হাফিজুর রহমান শফিকঃ
ভরাট করা, মাটি-বালু ফেলে মাঠ সমান করা, বিদ্যুতের সংযোগ দেওয়া, খাবার হোটেল বসানোর কাজ পুরোদমে চলছে। গতকাল বৃহস্পতিবার ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশন (ডিএনসিসি) এলাকার পাঁচটি অস্থায়ী পশুর হাট ঘুরে এ চিত্র দেখা গেছে। সিটি করপোরেশন সূত্র জানায়, কোরবানির পশুর অস্থায়ী হাটের ইজারাদারকে ডিএনসিসির দেওয়া অন্যতম শর্ত ছিল, ঈদের পাঁচ দিন আগে থেকে পশুর হাট বসানো যাবে এবং হাট বসার দুই দিন আগে ইজারাদার হাটের প্রস্তুতিমূলক কাজ শুরু করতে পারবেন।
পবিত্র ঈদুল আজহার সম্ভাব্য তারিখ ১২ আগস্ট। সে হিসাবে ৭ আগস্ট থেকে নগরে হাট বসার কথা। এর দুদিন আগে অর্থাৎ ৫ আগস্ট থেকে ইজারাদারেরা হাটের বিভিন্ন প্রস্তুতিমূলক কাজ শুরু করতে পারবেন। কিন্তু গতকাল দেখা যায়, অনেকে এই শর্তের তোয়াক্কা করছেন না। নির্ধারিত সময়ের প্রায় দুই সপ্তাহ আগেই তাঁরা হাটের প্রস্তুতির কাজ শুরু করেছেন।
ডিএনসিসিকে এবার অস্থায়ী পশুর হাট বসছে ৯টি। এর মধ্যে মোহাম্মদপুর বুদ্ধিজীবী সড়কসংলগ্ন (বছিলা) পুলিশ লাইনের খালি জায়গা, উত্তরা ১৫ নম্বর সেক্টরের ২ নম্বর সেতুর পশ্চিমের ফাঁকা জায়গা, মিরপুর ইস্টার্ন হাউজিংয়ের খালি জায়গা, ভাটারা সাঈদ নগর এবং বাড্ডা ইস্টার্ন হাউজিংয়ের খালি জায়গার (আফতাবনগর) অস্থায়ী হাটের ইজারাদারেরা প্রস্তুতি শুরু করেছেন।
গতকাল হাটগুলো ঘুরে দেখা যায়, ইজারাদারের লোকজন হাটের বিভিন্ন কাজের তদারকি করছেন। শ্রমিকেরা গর্ত খুঁড়ছেন, বাঁশ–কাঠ কাটা হচ্ছে, মাটি–বালু ফেলে উঁচু–নিচু জায়গা সমান করা হচ্ছে, বিদ্যুতের সংযোগ দেওয়া হচ্ছে, ওয়াচ টাওয়ার করা হচ্ছে। খাবার হোটেল তৈরিতে ব্যস্ত কিছু শ্রমিক।
বছিলায় হাটের প্রস্তুতি কাজ করছিলেন ইজারাদার হাসান–হোসেন এন্টারপ্রাইজের মালিক মো. শাহ আলমের লোকেরা। নির্ধারিত সময়ের আগেই প্রস্তুতি নিচ্ছেন কীভাবে, এমন প্রশ্নের জবাবে ইজারাদারের প্রতিনিধি মো. কাউসার বলেন, ‘সিটি করপোরেশন যে দুদিন সময় দিয়েছে, তা তো পৃথিবীর কোনো ইজারাদার হাটের প্রস্তুতি শেষ করতে পারবে না। হাট শুরুর দুদিন আগে তো দেশের বিভিন্ন এলাকা থেকে কোরবানির পশু আসতে শুরু করবে।’ পরে ইজারাদার মো. শাহ আলম মুঠোফোনে বলেন, ‘সিটি করপোরেশনের শর্ত সিটি করপোরেশন দিয়েছে। আমাদের কাজ আমরা করছি।’ দুদিনে প্রস্তুতি নেওয়া সম্ভব নয় বলে তিনি মন্তব্য করেন।
ডিএনসিসির পশুহাট ঈদের পাঁচ দিন আগে থেকে পশুর হাট বসানো যাবে এর দুদিন আগে ইজারাদার হাটের প্রস্তুতিমূলক কাজ শুরু করতে পারবেন এ নিয়ম লঙ্ঘন হচ্ছে
উত্তরা ১৫ নম্বর সেক্টরের অস্থায়ী পশুর হাটের কাজ করছিলেন ইজারাদারের লোকজন। ওই হাটের ইজারা পেয়েছেন তুরাগ থানা আওয়ামী লীগের অর্থ সম্পাদক নুর হোসেন। শ্রমিকেরা জানান, তাঁরা কেউ সরাসরি ইজারাদারের লোক নন। তারা বাঁশমালিকের কাজ দৈনিক মজুরির ভিত্তিতে করছেন। পরে শর্ত লঙ্ঘনের বিষয়ে মন্তব্য জানতে নুর হোসেনের মুঠোফোনে যোগাযোগ করা হলে সেটি বন্ধ পাওয়া যায়।
ডিএনসিসির সম্পত্তি বিভাগ জানায়, নির্ধারিত সময়ের আগেই হাটের প্রস্তুতি নিলে সংশ্লিষ্ট এলাকার বাসিন্দাদের সমস্যা হবে। হাটের জন্য প্রয়োজনীয় জিনিসপত্র আনা–নেওয়ার সময় ট্রাক ঢুকে এলাকায় যানজট সৃষ্টি করতে পারে। সংস্থাটির প্রধান সম্পত্তি কর্মকর্তা আমিনুল ইসলাম বলেন, যে এলাকায় অস্থায়ী হাট নির্ধারণ করা হয়েছে, সেই এলাকার সংশ্লিষ্ট থানাকে এ বিষয়ে চিঠি দিয়ে অবগত করা আছে। কোনো ইজারাদার হাট বসানোর নির্ধারিত সময়ের আগে কাজ শুরু করলে ইজারাদারের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া যাবে। এ ছাড়া ডিএনসিসি ভ্রাম্যমাণ আদালতের মাধ্যমে ইজারাদারের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে পারে।
বছিলা ও উত্তরা ১৫ নম্বর অস্থায়ী হাট দুটি যথাক্রমে মোহাম্মদপুর ও তুরাগ থানায় পড়েছে। মোহাম্মদপুর থানার পরিদর্শক (অপারেশন) শরীফুল ইসলাম ও তুরাগ থানার পরিদর্শক (অপারেশন) মো. জালাল উদ্দিন বলেন, তাঁরা কেউ সিটি করপোরেশনের কাছ থেকে লিখিত কোনো চিঠি বা নির্দেশনা পাননি। পেলে ব্যবস্থা নেবেন।