ঢাকা ১২:১০ অপরাহ্ন, শনিবার, ২০ এপ্রিল ২০২৪, ৭ বৈশাখ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ
সংবাদ শিরোনাম :
Logo মঙ্গল শোভাযাত্রা – তাসফিয়া ফারহানা ঐশী Logo সাস্টিয়ান ব্রাহ্মণবাড়িয়া এর ইফতার মাহফিল সম্পন্ন Logo কুবির চট্টগ্রাম স্টুডেন্টস ওয়েলফেয়ার এসোসিয়েশনের ইফতার ও পূর্নমিলনী Logo অধ্যাপক জহীর উদ্দিন আহমেদের মায়ের মৃত্যুতে শাবির মহান মুক্তিযুদ্ধের চেতনা ও মুক্ত চিন্তা চর্চায় ঐক্যবদ্ধ শিক্ষকবৃন্দ পরিষদের শোক প্রকাশ Logo শাবির অধ্যাপক জহীর উদ্দিনের মায়ের মৃত্যুতে উপাচার্যের শোক প্রকাশ Logo বিশ কোটিতে গণপূর্তের প্রধান হওয়ার মিশনে ‘ছাত্রদল ক্যাডার প্রকৌশলী’! Logo দূর্নীতির রাক্ষস ফায়ার সার্ভিসের এডি আনোয়ার! Logo ঝড় ও শিলাবৃষ্টিতে ক্ষতি হওয়া শাহজালাল বিশ্ববিদ্যালয়ে অবকাঠামোর সংস্কার শুরু Logo বুয়েটে নিয়মতান্ত্রিক ছাত্র রাজনীতির দাবিতে শাবিপ্রবি ছাত্রলীগের মানববন্ধন Logo কুবি উপাচার্যের বক্তব্যের প্রমাণ দিতে শিক্ষক সমিতির সাত দিনের আল্টিমেটাম




সংকট আর অস্থিরতায় বৃহৎ দুই ছাত্র সংগঠন

প্রতিনিধির নাম
  • আপডেট সময় : ০২:৩০:২৮ অপরাহ্ন, মঙ্গলবার, ২৫ জুন ২০১৯ ৭৭ বার পড়া হয়েছে
সংকটে দেশের বড় দুই দলের ছাত্র সংগঠন। কোন্দল নিরসনে হিমশিম খাচ্ছে হাইকমান্ডও। ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের ভ্রাতৃপ্রতিম সংগঠন ছাত্রলীগে অভ্যন্তরীণ দ্বন্দ্ব ও আস্থার সংকট প্রকট। কমিটি ঘোষণার পর এ কোন্দল প্রকাশ্যে চলে এসেছে। বিতর্কিতদের বাদ দিয়ে যোগ্য ও ত্যাগীদের কমিটিতে অন্তর্ভুক্তির দাবিতে একটি গ্রুপ টানা অবস্থান কর্মসূচি পালন করে যাচ্ছে। অন্যদিকে মাঠের বিরোধী দল বিএনপির সহযোগী সংগঠন ছাত্রদলেও তৈরি হয়েছে সংকট। বয়সসীমা নির্ধারণ করে কমিটি ভেঙে দেয়ার পর থেকে বিক্ষুব্ধরা কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের সামনে অবস্থান কর্মসূচি পালন করে আসছে। হাইকমান্ড সংকট সমাধানে এখনও কার্যকর কোনো উদ্যোগ নিতে পারেনি। দু’দলের ছাত্র সংগঠনের এমন সংকটে ছাত্র রাজনীতিতে বিরূপ প্রভাব পড়ছে

আওয়ামী প্রতিবেদকঃ

ক্ষমতাসীন দলের ছাত্র সংগঠন বাংলাদেশ ছাত্রলীগের কেন্দ্রীয় কমিটি গঠনকে কেন্দ্র করে অভ্যন্তরীণ দ্বন্দ্বে সংকট চরমে পৌঁছেছে। ৩০১ সদস্যের কেন্দ্রীয় কমিটিতে শতাধিক বিতর্কিতকে পদায়ন এবং সদ্যবিদায়ী কমিটির যোগ্যদের বাদ দেয়াকে কেন্দ্র করে এ অবস্থার সৃষ্টি। পূর্ণাঙ্গ কমিটি গঠনের এক মাস পার হয়েছে। এখনও বিতর্কিতদের বাদ দেয়া হয়নি। পদবঞ্চিতদের টানা অবস্থান কর্মসূচি থেকে সরিয়ে আনতে নেয়া হচ্ছে না কার্যকর কোনো উদ্যোগ। ফলে সংকট আরও ঘনীভূত হচ্ছে। বিতর্কিতদের বাদ দিতে ছাত্রলীগ সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক দফায় দফায় বিভিন্ন সিদ্ধান্ত ও বক্তব্য দিয়ে তা বাস্তবায়ন না করায় আস্থার সংকটও তৈরি হয়েছে। যার নেতিবাচক প্রভাব পড়ছে সংগঠন পরিচালনায়।

এ অবস্থায় মঙ্গলবার সন্ধ্যায় ৪ দফা দাবিতে প্রধানমন্ত্রী ও আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনা বরাবর স্মারকলিপি দেন পদবঞ্চিত ও প্রত্যাশিত পদ না পাওয়া নেতারা। তাদের ৪টি দাবি হল- প্রধানমন্ত্রী ও আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনার সঙ্গে সাক্ষাতের সুযোগ; ছাত্রলীগের কমিটির যে ১৯ জন বিতর্কিত নেতার পদ শূন্য ঘোষণা করা হয়েছে তাদের পদ ও নাম প্রকাশ; কমিটিতে যত বিতর্কিত রয়েছে, সবার পদ শূন্য ঘোষণা; পদবঞ্চিতদের মধ্যে যোগ্যতার ভিত্তিতে শূন্যপদগুলোতে পদায়ন এবং মধুর ক্যান্টিন ও টিএসসিতে হামলার সুষ্ঠু বিচার।

সার্বিক বিষয়ে জানতে চাইলে ছাত্রলীগ সাধারণ সম্পাদক গোলাম রাব্বানী বলেন, বিতর্কিতদের বিরুদ্ধে অবশ্যই ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে। আমি ও আমার সভাপতি এ বিষয়ে কয়েক দফা আলাপ-আলোচনা করেছি। শিগগির এ বিষয়ে সিদ্ধান্ত জানানো হবে।

১৩ মে ছাত্রলীগের পূর্ণাঙ্গ কমিটি ঘোষণার পর তিন দফায় বিতর্কিতদের বাদ দিতে সংবাদ সম্মেলন, সংবাদ বিজ্ঞপ্তি ও বক্তব্য দিয়েও বাস্তবায়ন করেনি ছাত্রলীগ। ১৫ মে আন্দোলনের মুখে ছাত্রলীগ সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক ১৭ জন বিতর্কিত নেতার নাম প্রকাশ করেন। তাদের বিরুদ্ধে ২৪ ঘণ্টার মধ্যে তথ্য-প্রমাণসাপেক্ষে ব্যবস্থা গ্রহণ করে পদগুলো শূন্য হবে বলে ঘোষণা দেন। কিন্তু ২৪ ঘণ্টার মধ্যে ছাত্রলীগ সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক পদগুলো শূন্য ঘোষণা করেননি। তারা ২৮ মে দিবাগত রাত ১টায় সংবাদ বিজ্ঞপ্তি দিয়ে ১৯টি পদ শূন্য ঘোষণা করেন। তবে শূন্যপদের নাম বা ব্যক্তির নাম ঘোষণা করেনি। তখন প্রধানমন্ত্রী ও আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনা দেশের বাইরে ছিলেন। দেশে ফিরলে এ বিষয়ে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেয়া হবে বলেও ছাত্রলীগের পক্ষ থেকে জানানো হলেও তা করা হয়নি।

এ ছাড়া সংবাদ সম্মেলন করে ছাত্রলীগ সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক যে ১৭ জন বিতর্কিতর নাম ঘোষণা করেছিলেন তারাও এখন সব কর্মসূচিতে নিয়মিত। সর্বশেষ ছাত্রলীগ সাধারণ সম্পাদক গোলাম রাব্বানীর বরিশাল অঞ্চলে সাংগঠনিক সফরে সঙ্গী হয়েছিলেন এমন কয়েকজন। তারা নিয়মিত সাংগঠনিক পরিচয়ও দিচ্ছেন। ফলে বিভিন্ন সময়ে যেসব নাম প্রকাশ হয়েছে বা পদ শূন্য ঘোষণা হয়েছে, সেগুলোকে ‘নাটক’ ও ‘ছলচাতুরী’ বলে মনে করছেন আন্দোলনকারীরা।

এসব বিষয়ে সদ্যবিদায়ী কমিটির কর্মসূচি ও পরিকল্পনা বিষয়ক সম্পাদক রাকিব হোসেন বলেন, অভিযুক্ত শতাধিক নেতার নাম আমরা বলেছি। তাদের মধ্যে অকাট্য দলিলসহ ৫০ জনের তালিকা দিতে সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদকের সঙ্গে অসংখ্যবার যোগাযোগ করেও পাইনি। পরে নানক ভাইকে (জাহাঙ্গীর কবির নানক) দিয়েছি। অথচ নতুন নাটক সাজিয়ে ১৯টি পদ শূন্য ঘোষণা করে প্রেস রিলিজ দেয়া হয়েছে। যা একেবারেই অস্পষ্ট। সেখানে কারও নাম নেই, কোনো কিছুই সুস্পষ্টভাবে বলা হয়নি। আমরা এই ছলচাতুরীর প্রতিবাদ জানাই। এর আগেও ১৭ জনের নাম ঘোষণা করে তাদের বিরুদ্ধে ২৪ ঘণ্টার মধ্যে ব্যবস্থা গ্রহণের কথা বলা হয়েছিল। অথচ তাদের বড় একটি অংশকে সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদকের একান্তজন হিসেবে তাদের গাড়িতে দেখা যায়। সর্বশেষ বলা হল ১১ জনের বিষয়ে চূড়ান্ত সিদ্ধান্তের কথা। সেটারও কোনো খবর নেই। প্রকৃতপক্ষে এগুলো ছলচাতুরী, অপরাজনীতি। তিনি বলেন, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নির্দেশনা অনুযায়ী বিতর্কিতদের বাদ না দেয়া পর্যন্ত আন্দোলন অব্যাহত থাকবে।

এর আগে অন্তত ১৫ দফায় দেয়া প্রতিশ্রুতি শেষে সম্মেলনের এক বছর পর গঠিত হয় ছাত্রলীগের পূর্ণাঙ্গ কমিটি। ৩০১ সদস্যের এ কমিটির শতাধিক নেতার বিরুদ্ধে গঠনতন্ত্র লঙ্ঘন করে পদ পাওয়া এবং বিভিন্ন অন্যায়, অপকর্ম ও অনুপ্রবেশের অভিযোগ ওঠে। নতুন কমিটির সদস্যদের মধ্যে হত্যা মামলার আসামি থেকে শুরু করে বিবাহিত, বিএনপি-জামায়াত সংশ্লিষ্টতা, মাদক গ্রহণ ও ব্যবসা, চাকরিজীবীর নাম আছে। কমিটি ঘোষণার দিনেই এ বিতর্কিতদের বাদ দেয়ার দাবিতে আন্দোলন শুরু করেন প্রায় অর্ধশত নেতা। সর্বশেষ কমিটির এসব নেতা নিজেদের পদায়নের দাবিও জানান। এরপর মধুর ক্যান্টিন ও টিএসসিতে তাদের ওপর দু’দফায় হামলা করে সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদকের অনুসারীরা।

কমিটি থেকে বিতর্কিতদের বাদ দিতে প্রধানমন্ত্রী ও আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনা নির্দেশ দেন। এরপর নতুন কমিটি শ্রদ্ধাঞ্জলি নিবেদন কর্মসূচি স্থগিত করে। পদবঞ্চিতরা ১৬ মে কমিটির বিতর্কিত ৯৯ নেতার নাম প্রকাশ করেন। রাজু ভাস্কর্যে শুরু করেন অবস্থান কর্মসূচি। ১৯ মে ছাত্রলীগের পূর্ণাঙ্গ কমিটি গঠনে দায়িত্বপ্রাপ্ত আওয়ামী লীগের সিনিয়র চার নেতার হস্তক্ষেপে আন্দোলন স্থগিত করেন তারা। পরবর্তী সময়ে গত ২৭ মে পূর্ণাঙ্গ কমিটির বিতর্কিতদের নিয়েই ধানমণ্ডি-৩২-এ বঙ্গবন্ধুর প্রতিকৃতিতে শ্রদ্ধাঞ্জলি দেয় ছাত্রলীগ। এর প্রতিবাদে ২৬ মে দিবাগত রাত ১টা থেকে ফের ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের রাজু ভাস্কর্যে অবস্থান কর্মসূচি শুরু করেন তারা। সেই কর্মসূচি এখনও চলছে। এমনকি রোজা ও ঈদের দিনেও অবস্থান চালিয়ে যান পদবঞ্চিতরা।

ছাত্রদল নিয়ে উভয় সংকটে বিএনপি থেমে আছে নতুন কমিটি গঠনের কাজ;

বি এন পি প্রতিবেদকঃ
ছাত্রদল নিয়ে উভয় সংকটে বিএনপি। বয়সসীমার পরিবর্তে ধারাবাহিক কমিটির দাবিতে ছাত্রদলের সাবেক নেতাদের আন্দোলনে সুরাহা করতে পারছে না দলটি। এ অবস্থায় নতুন কমিটি গঠনের প্রক্রিয়াও থেমে আছে। সংকট নিরসনে নেতারা গুলশান কার্যালয়ে দফায় দফায় বৈঠক করছেন। বর্তমান পরিস্থিতি দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানকে অবহিত করা হয়েছে। তার কাছ থেকে চূড়ান্ত সিদ্ধান্তের অপেক্ষায় রয়েছেন সিনিয়র নেতারা।

আন্দোলনকারীদের অভিযোগ, তাদেরকে কেন্দ্র করে বিএনপি নেতারা ‘রাজনীতি’ শুরু করেছেন। নতুন কমিটি গঠনে ছাত্রদলের সাবেক সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদকদের নিয়ে সার্চ কমিটি করা হয়েছে। এর একটি অংশ আন্দোলনের বিষয়ে ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যানকে বিভ্রান্ত করছে। তাকে বোঝানো হচ্ছে আন্দোলনকারীরা কেন্দ্রীয় নেতৃত্বের বিরুদ্ধে মাঠে নেমেছেন। কিন্তু বাস্তবে তা সত্য নয়। সদ্য বিলুপ্ত কেন্দ্রীয় কমিটির নেতারা দল বা কেন্দ্রীয় নেতৃত্বের বিরুদ্ধে আন্দোলন করছেন না। তারা নিজেদের রাজনৈতিক ত্যাগের মূল্যায়নের দাবিতে মাঠে নেমেছেন। বিষয়টি সমাধানের পরিবর্তে সময়ক্ষেপণ করছে সার্চ কমিটি। যাতে আন্দোলনকারীরা সহিংসতার পথ বেছে নেন। কিন্তু নেতারা তাদের ফাঁদে পা দেননি। যা হাইকমান্ডকে উপলব্ধি করার জন্য তারা অনুরোধ জানান।

এদিকে দাবি আদায়ে বৃহস্পতিবারও নয়াপল্টনে বিএনপির কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের সামনে অবস্থান কর্মসূচি পালন করেছেন ছাত্রদলের ক্ষুব্ধ নেতারা। বেলা ১১ থেকে দুই ঘণ্টা এ কর্মসূচি পালন করেন তারা। সংশ্লিষ্ট বিষয়ে সুস্পষ্ট কোনো আশ্বাস না পেলে শনিবার (আজ) তাদের সংবাদ সম্মেলন করার কথা রয়েছে। সেখান থেকে বড় কোনো কর্মসূচি ঘোষণা হতে পারে বলে জানিয়েছেন ছাত্রদলের নেতারা।

ছাত্রদলের সাবেক সহসভাপতি ইখতিয়ার রহমান কবির বলেন, প্রথমে সার্চ কমিটি ও পরে সিনিয়র নেতাদের আশ্বাসের পরিপ্রেক্ষিতে এবং তাদের সম্মানার্থে আমরা আন্দোলন কর্মসূচি স্থগিত করেছিলাম। কিন্তু আমাদের দাবি পূরণে এখন পর্যন্ত কোনো অগ্রগতি নেই। আমরা শুক্রবার পর্যন্ত অপেক্ষা করেছি। সুস্পষ্ট কোনো আশ্বাস পাইনি। তাই শনিবার (আজ) বড় ধরনের কর্মসূচির ঘোষণা আসতে পারে।

বিএনপির স্থায়ী কমিটির এক সদস্য যুগান্তরকে বলেন, ছাত্রদলের আন্দোলন নিয়ে আমরা উভয় সংকটে। ছাত্ররা দীর্ঘদিন জেল খাটল, মামলা এবং পুলিশের হয়রানির শিকার হল। এর বিনিময়ে ওরা কী পাবে? ওদের কী মূল্যায়ন হবে? দোষটা কার? দোষ কারও না। কারণ গণতান্ত্রিক পরিবেশ না থাকলে কোনো রাজনৈতিক দল তার কাজটি সঠিকভাবে করতে পারে না। তিনি বলেন, বড় বড় রাজনৈতিক দলের ছাত্র সংগঠনে প্রতিযোগিতাগুলো অনেক সময় প্রতিহিংসারও রূপ নেয়। সুতরাং এটাকে বড় করে বা নেতিবাচক করে দেখার কিছুই নেই। তবে এ ক্ষেত্রে আমাদের কিছু দায়িত্ব আছে, সেটা হল- ওদেরকে বোঝানো। তাদের মূল্যায়ন কীভাবে করা যায় তা আমরা দেখব। ওদের সঙ্গে আলাপ করে শিগগির বিষয়টির সমাধান করা হবে।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান শামসুজ্জামান দুদু বলেন, বিএনপি চায় ছাত্ররাই ছাত্রদল করুক। তবে যারা সদ্য সাবেক নেতা তাদের দাবিরও যৌক্তিক কারণ আছে। তারা বিগত দিনে আন্দোলন-সংগ্রাম করেছেন, মামলায় জর্জরিত, নির্যাতন ভোগ করেছেন। দল তাদেরও সম্মান দিতে চায়। ছাত্র রাজনীতি থেকেও তাদের বড় কোনো জায়গায় নেয়ার কথা ভাবছে বিএনপি। আমরা চাই, আলাপ-আলোচনার মধ্য দিয়েই বিষয়টি শেষ হোক।

বিএনপির প্রশিক্ষণবিষয়ক সম্পাদক এবিএম মোশাররফ হোসেন বলেন, আন্দোলনকারী নেতাদের বিষয়টি সমাধান হলেই নতুন কমিটি গঠনের প্রক্রিয়া শুরু হবে। এ ব্যাপারে ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানকে আমরা জানিয়েছি। আশা করি, সমাধান হয়ে যাবে। এক প্রশ্নে তিনি বলেন, এখানে গ্রুপিং বা সিন্ডিকেটের কোনো সুযোগ নেই। আমরা সবাই চাই সমাধান।

তবে নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক সার্চ কমিটির এক নেতা বলেন, ছাত্রদলের নতুন কমিটি গঠনের বিষয়ে হাইকমান্ডের সিদ্ধান্তের কোনো পরিবর্তন না হওয়ার সম্ভাবনা বেশি। এ জন্য বিএনপির বিভিন্ন উপ-কমিটি ও দুই অঙ্গসংগঠন যুবদল ও স্বেচ্ছাসেবক দলে ছাত্রদলের সদ্য সাবেক নেতাদের পদ দেয়ার চিন্তাভাবনা চলছে। কিন্তু কোন প্রক্রিয়ায় হবে তা ঠিক হলেই আন্দোলনকারীদের জানানো হবে। আশা করছি, তারা তা মেনে নেবেন।

গত ৩ জুন ছাত্রদলের কেন্দ্রীয় কমিটি বিলুপ্ত ঘোষণা করে বিএনপি। এর প্রতিবাদে ১১ জুন থেকে বিএনপি কার্যালয়ের সামনে আন্দোলনে নামেন ছাত্রদলের সাবেক কমিটির বিক্ষুব্ধ নেতারা। তবে বিভিন্ন সময় বিএনপির স্থায়ী কমিটি এবং সার্চ কমিটির নেতাদের আশ্বাসে আন্দোলনে বিরতি দিয়ে আসছেন বিক্ষুব্ধরা। কিন্তু দাবি মেনে না নেয়ায় বুধবার থেকে আবারও আন্দোলনে নামেন সাবেক ছাত্রনেতারা।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক বিএনপির কেন্দ্রীয় এক নেতা যুগান্তরকে বলেন, বারবার আশ্বাস দেয়ার পরও এখন পর্যন্ত সার্চ কমিটি আন্দোলনকারীদের সুস্পষ্ট কিছুই জানায়নি। এভাবে চলতে থাকলে সামনের দিনে তারা আরও বিক্ষুব্ধ হয়ে উঠতে পারেন। সে ক্ষেত্রে শান্তিপূর্ণ আন্দোলন সহিংসতার দিকে যাওয়ার আশঙ্কা রয়েছে। তাই বিষয়টি যত দ্রুত সম্ভব সমাধানের জন্য বিএনপি হাইকমান্ডের প্রতি আহ্বান জানান ওই নেতা।

বিএনপির প্রচার সম্পাদক শহীদ উদ্দিন চৌধুরী এ্যানী বলেন, ছাত্রদলের চলমান সংকটের কোনো সমাধান এখন পর্যন্ত হয়নি। আশা করি, আগামী ১-২ দিনের মধ্যেই একটা সমাধান হবে। পার্টির হাইকমান্ড যে সিদ্ধান্ত দেবে, সেটা সবাইকে মেনে নিতে হবে।

গত ৩ জুন এক প্রেস বিজ্ঞপ্তির মাধ্যমে ছাত্রদলের কেন্দ্রীয় কমিটি বাতিল করা হয়। একই সঙ্গে জানানো হয়, আগামী ৪৫ দিনের মধ্যে কাউন্সিলরদের মতামতের ভিত্তিতে সংগঠনটির নতুন কেন্দ্রীয় সংসদ গঠন করা হবে। নতুন কমিটি গঠনে ২০০০ সাল থেকে পরবর্তী বছরে এসএসসি/সমমানের পরীক্ষায় উত্তীর্ণদের প্রার্থী করার বাধ্যবাধকতা আরোপ করা হয়। কিন্তু ১৮ দিন পার হলেও নতুন কমিটি গঠনে আনুষ্ঠানিকভাবে কাজ শুরু করতে পারেনি এ সংক্রান্ত কমিটি। তবে ছাত্রদলের ১১৭ ইউনিটের ভোটার তালিকা প্রস্তুত।

নিউজটি শেয়ার করুন

আপনার মন্তব্য

Your email address will not be published. Required fields are marked *

আপনার ইমেইল এবং অন্যান্য তথ্য সংরক্ষন করুন

ট্যাগস :




সংকট আর অস্থিরতায় বৃহৎ দুই ছাত্র সংগঠন

আপডেট সময় : ০২:৩০:২৮ অপরাহ্ন, মঙ্গলবার, ২৫ জুন ২০১৯
সংকটে দেশের বড় দুই দলের ছাত্র সংগঠন। কোন্দল নিরসনে হিমশিম খাচ্ছে হাইকমান্ডও। ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের ভ্রাতৃপ্রতিম সংগঠন ছাত্রলীগে অভ্যন্তরীণ দ্বন্দ্ব ও আস্থার সংকট প্রকট। কমিটি ঘোষণার পর এ কোন্দল প্রকাশ্যে চলে এসেছে। বিতর্কিতদের বাদ দিয়ে যোগ্য ও ত্যাগীদের কমিটিতে অন্তর্ভুক্তির দাবিতে একটি গ্রুপ টানা অবস্থান কর্মসূচি পালন করে যাচ্ছে। অন্যদিকে মাঠের বিরোধী দল বিএনপির সহযোগী সংগঠন ছাত্রদলেও তৈরি হয়েছে সংকট। বয়সসীমা নির্ধারণ করে কমিটি ভেঙে দেয়ার পর থেকে বিক্ষুব্ধরা কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের সামনে অবস্থান কর্মসূচি পালন করে আসছে। হাইকমান্ড সংকট সমাধানে এখনও কার্যকর কোনো উদ্যোগ নিতে পারেনি। দু’দলের ছাত্র সংগঠনের এমন সংকটে ছাত্র রাজনীতিতে বিরূপ প্রভাব পড়ছে

আওয়ামী প্রতিবেদকঃ

ক্ষমতাসীন দলের ছাত্র সংগঠন বাংলাদেশ ছাত্রলীগের কেন্দ্রীয় কমিটি গঠনকে কেন্দ্র করে অভ্যন্তরীণ দ্বন্দ্বে সংকট চরমে পৌঁছেছে। ৩০১ সদস্যের কেন্দ্রীয় কমিটিতে শতাধিক বিতর্কিতকে পদায়ন এবং সদ্যবিদায়ী কমিটির যোগ্যদের বাদ দেয়াকে কেন্দ্র করে এ অবস্থার সৃষ্টি। পূর্ণাঙ্গ কমিটি গঠনের এক মাস পার হয়েছে। এখনও বিতর্কিতদের বাদ দেয়া হয়নি। পদবঞ্চিতদের টানা অবস্থান কর্মসূচি থেকে সরিয়ে আনতে নেয়া হচ্ছে না কার্যকর কোনো উদ্যোগ। ফলে সংকট আরও ঘনীভূত হচ্ছে। বিতর্কিতদের বাদ দিতে ছাত্রলীগ সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক দফায় দফায় বিভিন্ন সিদ্ধান্ত ও বক্তব্য দিয়ে তা বাস্তবায়ন না করায় আস্থার সংকটও তৈরি হয়েছে। যার নেতিবাচক প্রভাব পড়ছে সংগঠন পরিচালনায়।

এ অবস্থায় মঙ্গলবার সন্ধ্যায় ৪ দফা দাবিতে প্রধানমন্ত্রী ও আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনা বরাবর স্মারকলিপি দেন পদবঞ্চিত ও প্রত্যাশিত পদ না পাওয়া নেতারা। তাদের ৪টি দাবি হল- প্রধানমন্ত্রী ও আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনার সঙ্গে সাক্ষাতের সুযোগ; ছাত্রলীগের কমিটির যে ১৯ জন বিতর্কিত নেতার পদ শূন্য ঘোষণা করা হয়েছে তাদের পদ ও নাম প্রকাশ; কমিটিতে যত বিতর্কিত রয়েছে, সবার পদ শূন্য ঘোষণা; পদবঞ্চিতদের মধ্যে যোগ্যতার ভিত্তিতে শূন্যপদগুলোতে পদায়ন এবং মধুর ক্যান্টিন ও টিএসসিতে হামলার সুষ্ঠু বিচার।

সার্বিক বিষয়ে জানতে চাইলে ছাত্রলীগ সাধারণ সম্পাদক গোলাম রাব্বানী বলেন, বিতর্কিতদের বিরুদ্ধে অবশ্যই ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে। আমি ও আমার সভাপতি এ বিষয়ে কয়েক দফা আলাপ-আলোচনা করেছি। শিগগির এ বিষয়ে সিদ্ধান্ত জানানো হবে।

১৩ মে ছাত্রলীগের পূর্ণাঙ্গ কমিটি ঘোষণার পর তিন দফায় বিতর্কিতদের বাদ দিতে সংবাদ সম্মেলন, সংবাদ বিজ্ঞপ্তি ও বক্তব্য দিয়েও বাস্তবায়ন করেনি ছাত্রলীগ। ১৫ মে আন্দোলনের মুখে ছাত্রলীগ সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক ১৭ জন বিতর্কিত নেতার নাম প্রকাশ করেন। তাদের বিরুদ্ধে ২৪ ঘণ্টার মধ্যে তথ্য-প্রমাণসাপেক্ষে ব্যবস্থা গ্রহণ করে পদগুলো শূন্য হবে বলে ঘোষণা দেন। কিন্তু ২৪ ঘণ্টার মধ্যে ছাত্রলীগ সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক পদগুলো শূন্য ঘোষণা করেননি। তারা ২৮ মে দিবাগত রাত ১টায় সংবাদ বিজ্ঞপ্তি দিয়ে ১৯টি পদ শূন্য ঘোষণা করেন। তবে শূন্যপদের নাম বা ব্যক্তির নাম ঘোষণা করেনি। তখন প্রধানমন্ত্রী ও আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনা দেশের বাইরে ছিলেন। দেশে ফিরলে এ বিষয়ে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেয়া হবে বলেও ছাত্রলীগের পক্ষ থেকে জানানো হলেও তা করা হয়নি।

এ ছাড়া সংবাদ সম্মেলন করে ছাত্রলীগ সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক যে ১৭ জন বিতর্কিতর নাম ঘোষণা করেছিলেন তারাও এখন সব কর্মসূচিতে নিয়মিত। সর্বশেষ ছাত্রলীগ সাধারণ সম্পাদক গোলাম রাব্বানীর বরিশাল অঞ্চলে সাংগঠনিক সফরে সঙ্গী হয়েছিলেন এমন কয়েকজন। তারা নিয়মিত সাংগঠনিক পরিচয়ও দিচ্ছেন। ফলে বিভিন্ন সময়ে যেসব নাম প্রকাশ হয়েছে বা পদ শূন্য ঘোষণা হয়েছে, সেগুলোকে ‘নাটক’ ও ‘ছলচাতুরী’ বলে মনে করছেন আন্দোলনকারীরা।

এসব বিষয়ে সদ্যবিদায়ী কমিটির কর্মসূচি ও পরিকল্পনা বিষয়ক সম্পাদক রাকিব হোসেন বলেন, অভিযুক্ত শতাধিক নেতার নাম আমরা বলেছি। তাদের মধ্যে অকাট্য দলিলসহ ৫০ জনের তালিকা দিতে সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদকের সঙ্গে অসংখ্যবার যোগাযোগ করেও পাইনি। পরে নানক ভাইকে (জাহাঙ্গীর কবির নানক) দিয়েছি। অথচ নতুন নাটক সাজিয়ে ১৯টি পদ শূন্য ঘোষণা করে প্রেস রিলিজ দেয়া হয়েছে। যা একেবারেই অস্পষ্ট। সেখানে কারও নাম নেই, কোনো কিছুই সুস্পষ্টভাবে বলা হয়নি। আমরা এই ছলচাতুরীর প্রতিবাদ জানাই। এর আগেও ১৭ জনের নাম ঘোষণা করে তাদের বিরুদ্ধে ২৪ ঘণ্টার মধ্যে ব্যবস্থা গ্রহণের কথা বলা হয়েছিল। অথচ তাদের বড় একটি অংশকে সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদকের একান্তজন হিসেবে তাদের গাড়িতে দেখা যায়। সর্বশেষ বলা হল ১১ জনের বিষয়ে চূড়ান্ত সিদ্ধান্তের কথা। সেটারও কোনো খবর নেই। প্রকৃতপক্ষে এগুলো ছলচাতুরী, অপরাজনীতি। তিনি বলেন, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নির্দেশনা অনুযায়ী বিতর্কিতদের বাদ না দেয়া পর্যন্ত আন্দোলন অব্যাহত থাকবে।

এর আগে অন্তত ১৫ দফায় দেয়া প্রতিশ্রুতি শেষে সম্মেলনের এক বছর পর গঠিত হয় ছাত্রলীগের পূর্ণাঙ্গ কমিটি। ৩০১ সদস্যের এ কমিটির শতাধিক নেতার বিরুদ্ধে গঠনতন্ত্র লঙ্ঘন করে পদ পাওয়া এবং বিভিন্ন অন্যায়, অপকর্ম ও অনুপ্রবেশের অভিযোগ ওঠে। নতুন কমিটির সদস্যদের মধ্যে হত্যা মামলার আসামি থেকে শুরু করে বিবাহিত, বিএনপি-জামায়াত সংশ্লিষ্টতা, মাদক গ্রহণ ও ব্যবসা, চাকরিজীবীর নাম আছে। কমিটি ঘোষণার দিনেই এ বিতর্কিতদের বাদ দেয়ার দাবিতে আন্দোলন শুরু করেন প্রায় অর্ধশত নেতা। সর্বশেষ কমিটির এসব নেতা নিজেদের পদায়নের দাবিও জানান। এরপর মধুর ক্যান্টিন ও টিএসসিতে তাদের ওপর দু’দফায় হামলা করে সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদকের অনুসারীরা।

কমিটি থেকে বিতর্কিতদের বাদ দিতে প্রধানমন্ত্রী ও আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনা নির্দেশ দেন। এরপর নতুন কমিটি শ্রদ্ধাঞ্জলি নিবেদন কর্মসূচি স্থগিত করে। পদবঞ্চিতরা ১৬ মে কমিটির বিতর্কিত ৯৯ নেতার নাম প্রকাশ করেন। রাজু ভাস্কর্যে শুরু করেন অবস্থান কর্মসূচি। ১৯ মে ছাত্রলীগের পূর্ণাঙ্গ কমিটি গঠনে দায়িত্বপ্রাপ্ত আওয়ামী লীগের সিনিয়র চার নেতার হস্তক্ষেপে আন্দোলন স্থগিত করেন তারা। পরবর্তী সময়ে গত ২৭ মে পূর্ণাঙ্গ কমিটির বিতর্কিতদের নিয়েই ধানমণ্ডি-৩২-এ বঙ্গবন্ধুর প্রতিকৃতিতে শ্রদ্ধাঞ্জলি দেয় ছাত্রলীগ। এর প্রতিবাদে ২৬ মে দিবাগত রাত ১টা থেকে ফের ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের রাজু ভাস্কর্যে অবস্থান কর্মসূচি শুরু করেন তারা। সেই কর্মসূচি এখনও চলছে। এমনকি রোজা ও ঈদের দিনেও অবস্থান চালিয়ে যান পদবঞ্চিতরা।

ছাত্রদল নিয়ে উভয় সংকটে বিএনপি থেমে আছে নতুন কমিটি গঠনের কাজ;

বি এন পি প্রতিবেদকঃ
ছাত্রদল নিয়ে উভয় সংকটে বিএনপি। বয়সসীমার পরিবর্তে ধারাবাহিক কমিটির দাবিতে ছাত্রদলের সাবেক নেতাদের আন্দোলনে সুরাহা করতে পারছে না দলটি। এ অবস্থায় নতুন কমিটি গঠনের প্রক্রিয়াও থেমে আছে। সংকট নিরসনে নেতারা গুলশান কার্যালয়ে দফায় দফায় বৈঠক করছেন। বর্তমান পরিস্থিতি দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানকে অবহিত করা হয়েছে। তার কাছ থেকে চূড়ান্ত সিদ্ধান্তের অপেক্ষায় রয়েছেন সিনিয়র নেতারা।

আন্দোলনকারীদের অভিযোগ, তাদেরকে কেন্দ্র করে বিএনপি নেতারা ‘রাজনীতি’ শুরু করেছেন। নতুন কমিটি গঠনে ছাত্রদলের সাবেক সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদকদের নিয়ে সার্চ কমিটি করা হয়েছে। এর একটি অংশ আন্দোলনের বিষয়ে ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যানকে বিভ্রান্ত করছে। তাকে বোঝানো হচ্ছে আন্দোলনকারীরা কেন্দ্রীয় নেতৃত্বের বিরুদ্ধে মাঠে নেমেছেন। কিন্তু বাস্তবে তা সত্য নয়। সদ্য বিলুপ্ত কেন্দ্রীয় কমিটির নেতারা দল বা কেন্দ্রীয় নেতৃত্বের বিরুদ্ধে আন্দোলন করছেন না। তারা নিজেদের রাজনৈতিক ত্যাগের মূল্যায়নের দাবিতে মাঠে নেমেছেন। বিষয়টি সমাধানের পরিবর্তে সময়ক্ষেপণ করছে সার্চ কমিটি। যাতে আন্দোলনকারীরা সহিংসতার পথ বেছে নেন। কিন্তু নেতারা তাদের ফাঁদে পা দেননি। যা হাইকমান্ডকে উপলব্ধি করার জন্য তারা অনুরোধ জানান।

এদিকে দাবি আদায়ে বৃহস্পতিবারও নয়াপল্টনে বিএনপির কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের সামনে অবস্থান কর্মসূচি পালন করেছেন ছাত্রদলের ক্ষুব্ধ নেতারা। বেলা ১১ থেকে দুই ঘণ্টা এ কর্মসূচি পালন করেন তারা। সংশ্লিষ্ট বিষয়ে সুস্পষ্ট কোনো আশ্বাস না পেলে শনিবার (আজ) তাদের সংবাদ সম্মেলন করার কথা রয়েছে। সেখান থেকে বড় কোনো কর্মসূচি ঘোষণা হতে পারে বলে জানিয়েছেন ছাত্রদলের নেতারা।

ছাত্রদলের সাবেক সহসভাপতি ইখতিয়ার রহমান কবির বলেন, প্রথমে সার্চ কমিটি ও পরে সিনিয়র নেতাদের আশ্বাসের পরিপ্রেক্ষিতে এবং তাদের সম্মানার্থে আমরা আন্দোলন কর্মসূচি স্থগিত করেছিলাম। কিন্তু আমাদের দাবি পূরণে এখন পর্যন্ত কোনো অগ্রগতি নেই। আমরা শুক্রবার পর্যন্ত অপেক্ষা করেছি। সুস্পষ্ট কোনো আশ্বাস পাইনি। তাই শনিবার (আজ) বড় ধরনের কর্মসূচির ঘোষণা আসতে পারে।

বিএনপির স্থায়ী কমিটির এক সদস্য যুগান্তরকে বলেন, ছাত্রদলের আন্দোলন নিয়ে আমরা উভয় সংকটে। ছাত্ররা দীর্ঘদিন জেল খাটল, মামলা এবং পুলিশের হয়রানির শিকার হল। এর বিনিময়ে ওরা কী পাবে? ওদের কী মূল্যায়ন হবে? দোষটা কার? দোষ কারও না। কারণ গণতান্ত্রিক পরিবেশ না থাকলে কোনো রাজনৈতিক দল তার কাজটি সঠিকভাবে করতে পারে না। তিনি বলেন, বড় বড় রাজনৈতিক দলের ছাত্র সংগঠনে প্রতিযোগিতাগুলো অনেক সময় প্রতিহিংসারও রূপ নেয়। সুতরাং এটাকে বড় করে বা নেতিবাচক করে দেখার কিছুই নেই। তবে এ ক্ষেত্রে আমাদের কিছু দায়িত্ব আছে, সেটা হল- ওদেরকে বোঝানো। তাদের মূল্যায়ন কীভাবে করা যায় তা আমরা দেখব। ওদের সঙ্গে আলাপ করে শিগগির বিষয়টির সমাধান করা হবে।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান শামসুজ্জামান দুদু বলেন, বিএনপি চায় ছাত্ররাই ছাত্রদল করুক। তবে যারা সদ্য সাবেক নেতা তাদের দাবিরও যৌক্তিক কারণ আছে। তারা বিগত দিনে আন্দোলন-সংগ্রাম করেছেন, মামলায় জর্জরিত, নির্যাতন ভোগ করেছেন। দল তাদেরও সম্মান দিতে চায়। ছাত্র রাজনীতি থেকেও তাদের বড় কোনো জায়গায় নেয়ার কথা ভাবছে বিএনপি। আমরা চাই, আলাপ-আলোচনার মধ্য দিয়েই বিষয়টি শেষ হোক।

বিএনপির প্রশিক্ষণবিষয়ক সম্পাদক এবিএম মোশাররফ হোসেন বলেন, আন্দোলনকারী নেতাদের বিষয়টি সমাধান হলেই নতুন কমিটি গঠনের প্রক্রিয়া শুরু হবে। এ ব্যাপারে ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানকে আমরা জানিয়েছি। আশা করি, সমাধান হয়ে যাবে। এক প্রশ্নে তিনি বলেন, এখানে গ্রুপিং বা সিন্ডিকেটের কোনো সুযোগ নেই। আমরা সবাই চাই সমাধান।

তবে নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক সার্চ কমিটির এক নেতা বলেন, ছাত্রদলের নতুন কমিটি গঠনের বিষয়ে হাইকমান্ডের সিদ্ধান্তের কোনো পরিবর্তন না হওয়ার সম্ভাবনা বেশি। এ জন্য বিএনপির বিভিন্ন উপ-কমিটি ও দুই অঙ্গসংগঠন যুবদল ও স্বেচ্ছাসেবক দলে ছাত্রদলের সদ্য সাবেক নেতাদের পদ দেয়ার চিন্তাভাবনা চলছে। কিন্তু কোন প্রক্রিয়ায় হবে তা ঠিক হলেই আন্দোলনকারীদের জানানো হবে। আশা করছি, তারা তা মেনে নেবেন।

গত ৩ জুন ছাত্রদলের কেন্দ্রীয় কমিটি বিলুপ্ত ঘোষণা করে বিএনপি। এর প্রতিবাদে ১১ জুন থেকে বিএনপি কার্যালয়ের সামনে আন্দোলনে নামেন ছাত্রদলের সাবেক কমিটির বিক্ষুব্ধ নেতারা। তবে বিভিন্ন সময় বিএনপির স্থায়ী কমিটি এবং সার্চ কমিটির নেতাদের আশ্বাসে আন্দোলনে বিরতি দিয়ে আসছেন বিক্ষুব্ধরা। কিন্তু দাবি মেনে না নেয়ায় বুধবার থেকে আবারও আন্দোলনে নামেন সাবেক ছাত্রনেতারা।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক বিএনপির কেন্দ্রীয় এক নেতা যুগান্তরকে বলেন, বারবার আশ্বাস দেয়ার পরও এখন পর্যন্ত সার্চ কমিটি আন্দোলনকারীদের সুস্পষ্ট কিছুই জানায়নি। এভাবে চলতে থাকলে সামনের দিনে তারা আরও বিক্ষুব্ধ হয়ে উঠতে পারেন। সে ক্ষেত্রে শান্তিপূর্ণ আন্দোলন সহিংসতার দিকে যাওয়ার আশঙ্কা রয়েছে। তাই বিষয়টি যত দ্রুত সম্ভব সমাধানের জন্য বিএনপি হাইকমান্ডের প্রতি আহ্বান জানান ওই নেতা।

বিএনপির প্রচার সম্পাদক শহীদ উদ্দিন চৌধুরী এ্যানী বলেন, ছাত্রদলের চলমান সংকটের কোনো সমাধান এখন পর্যন্ত হয়নি। আশা করি, আগামী ১-২ দিনের মধ্যেই একটা সমাধান হবে। পার্টির হাইকমান্ড যে সিদ্ধান্ত দেবে, সেটা সবাইকে মেনে নিতে হবে।

গত ৩ জুন এক প্রেস বিজ্ঞপ্তির মাধ্যমে ছাত্রদলের কেন্দ্রীয় কমিটি বাতিল করা হয়। একই সঙ্গে জানানো হয়, আগামী ৪৫ দিনের মধ্যে কাউন্সিলরদের মতামতের ভিত্তিতে সংগঠনটির নতুন কেন্দ্রীয় সংসদ গঠন করা হবে। নতুন কমিটি গঠনে ২০০০ সাল থেকে পরবর্তী বছরে এসএসসি/সমমানের পরীক্ষায় উত্তীর্ণদের প্রার্থী করার বাধ্যবাধকতা আরোপ করা হয়। কিন্তু ১৮ দিন পার হলেও নতুন কমিটি গঠনে আনুষ্ঠানিকভাবে কাজ শুরু করতে পারেনি এ সংক্রান্ত কমিটি। তবে ছাত্রদলের ১১৭ ইউনিটের ভোটার তালিকা প্রস্তুত।