ঢাকা ০৬:১৩ অপরাহ্ন, রবিবার, ০৮ ডিসেম্বর ২০২৪, ২৪ অগ্রহায়ণ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ




গ্রাম্য সালিশে প্রকাশ্যে কিশোরীর ধর্ষণের বর্ণনা ভিডিও

প্রতিনিধির নাম
  • আপডেট সময় : ১২:১৬:৩৮ অপরাহ্ন, শনিবার, ৬ জুলাই ২০১৯ ৯৪ বার পড়া হয়েছে

জেলা প্রতিনিধি;
কুষ্টিয়ার খোকসায় প্রকাশ্য সালিশে প্রতিবন্ধী কিশোরীরকে যৌন নির্যাতনের বর্ণনার ভিডিও ভাইরাল হয়েছে। এ ঘটনায় উপজেলা জুড়ে শুরু হয়েছে তোলপাড়।

ঘটনার এক সপ্তাহ পর পুলিশ ওই কিশোরী ও তার মাকে খুঁজে বের করে মামলা রেকর্ড করেছে। তবে সালিশকারীরা প্রভাবশালী হওয়ায় তারা এখনও ধরা ছোয়ার বাইরে রয়ে গেছে।

জানা গেছে, উপজেলা সদরের থানাপাড়ার আমির আলীর ছেলে অন্তর প্রতিবেশী এক প্রতিবন্ধী কিশোরীকে পাট খেতে নিয়ে জোরপূর্বক যৌন নির্যাতন করে। পরে স্থানীয়রা তাকে উদ্ধার করে বাড়ি পৌঁছে দিয়ে যায়। বিষয়টি ধামাচাপা দিতে ঘটনার চারদিন পর গত সোমবার বিকেলে স্থানীয় মাতব্বররা গ্রামের রাস্তার মোড়ে সালিশি বৈঠকে বসেন। আর রায় ঘোষণার বোর্ডের সভপতি ছিলেন যুবলীগের একাংশের নেতা আল-আমীন বকুল।

এতে পৌরসভার ৬ নম্বর ওয়ার্ড কাউন্সিলর ইমরান হোসেনসহ ক্ষমতাসীন দল ও যুবলীগ একাংশের একাধিক নেতা উপস্থিত ছিলেন। এ সময় সেখানে বিভিন্ন বয়সের কয়েকশ লোক জড়ো হয়।

বৈঠকে যৌন নির্যাতনকারীর পাশে প্রতিবন্ধী কিশোরী ও তার মধ্যবয়সী স্বামী পরিত্যক্তা মাকে দাঁড় করানো হয়। মাতব্বররা নির্যাতিত কিশোরীর কাছে ঘটনার বিষয়ে খোলামেলা প্রশ্ন করে উত্তর আদায়ের চেষ্টা করেন। পরে যৌন নির্যাতনকারী অন্তরকে চড়-থাপ্পর দিয়ে বৈঠক শেষ হয়। কিন্তু নির্যাতিতার পরিবার এতে অসন্তোষ প্রকাশ করলে সালিশকারীরা ক্ষুব্ধ হন এবং মামলা না করার জন্য চাপ দিতে থাকেন।

এদিকে সেই সুযোগে একটি চক্র গোপনে সালিশে প্রতিবন্ধী কিশোরীর খোলামেলা জবানবন্দির ভিডিও ধারণ করে তা সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছেড়ে দেয়। মুহূর্তেই সেই ভিডিও ভাইরাল হয়ে যায়।

এ কারণে এক পর্যায়ে বাধ্য হয়েই ঘটনার পরদিন মঙ্গলবার সকালে ঘরবাড়ি ফেলে রেখে আত্মগোপন করে কিশোরীসহ তার পরিবার। পরে পুলিশ তাদের ফিরিয়ে এনে নারী নির্যাতনের মামলা গ্রহণ করেছে।

পুলিশ জানিয়েছে এ মামলার নাম থাকায় কিশোর অন্তরকে আটক করে কুষ্টিয়ায় সেফ কাষ্টোডিতে পাঠানো হয়েছে।

বুধবার থানা ক্যাম্পাস থেকে ৩শ মিটার দূরে কিশোরীর মহল্লায় গিয়ে ঘরের দরজায় তালা ঝুলতে দেখা যায়। প্রতিবেশীরা ওই কিশোরীর ওপর যৌন নির্যাতনের সত্যতা নিশ্চিত করেছেন।

সালিশে উপস্থি ছিলেন মহল্লার এমন একাধিক নারী জানান, কয়েকশ লোকের উপস্থিতিতে ভরা মজলিসে কিশোরীকে খুব বাজে বাজে প্রশ্ন করা হয়। এ ঘটনা তাদের কষ্ট দিয়েছে।

কুমারখালী উপজেলার পান্টি গ্রামে এক আত্মীয়ের বাড়িতে আত্মোগোপনে থানা কিশোরী ও তার মাকে পুলিশ উদ্ধার করে থানায় নিয়ে আসে। কিশোরীকে ধর্ষণের এক সপ্তাহ পর বুধবার রাতে অন্তরকে আসামি করে একটি মামলা নেয়া হয়। তবে এই মমলায় প্রকাশ্য সালিশে জবানবন্দী নেয়া ও তার ভিডিও ভাইরালের ঘটনায় জড়িতদের বিরুদ্ধে কোনো আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়নি।

মামলা রেকর্ডের পর কিশোরীর মা সাংবাদিকদের বলেন, এবার একটা পাপের বিচার হতে পরে পারে। তবে মেয়েকে নিয়ে আতঙ্কের মধ্যে আছেন।

অভিযুক্ত অন্তরের মা রোমানা জানান, তার ছেলে স্থানীয় মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের নবম শ্রেণির ছাত্র। সে মেয়েটার সঙ্গে মাঠের মধ্যে কথা বলছিল। এমন সময় এক প্রতিবেশী নারী সেখান থেকে হাত ধরে নিয়ে এসে মেয়েটিকে বাড়িতে পৌঁছে দেয়। এর পর মেয়ে পক্ষ সালিশের আয়োজন করে। সেখানে তার ছেলেকে চড় থাপ্পড় মারা হয়েছে।

মামলা না করার জন্য তারা চাপ দেননি দাবি করে তিনি বলেন তার ছেলের নামে অন্যায়ভাবে মামলা দেয়া হয়েছে।

এ ব্যাপারে কথা বলার জন্য খোকসা পৌর সভার ৫ নম্বর ওয়ার্ড কাউন্সিলর ইমরান হোসেনর সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তিনি জানান, এলাকার কাউন্সিলর হিসেবে তিনি গিয়েছিলেন। তবে নিজে সালিশ করেননি। সালিশ করেছে মেয়েরের ভাই ও অন্যরা।

সালিশ বৈঠকের সভাপতি আল আমিন বকুল বলেন, দ্বিতীয় দফার সালিশে তিনি মেয়ের এক ফুপাতো ভাইকে মারের (হামলার) হাত থেকে রক্ষা করতে গিয়েছিলেন। প্রতিবন্ধী কিশোরীকে জোর করে পাট খেতে নিয়ে যাওয়ার আংশিক সত্যতা পাওয়া গেছে। সালিশটি জনসম্মুখে হয়েছিল বলেও স্বীকার করেন তিনি।

মামলার তদন্তকারী পুলিশ কর্মকর্তা এসআই প্রশান্ত কুমার সাহা বলেন, মামলাটি সবে হাতে পেয়েছেন, বিষদ পর্যালোচনা করতে পারেননি। তবে এজাহারে নাম থাকা অন্তর কিশোর হওয়ায় তাকে সেফ কাষ্টোডিতে রাখা হয়েছে।

নিউজটি শেয়ার করুন

আপনার মন্তব্য

Your email address will not be published. Required fields are marked *

আপনার ইমেইল এবং অন্যান্য তথ্য সংরক্ষন করুন

ট্যাগস :




গ্রাম্য সালিশে প্রকাশ্যে কিশোরীর ধর্ষণের বর্ণনা ভিডিও

আপডেট সময় : ১২:১৬:৩৮ অপরাহ্ন, শনিবার, ৬ জুলাই ২০১৯

জেলা প্রতিনিধি;
কুষ্টিয়ার খোকসায় প্রকাশ্য সালিশে প্রতিবন্ধী কিশোরীরকে যৌন নির্যাতনের বর্ণনার ভিডিও ভাইরাল হয়েছে। এ ঘটনায় উপজেলা জুড়ে শুরু হয়েছে তোলপাড়।

ঘটনার এক সপ্তাহ পর পুলিশ ওই কিশোরী ও তার মাকে খুঁজে বের করে মামলা রেকর্ড করেছে। তবে সালিশকারীরা প্রভাবশালী হওয়ায় তারা এখনও ধরা ছোয়ার বাইরে রয়ে গেছে।

জানা গেছে, উপজেলা সদরের থানাপাড়ার আমির আলীর ছেলে অন্তর প্রতিবেশী এক প্রতিবন্ধী কিশোরীকে পাট খেতে নিয়ে জোরপূর্বক যৌন নির্যাতন করে। পরে স্থানীয়রা তাকে উদ্ধার করে বাড়ি পৌঁছে দিয়ে যায়। বিষয়টি ধামাচাপা দিতে ঘটনার চারদিন পর গত সোমবার বিকেলে স্থানীয় মাতব্বররা গ্রামের রাস্তার মোড়ে সালিশি বৈঠকে বসেন। আর রায় ঘোষণার বোর্ডের সভপতি ছিলেন যুবলীগের একাংশের নেতা আল-আমীন বকুল।

এতে পৌরসভার ৬ নম্বর ওয়ার্ড কাউন্সিলর ইমরান হোসেনসহ ক্ষমতাসীন দল ও যুবলীগ একাংশের একাধিক নেতা উপস্থিত ছিলেন। এ সময় সেখানে বিভিন্ন বয়সের কয়েকশ লোক জড়ো হয়।

বৈঠকে যৌন নির্যাতনকারীর পাশে প্রতিবন্ধী কিশোরী ও তার মধ্যবয়সী স্বামী পরিত্যক্তা মাকে দাঁড় করানো হয়। মাতব্বররা নির্যাতিত কিশোরীর কাছে ঘটনার বিষয়ে খোলামেলা প্রশ্ন করে উত্তর আদায়ের চেষ্টা করেন। পরে যৌন নির্যাতনকারী অন্তরকে চড়-থাপ্পর দিয়ে বৈঠক শেষ হয়। কিন্তু নির্যাতিতার পরিবার এতে অসন্তোষ প্রকাশ করলে সালিশকারীরা ক্ষুব্ধ হন এবং মামলা না করার জন্য চাপ দিতে থাকেন।

এদিকে সেই সুযোগে একটি চক্র গোপনে সালিশে প্রতিবন্ধী কিশোরীর খোলামেলা জবানবন্দির ভিডিও ধারণ করে তা সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছেড়ে দেয়। মুহূর্তেই সেই ভিডিও ভাইরাল হয়ে যায়।

এ কারণে এক পর্যায়ে বাধ্য হয়েই ঘটনার পরদিন মঙ্গলবার সকালে ঘরবাড়ি ফেলে রেখে আত্মগোপন করে কিশোরীসহ তার পরিবার। পরে পুলিশ তাদের ফিরিয়ে এনে নারী নির্যাতনের মামলা গ্রহণ করেছে।

পুলিশ জানিয়েছে এ মামলার নাম থাকায় কিশোর অন্তরকে আটক করে কুষ্টিয়ায় সেফ কাষ্টোডিতে পাঠানো হয়েছে।

বুধবার থানা ক্যাম্পাস থেকে ৩শ মিটার দূরে কিশোরীর মহল্লায় গিয়ে ঘরের দরজায় তালা ঝুলতে দেখা যায়। প্রতিবেশীরা ওই কিশোরীর ওপর যৌন নির্যাতনের সত্যতা নিশ্চিত করেছেন।

সালিশে উপস্থি ছিলেন মহল্লার এমন একাধিক নারী জানান, কয়েকশ লোকের উপস্থিতিতে ভরা মজলিসে কিশোরীকে খুব বাজে বাজে প্রশ্ন করা হয়। এ ঘটনা তাদের কষ্ট দিয়েছে।

কুমারখালী উপজেলার পান্টি গ্রামে এক আত্মীয়ের বাড়িতে আত্মোগোপনে থানা কিশোরী ও তার মাকে পুলিশ উদ্ধার করে থানায় নিয়ে আসে। কিশোরীকে ধর্ষণের এক সপ্তাহ পর বুধবার রাতে অন্তরকে আসামি করে একটি মামলা নেয়া হয়। তবে এই মমলায় প্রকাশ্য সালিশে জবানবন্দী নেয়া ও তার ভিডিও ভাইরালের ঘটনায় জড়িতদের বিরুদ্ধে কোনো আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়নি।

মামলা রেকর্ডের পর কিশোরীর মা সাংবাদিকদের বলেন, এবার একটা পাপের বিচার হতে পরে পারে। তবে মেয়েকে নিয়ে আতঙ্কের মধ্যে আছেন।

অভিযুক্ত অন্তরের মা রোমানা জানান, তার ছেলে স্থানীয় মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের নবম শ্রেণির ছাত্র। সে মেয়েটার সঙ্গে মাঠের মধ্যে কথা বলছিল। এমন সময় এক প্রতিবেশী নারী সেখান থেকে হাত ধরে নিয়ে এসে মেয়েটিকে বাড়িতে পৌঁছে দেয়। এর পর মেয়ে পক্ষ সালিশের আয়োজন করে। সেখানে তার ছেলেকে চড় থাপ্পড় মারা হয়েছে।

মামলা না করার জন্য তারা চাপ দেননি দাবি করে তিনি বলেন তার ছেলের নামে অন্যায়ভাবে মামলা দেয়া হয়েছে।

এ ব্যাপারে কথা বলার জন্য খোকসা পৌর সভার ৫ নম্বর ওয়ার্ড কাউন্সিলর ইমরান হোসেনর সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তিনি জানান, এলাকার কাউন্সিলর হিসেবে তিনি গিয়েছিলেন। তবে নিজে সালিশ করেননি। সালিশ করেছে মেয়েরের ভাই ও অন্যরা।

সালিশ বৈঠকের সভাপতি আল আমিন বকুল বলেন, দ্বিতীয় দফার সালিশে তিনি মেয়ের এক ফুপাতো ভাইকে মারের (হামলার) হাত থেকে রক্ষা করতে গিয়েছিলেন। প্রতিবন্ধী কিশোরীকে জোর করে পাট খেতে নিয়ে যাওয়ার আংশিক সত্যতা পাওয়া গেছে। সালিশটি জনসম্মুখে হয়েছিল বলেও স্বীকার করেন তিনি।

মামলার তদন্তকারী পুলিশ কর্মকর্তা এসআই প্রশান্ত কুমার সাহা বলেন, মামলাটি সবে হাতে পেয়েছেন, বিষদ পর্যালোচনা করতে পারেননি। তবে এজাহারে নাম থাকা অন্তর কিশোর হওয়ায় তাকে সেফ কাষ্টোডিতে রাখা হয়েছে।