ঢাকা ১০:১০ পূর্বাহ্ন, মঙ্গলবার, ৩০ এপ্রিল ২০২৪, ১৭ বৈশাখ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ
সংবাদ শিরোনাম :
Logo জবি শিক্ষককে হেনস্থা, গুরু পাপে লঘু দণ্ড Logo কুবিতে ত্রিমুখী সংঘর্ষ, মারধরের পাল্টাপাল্টি অভিযোগ Logo মানসম্পন্ন শিক্ষা নিশ্চিত করা আমাদের অঙ্গীকারঃ ড. তৌফিক রহমান চৌধুরী  Logo মেট্রোপলিটন ইউনিভার্সিটির নতুন বাসের উদ্বোধন Logo মানসম্পন্ন শিক্ষা নিশ্চিত করতে শিক্ষকদের ভূমিকা অগ্রগণ্য: ভিসি প্রফেসর ড. মোহাম্মদ জহিরুল হক Logo মঙ্গল শোভাযাত্রা – তাসফিয়া ফারহানা ঐশী Logo সাস্টিয়ান ব্রাহ্মণবাড়িয়া এর ইফতার মাহফিল সম্পন্ন Logo কুবির চট্টগ্রাম স্টুডেন্টস ওয়েলফেয়ার এসোসিয়েশনের ইফতার ও পূর্নমিলনী Logo অধ্যাপক জহীর উদ্দিন আহমেদের মায়ের মৃত্যুতে শাবির মহান মুক্তিযুদ্ধের চেতনা ও মুক্ত চিন্তা চর্চায় ঐক্যবদ্ধ শিক্ষকবৃন্দ পরিষদের শোক প্রকাশ Logo শাবির অধ্যাপক জহীর উদ্দিনের মায়ের মৃত্যুতে উপাচার্যের শোক প্রকাশ




ধান চাষে বিঘাপ্রতি কৃষকের লোকসান ৬ হাজার টাকা!

প্রতিনিধির নাম
  • আপডেট সময় : ০৪:৪৮:৫৬ অপরাহ্ন, শুক্রবার, ১৭ মে ২০১৯ ১০৬ বার পড়া হয়েছে

বিশেষ প্রতিবেদক;

ধানের বাম্পার ফলন হলেও এবার লোকসান গুনছেন চাষিরাপ্রতি এক বিঘা (৩৩ শতাংশ) জমিতে ইরি-বোরো আবাদে প্রায় সাড়ে ছয় হাজার টাকা করে ঘাটতি হচ্ছে বলে দাবি করছেন টাঙ্গাইলের কৃষকরা। এতে করে তারা ধান চাষে আগ্রহ হারিয়ে ফেলছেন। শ্রমিক সংকট, শ্রমিকের দাম বেশি এবং ধানের দাম কম থাকায় টাঙ্গাইলের প্রত্যন্ত অঞ্চলের কৃষকের পাকা ইরি-বোরো ধান এখনও জমিতেই পড়ে রয়েছে। সব মিলিয়ে কৃষকরা এখন দিশেহারা হয়ে পড়েছেন।

ধানের কম দাম ও শ্রমিক সংকটের কারণে ধান কাটতে না পারার হতাশা থেকে জেলার কালিহাতী উপজেলার পাইকড়া ইউনিয়নের বানকিনা এলাকার আব্দুল মালেক ও বাসাইল উপজেলার কাশিল গ্রামের নজরুল ইসলাম খান সম্প্রতি তাদের নিজ পাকা ধান ক্ষেতে আগুন দিয়ে প্রতিবাদ জানান। জেলার পাশাপাশি দেশের বিভিন্ন জেলায় কৃষকরা ধানের কম দাম নিয়ে প্রতিবাদ জানাতে মানববন্ধন, রাস্তায় ধান ছড়িয়ে প্রতিবাদসহ বিভিন্ন কর্মসূচি পালন করছেন।

প্রত্যন্ত অঞ্চলের কৃষকদের সঙ্গে কথা বললে তারা জানান, ইরি-বোরো চাষে এক বিঘা (৩৩শতাংশ) জমি প্রস্তুত করতে অন্তত তিন জন শ্রমিকের প্রয়োজন হয়। ওই সময় শ্রমিকের মজুরি থাকে ৪৫০ থেকে ৫০০টাকা করে। শ্রমিকের খাবারসহ দুই হাজার টাকার ওপরে খরচ হয়। ট্রাক্টর বাবদ খরচ হয় প্রায় ৮শ’ থেকে এক হাজার টাকা। বীজ ও বীজতলা প্রস্তুত করতে শ্রমিকের মূল্যসহ এক হাজার টাকার ওপরে খরচ হয়। ধানের চারা রোপণ করতে তিন জন শ্রমিকের প্রয়োজন হয়। এই তিন জন শ্রমিকের খাবারসহ দুই হাজার থেকে ২২শ’ টাকা খরচ হয়। এরপর ধান ক্ষেত থেকে ঘাস পরিষ্কার (নিরানী) করতে অন্তত দুই জন শ্রমিক লাগে। এই দুইজন শ্রমিকের খাবারসহ ১৫শ’ টাকার মতো খরচ হয়ে থাকে। ধান কাটতে আবার অন্তত চার জন শ্রমিকের প্রয়োজন হয়। ধান কাটার শ্রমিকের মজুরি এই সময়ে প্রতিজন ৮শ’ থেকে ৯শ’ টাকা পর্যন্ত থাকে। এই চার জন শ্রমিকের খাবারসহ চার হাজার টাকার ওপরে খরচ হয় দিনে। অপরদিকে সার বাবদ ১৫শ’ থেকে ১৮শ’ টাকা খরচ হয়। সব মিলিয়ে বীজ তলা প্রস্তুতসহ কৃষকের সোলানী ধান গোলায় তুলতে অন্তত ১৪ জন শ্রমিকের প্রয়োজন হয়। আর এই ১৪ জন শ্রমিকের খাবারসহ সব মিলিয়ে কৃষকের খরচ হচ্ছে অন্তত সাড়ে ১৩ হাজার টাকার মতো।

এদিকে ওই এক বিঘা (৩৩ শতাংশ ) জমিতে ধান হচ্ছে ১০ থেকে ১৩মণ। ধানের বর্তমান মূল্য ৫০০ থেকে ৫৫০ টাকা করে। ৫৫০ টাকা হিসেবে ১৩মণ ধানের মূল্য সাত হাজার ১৫০ টাকা। কৃষকের ১৩হাজার টাকা খরচ হলে এক বিঘা (৩৩ শতাংশ) জমিতে কৃষকের প্রায় সাড়ে ৬ হাজার টাকা করে লোকসান হচ্ছে।

ধান ফলিয়ে এবার লোকসান গুনছেন চাষিরা

বাসাইল উপজেলার কলিয়া গ্রামের কৃষক আব্দুর রশিদ বলেন, ‘আমি প্রায় ৫ বিঘা জমিতে বোরো ধান আবাদ করেছি। এক বিঘা জমিতে ট্রাক্টর, শ্রমিক ও সারের খরচ বাবদ প্রায় ২৭ হাজার টাকা খরচ হচ্ছে। এক বিঘা জমিতে ২৬ থেকে ৩০ মণ পর্যন্ত ধান হয়। এবার ধানের দাম কম। তাই আমার প্রতি বিঘা জমিতে প্রায় ১০ হাজার টাকা করে লোকসান হবে।’

ধান ক্ষেতে আগুন দেওয়া বাসাইলের কৃষক নজরুল ইসলাম খান বলেন, ‘ধান কাটার শ্রমিকের মজুরি প্রায় এক হাজার টাকা। তারপরও শ্রমিক পাওয়া যাচ্ছে না। অপরদিকে ধান বিক্রি করতে হচ্ছে ৫শ’ টাকা করে। এছাড়াও ধান ক্ষেতে ব্লাস্ট রোগে আক্রান্ত হয়ে ধানের শীষ চিটা হয়ে শুকিয়ে গেছে। ব্লাস্ট রোগে আক্রান্ত হওয়া প্রায় ৫৬ শতাংশের ধান কেটেছি। এই ৫৬শতাংশ জমিতে মাত্র চার মণ ধান হয়েছে। এক বিঘা (৫৬শতাংশ) জমিতে আমার প্রায় ২৫ হাজার টাকার লোকসান হয়েছে। তাই দিশেহারা হয়ে ২০ শতাংশ পাকা ধান ক্ষেতে আগুন ধরিয়ে দেই। পরে স্থানীয়রা এসে আগুন নিভিয়ে দেয়। আমি এবার ১২ বিঘা জমিতে বোরো আবাদ করেছি। এর আট বিঘা জমির ধানে ব্লাস্ট রোগে আক্রান্ত হয়ে চিটা হয়েছে। এবার আমার বোরো আবাদে অনেক টাকার লোকসান হবে।’ধানের বাম্পার ফলন হলেও এবার লোকসান গুনছেন চাষিরা

কৃষক শ্রীবাস মন্ডল বলেন, ‘গত বছর যমুনা সার ধান ক্ষেতে ব্যবহার করতাম। তখন ফলন ভালো হতো। এখন যমুনা সার বাজারে পাওয়া যায় না। এই সারের দাম বর্তমান সারের চেয়ে অনেক কম ছিল। এবার চায়না, সৌদি, অস্ট্রেলিয়া, ইন্দোনেশিয়ার সার বাজারে এসেছে। এসব সার ধান ক্ষেতে ব্যবহার করার কারণে ধানের ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে।’

ধান ক্ষেতে আগুন দেওয়া কালিহাতীর কৃষক আব্দুল মালেক বলেন, ‘ধান কাটতে শ্রমিককে দিতে হচ্ছে প্রায় এক হাজার টাকা। তারপরও শ্রমিক পাওয়া যাচ্ছে না। ধান কেটে বাড়িতে আনতে এক মণ ধানের পেছনে প্রায় এক হাজার টাকা করে খরচ হচ্ছে। ধান বাজারে নিয়ে বিক্রি করতে হচ্ছে ৫শ’ টাকা করে। প্রতিমণে ঘাটতি পড়ছে ৫শ’ টাকা করে।’

তিনি আরও বলেন, ‘ক্ষেতে ধান পাকলেও তা ঘরে তুলতে পারছিলাম না। তাই দিশেহারা হয়ে এক দাগের ৫৬ শতাংশের ধানে আগুন ধরিয়ে দিয়েছিলাম। পরে এলাকার বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থীর এসে ধান কেটে দিয়েছে।’ধানক্ষেত

একাধিক কৃষক জানান, বিভিন্ন খাদ্যদ্রব্যের দাম বাড়ার কারণে শ্রমিকের মজুরিও বেড়ে গেছে। তারা শ্রমিকের বিকল্প হিসেবে ধান কাটা ও মাড়াই যন্ত্র প্রতিটি এলাকায় দেওয়ার জন্য সরকারের কাছে দাবি জানান। সরকার প্রতি বছর কৃষকদের কাছ থেকে ধান নেওয়ার জন্য বললেও সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা স্থানীয় দালালের মাধ্যমে ধানগুলো গোডাউনে তুলছেন। এর ফলে কৃষকরা সরকারের সুবিধা থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন। তারা সরকারকে এ বিষয়ে যথাযথ পদক্ষেপ ও কৃষকদের প্রতি সুদৃষ্টি দেওয়ার জন্য অনুরোধ জানান।

একাধিক সার ব্যবসারীর সঙ্গে কথা বলবে তারা জানান, গত বছর যমুনা সার বাজারে ছিল। তখন কৃষকের ধানের ফলন ভালো হতো। কিন্তু এবার বাজারে কয়েকটি দেশের সার আসার কারণে জমিতে ফলন কম হচ্ছে। এই সারের দামও অনেক বেশি।

টাঙ্গাইল জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতরের উপ-পরিচালক আব্দুর রাজ্জাক বলেন, ‘এখন শ্রকিমের মজুরি বেশি। আর বাজারে ধান মণপ্রতি ৫শ’ টাকা করে বিক্রি হচ্ছে। এই সময়ে ধানের বাজার কিছুটা কম থাকলেও কৃষক যদি ধান সংরক্ষণ করে রাখেন তবে ক’দিন পরেই অধিক মূল্য পাবেন।’ এবার জেলার ১২টি উপজেলায় ১ লাখ ৭১ হাজার ৭০২ হেক্টর জমিতে ধান আবাদ হয়েছে বলেও তিনি জানান।

নিউজটি শেয়ার করুন

আপনার মন্তব্য

Your email address will not be published. Required fields are marked *

আপনার ইমেইল এবং অন্যান্য তথ্য সংরক্ষন করুন

ট্যাগস :




ধান চাষে বিঘাপ্রতি কৃষকের লোকসান ৬ হাজার টাকা!

আপডেট সময় : ০৪:৪৮:৫৬ অপরাহ্ন, শুক্রবার, ১৭ মে ২০১৯

বিশেষ প্রতিবেদক;

ধানের বাম্পার ফলন হলেও এবার লোকসান গুনছেন চাষিরাপ্রতি এক বিঘা (৩৩ শতাংশ) জমিতে ইরি-বোরো আবাদে প্রায় সাড়ে ছয় হাজার টাকা করে ঘাটতি হচ্ছে বলে দাবি করছেন টাঙ্গাইলের কৃষকরা। এতে করে তারা ধান চাষে আগ্রহ হারিয়ে ফেলছেন। শ্রমিক সংকট, শ্রমিকের দাম বেশি এবং ধানের দাম কম থাকায় টাঙ্গাইলের প্রত্যন্ত অঞ্চলের কৃষকের পাকা ইরি-বোরো ধান এখনও জমিতেই পড়ে রয়েছে। সব মিলিয়ে কৃষকরা এখন দিশেহারা হয়ে পড়েছেন।

ধানের কম দাম ও শ্রমিক সংকটের কারণে ধান কাটতে না পারার হতাশা থেকে জেলার কালিহাতী উপজেলার পাইকড়া ইউনিয়নের বানকিনা এলাকার আব্দুল মালেক ও বাসাইল উপজেলার কাশিল গ্রামের নজরুল ইসলাম খান সম্প্রতি তাদের নিজ পাকা ধান ক্ষেতে আগুন দিয়ে প্রতিবাদ জানান। জেলার পাশাপাশি দেশের বিভিন্ন জেলায় কৃষকরা ধানের কম দাম নিয়ে প্রতিবাদ জানাতে মানববন্ধন, রাস্তায় ধান ছড়িয়ে প্রতিবাদসহ বিভিন্ন কর্মসূচি পালন করছেন।

প্রত্যন্ত অঞ্চলের কৃষকদের সঙ্গে কথা বললে তারা জানান, ইরি-বোরো চাষে এক বিঘা (৩৩শতাংশ) জমি প্রস্তুত করতে অন্তত তিন জন শ্রমিকের প্রয়োজন হয়। ওই সময় শ্রমিকের মজুরি থাকে ৪৫০ থেকে ৫০০টাকা করে। শ্রমিকের খাবারসহ দুই হাজার টাকার ওপরে খরচ হয়। ট্রাক্টর বাবদ খরচ হয় প্রায় ৮শ’ থেকে এক হাজার টাকা। বীজ ও বীজতলা প্রস্তুত করতে শ্রমিকের মূল্যসহ এক হাজার টাকার ওপরে খরচ হয়। ধানের চারা রোপণ করতে তিন জন শ্রমিকের প্রয়োজন হয়। এই তিন জন শ্রমিকের খাবারসহ দুই হাজার থেকে ২২শ’ টাকা খরচ হয়। এরপর ধান ক্ষেত থেকে ঘাস পরিষ্কার (নিরানী) করতে অন্তত দুই জন শ্রমিক লাগে। এই দুইজন শ্রমিকের খাবারসহ ১৫শ’ টাকার মতো খরচ হয়ে থাকে। ধান কাটতে আবার অন্তত চার জন শ্রমিকের প্রয়োজন হয়। ধান কাটার শ্রমিকের মজুরি এই সময়ে প্রতিজন ৮শ’ থেকে ৯শ’ টাকা পর্যন্ত থাকে। এই চার জন শ্রমিকের খাবারসহ চার হাজার টাকার ওপরে খরচ হয় দিনে। অপরদিকে সার বাবদ ১৫শ’ থেকে ১৮শ’ টাকা খরচ হয়। সব মিলিয়ে বীজ তলা প্রস্তুতসহ কৃষকের সোলানী ধান গোলায় তুলতে অন্তত ১৪ জন শ্রমিকের প্রয়োজন হয়। আর এই ১৪ জন শ্রমিকের খাবারসহ সব মিলিয়ে কৃষকের খরচ হচ্ছে অন্তত সাড়ে ১৩ হাজার টাকার মতো।

এদিকে ওই এক বিঘা (৩৩ শতাংশ ) জমিতে ধান হচ্ছে ১০ থেকে ১৩মণ। ধানের বর্তমান মূল্য ৫০০ থেকে ৫৫০ টাকা করে। ৫৫০ টাকা হিসেবে ১৩মণ ধানের মূল্য সাত হাজার ১৫০ টাকা। কৃষকের ১৩হাজার টাকা খরচ হলে এক বিঘা (৩৩ শতাংশ) জমিতে কৃষকের প্রায় সাড়ে ৬ হাজার টাকা করে লোকসান হচ্ছে।

ধান ফলিয়ে এবার লোকসান গুনছেন চাষিরা

বাসাইল উপজেলার কলিয়া গ্রামের কৃষক আব্দুর রশিদ বলেন, ‘আমি প্রায় ৫ বিঘা জমিতে বোরো ধান আবাদ করেছি। এক বিঘা জমিতে ট্রাক্টর, শ্রমিক ও সারের খরচ বাবদ প্রায় ২৭ হাজার টাকা খরচ হচ্ছে। এক বিঘা জমিতে ২৬ থেকে ৩০ মণ পর্যন্ত ধান হয়। এবার ধানের দাম কম। তাই আমার প্রতি বিঘা জমিতে প্রায় ১০ হাজার টাকা করে লোকসান হবে।’

ধান ক্ষেতে আগুন দেওয়া বাসাইলের কৃষক নজরুল ইসলাম খান বলেন, ‘ধান কাটার শ্রমিকের মজুরি প্রায় এক হাজার টাকা। তারপরও শ্রমিক পাওয়া যাচ্ছে না। অপরদিকে ধান বিক্রি করতে হচ্ছে ৫শ’ টাকা করে। এছাড়াও ধান ক্ষেতে ব্লাস্ট রোগে আক্রান্ত হয়ে ধানের শীষ চিটা হয়ে শুকিয়ে গেছে। ব্লাস্ট রোগে আক্রান্ত হওয়া প্রায় ৫৬ শতাংশের ধান কেটেছি। এই ৫৬শতাংশ জমিতে মাত্র চার মণ ধান হয়েছে। এক বিঘা (৫৬শতাংশ) জমিতে আমার প্রায় ২৫ হাজার টাকার লোকসান হয়েছে। তাই দিশেহারা হয়ে ২০ শতাংশ পাকা ধান ক্ষেতে আগুন ধরিয়ে দেই। পরে স্থানীয়রা এসে আগুন নিভিয়ে দেয়। আমি এবার ১২ বিঘা জমিতে বোরো আবাদ করেছি। এর আট বিঘা জমির ধানে ব্লাস্ট রোগে আক্রান্ত হয়ে চিটা হয়েছে। এবার আমার বোরো আবাদে অনেক টাকার লোকসান হবে।’ধানের বাম্পার ফলন হলেও এবার লোকসান গুনছেন চাষিরা

কৃষক শ্রীবাস মন্ডল বলেন, ‘গত বছর যমুনা সার ধান ক্ষেতে ব্যবহার করতাম। তখন ফলন ভালো হতো। এখন যমুনা সার বাজারে পাওয়া যায় না। এই সারের দাম বর্তমান সারের চেয়ে অনেক কম ছিল। এবার চায়না, সৌদি, অস্ট্রেলিয়া, ইন্দোনেশিয়ার সার বাজারে এসেছে। এসব সার ধান ক্ষেতে ব্যবহার করার কারণে ধানের ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে।’

ধান ক্ষেতে আগুন দেওয়া কালিহাতীর কৃষক আব্দুল মালেক বলেন, ‘ধান কাটতে শ্রমিককে দিতে হচ্ছে প্রায় এক হাজার টাকা। তারপরও শ্রমিক পাওয়া যাচ্ছে না। ধান কেটে বাড়িতে আনতে এক মণ ধানের পেছনে প্রায় এক হাজার টাকা করে খরচ হচ্ছে। ধান বাজারে নিয়ে বিক্রি করতে হচ্ছে ৫শ’ টাকা করে। প্রতিমণে ঘাটতি পড়ছে ৫শ’ টাকা করে।’

তিনি আরও বলেন, ‘ক্ষেতে ধান পাকলেও তা ঘরে তুলতে পারছিলাম না। তাই দিশেহারা হয়ে এক দাগের ৫৬ শতাংশের ধানে আগুন ধরিয়ে দিয়েছিলাম। পরে এলাকার বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থীর এসে ধান কেটে দিয়েছে।’ধানক্ষেত

একাধিক কৃষক জানান, বিভিন্ন খাদ্যদ্রব্যের দাম বাড়ার কারণে শ্রমিকের মজুরিও বেড়ে গেছে। তারা শ্রমিকের বিকল্প হিসেবে ধান কাটা ও মাড়াই যন্ত্র প্রতিটি এলাকায় দেওয়ার জন্য সরকারের কাছে দাবি জানান। সরকার প্রতি বছর কৃষকদের কাছ থেকে ধান নেওয়ার জন্য বললেও সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা স্থানীয় দালালের মাধ্যমে ধানগুলো গোডাউনে তুলছেন। এর ফলে কৃষকরা সরকারের সুবিধা থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন। তারা সরকারকে এ বিষয়ে যথাযথ পদক্ষেপ ও কৃষকদের প্রতি সুদৃষ্টি দেওয়ার জন্য অনুরোধ জানান।

একাধিক সার ব্যবসারীর সঙ্গে কথা বলবে তারা জানান, গত বছর যমুনা সার বাজারে ছিল। তখন কৃষকের ধানের ফলন ভালো হতো। কিন্তু এবার বাজারে কয়েকটি দেশের সার আসার কারণে জমিতে ফলন কম হচ্ছে। এই সারের দামও অনেক বেশি।

টাঙ্গাইল জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতরের উপ-পরিচালক আব্দুর রাজ্জাক বলেন, ‘এখন শ্রকিমের মজুরি বেশি। আর বাজারে ধান মণপ্রতি ৫শ’ টাকা করে বিক্রি হচ্ছে। এই সময়ে ধানের বাজার কিছুটা কম থাকলেও কৃষক যদি ধান সংরক্ষণ করে রাখেন তবে ক’দিন পরেই অধিক মূল্য পাবেন।’ এবার জেলার ১২টি উপজেলায় ১ লাখ ৭১ হাজার ৭০২ হেক্টর জমিতে ধান আবাদ হয়েছে বলেও তিনি জানান।