ছে তার মাথা, লাল সিঁদুড় হয়ে গেছে তার দীঘল কালো চুল। উপল চিৎকার করে কেঁদে উঠল। বসে পড়ল রক্তে ভেজা মার্বেল পাথরের মেঝেতে। চিৎকার করে কাঁদতে কাঁদতে বলল “এ তুমি কি করলে নীলা, এ তুমি কি করলে নীল, কেন এমন করলে ?” তোমারতো কোন অপরাধ ছিলোনা।

কে একজন উপলের হাতে গুঁজে দিল একটি চিরকুট। তাতে নীলার হাতের লেখা “আমায় ক্ষমা কর উপল, আমার বাবা একজন রাজাকার, তার এই লুটপাটের সাম্রাজ্য তে আমার নিঃশ্বাস বন্ধ হয়ে আসছিল।

তোমার মায়ের সাথে আমার বাবা যা করেছে, তা ক্ষমার অযোগ্য অপরাধ, এই মুখ আমি পৃথিবীকে কিভাবে দেখাবো উপল ? আমায় তুমি ক্ষমা করো।”

শক্ত পাথর হয়ে গেল উপল। দুই হাত দিয়ে মুখ চেপে ধরে বসে রইল নীলার নিথর দেহের পাশে। বাড়তে শুরু করল উৎসুক জনতার কোলাহল। নীলকষ্টে বাকরুদ্ধ হয়ে রইল উপল।