ঢাকা ০৫:৩৭ পূর্বাহ্ন, শনিবার, ২০ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ
সংবাদ শিরোনাম :
Logo মঙ্গল শোভাযাত্রা – তাসফিয়া ফারহানা ঐশী Logo সাস্টিয়ান ব্রাহ্মণবাড়িয়া এর ইফতার মাহফিল সম্পন্ন Logo কুবির চট্টগ্রাম স্টুডেন্টস ওয়েলফেয়ার এসোসিয়েশনের ইফতার ও পূর্নমিলনী Logo অধ্যাপক জহীর উদ্দিন আহমেদের মায়ের মৃত্যুতে শাবির মহান মুক্তিযুদ্ধের চেতনা ও মুক্ত চিন্তা চর্চায় ঐক্যবদ্ধ শিক্ষকবৃন্দ পরিষদের শোক প্রকাশ Logo শাবির অধ্যাপক জহীর উদ্দিনের মায়ের মৃত্যুতে উপাচার্যের শোক প্রকাশ Logo বিশ কোটিতে গণপূর্তের প্রধান হওয়ার মিশনে ‘ছাত্রদল ক্যাডার প্রকৌশলী’! Logo দূর্নীতির রাক্ষস ফায়ার সার্ভিসের এডি আনোয়ার! Logo ঝড় ও শিলাবৃষ্টিতে ক্ষতি হওয়া শাহজালাল বিশ্ববিদ্যালয়ে অবকাঠামোর সংস্কার শুরু Logo বুয়েটে নিয়মতান্ত্রিক ছাত্র রাজনীতির দাবিতে শাবিপ্রবি ছাত্রলীগের মানববন্ধন Logo কুবি উপাচার্যের বক্তব্যের প্রমাণ দিতে শিক্ষক সমিতির সাত দিনের আল্টিমেটাম




কুড়িগ্রামে বন্যা পরিস্থিতির অবনতি, নদী ভাঙনে নিঃস্ব ৭২৫ পরিবার

প্রতিনিধির নাম
  • আপডেট সময় : ০৯:৩৫:১৩ অপরাহ্ন, শনিবার, ১৩ জুলাই ২০১৯ ৫৭ বার পড়া হয়েছে

জেলা প্রতিনিধি কুড়িগ্রামঃ 
কুড়িগ্রামে ধরলা, ব্রহ্মপুত্র, তিস্তা ও দুধকুমোর নদীর পানি শনিবার দুপুরে বিপৎসীমার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছিল। ফলে এ চারটি নদীর অববাহিকার চর-দ্বীপচর ও নিম্নাঞ্চল প্লাবিত হওয়ায় সরকারি হিসেবে কমপক্ষে ২৮ হাজার ১৮২ পরিবারের দেড় লক্ষাধিক মানুষ এখন পানিবন্দি হয়ে মানবেতর জীবন যাপন করছে।

বন্যার পাশাপাশি নদী ভাঙনে গৃহহীন হয়েছে ৭২৫টি পরিবার। এছাড়া বন্যা নিয়ন্ত্রণ বাঁধ, কাঁচা-পাকা রাস্তা, ব্রিজ ও কালভাটের ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে। বন্যা পরিস্তিতি মোকাবেলায় সকল বিভাগকে সতর্ক থাকার নির্দেশ দেয়া হয়েছে। একই সঙ্গে বাতিল করা হয়েছে ছুটি। খোলা হয়েছে জেলা ও উপজেলা পর্যায়ে কন্ট্রোল রুম।

কুড়িগ্রাম পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী আরিফুল ইসলাম জানান, কুড়িগ্রামের ছোট-বড় ১৬টি নদ-নদীর মধ্যে ধরলা ৫২ সেন্টিমিটার, ব্রহ্মপুত্র ৩৯ সেন্টিমিটার, তিস্তা ৯ সেন্টিমিটার ও দুধকুমোর নদীর পানি বিপৎসীমার ৭ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে শনিবার দুপুর থেকে প্রবাহিত হচ্ছিল। ফলে জেলার সার্বিক বন্যা পরিস্থিতির মারাত্মক অবনতি ঘটেছে। ভাঙন দেখা দিয়েছে সারডোবে ধরলা নদীর বন্যা নিয়ন্ত্রণ বাঁধে। চিলমারীর নয়ারহাট ও অষ্টমীরচর ইউনিয়নের কয়েকটি চরে নদী ভাঙনে ৫০টি পরিবার গৃহহীন হয়েছে।

রৌমারী উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা দীপঙ্কর রায় জানান, বন্দবের ইউনিয়নের বন্যা নিয়ন্ত্রণ বাঁধের ৩০০ মিটার ভেঙে গেছে। এছাড়া যাদুরচর ইউনিয়নে বন্যা নিয়ন্ত্রণ বাঁধের ৫টি স্থানে ভাঙন দেখা দিয়েছে। এসব এলাকার ৫০টি পরিবারকে নিরাপদ স্থানে সড়িয়ে নেয়া হয়েছে। আর ২৮টি পরিবারের মধ্যে ঘর নির্মাণের জন্য ঢেউটিন ও শুকনা খাবার সরবরাহ করা হয়েছে।

চিলমারীর তিস্তার ভাঙনে হরিপুর এলাকার মহির প্রামাণিকের বাড়ির পাশের একটি সাব বাঁধ ভেঙে গিয়ে বিস্তৃর্ণ এলাকা প্লাবিত হয়েছে। ওই ইউনিয়নের চেয়ারম্যান মো. আজগার আলী সরকার জানান, তার ইউনিয়নের বাসন্তিপাড়া, মাঝিপাড়া, রায়পাড়া, টোন গ্রাম, উত্তর রমনা, খেউনি পাড়াসহ অন্তত ১৫টি গ্রামের মানুষ পানিবন্দি হয়ে পড়েছে। ঘরবাড়িতে পানি ওঠায় এসব গ্রামের বাসিন্দারা ইউনিয়নের ওয়াবদা বেড়িবাঁধ, জোরগাছ ২ নং সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় এবং রিয়াজুল জান্নাত মাদরাসায় আশ্রয় নিয়েছে।

এদিকে সদরের হলোখানা ইউনিয়নের সারডোব, বাংটুর ঘাট, উলিপুরের চর বজরা ও রাজারহাট উপজেলার বিদ্যানন্দ ইউনিয়নের গাবুরহেলাল গ্রামে বন্যা নিয়ন্ত্রণ বাঁধ হুমকির মুখে রয়েছে। এই এলাকাগুলোতে বাঁধ মেরামতে বালুর বস্তা ফেলা হচ্ছে।

কুড়িগ্রাম সদরের যাত্রাপুর ইউনিয়নের চেয়ারম্যান আইয়ুব আলী সরকার জানান, তার ইউনিয়নে প্রায় ৪ হাজার পরিবারের ২০ হাজার মানুষ পানিবন্দি হয়ে পড়েছে।

কুড়িগ্রাম সদর উপজেলার হলোখানা ইউনিয়নের চেয়ারম্যান উমর ফারুখ জানান, ধরলা নদীর পানি বেড়ে তার ইউনিয়নে ধরলার উত্তর তীরবর্তী অংশের গ্রামসহ সারডোব, সাত কালোয়া, খামার হলোখানা এলাকা প্লাবিত হয়ে প্রায় ৩ হাজার মানুষ পানিবন্দি হয়ে পড়েছে।

উলিপুর উপজেলার বেগমগঞ্জ ইউনিয়নের চেয়ারম্যান মো. বেলাল হোসেন জানান, ওই ইউনিয়নের প্রায় ৪ হাজারেরও বেশি মানুষ পানিবন্দি হয়ে পড়েছে।

কুড়িগ্রাম জেলা কন্ট্রোল রুম সূত্রে জানা যায়, জেলার ৯ উপজেলার ২৮ হাজার ১৮২টি পরিবার পানিবন্দি হয়ে পড়েছে। নদী ভাঙনে ভিটেমাটি হারিয়ে নিঃস্ব হয়েছে ৭২৫টি পরিবার।

কুড়িগ্রামের অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (সার্বিক) হাফিজুর রহমান বলেন, বন্যা মোকাবেলায় আমাদের পূর্বপ্রস্তুতি রয়েছে। ইতোমধ্যে বন্যা কবলিত উপজেলাগুলোতে ৫০ মেট্রিক টন চাল, নগদ ২ লাখ ৭৫ হাজার টাকা বরাদ্দ দেয়া হয়েছে। যা বিতরণ শুরু হয়েছে। এছাড়াও সাড়ে চারশ টন চাল ও ৫ লাখ ৭৫ হাজার টাকা মজুত রয়েছে। বন্যা পরিস্থিতি মোকাবেলায় জরুরি ভিত্তিতে আরও এক হাজার মেট্রিক টন জিআর চাল, ২০ লাখ টাকা এবং ১০ হাজার প্যাকেট শুকনো খাবার বরাদ্দ চাওয়া হয়েছে।

নিউজটি শেয়ার করুন

আপনার মন্তব্য

Your email address will not be published. Required fields are marked *

আপনার ইমেইল এবং অন্যান্য তথ্য সংরক্ষন করুন

ট্যাগস :




কুড়িগ্রামে বন্যা পরিস্থিতির অবনতি, নদী ভাঙনে নিঃস্ব ৭২৫ পরিবার

আপডেট সময় : ০৯:৩৫:১৩ অপরাহ্ন, শনিবার, ১৩ জুলাই ২০১৯

জেলা প্রতিনিধি কুড়িগ্রামঃ 
কুড়িগ্রামে ধরলা, ব্রহ্মপুত্র, তিস্তা ও দুধকুমোর নদীর পানি শনিবার দুপুরে বিপৎসীমার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছিল। ফলে এ চারটি নদীর অববাহিকার চর-দ্বীপচর ও নিম্নাঞ্চল প্লাবিত হওয়ায় সরকারি হিসেবে কমপক্ষে ২৮ হাজার ১৮২ পরিবারের দেড় লক্ষাধিক মানুষ এখন পানিবন্দি হয়ে মানবেতর জীবন যাপন করছে।

বন্যার পাশাপাশি নদী ভাঙনে গৃহহীন হয়েছে ৭২৫টি পরিবার। এছাড়া বন্যা নিয়ন্ত্রণ বাঁধ, কাঁচা-পাকা রাস্তা, ব্রিজ ও কালভাটের ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে। বন্যা পরিস্তিতি মোকাবেলায় সকল বিভাগকে সতর্ক থাকার নির্দেশ দেয়া হয়েছে। একই সঙ্গে বাতিল করা হয়েছে ছুটি। খোলা হয়েছে জেলা ও উপজেলা পর্যায়ে কন্ট্রোল রুম।

কুড়িগ্রাম পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী আরিফুল ইসলাম জানান, কুড়িগ্রামের ছোট-বড় ১৬টি নদ-নদীর মধ্যে ধরলা ৫২ সেন্টিমিটার, ব্রহ্মপুত্র ৩৯ সেন্টিমিটার, তিস্তা ৯ সেন্টিমিটার ও দুধকুমোর নদীর পানি বিপৎসীমার ৭ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে শনিবার দুপুর থেকে প্রবাহিত হচ্ছিল। ফলে জেলার সার্বিক বন্যা পরিস্থিতির মারাত্মক অবনতি ঘটেছে। ভাঙন দেখা দিয়েছে সারডোবে ধরলা নদীর বন্যা নিয়ন্ত্রণ বাঁধে। চিলমারীর নয়ারহাট ও অষ্টমীরচর ইউনিয়নের কয়েকটি চরে নদী ভাঙনে ৫০টি পরিবার গৃহহীন হয়েছে।

রৌমারী উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা দীপঙ্কর রায় জানান, বন্দবের ইউনিয়নের বন্যা নিয়ন্ত্রণ বাঁধের ৩০০ মিটার ভেঙে গেছে। এছাড়া যাদুরচর ইউনিয়নে বন্যা নিয়ন্ত্রণ বাঁধের ৫টি স্থানে ভাঙন দেখা দিয়েছে। এসব এলাকার ৫০টি পরিবারকে নিরাপদ স্থানে সড়িয়ে নেয়া হয়েছে। আর ২৮টি পরিবারের মধ্যে ঘর নির্মাণের জন্য ঢেউটিন ও শুকনা খাবার সরবরাহ করা হয়েছে।

চিলমারীর তিস্তার ভাঙনে হরিপুর এলাকার মহির প্রামাণিকের বাড়ির পাশের একটি সাব বাঁধ ভেঙে গিয়ে বিস্তৃর্ণ এলাকা প্লাবিত হয়েছে। ওই ইউনিয়নের চেয়ারম্যান মো. আজগার আলী সরকার জানান, তার ইউনিয়নের বাসন্তিপাড়া, মাঝিপাড়া, রায়পাড়া, টোন গ্রাম, উত্তর রমনা, খেউনি পাড়াসহ অন্তত ১৫টি গ্রামের মানুষ পানিবন্দি হয়ে পড়েছে। ঘরবাড়িতে পানি ওঠায় এসব গ্রামের বাসিন্দারা ইউনিয়নের ওয়াবদা বেড়িবাঁধ, জোরগাছ ২ নং সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় এবং রিয়াজুল জান্নাত মাদরাসায় আশ্রয় নিয়েছে।

এদিকে সদরের হলোখানা ইউনিয়নের সারডোব, বাংটুর ঘাট, উলিপুরের চর বজরা ও রাজারহাট উপজেলার বিদ্যানন্দ ইউনিয়নের গাবুরহেলাল গ্রামে বন্যা নিয়ন্ত্রণ বাঁধ হুমকির মুখে রয়েছে। এই এলাকাগুলোতে বাঁধ মেরামতে বালুর বস্তা ফেলা হচ্ছে।

কুড়িগ্রাম সদরের যাত্রাপুর ইউনিয়নের চেয়ারম্যান আইয়ুব আলী সরকার জানান, তার ইউনিয়নে প্রায় ৪ হাজার পরিবারের ২০ হাজার মানুষ পানিবন্দি হয়ে পড়েছে।

কুড়িগ্রাম সদর উপজেলার হলোখানা ইউনিয়নের চেয়ারম্যান উমর ফারুখ জানান, ধরলা নদীর পানি বেড়ে তার ইউনিয়নে ধরলার উত্তর তীরবর্তী অংশের গ্রামসহ সারডোব, সাত কালোয়া, খামার হলোখানা এলাকা প্লাবিত হয়ে প্রায় ৩ হাজার মানুষ পানিবন্দি হয়ে পড়েছে।

উলিপুর উপজেলার বেগমগঞ্জ ইউনিয়নের চেয়ারম্যান মো. বেলাল হোসেন জানান, ওই ইউনিয়নের প্রায় ৪ হাজারেরও বেশি মানুষ পানিবন্দি হয়ে পড়েছে।

কুড়িগ্রাম জেলা কন্ট্রোল রুম সূত্রে জানা যায়, জেলার ৯ উপজেলার ২৮ হাজার ১৮২টি পরিবার পানিবন্দি হয়ে পড়েছে। নদী ভাঙনে ভিটেমাটি হারিয়ে নিঃস্ব হয়েছে ৭২৫টি পরিবার।

কুড়িগ্রামের অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (সার্বিক) হাফিজুর রহমান বলেন, বন্যা মোকাবেলায় আমাদের পূর্বপ্রস্তুতি রয়েছে। ইতোমধ্যে বন্যা কবলিত উপজেলাগুলোতে ৫০ মেট্রিক টন চাল, নগদ ২ লাখ ৭৫ হাজার টাকা বরাদ্দ দেয়া হয়েছে। যা বিতরণ শুরু হয়েছে। এছাড়াও সাড়ে চারশ টন চাল ও ৫ লাখ ৭৫ হাজার টাকা মজুত রয়েছে। বন্যা পরিস্থিতি মোকাবেলায় জরুরি ভিত্তিতে আরও এক হাজার মেট্রিক টন জিআর চাল, ২০ লাখ টাকা এবং ১০ হাজার প্যাকেট শুকনো খাবার বরাদ্দ চাওয়া হয়েছে।