নিজস্ব প্রতিবেদক;
ঢাকায় মোহাম্মদপুরের নূরজাহান রোডের শেষ মাথায় 'নগর স্বাস্থ্যকেন্দ্র'। সেটি লাগোয়া দুটি বড় শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান। একটি মোহাম্মদপুর বালিকা উচ্চ বিদ্যালয় ও অন্যটি মোহাম্মদপুর কেন্দ্রীয় কলেজ। তার পেছনের সড়কটি ছায়াঘেরা নির্জন এক মনোরম এলাকা। তবে এমন মনোরম নির্জন এলাকাকেও ভয়ঙ্কর করে তুলেছে একশ্রেণির বখাটে। তারা অধিকাংশ কিশোর। কিছু তরুণ ও যুবকও আছে তাদের সঙ্গে। এই বখাটেদের উৎপাতের মধ্যেই আতঙ্কে বসবাস করছেন নিরীহ বাসিন্দারা।
এই প্রতিবেদক নূরজাহান রোডের ওই এলাকা পরিদর্শন করে দেখতে পান, দেয়ালে দেয়ালে লেখা গ্যাংস্টার 'লাড়া দে' গ্রুপের লোগো ও স্লোগান। এলাকার কয়েকজন তরুণ ভয়ে ভয়ে জানালেন, বছর দুয়েক ধরে এই 'লাড়া দে' ও 'দেখে ল-চিনে ল', 'কোপাইয়া দে' নামে গ্যাং গ্রুপ মোহাম্মদপুর ও আশপাশের এলাকায় ত্রাসের রাজত্ব কায়েম করেছে। তাদের কাছে কার্যত জিম্মি এলাকার মানুষ ও শিক্ষার্থীরা। তারা নিয়মিত শিক্ষার্থীদের উত্ত্যক্ত করে। প্রায়ই হচ্ছে ছিনতাই। প্রকাশ্যেই তারা নিচ্ছে মাদক। মাদকের ব্যবসাও করছে কেউ কেউ। অনেক সাধারণ মানুষ তাদের হাতে নিয়মিত লাঞ্ছিত ও হেনস্তা হচ্ছেন। 'লাড়া দে মোহাম্মদপুর' নামে ফেসবুক ও ইউটিউবে একটি গ্রুপও রয়েছে তাদের। ওই গ্রুপের মাধ্যমে তারা নিজেদের মধ্যে যোগাযোগ রক্ষা করে। অনেকে আবার ইন্টারনেটে বিদেশি গ্যাং পার্টির সদস্যদের সম্পর্কে তথ্য সংগ্রহ করে ও তাদের অনুকরণ করে।
অনুসন্ধানে আরও জানা গেছে, শুধু মোহাম্মদপুরের ওই গ্রুপই নয়, ঢাকার হাজারীবাগ ও গেণ্ডারিয়ায় দাপিয়ে বেড়াচ্ছে 'বাংলা' ও 'লাভলেট' নামে আরও গ্যাং গ্রুপ। সম্প্রতি বরগুনায় আলোচিত নয়ন বন্ডের '০০৭' গ্রুপের চেয়েও তারা দুর্ধর্ষ ও ভয়ঙ্কর। এসব গ্রুপের কর্মকাণ্ড সম্পর্কে সব জেনেও এলাকার পুলিশ নির্বিকার। স্থানীয় রাজনৈতিক নেতারাও তাদের আশ্রয়-প্রশ্রয় দিচ্ছেন বলে অভিযোগ রয়েছে। মোহাম্মদপুরের এক বখাটে কিশোরের বিরুদ্ধে বার বার অভিযোগ করার পরও পুলিশ কোনো ব্যবস্থা নেয়নি। উল্টো পুলিশের কিছু সদস্য গ্যাং গ্রুপকে ব্যবহার করে অনৈতিক বাণিজ্য করছেন অভিযোগ পাওয়া গেছে।
অনুসন্ধানে আরও দেখা গেছে, রাজধানীজুড়ে এরকম মোট গ্যাং গ্রুপ রয়েছে ৩০-৩২টি। এর মধ্যে ১৫-২০টি গ্রুপ অপরাধে জড়িয়ে গেছে। প্রায় প্রতি মাসে রাজধানীর কোনো না কোনো এলাকায় বখাটে কিশোর গ্রুপের মাধ্যমে নানা ধরনের অপরাধ সংঘটিত হচ্ছে। ঢাকা মহানগর পুলিশের কাছ থেকে পাওয়া তথ্যে জানা গেছে, ঢাকায় চলতি বছরের এপ্রিল থেকে জুন পর্যন্ত কিশোর অপরাধের ঘটনায় ২০টি মামলা হয়েছে। এসব মামলায় ৩১ জনকে গ্রেফতার করা হয়। যাদের মধ্যে ২৫ জনকে শিশু-কিশোর সংশোধন কেন্দ্রে পাঠানো হয়।
'লাড়া দে' : লাড়া দে গ্রুপের সদস্য সংখ্যা তিন শতাধিক। তাদের অধিকাংশের বয়স ১২ থেকে ৩০ বছরের মধ্যে। 'লাড়া দে' অর্থ বলতে তারা বোঝাচ্ছে 'নাড়িয়ে দেওয়া' বা 'ঝাঁকুনি দেওয়া'। এই গ্রুপের নেতৃত্বে রয়েছেন তামিমুর রহমান মীম নামের এক তরুণ। তার বাবার নাম একরামুল। মীমের বাসা মোহাম্মদপুরের বাঁশবাড়ি এলাকায়। তবে মীম বর্তমানে নবোদয় হাউজিংয়ের লোহার গেট এলাকায় বসবাস করছেন। তার নামে মাদক ব্যবসা, ছিনতাইয়ের একাধিক অভিযোগ ও মামলা রয়েছে। বেশ কয়েকবার পুলিশের হাতে ধরা পড়ার পরও ছাড়া পেয়েছেন মীম। তার ঘনিষ্ঠ সহযোগীদের মধ্যে রয়েছেন ফাহাদ, ফয়সাল, অপু, তপু রায়হান, আকাশ, রাব্বি হোসেন, অভিক শিকদার, মাহাদি তৌফিক আজিম ও নাহিদ হাসান শুভ। গত বছরের অক্টোবরে নূরজাহান রোডের এম-২৮ নম্বর বাসায় ঢুকে প্রায় আড়াই লাখ টাকার জিনিসপত্র লুটে নেন মীম ও তার সহযোগীরা। এ ঘটনায় নূরজাহান হক নামে এক নারী লাড়া দে গ্রুপের সদস্যদের নামে মোহাম্মদপুর থানায় মামলা করেন। এ ছাড়া মাস তিনেক আগে নবোদয় হাউজিং এলাকায় হেরোইন ও ইয়াবা বিক্রির সময় হাতেনাতে গ্রেফতার হন মীম। এ ঘটনায় আদাবর থানায় একটি মামলা হয়। ওই মামলার তদন্ত কর্মকর্তা আদাবর থানার এসআই রফিকুল ইসলাম বলেন, গোপন সংবাদের ভিত্তিতে খবর পাওয়া যায়, নবোদয় হাউজিংয়ে ইয়াবা ও হেরোইন বিক্রি করছে একটি গ্রুপ। এরপর সেখানে অভিযান চালিয়ে মীমকে গ্রেফতার করা হয়। এ মামলায় মীমসহ কয়েকজনকে আসামি করে চার্জশিট দেওয়া হয়েছে।
পুলিশ ও মাদক ব্যবসায়ীদের সঙ্গে সখ্য : মোহাম্মদপুরের বাঁশবাড়ি এলাকার কুখ্যাত মাদক ব্যবসায়ী হলেন কুলসুম আক্তার মনি ও তার স্বামী হাসান। সম্প্রতি এক হাজার হেরোইনের পুরিয়াসহ মনি ও তার স্বামী গ্রেফতার হন। মনির বিরুদ্ধে মোহাম্মদপুর থানায় ২২টি মামলা রয়েছে। মনির কাছ থেকে মাদক নিয়ে খুচরা বিক্রি করে আসছিলেন মীমসহ 'লাড়া দে' গ্রুপের সদস্যরা। মাদক বিক্রি ছাড়াও মোহাম্মদপুর এলাকায় অভিনব কৌশলে মানুষকে ফাঁসাচ্ছেন এই গ্যাং গ্রুপের সদস্যরা। কারও কাছে মাদক বিক্রি করে মীম ও তার সহযোগীরা পুলিশের অসাধু কয়েকজন সদস্যকে ফোন করে জানিয়ে দেন। এরপর তারা গিয়ে মাদকসহ ওই ব্যক্তিকে আটকের পর টাকা দাবি করেন। টাকা না দিলে মামলায় চালান দেওয়ার ভয় দেখান। অনেকেই ভয়ে ঘুষ দিয়ে রক্ষা পান। আবার ফাঁকা বাসায় কোনো মেয়ে তার বয়ফ্রেন্ডকে ডেকে নিলে লাড়া দে গ্যাংয়ের সদস্যরা পুলিশে জানিয়ে দেন। এরপর পুলিশ সেখানে হাজির হয়ে অনৈতিক বাণিজ্যে জড়ায়। অভিযোগ রয়েছে- মীম ও তার গ্রুপকে এ ধরনের কাজে সহায়তা দিয়ে আসছেন মোহাম্মদপুর পুলিশ ফাঁড়ির ইনচার্জ এসআই মেজবা উদ্দিন ও এএসআই মো. শামীম আকন্দ। এ ছাড়া মীমের ফেসবুক পেজে আদাবর থানার এসআই প্রদীপ চন্দ্র সরকারের সঙ্গে তার ছবি রয়েছে, যা দেখে যে কারও মনে হবে মীমের সঙ্গে এসআই প্রদীপের ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক। এ ছাড়া মোহাম্মদপুরের ৩৩ নম্বর ওয়ার্ড কাউন্সিলর তারেকুজ্জামান রাজীবসহ আরও অনেক রাজনৈতিক নেতাদের শুভেচ্ছা জানিয়ে পোস্টার তৈরি করেছেন মীম। সেই পোস্টারের ছবি মীমের ফেসবুকেও আছে।
এএসআই শামীম আকন্দ বলেন, "মীমের সঙ্গে তার কোনো সখ্য নেই। তবে মাঝে মধ্যে তিনি ফাঁড়িতে এলে একসঙ্গে চা-সিগারেট খান- এতটুকুই। এসআই মেজবা স্যারের সঙ্গে মীমের 'ভাই ভাই' সম্পর্ক।"
আদাবর থানার এসআই প্রদীপ চন্দ্র সরকার বলেন, 'মীম খারাপ ছেলে। তাকে ২-৩ বার আমি ধরেছি।' একসঙ্গে ছবি তোলার প্রসঙ্গে জানতে চাইলে প্রদীপ যে ব্যাখ্যাটি দিলেন সেটিও চমকপ্রদ। তিনি জানালেন, '২০১৭ সালের আগে তিনি মোহাম্মদপুর থানায় কর্মরত থাকাকালে হয়তো মনের অজান্তে ছবি তুলে ফেলেছেন।' এ ব্যাপারে জানতে কাউন্সিলর রাজীবের সঙ্গে একাধিকবার যোগাযোগের চেষ্টা করেও তাকে পাওয়া যায়নি।
জিম্মি এলাকাবাসী : সরেজমিনে মোহাম্মদপুর এলাকায় গিয়ে দেখা যায়, নূরজাহান রোডের একাধিক দেয়ালে বিশেষ কায়দায় বিভিন্ন গ্যাং গ্রুপের নাম লেখা রয়েছে। পাল্টাপাল্টি হুমকি দিয়ে দেয়ালে লেখা বিভিন্ন গ্রুপের স্লোগান। এসব স্লোগান বলে দিচ্ছিল, গ্যাং গ্রুপের মধ্যে বিরোধ আর দ্বন্দ্ব কতটা প্রকট। ভয়ে নাম প্রকাশ না করে এলাকার এক বাসিন্দা জানালেন, দিনদুপুরে গাঁজাসহ নানা ধরনের নেশার আসর বসানো হয় নূরজাহান রোডে। ছেলেমেয়েদের নিয়ে বসবাস করা কঠিন হয়ে পড়েছে। পাশেই র্যাব-২-এর কার্যালয় থাকলেও গ্যাং গ্রুপের সদস্যরা এসব তোয়াক্কা করছেন না। এ ছাড়া মোহাম্মদপুরে একাধিক খেলার মাঠ থাকলেও সেখানে কিশোর-তরুণরা খুব বেশি খেলতে যায় না। সেই তুলনায় রাস্তার মোড়ে মোড়ে বখাটেদের বেশি সক্রিয় থাকতে দেখা যায়।
ফেসবুকে 'অল কিং লাড়া দে' নামে একটি স্লোগান সংবলিত পেজে ছবি রয়েছে। সেখানে দেড় শতাধিক কিশোর-তরুণকে হাত উঁচিয়ে দাঁড়িয়ে থাকতে দেখা যায়। এই গ্রুপের আরেকটি স্লোগান হলো- 'জাস্ট লাড়া দে অল মোহাম্মদপুর।' তাদের সাংকেতিক চিহ্ন 'পুতুলের মুখে লাভ সাইন'। মোহাম্মদপুর বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক দেলোয়ার হোসেন সরকার সমকালকে এ বিষয়ে বলেন, প্রায়ই স্কুলের আশপাশ এলাকায় ইভটিজিংসহ নানা অপ্রীতিকর ঘটনা ঘটে। অনেক সময় ছাত্রীরা এসে অভিযোগও করে। পুলিশকে জানালে তারা হয়তো তাৎক্ষণিক টহল একটু বাড়ায়। আবার কয়েক দিন যাওয়ার পর সেই পুরনো চিত্র। এসব গ্যাং কালচারের কাছ থেকে সমাজকে বাঁচাতে আকুল আবেদন জানান তিনি।
মোহাম্মদপুরের নূরজাহান রোডের বাসিন্দা ও খাদিজা গোল্ডেন হাউজিংয়ের কর্ণধার জাবেদ ইকবাল বললেন, 'এলাকায় সন্তানদের ঠিকমতো লেখাপড়া শিখিয়ে ভালো মানুষ হিসেবে গড়ে তোলা কঠিন হয়ে যাচ্ছে। রাস্তায় নামলেই চোখের সামনে অনেক বিব্রতকর দৃশ্য দেখতে হয়।'
হাজারীবাগ ও গেণ্ডারিয়ায় সক্রিয় 'বাংলা' ও 'লাভলেট' : রাজধানীর হাজারীবাগে সক্রিয় রয়েছে 'বাংলা' ও 'লাভলেট' নামে দুটি গ্যাং গ্রুপ। এই গ্রুপের সদস্য শতাধিক। বাংলা গ্রুপের নেতৃত্বে রয়েছে সাখাওয়াত হোসেন সৈকত ওরফে বাংলা। তার পরিবার মোহাম্মদপুরের পাবনা হাউজিং এলাকায় বসবাস করলেও বাংলা সারা দিন আড্ডা দেয় হাজারীবাগে। সেখানে সক্রিয় দুটি গ্রুপের অধিকাংশ সদস্য কিশোর ও নিম্নবিত্ত পরিবারের। বখে যাওয়া কিশোরদের অনেকে দোকান কর্মচারী। প্রায়ই দুটি গ্রুপের মধ্যে মারামারির ঘটনা ঘটত। সর্বশেষ গত ৩০ জুন হাজারীবাগের বউবাজার এলাকায় ছুরিকাঘাতে ইয়াসির আরাফাত (১৭) নামে এক কিশোর নিহত হয়। হত্যার নেপথ্য কারণ খুঁজতে গিয়ে বেরিয়ে আসে যে মূলত ইয়াসির ছিল লাভলেট গ্রুপের দলনেতা। ওই ঘটনার সপ্তাহখানেক আগে বাংলা গ্রুপের সদস্য রাসেল তার এক বান্ধবীকে নিয়ে হাজারীবাগ এলাকায় বেড়াতে আসেন। তখন লাভলেট গ্রুপের সদস্যরা রাসেলকে বলেন, হাজারীবাগে বাংলার গ্যাংয়ের সদস্যরা বান্ধবীদের নিয়ে ঢুকতে তাদের 'ট্যাক্স' দিতে হবে। এ নিয়ে কথা কাটাকাটির জের ধরে রাসেলকে মারধর করেন বাংলা গ্রুপের সদস্যরা। এর জেরে লাভলেট গ্রুপের দলনেতা ইয়াসিরকে ছুরিকাঘাতে খুন করে বাংলা গ্রুপ। হাজারীবাগের শেরেবাংলা রোড সংলগ্ন একটি এলাকার নাম লাভলেন। সেই লাভলেনের নামানুসারে 'লাভলেট' গ্রুপ তৈরি করা হয়। আর সাখাওয়াত হোসেন সৈকত ওরফে বাংলা তার নামের অনুকরণে 'বাংলা গ্যাং' চালু করে।
হাজারীবাগ থানার ওসি ইকরাম আলী মিয়া বলেন, এক সময় লাভলেট গ্রুপের দলনেতা ইয়াসির তার বাবা মনসুর আহমেদের দোকানে চা বিক্রি করত। তবে বাবার দোকানের সব খাবার নিজ গ্রুপের সদস্যদের প্রতিদিন খাওয়াত ইয়াসির। এরপর দোকান থেকে ইয়াসিরকে বের করে দেন তার বাবা। আর বাংলা গ্রুপের দলনেতা সাখাওয়াত হোসেনও বেকার এক কিশোর।
এদিকে রাজধানীর গেণ্ডারিয়ায়ও সক্রিয় রয়েছে বখাটে গ্যাং গ্রুপ। তবে সেখানে দুটি গ্রুপ থাকলেও তাদের বিশেষ কোনো নাম নেই। দুই গ্রুপের বিরোধের জের ধরে গত ৬ জুলাই মো. শাওন নামে এক কিশোর নিহত হয়। একটি গ্রুপের নেতৃত্বে ছিল শাওন। আরেকটি গ্রুপের নেতৃত্বে রয়েছে সোহাগ। দুই গ্রুপের সদস্য সংখ্যা প্রায় অর্ধশত।
কীভাবে কাজ করে গ্যাং গ্রুপ : গ্যাং গ্রুপের সদস্যরা একটি সংঘবদ্ধ দল ও অপরাধ চক্র হিসেবে কাজ করে। গ্যাং গ্রুপে যুক্ত হয়ে তারা নিজেদের এলাকার 'হিরো' ভাবতে শুরু করে। গ্যাংয়ের সদস্য হিসেবে পরিচয় দিতে গর্ববোধ করে। এসব গ্রুপ একেকটি এলাকায় নিয়ন্ত্রণ নেয়। আধিপত্য বিস্তার করে। এরপর বেআইনি কাজকর্মে লিপ্ত হয়। প্রতিটি গ্যাংয়ের একটি নির্দিষ্ট নাম ও লোগো থাকে। এর সদস্যরা সেই নাম লোগো শরীরে ট্যাটু আঁকে। প্রায় প্রতিটি গ্যাংয়ের দেয়াল লিখনের মাধ্যমে কর্মকাণ্ড জানান দেওয়ার প্রবণতা আছে। একেকটি গ্যাং একেক ধরনের জামা-কাপড় পরার স্টাইল অনুসরণ করে। তাদের মধ্যে কেউ কেউ শরীরে অলঙ্কার পরে। আলাদা স্টাইলে তারা চুলও কাটে। গ্যাং গ্রুপের সদস্যদের অস্ত্র বহনের প্রবণতা দেখা যায়। আধিপত্য বিস্তারে ছুরি, পিস্তল, চাকু ও রামদা নিজেদের সংগ্রহে রাখে।
সংশ্নিষ্টদের ভাষ্য : র্যাব মহাপরিচালক বেনজীর আহমেদ বলেন, গ্যাং কালচার যাতে মাথাচাড়া না দিয়ে ওঠে সেই লক্ষ্যে রাজধানীসহ দেশের সব এলাকায় বাড়তি নজরদারি রেখেছে র্যাব। সমাজ আর নতুন কোনো নয়ন বন্ড দেখতে চায় না। গ্যাং গ্রুপের সদস্য হয়ে যারা বিভিন্ন ধরনের অপরাধে জড়াচ্ছে তাদের আইনের আওতায় আনা হচ্ছে। যারা এসব গ্রুপকে প্রশ্রয় দেয় তাদের বিরুদ্ধেও ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
র্যাবের আইন ও গণমাধ্যম শাখার উপপরিচালক মেজর রইসুল ইসলাম মনি বলেন, গ্যাংস্টার গ্রুপের সদস্যরা ছোটখাটো অপরাধ করতে করতে বড় ধরনের ক্রাইমে জড়িয়ে যায়। এক পর্যায়ে সংশ্নিষ্ট থানার কিশোর অপরাধী হিসেবে অনেকের নাম অন্তর্ভুক্ত হয়। এভাবে অনেক মেধাবী ছাত্রের ভবিষ্যৎ নষ্ট হচ্ছে। অপরাধী তালিকাভুক্ত হওয়ায় সরকারি চাকরি পেতেও সমস্যা দেখা দেয়। তাই সন্তানের ভবিষ্যতের কথা চিন্তা করে অভিভাবকদের আরও সচেতন হওয়া দরকার।
ঢাকা মহানগর পুলিশের অতিরিক্ত কমিশনার (ক্রাইম অ্যান্ড অপস) কৃষ্ণপদ রায় বলেন, যাতে গ্যাং গ্রুপ গড়ে ওঠার আগেই বখাটে কিশোরদের শনাক্ত করা যায়, সেই নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। অনেক ক্ষেত্রে অভিভাবকদের ডেকে সন্তানদের অপকর্মের কথা জানিয়ে ব্যবস্থা নিতেও বলা হচ্ছে।