ঢাকা ০২:৩৯ অপরাহ্ন, সোমবার, ১১ নভেম্বর ২০২৪, ২৭ কার্তিক ১৪৩১ বঙ্গাব্দ




প্রাথমিক শিক্ষকদের ঠিকানা এখন ফুটপাতে!

প্রতিনিধির নাম
  • আপডেট সময় : ১২:৪৯:৫৪ পূর্বাহ্ন, মঙ্গলবার, ১৬ জুলাই ২০১৯ ১২৬ বার পড়া হয়েছে

নিজস্ব প্রতিবেদক; 

রাজপথে গত একমাস টানা আন্দোলনেও দাবি পূরণ হয়নি বেসরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষকদের। তার ওপরে গত ১৪ দিন ধরে পালিত হচ্ছে শিক্ষকদের আমরণ অনশন। আন্দোলনে দুই শতাধিক শিক্ষক অসুস্থ হয়ে পড়েছেন। তাদের মধ্যে আট জন শিক্ষক ডেঙ্গু জ্বরে আক্রান্ত হয়ে হাসপাতালে ভর্তি রয়েছে বলে জানান বাংলাদেশ বেসরকারি প্রাথমিক শিক্ষক সমিতির নেতারা।

আন্দোলনরত শিক্ষকরা বলেন, জাতীয়করণের দাবিতে আমরা গত একমাস ধরে রাস্তায় বসে আন্দোলন চালিয়ে যাচ্ছি। খোলা আকাশের নিচে রাস্তায় দিনরাত কাটছে আমাদের। বৃষ্টি এলে ভিজে যাচ্ছি, সেই ভেজা কাপড়েই থাকতে হচ্ছে, তার ওপরে ডেঙ্গু মশার উপদ্রব রয়েছে। এতে আমাদের অনেকে গুরুতর অসুস্থ হয়ে হাসপাতালে শুয়ে আছেন। একজন শিক্ষক অসুস্থ হয়ে প্রাণ হারিয়েছেন। আর কত প্রাণ গেলে সরকার আমাদের সামাজিক মর্যাদার স্বীকৃতি দেবেন বলে প্রশ্ন তোলেন আন্দোলনকারী শিক্ষকরা।

তারা বলেন, আন্দোলনে এসে এ পর্যন্ত আমাদের ২১৮ জন শিক্ষক অসুস্থ হয়ে পড়েন। তাদের কারো অবস্থা বেশি খারাপ হওয়ায় নিজ নিজ বাড়িতে পাঠানো হয়েছে। ৮ জন ডেঙ্গু জ্বরে আক্রান্ত হয়েছেন, ১০ জন শিক্ষক, কলেরা-ডায়ারিয়া রোগে আক্রান্ত হয়েছেন। তাদের সকলকে হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। সবাই হাসপাতালের বেডে শুয়ে মৃত্যুর সঙ্গে পাঞ্জা লড়ছেন। প্রধানমন্ত্রী আমাদের মা, তিনি আমাদের অন্ন-বন্ত্রের নিশ্চয়তা দিতে পারেন। আমাদের মানবিক জীবনের কথা বিবেচনা করে দেশের ৪ হাজার শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান জাতীয়করণ করতে প্রধানমন্ত্রীর কাছে আকুল আবেদন জানাচ্ছি।

সংগঠনের সভাপতি মো. মামুনুর রশিদ খোকন বলেন, ‘টানা ৩০ দিন ধরে আমরা প্রেস ক্লাবের সামনের রাস্তার ফুটপাতের ওপর আন্দোলন করে যাচ্ছি। গত ১৪ দিন ধরে আমাদের আমরণ অনশন পালিত হচ্ছে। এ আন্দোলনে অনেক শিক্ষক অসুস্থ হয়ে পড়েছেন।’

‘মোট আটজন ডেঙ্গু জ্বরে আক্রান্ত হয়ে হাসপাতালে ভর্তি রয়েছেন। অনেকের অবস্থা গুরুত্বর হওয়ায় কিছু শিক্ষককে নিজ বাড়িতে পাঠানো হয়েছে। আন্দোলনে আসা ফরিদপুর জেলার মধুখালী বেসরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক জাকির হোসেন অসুস্থ হয়ে হাসপাতালে মৃত্যুবরণ করেন।’

তিনি বলেন, পর্যায়ক্রমে আমরা সকলে অসুস্থ হয়ে পড়ছি। তবুও আমাদের দাবি পূরণে কোন দৃশ্যমান আশ্বাস পাইনি। আমাদের দাবি আদায়ে সরকারের পক্ষ থেকে গ্রহনযোগ্য আশ্বাস পেলে তারা বাড়ি ফিরে যাবেন বলে জানান।

প্রসঙ্গত, সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় জাতীয়করণ থেকে বাদপড়া সারা দেশে প্রায় ৪ হাজার প্রতিষ্ঠানের শিক্ষকরা গত ৩০ দিন ধরে জাতীয় প্রেস ক্লাবের সামনে বিদ্যালয় জাতীয়করণের দাবিতে আন্দোলন চালিয়ে যাচ্ছেন। প্রথম পর্যায়ে এসব শিক্ষকরা টানা ১৭ দিন অবস্থান কর্মসূচি পালন করলেও গত ১২ দিন ধরে তারা আমরণ অনশন কর্মসূচি পালন করছেন।

জাতীয়করণ থেকে বাদপড়া এসব প্রতিষ্ঠানে প্রায় ১৬ হাজার শিক্ষক রয়েছেন। তার মধ্যে ১ হাজার ৩০০টির মতো প্রাথমিক বিদ্যালয় জাতীয়করণের জন্য যাচাই-বাছাই করা হলেও তাদের বঞ্চিত করা হয়েছে বলে দাবি আন্দোলনকারীদের।

নিউজটি শেয়ার করুন

আপনার মন্তব্য

Your email address will not be published. Required fields are marked *

আপনার ইমেইল এবং অন্যান্য তথ্য সংরক্ষন করুন

ট্যাগস :




প্রাথমিক শিক্ষকদের ঠিকানা এখন ফুটপাতে!

আপডেট সময় : ১২:৪৯:৫৪ পূর্বাহ্ন, মঙ্গলবার, ১৬ জুলাই ২০১৯

নিজস্ব প্রতিবেদক; 

রাজপথে গত একমাস টানা আন্দোলনেও দাবি পূরণ হয়নি বেসরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষকদের। তার ওপরে গত ১৪ দিন ধরে পালিত হচ্ছে শিক্ষকদের আমরণ অনশন। আন্দোলনে দুই শতাধিক শিক্ষক অসুস্থ হয়ে পড়েছেন। তাদের মধ্যে আট জন শিক্ষক ডেঙ্গু জ্বরে আক্রান্ত হয়ে হাসপাতালে ভর্তি রয়েছে বলে জানান বাংলাদেশ বেসরকারি প্রাথমিক শিক্ষক সমিতির নেতারা।

আন্দোলনরত শিক্ষকরা বলেন, জাতীয়করণের দাবিতে আমরা গত একমাস ধরে রাস্তায় বসে আন্দোলন চালিয়ে যাচ্ছি। খোলা আকাশের নিচে রাস্তায় দিনরাত কাটছে আমাদের। বৃষ্টি এলে ভিজে যাচ্ছি, সেই ভেজা কাপড়েই থাকতে হচ্ছে, তার ওপরে ডেঙ্গু মশার উপদ্রব রয়েছে। এতে আমাদের অনেকে গুরুতর অসুস্থ হয়ে হাসপাতালে শুয়ে আছেন। একজন শিক্ষক অসুস্থ হয়ে প্রাণ হারিয়েছেন। আর কত প্রাণ গেলে সরকার আমাদের সামাজিক মর্যাদার স্বীকৃতি দেবেন বলে প্রশ্ন তোলেন আন্দোলনকারী শিক্ষকরা।

তারা বলেন, আন্দোলনে এসে এ পর্যন্ত আমাদের ২১৮ জন শিক্ষক অসুস্থ হয়ে পড়েন। তাদের কারো অবস্থা বেশি খারাপ হওয়ায় নিজ নিজ বাড়িতে পাঠানো হয়েছে। ৮ জন ডেঙ্গু জ্বরে আক্রান্ত হয়েছেন, ১০ জন শিক্ষক, কলেরা-ডায়ারিয়া রোগে আক্রান্ত হয়েছেন। তাদের সকলকে হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। সবাই হাসপাতালের বেডে শুয়ে মৃত্যুর সঙ্গে পাঞ্জা লড়ছেন। প্রধানমন্ত্রী আমাদের মা, তিনি আমাদের অন্ন-বন্ত্রের নিশ্চয়তা দিতে পারেন। আমাদের মানবিক জীবনের কথা বিবেচনা করে দেশের ৪ হাজার শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান জাতীয়করণ করতে প্রধানমন্ত্রীর কাছে আকুল আবেদন জানাচ্ছি।

সংগঠনের সভাপতি মো. মামুনুর রশিদ খোকন বলেন, ‘টানা ৩০ দিন ধরে আমরা প্রেস ক্লাবের সামনের রাস্তার ফুটপাতের ওপর আন্দোলন করে যাচ্ছি। গত ১৪ দিন ধরে আমাদের আমরণ অনশন পালিত হচ্ছে। এ আন্দোলনে অনেক শিক্ষক অসুস্থ হয়ে পড়েছেন।’

‘মোট আটজন ডেঙ্গু জ্বরে আক্রান্ত হয়ে হাসপাতালে ভর্তি রয়েছেন। অনেকের অবস্থা গুরুত্বর হওয়ায় কিছু শিক্ষককে নিজ বাড়িতে পাঠানো হয়েছে। আন্দোলনে আসা ফরিদপুর জেলার মধুখালী বেসরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক জাকির হোসেন অসুস্থ হয়ে হাসপাতালে মৃত্যুবরণ করেন।’

তিনি বলেন, পর্যায়ক্রমে আমরা সকলে অসুস্থ হয়ে পড়ছি। তবুও আমাদের দাবি পূরণে কোন দৃশ্যমান আশ্বাস পাইনি। আমাদের দাবি আদায়ে সরকারের পক্ষ থেকে গ্রহনযোগ্য আশ্বাস পেলে তারা বাড়ি ফিরে যাবেন বলে জানান।

প্রসঙ্গত, সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় জাতীয়করণ থেকে বাদপড়া সারা দেশে প্রায় ৪ হাজার প্রতিষ্ঠানের শিক্ষকরা গত ৩০ দিন ধরে জাতীয় প্রেস ক্লাবের সামনে বিদ্যালয় জাতীয়করণের দাবিতে আন্দোলন চালিয়ে যাচ্ছেন। প্রথম পর্যায়ে এসব শিক্ষকরা টানা ১৭ দিন অবস্থান কর্মসূচি পালন করলেও গত ১২ দিন ধরে তারা আমরণ অনশন কর্মসূচি পালন করছেন।

জাতীয়করণ থেকে বাদপড়া এসব প্রতিষ্ঠানে প্রায় ১৬ হাজার শিক্ষক রয়েছেন। তার মধ্যে ১ হাজার ৩০০টির মতো প্রাথমিক বিদ্যালয় জাতীয়করণের জন্য যাচাই-বাছাই করা হলেও তাদের বঞ্চিত করা হয়েছে বলে দাবি আন্দোলনকারীদের।